সাথে থেকো প্রিয় পর্ব ১৭
লেখক:রিয়ান আহমেদ
অন্তি ক্লাসে ঢুকতেই সবাই ওর দিকে কেমন অদ্ভুতভাবে তাকিয়ে রইলো।অন্তি কিছুটা অবাক হলেও ব্যাপারটাকে তেমন পাত্তা না দিয়ে চলে গেল প্রথম সারিতে একটা সিটে।অন্তিকে এখনো সবাই দেখেই চলেছে।সে এবার আর না পেরে দাঁড়িয়ে গিয়ে সবার দিকে তাকিয়ে বলল,
-‘হোয়াট?সবাই এভাবে তাকিয়ে আছেন কেন?আমি কোনো এলিয়েন নই আপনাদের সকলের মতোই সাধারণ একজন মানুষ।যে যার নিজের কাজ করুন না হলে নিজের ক্রাশের দিকে তাকান।ভার্সিটিতে ভর্তি হলে নতুন ক্লাসে কোনো না কোনো ক্রাশের সাক্ষাত অবশ্যই মেলে।’
অন্তি বসতে যাবে তখনই একটা মেয়ে অন্তিকে উদ্দেশ্য করে বলল,
-‘মিসেস অন্তিকা খান আপনি কোনো সাধারণ মানুষ কেন হবেন?আপনি শত মেয়ের স্বপ্ন পুরুষের জীবনের রানী।’
অন্তি হেসে বলল,
-‘থ্যাংকস এত সম্মান দেওয়ার জন্য।কিন্তু আমার হাজব্যান্ড মেয়েদের স্বপ্ন পুরুষ হলেও আমি কারো জীবনের স্বপ্নের রাণী নই তাই আমার দিকে তাকিয়ে থাকবেন না।সবাই আমি আসার আগে নিজেদের যে গুরুত্বপূর্ণ কাজ করছিলেন সেটা করতে থাকুন।’
মেয়েটা অন্তিকে ভেংচি কেটে বসে পড়লো।অন্তি চুপচাপ বসে আছে।কিছুক্ষণ বাদে টিচার এলেন সব স্টুডেন্ট দাঁড়িয়ে গেল।টিচার একজন সুদর্শন পুরুষ।টিচার নিজের পরিচয় দিল,
-‘আমি মাহির হাসান আমি রবিবার এবং সোমবার আপনাদের ফার্স্ট পিরিয়ডে আপনাদের সাথে থাকবো।আপনারা নিজেদের পরিচয় দিন।’
সবাই নিজেদের পরিচয় দিল।যথারীতি ক্লাস শেষ করে মাহির ক্লাস থেকে বের হয়ে গেল।অন্তি ক্লাস থেকে বের হয়ে এদিক ওদিক তাকাচ্ছিল তখনই একটা পুরুষালি কন্ঠ ওকে ডেকে ওঠে।
-‘মিসেস অন্তিকা।’
আরও গল্প পড়তে আমাদের গুপ এ জয়েন হউন
অন্তি অবাক হয়ে সামনে তাকাতেই দেখে মাহির।অন্তি ভেবে পায় মাহির ওকে ঠিক কি কারণে ডাকছে।মাহিরের চোখে মুখে এক রাশ বিরক্তি ও রাগ।দেখে মনে হচ্ছে অন্তি তার সঙ্গে ক্লাসে অনেক বেশি বেয়াদবি করে ফেলেছে সেই কারণে সে অন্তিকে ডাকছে।কিন্তু বাস্তবে তো এমন কিছুই না অন্তি শান্তশিষ্ট মাসুম বাচ্চার মতো বসে বসে ক্লাস করেছে।অন্তি ভদ্রতার খাতিরে বলল,
-‘জ্বী স্যার বলুন।’
মাহির ভ্রূ কুঁচকে বলল,
-‘তুমি অভিনবর ওয়াইফ তাই না?’
অন্তি অবাক হলো এমন প্রশ্নে।এই প্রশ্নের মানে কি?হঠাৎ অন্তির মনে পড়লো মাহির নামটা এর আগেও কোথাও শুনেছে কিন্তু কোথায় তা সে ঠিক মনে করতে পারছে না।
–‘জ্বী আমি অভিনবর ওয়াইফ কিন্তু কেন আপনি আমাকে এই প্রশ্ন জিজ্ঞেস করলেন জানতে পারি?’
–‘তুমি’ই ক্যাম্পাসে একটা ছেলেকে মেরেছিলে না?’
—‘এই প্রশ্নের মানে কি?’
মাহির অন্তির প্রশ্নের উত্তর না দিয়ে তাচ্ছিল্য করে বলল,
—‘ভালোই জুড়ি বানিয়েছো।স্বামীও খুনি বউও এক প্রকার খুনি।তোমার হাজব্যান্ডকে বলে দিও সে নিজের কর্মফল অবশ্যই পাবে।’
মাহির আর কিছু না বলে চলে গেল।সব অন্তির মাথার উপর দিয়ে গেল।কি বলল এই লোক?অন্তি কিছু একটা ভেবে বলল,
—‘এইটা তো মনে হয় সেই মাহির যে অভিনবর বন্ধু ছিল আর মারিহার ভাই।,,ওনার সঙ্গে কথা বলে শিওর হতে হবে।’
অভিনবর কথা ভাবতেই অন্তি মনের অজান্তেই হেসে দিল।আজ সকালে সে অভিনবর অনেকটাই কাছাকাছি ছিল।অভিনব হয়তো অন্তির কোমর ধরে ভুল করেই নিজের কাছে টেনে নিয়েছিল যার কারণে ছেলেটা সজ্ঞানে আসতেই অন্তিকে ছেড়ে দিয়ে মেয়েদের মতো ব্লাস করতে শুরু করেছিল।ভাবা যায় ছেলেরা লজ্জা পায়।অন্তির ইচ্ছে করছিল অভিনবর সাদা শেয়াল নামটা বদলে দিয়ে পুরুষ লজ্জাবতী নাম দিতে।
অভিনব অফিসের থাই গ্লাস ধরে দাঁড়িয়ে ফোনে কথা বলছে,
—‘স্যারের ফিজিক্যাল কন্ডিশন আগের থেকে কতটা উন্নত হয়েছে?,,,,এই খবরগুলো যদি ঐ চার দেয়ালের বাইরে যায় তবে প্রত্যেকটাকে টুকরো টুকরো করবো।,,,এখন যেই ডক্টর স্যারের চিকিৎসা করছে ওর আশেপাশে সিকিউরিটি আরো বাড়িয়ে দেও।ওর পরিবারকে যেন কোনো হার্ম না করতে পারে কেউ আর হ্যা গুপ্তচরদের বলবে ডক্টর কখন কোথায় যায় সেসব চব্বিশ ঘণ্টা খেয়াল রাখতে।,,,ধোঁকাবাজি সবাই করতে পারে।,,,সবার কথার ঢাল মজবুত হয় না কে কখন ধোঁকা দেবে তা আমরা টের পাব না।রাখছি।’
অভিনব ফোন কেঁটে চুপচাপ দাঁড়িয়ে থাকে।অভিনব সকালের কথা মনে করে।আজ সে যেই কাজটা করেছিল সেটা মোটেও উচিত বলে মনে করছে না সে।মনে মনে একটা চাপা অপরাধবোধ তাকে তাড়া করছে।অভিনব আকাশের দিকে তাকাতেই মনে পড়ে যায় মারিহার সেই নীল চোখ।
-‘তুমি আমাকে একটু ভালোবাসলে তো পারো।সবসময় এভাবে গম্ভীর হয়ে থাকার মানে আছে কোনো?আমার ফ্রেন্ডদের বয়ফ্রেন্ডরা ওদের নিয়ে কক্সবাজার, বান্দরবান যায় আবার দেশের বাইরেও যায় আর তুমি সবসময় এই একটা ক্যাফেতে নিয়ে আসো না হয় মিনি কক্সবাজার।এতো মানুষের মাঝে কি ভালোবাসার মানুষের সঙ্গে মনের দুটো কথা বলা যায় বল তো?’
মারিহা মুখ ফুলিয়ে অভিমানী স্বরে কথাগুলো বলল।অভিনব কফির ধোঁয়ায় ঘোলা হয়ে যাওয়া চশমাটা নামিয়ে রেখে মারিহার মুখের দিকে শান্ত দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলল,
—‘আমি কখনোই তোমার বয়ফ্রেন্ড হতে চাই না আমি তোমার ভালোবাসার পুরুষ হতে চাই।আমি চাই না কক্সবাজারের কোনো হোটেলের এক রাতের অপবিত্রতাকে ভালোবাসার নাম দিতে।আমি চাই বিয়ের পর হাজারো পবিত্র ভালোবাসার রাত কাটাতে।আমি নির্জন স্থানে তোমার শরীরের আপত্তিকর স্থানে স্পর্শ করতে চাই না।আমি সকলের সামনে অধিকার নিয়ে তোমাকে লালসাহীন ভালোবাসাময় স্পর্শে কোনো একদিন জড়িয়ে ধরতে চাই।’
মারিহা মাথা নিচু করে বসে রইলো।অভিনব হাসলো মারিহার এমন ভাব দেখে।অভিনব উঠে একটু ঝুঁকে মারিহার কপালে আলতো করে চুমু খেল।জীবনের প্রথম প্রেমকে দেওয়া তার প্রথম আদর,ভালোবাসার স্পর্শ,
প্রেমের স্পর্শ যেটাই বলা হোক সেদিন সে মারিহাকেই সেটা দিয়েছিল।মারিহা অভিনবর দিকে তাকিয়ে আলতো করে হাসলো।কত নিষ্পাপ সেই হাসি কিন্তু কে ভেবেছিল এই নিষ্পাপ হাসির মালিকটাই পৃথিবীর সবচেয়ে নিষ্ঠুরতর কাজ করেছিল।একটা ভালোবাসায় পরিপূর্ণ হৃদয়কে ভেঙ্গে দিয়ে সেই হৃদয়ে ‘ভালোবাসা’ শব্দটার প্রতি বিষ ভরে দিয়ে যাবে।
বিধানের ডাকে অভিনব অতীত থেকে বাস্তব পৃথিবীতে ফিরে আসে।না চাইতেও সে আজ আবার ও অতীতের স্মৃতির মাঝে নিজেকে হারিয়ে ফেলেছিল।
বিধান বলল,
-‘স্যার চলুন প্রেজেন্টেশন দেয়ার সময় হয়ে গেছে।’
-‘যাও তুমি আমি আসছি।’
-‘ওকে।’
বিধান চলে যেতেই অভিনব একটা লম্বা নিঃশ্বাস নিয়ে আয়নার সামনে দাঁড়ায়।আয়নায় নিজের প্রতিবিম্বকে দেখে হেসে বলল,
-‘ইউ আর দ্যা অভিনব খান বিজয়।সেই চশমা পড়া শান্ত স্বভাবের ছেলেটা কখনোই অভিনব খান বিজয় হতে পারেনা।যার নামে সঙ্গে বিজয় শব্দটা জড়িয়ে আছে তাকে পরাজয়ে কখনোই মানায় না।তুমি সে না যাকে মারিহা নামের একটা সামান্য মেয়ে ফেলে চলে গিয়েছিল।তুমি হলে সে যাকে পাওয়ার জন্য হাজারো সাধারণ অসাধারণ মেয়েরা প্রতিদিন স্বপ্ন দেখে।তুমি কোনো বোকা নও যে সঠিক বন্ধু চিনতে পারে না।তুমি হলে সে যার কম্পানিতে হাজারো বুদ্ধিমান মানুষেরা কাজ করে।’
অভিনব কথাগুলো বলে নিজেকে নিজে ফ্লাইং কিস করে বলে,
-‘আই লাভ মাইসেল্ফ।’
সারিকা একটা প্রোগ্রাম শ্যুট করার জন্য ক্যামেরা ঠিক আছে কি না দেখছিল কিন্তু হঠাৎ তার ক্যামেরার সামনে শুভ্র এসে দাঁড়ায়।সারিকা আচমকা এমন ঘটনা ঘটায় একটু ভয় পেয়ে যায় তবে প্রকাশ করে না।
যথাসম্ভব নিজেকে শান্ত রেখে শুভ্রর দিকে তাকায়।সারিকা তাকাতেই শুভ্র তীক্ষ্ম চোখে সারিকার চোখের দিকে তাকায় আর তেজি গলায় বলে,
-‘তুমি কে?’
সারিকা সহজভাবে বলল,
-‘Your first love’
সারিকার এমন ডোন্ট কেয়ার ভাব দেখে শুভ্রর নিজের চুল ছিড়তে ইচ্ছে করছে।শুভ্র রাগী গলায় বলল,
-‘লাইক সিরিয়াসলি!তুমি এতো সহজভাবে কি করে কথাটা বলতে পারো?তুমি কি একবারও আমাকে এই বিষয়টা ক্লিয়ার করতে পারতে না?’
-‘আপনি ক্লিয়ার করতে বলেন নি তাই করি নি।আর তাছাড়া পুরনো কাসুন্দি ঘেঁটে লাভ নেই।আপনি এখন বড় হয়েছেন আমিও বড় হয়েছি।তাই এসব ভুলে শান্তিপূর্ণ জীবন যাপন করুন কেমন?,,আচ্ছা আপনি আমাকে চিনতে পারেন নি কেন?চৌদ্দ বছর আগে তো খুব মুখ বড় করে প্রপোজ করার সময় বলেছিলেন, “তোমার এই মুখ,চোখ আমি কখনোই ভুলতে পারবো না।”এখন সব হাওয়া ফুস।’
শুভ্র আমতা আমতা করে বলল,
-‘না মানে,,আর কি,,সেসব কথা বাদ।এখন কথা হলো আমি তোমাকে চিনতে না পেরে আবারও ভালোবেসে ফেলেছি আর এর জন্য সম্পূর্ণ দোষী তুমি।’
সাথে থেকো প্রিয় পর্ব ১৬
-‘আমি?আমি দোষী?বাহ ভাই আপনার বিচার তো মহান নিজে একটা মেয়েকে পছন্দ করবেন এরপর সেই মেয়েকেই এর জন্য দোষী সাব্যস্ত করবেন।,,চৌদ্দ বছর আগে যেটা ছিল সেটা ভালোবাসা নয় আবেগ ছিল যা সময়ের সাথে সাথে চলে গেছে আর এখন যেটা সেটাও ভালো লাগা কিছুদিন অন্য মেয়ের সঙ্গে ঘুরলেই আমার প্রতি তৈরি ভালো লাগা তার উপর ট্রান্সফার হয়ে যাবে।’
শুভ্র আশেপাশে তাকাল অনেকেই তাদের দেখছে।শুভ্র সারিকার দিকে তাকিয়ে নিচু গলায় বলল,
-‘অফিসের টেরেসে চলো সেখানে গিয়ে কথা বলবো সবাই দেখছে আর বেশিক্ষণ থাকলে সবাই সব বুঝেও ফেলবে।’
সারিকা শুভ্র কথায় সম্মতি জানালো।
সারিকা আর শুভ্র অফিসের ছাদের সোফায় বসে আছে।শুভ্র সারিকার দিকে তাকিয়ে বলল,,,,,,।