সাথে থেকো প্রিয় - Golpo Bazar

সাথে থেকো প্রিয় পর্ব ১৮ || golper sohor golpo

সাথে থেকো প্রিয়

সাথে থেকো প্রিয় পর্ব ১৮
লেখক:রিয়ান আহমেদ

-‘সারি আই থিঙ্ক আম ইন লাভ উইথ ইউ ওয়ান্স এগেইন।’
সারিকা শুভ্রর দিকে অবাক চোখে তাকিয়ে রইলো।শুভ্রর শান্ত চাহুনিটা এই পরিস্থিতিতে তার কাছে অস্বাভাবিক লাগছে।কোনো মেয়েকে প্রপোজ করার ধরণ এমন হয় না।শুভ্রর কথা শুনে কোনো ক্রমেই মনে হচ্ছে না এটা ভালোবাসার প্রপোজাল।সাধারণত কোনো ছেলে একটা মেয়েকে প্রপোজ করার সময় তীব্র উত্তেজনায় ভোগে।কপালে থাকে বিন্দু বিন্দু ঘাম,চোখে থাকে সামনে থাকা প্রেয়সীর উত্তর শোনার কৌতূহল,হৃদয়ে চলে টর্ণেডোর মতো ভয়ানক ঝড়।সারিকা শুভ্রর দিকে তাকিয়ে অদ্ভুত হাসি দিয়ে বলল,

-‘আপনি আমাকে ভালোবাসেন?কিন্তু ভালোবাসার মানুষকে আমি যেই রূপে আশা করি আপনি তেমন নন।’
শুভ্র রেগে যায় কিন্তু নিজেকে দমিয়ে নেয়।প্রেম নিবেদন করার সাহস থাকলে রিজেক্ট হওয়ার মতো ধৈর্য থাকাটাও জরুরি।শুভ্র মিষ্টি একটা হাসি দিয়ে বলল,
-‘পৃথিবীতে কেউ তোমার মনের মতো হলেই সে তোমার মনের মানুষ হয় না।আবার কেউ হয়তো তোমার মনের মতো না হয়েও তোমার মনের সবচেয়ে প্রিয় মানুষ হিসেবে জায়গা করে নেয়।তুমি আমার থেকে কি আশা করছো আমি জানি না,,তুমি যদি বলে ও দেও তখনো আমার পক্ষে তেমন করে নিজেকে তৈরি করা সম্ভব হবে না।কিন্তু আমি ভালোবাসতে জানি,,,আর এটাও জানি একটা সম্পর্কে ভালোবাসাটাই সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন।’

আরও গল্প পড়তে আমাদের গুপ এ জয়েন হউন

-‘আপনার চোখে আমি ভালোবাসা দেখতে পাচ্ছি না।’
সারিকার স্ট্রেট ফরওয়ার্ড কথায় শুভ্র চমকে উঠে।মেয়েটা এমন কেন?মুখের উপরে তাকে এভাবে না বললেও পারতো সুন্দর করে বললে কি পৃথিবী ধ্বংস হয়ে যেতো?
-‘তাহলে কি ঘৃণা দেখতে পাচ্ছো না কি?তুমি যে সারি সেটা জানার পর আমি দ্বিধায় পড়ে গিয়েছিলাম,,কিন্তু তোমাকে ভালোবাসি বলে সব দ্বিধার বিসর্জন করে তোমাকে চাইছি নিজের জীবনে।’
-‘আপনার চোখে আমি সেই ভালোবাসা দেখতে পাচ্ছি না যেটা আমি আমার জীবনসঙ্গীর কাছে আশা করি।আর উত্তরটি আপনার কথার মাঝেই লুকিয়ে আছে।’
-‘মানে?’

-‘দ্বিধা,,ভালোবাসাটা হয় দ্বিধাহীন।আপনি যখন জানলেন আমি সেই মেয়ে যে একসময় আপনার শত্রু ছিল তখন আপনার মনে হয়েছিল সম্পর্কটা আর এগিয়ে নেওয়া ঠিক হবে না,,তাই না?বাস্তবিক ভালোবাসাটা এমন হয় না।’
সারিকা উঠে দাঁড়ায় এখানে আর থেকে লাভ নেই প্রোগ্রাম শুরু হওয়ার সময় হয়ে গেছে।
সারিকা চলে যেতেই শুভ্র নিজের হাতের জুসের গ্লাসটা ভেঙ্গে ফেলে আছাড় মেরে তার চোখ লাল হয়ে গেছে।
-‘তুমি আমার ভালোবাসার অপমান করলে কিভাবে?আমি সত্যিই অবাক হচ্ছি তোমাকে দেখে।আমি!শুভ্র শাহেদ খান যে কি না কত শত মেয়েকে রিজেক্ট করেছে তাকে রিজেক্ট করেছো তুমি তাও দুইবার।ইউ হ্যাভ টু পে ফর দিস।’

-‘আচ্ছা মাহির মানে আপনার বন্ধু কি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের লেকচারার?’
অভিনব টিভি দেখছিল হঠাৎ অন্তির মুখে ‘মাহির’ নামটা শুনে সে গম্ভীর হয়ে যায়।অভিনব অন্তির দিকে তাকিয়ে হ্যা বোধক মাথা নাড়ায়।অন্তি অভিনবর থেকে কিছুটা দূরে সোফায় এক কোনায় বসে পড়ে।অভিনব টিভি দেখার ভান করলেও মাথায় তার অন্য চিন্তা।অন্তি আবারও বলল,
-‘আপনি মারিহার বেঁচে থাকার সত্যিটা মাহিরকে কেন বলেন না?আপনি ওনাকে বললে তো আর উনি আপনাকে খুনি বলতে পারতো না।’

অভিনব টিভি বন্ধ করে দেয়।অন্তির দিকে মাথা ঘুরিয়ে বলল,
-‘কেন বলি নি কারণটা তুমি জানো।মারিহাকে আমি এখন ঘৃণা করলেও একটা সময় ভালোবাসতাম।সেদিন রেস্টুরেন্টে দেখা হওয়ার পর ও আমাকে নিজের কসম দিয়ে বলেছিল আমি যেন ওর বেঁচে থাকার সত্যিটা কখনোই ওর পরিবারের লোকজনকে না বলি।,,ওর বাবা হার্টের রোগী মেয়ের নিখোঁজ হওয়ার খবরে একটা অ্যাটাক হয়েছিল তখন যদি মেয়ের এসব কীর্তিকলাপ সে জানতে পারতো তাহলে হয়তো মরেই যেতো আমি অন্তত এতটা স্বার্থপর নই যে ওর প্রতি নিজের ক্ষোভ মেটাতে ওর পরিবারকে ধ্বংস করে দেব।আর রইলো মাহিরের বলার কথা মাহিরকে আমি এসব বললে ওর সঙ্গে আমার বন্ধুত্ব ঠিক হয়ে যেতো না যা যেমন আছে তেমনই থাকতো শুধু মাহির হয়তো কোনো অবসর সময়ে আমার সাথে করা আচরণের জন্য অনুতপ্ত হতো।মাহির এতটাও সাহসী না যে আবারও আমাকে মারতে আসবে ও শুধু সেদিন আমাকে ভয় দেখিয়েছিল।,,,আর যদি কখনো আমাকে টোকা দেওয়ার চিন্তাভাবনা ও তবে আমার আশেপাশের দেয়াল ওকে মৃত্যুর দরজা অব্দি নিয়ে যাবে।,,,আর রইলো খুনি বলে ডাকার ব্যাপারটা তাহলে শোনো এই দেশে কোনো অপরাধ কেউ এক মাসের বেশি মনে রাখে না।,,,, শুধুমাত্র মাহিরের আমাকে খুনি বলে ডাকাতে তাই আমার কোনো যায় আসে না।পৃথিবীর নিয়ম হচ্ছে কোনো অপরাধ ঘটলে কারো না কারো ঘাড়ে দোষটা চাপিয়ে দেয়া।এতে আমরা একটা অদ্ভুত মানসিক শান্তি পাই কথাটা অদ্ভুত হলেও এর সত্যতা তুমি সব জায়গায় দেখতে পাবে।’
অভিনব কথাগুলো বলে উঠে চলে যায়।অন্তি অভিনবর কথাগুলো ভাবতে শুরু করে।অভিনবর শেষ কথার সত্যতা সে নিজের জীবনে বহুবার দেখেছে।

একবার দ্বিতীয় শ্রেণীতে পড়াকালীন তার ক্লাসের একটা মেয়ে নিজের কানের স্বর্ণের দুল হারিয়ে ফেলে।অনেক খোঁজার পর ও যখন দুলটার সন্ধান মেলে না তখন সে ক্লাসের সবচেয়ে বাজে ছাত্রী যে ছিল অত্যন্ত গরিব তার উপর এই চুরির অপবাদ দেয়।পরে মেয়েটির চেইনের রিঙ্গের সঙ্গে লেগে থাকা অবস্থায় দুলটি আবিষ্কার করা হয়।এই পরিস্থিতিতে মেয়েটা অন্য কাউকে দোষ দিয়েছিল বাবা মায়ের কাছে নিজের অসচেতনতাজনিত ঘটা অপরাধটি ঢাকতে।এতে বোঝা যায় অপরাধ ঘটলে এর দোষ কারো না কারো ঘাড়ে চাপিয়ে দিতেই হবে আর এটাই মানুষের মানসিকতা।এটা সে মানুক আর না মানুক।

-‘অন্তি ছাড়ো এই খরগোশটা এটা অন্য কারোর খরগোশ। তুমি পাগলামি কেন করছো?’
অন্তি বুকের সঙ্গে খরগোশটা জড়িয়ে ধরে বলল,
-‘প্লিজ প্লিজ আমি এটা রাখবো।আমার প্যাট পালার খুব শখ।’
অভিনব অন্তির হাত থেকে নিতে চাইলে অন্তি লাফ দিয়ে খাটের উপর উঠে দাঁড়ায়।অন্তি চেঁচিয়ে বলল,
-‘আমি এই খরগোশ ঐ ছেলেটাকে কখনোই দেবো না।আমি দেখেছি ঐ ছেলেটা খরগোশটাকে কিভাবে মারছিল কত বাজেভাবে ট্রিট করছিল।আপনি জানেন এই খরগোশটা আমার দিকে কি সুন্দর লাল লাল মায়াবী চোখ করে তাকিয়েছিল?আমাকে সে নিজের রক্ষক মনে করছিল।আমি ওকে কোনোমতেই ছাড়বো না।’
অভিনব রাগী চোখে অন্তির দিকে তাকিয়ে থাকল।অন্তি খরগোশটা নিয়ে দিল এক দৌড়।অভিনব কপাল চাপড়াচ্ছে,

-‘এই মেয়ে একটা নর্মাল ওয়াইফের মতো বিহেভ কবে করবে?আজ হঠাৎ এর মাথায় কিভাবে যে খরগোশ পালার ভুত চাপলো আল্লাহ্ জানে।’
অন্তি খরগোশটাকে নিয়ে ছাদে গিয়ে দরজা আটকে বসে থাকলো।এই খরগোশটা ওদের পাশের বাসার একটা ছেলের।ছেলেটা খরগোশটাকে দিয়ে কিছু এক্সপেরিমেন্ট করছিল যার ফলে খরগোশটা বেশ আহত হয় কিন্তু ছেলেটা তবুও ছোট্ট মাসুম জানটাকে কষ্ট দিয়েই যাচ্ছিল।অন্তি বারান্দা থেকে এসব দেখে আর সহ্য করতে না পেরে ছেলেটার বাসায় গিয়ে ছেলেটাকে বেশ কিছু কঢ়া কথা বলে।কিন্তু ছেলেটা উল্টো অন্তিকেই বলে,
-‘নিজের কাজে কাজ রাখুন।’

অন্তি কথাটা শুনে তখনকার মতো চলে এলেও পরে সুযোগ বুঝে ছেলেটার বাড়িতে লুকিয়ে গিয়ে খরগোশটা চুরি করে নিয়ে আসে।অন্তি অনেক ভালোবাসি পশু পাখিকে তাই এদের কষ্ট সহ্য করতে পারে না।
অভিনব ছাদের দরজা ধাক্কা দিয়ে বলল,
-‘অন্তি দরজা খোল,,খরগোশটা আমাকে দিয়ে দেও আমি তোমাকে আরো ভালো খরগোশ কিনে এনে দেব।’
অন্তি তীব্র প্রতিবাদী গলায় বলল,
-‘এই খরগোশ আমি কখনোই ঐ ছেলেকে দেবো না আপনি আমাকে মেরে ফেললেও না।’
অভিনব বুঝতে পারছে না কি করবে?নিচে ছেলেটা দাঁড়িয়ে আছে নিজের খরগোশ নেয়ার জন্য খরগোশ না নিয়ে সে ও নড়বে না।অভিনব আর কোনো উপায় না পেয়ে অন্তির থেকে খরগোশ নেয়ার জন্য মিথ্যার আশ্রয় নেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়।
-‘অন্তি ঠিকাছে আমি খরগোশটাকে তোমার কাছেই রাখতে দেবো।এবার দরজা খোল এই রোদের মধ্যে আর কতক্ষণ এভাবে ছাদে বসে থাকবে।’
অন্তি খুশি হয়ে বলল,
-‘সত্যিই তো?’

অভিনব শুকনো ঢোঁক গিলল কারণ কিছুক্ষণের মাঝেই অন্তি জেনে যাবে এই কথাগুলো ডাহা মিথ্যা কথা এরপর হয়তো ঘুষি,কামড় অনেক কিছুই ওর জন্য মিথ্যা বলার শাস্তি হিসেবে তৈরি থাকবে।
-‘হ্যা সত্যিই এখন বের হও।’
অন্তি দরজা খুললো হাসি হাসি মুখে।অভিনব হেসে বলল,
-‘আমাকেও একটু খরগোশটা ধরতে দেবে?’
-‘আরে আরে কেন নয়,,খরগোশ মসাই ইনি হলেন সাদা শেয়াল আমার বন্ধু।’
অভিনবর হাতে অন্তি খরগোশটা দিতেই অভিনব দিল এক দৌড়।অভিনবকে দৌড় দিতে দেখে অন্তি কতক্ষণ বোকার মতো দাঁড়িয়ে রইল পরক্ষণেই যখন বুঝতে পারলো অভিনব ওর সঙ্গে গেম খেলেছে তখন সেও দিল ইক দৌড় অভিনবর পেছন পেছন।
অভিনব ছেলেটার হাতে খরগোশটা দিয়ে বিরক্ত হয়ে বলল,
-‘এই নেও তোমার খরগোশ।আর যেন তোমার চেহারা না দেখি আর হ্যা খরগোশটা এবার বাড়ির ভেতরে রেখো।’
ছেলেটা সরু চোখে তাকিয়ে বলল,

সাথে থেকো প্রিয় পর্ব ১৭

-‘তা তো রাখতেই হবে না হলে আপনার বউ আবার কখন চুরি করে নেয় তার কি কোনো ঠিক আছে না কি?’
অভিনব রেগে গিয়ে চোখ গরম করে বলল,
-‘তুই যাবি না কি সিকিউরিটি দিয়ে বের করাবো।’
-‘যাচ্ছি,যাচ্ছি।’
ছেলেটা যেতেই অভিনব পেছনে ঘুরে দেখে অন্তি অভিনবর দিকে একবার চোখ পাকিয়ে তাকাচ্ছে তো আরেকবার খরগোশের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে কেমন ফোপাচ্ছে।অভিনব কিছু বলতে যাবে তার আগেই অন্তি দৌড়ে চলে গেল।অভিনব ঠোঁট কামড়ে ভাবলো,
-‘এংগ্রিবার্ড কি বেশি রাগ করলো না কি?’

সাথে থেকো প্রিয় পর্ব ১৯

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.