সাথে থেকো প্রিয় পর্ব ১৯
লেখক:রিয়ান আহমেদ
অভিনব বারোটা বাজে গাড়ি নিয়ে বেরিয়ে পড়েছে বাসা থেকে উদ্দেশ্য নিজের বাবার বাড়ি মানে খান ম্যানশনে যাওয়া।তার মা হঠাৎ না কি মাথা ঘুরে পড়ে গিয়েছে লো প্রেশারের কারণে তাই আজ প্রায় দুই বছর বাদে নিজের বাড়িতে পা রাখবে সে।মায়ের প্রতি না কি ছেলেদের ভালোবাসা বরাবরই বেশি হয়।ঘটনাক্রমে অভিনবর মা বাবার প্রতি একটা চাপা অভিমান জন্মালেও ভালোবাসাটা এখনো বেঁচে আছে।
অভিনবর গাড়ি খান ম্যানশনের দরজা দিয়ে প্রবেশ করতেই পুরো বাড়িটাকে সে একবার বেশ ভালো করে চোখ বুলিয়ে নেয়।নাহ্ বদলায় নি কিছুই বদলায় নি।পানির ফোয়ারাটা এখনো আগের স্থানেই দাঁড়িয়ে আছে,বাগানের বড় গাপ গাছটা এখনো আম গাছটার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে।
অভিনব জুতো জোড়া খুলে স্লিপার্স জোড়া পড়ে নেয়।তার দাদুভাইয়ের নিয়ম ছিল বাইরের জুতো ঘরে পড়া যাবে না আজ ও এই বাসায় সেই নিয়ম অনুসরণ করা হয় যদিও অভিনবর দাদুভাই অমর খান আর জীবিত নেই।
অভিনব মায়ের ঘরে গিয়ে দেখে সারিকা তার মায়ের এক হাত ধরে বসে আছে আর তার বাবা অর্ণব খান পাশে বসে আছে।অভিনব সারিকার পাশে গিয়ে বসতেই সারিকা ফিসফিস করে বলল,
-‘ভাই মা ঘুমিয়ে আছে ডাক্তার দেখে গেছে বলেছে তেমন কোনো সমস্যা নেই,,ধন্যবাদ তুই এলি।’
অভিনব কিছুটা রেগে গিয়ে বলল,
-‘মানে কি মা অসুস্থ আর আমি আসবো না?তুই কি আমাকে এতটাই খারাপ ভাবিস না কি?’
সারিকা চুপ করে রইলো কথা বললে কথা বাড়বে।সুহানা চোখ বন্ধ করেই নিচু গলায় বলল,
-‘অভি তুমি এসেছো?’
অভিনব গিয়ে মায়ের হাত ধরে বলল,
-‘হ্যা মা আমি এসেছি।তোমার এখন কেমন লাগছে?খারাপ লাগছে বেশি?’
আরও গল্প পড়তে আমাদের গুপ এ জয়েন হউন
-‘নাহ্ তুমি আর সারি আমার পাশে বসে থাকলে আমার আর ভালো না থেকে উপায় আছে।'(মৃদু হেসে)
সুহানা ধীরে ধীরে চোখ খুলল।অভিনব আর অর্ণব উঠে বসতে সাহায্য করলো।সুহানা ছেলে মেয়ের গালে হাত বুলিয়ে হেসে বলল,
-‘কত বড় হয়ে গেলে তোমরা,,,অভি বিয়ে করে নিয়েছে এখন সারি ও পরের ঘরে চলে যাবে।আমাদের ঘরটা তো তোমরা আরো আগেই খালি করে দিয়েছো কিন্তু এবার হয়তো আমরা সত্যিই বড্ড একা হয়ে যাব।’
সুহানার চোখের কোনে পানি জমে আসে।সে আটকায় না কখনো কখনো কান্না করলে মন হালকা হয়।
সুহানা আবারও বলেন,
-‘তোমাদের দুজনকে আমাদের কিছু বলার আছে।অভি তুমি তোমার ড্যাডের সাথে একটু যাও আমি সারিকাকে কিছু কথা বলবো।’
অভিনব অর্ণবের দিকে তাকিয়ে বলল,
-‘চলো ড্যাড।’
-‘হুম চলো।’
অভি অর্ণবের সাথে রুম ছেড়ে চলে যায়।সুহানা সারিকার হাতটা নিজের দুই হাতের মুঠোয় নিয়ে নেয় চোখের জল ছেড়ে দিয়ে বলতে শুরু করে,
-‘মা আমি তোমাদের প্রতি বড্ড বেশি অন্যায় করে ফেলেছি।সব বাচ্চারা বাবা মাকে নিজেদের মনের কথাগুলো খুলে বলে কিন্তু আমরা তোমাদের সেই সময়টাই দেই নি।তোমাদের ড্যাড যখন কাজে ব্যস্ত থাকতো তখন আমার উচিত ছিল তোমাদের সময় দেওয়া কিন্তু আমি তা না করে তোমাদের ড্যাডের সাথে বিজনেস,মিটিং,ডিল,ট্যুর এসব নিয়ে ব্যস্ত থাকতাম।’
সারিকা মায়ের চোখের জল দেখে কষ্ট হয় সে বলল,
-‘মম প্লিজ এভাবে কান্না করো না আমার খারাপ লাগছে।’
-‘নাহ্ আজ আমাকে বলতে হবে।আমি সবসময় শুধু ইনসিকিউর্ড ফিল করতাম তোমাদের বাবাকে নিয়ে।আমার মনে হতো যদি আমি তোমাদের বাবাকে চোখের আড়াল করি তাহলে সে আমাকে ছেড়ে দেবে অন্য কারোর জন্য।তোমাদের বাবা আমাকে ভালোবাসে অনেক এখনো বাসে কিন্তু আমি ছোটবেলায় যা ফেস করেছিলাম তা আমার মনে ভয় বসিয়ে দিয়েছিল।’
-‘কিসের ভয়?কি এমন ঘটনা ঘটেছিল তোমার সাথে ছোটবেলায়।’
-‘হারিয়ে ফেলার ভয়!নিজের প্রিয় মানুষটাকে হারানোর ভয়।ছোটবেলা থেকে দেখেছিলাম আমার বাবা সারাদিন বাইরে কাজ করতো আর রাতে এসে আমার মা কে যা নয় তাই বলে অপমান করতো।তার মতে আমার মা সারাদিন বসে আরাম করতো কোনো কাজই সে করতেন না।কিন্তু বাস্তবতাটা ছিল পুরোপুরি ভিন্ন।আমার মা সারাদিন বাজার করা,রান্না-বান্না,ঘর পরিষ্কার,অসুস্থ শশুড় শাশুড়ির সেবা সব করতো তবুও দিন শেষে শুধু পেত অলস উপাধি।মাত্র ত্রিশ বছর বয়সে আমার মাকে দেখলে মনে হতো চল্লিশ পাড় করেছেন তিনি,,এতোটাই বিভোর ছিলেন সংসারের কাজে যে কখনো কখনো চুলে চিরুনিও লাগাতেন না তিন চারদিন।কিন্তু এসবের মাঝে আমার বাবার অযত্ন কখনোই করেন নি।সকালে শেভিং ক্রিমটা এগিয়ে দিতে তার ভুল হতো না।আমার মায়ের সংসারে বিভোর হয়ে থাকার সুবিধা নিতে আমার বাবা ভুললেন না।আমার বয়স যখন আট কিংবা নয় তখন উনি পরনারীতে আসক্ত হয়ে পড়েন।সবাইকে শুধু বলতেন আমার মাকে তার বুড়ি বুড়ি মনে হয় বুড়ির সঙ্গে সংসার করা তার পক্ষে কতটা কষ্টের তা একমাত্র সেই বুঝে।কিন্তু এই বুড়ি স্ত্রীটা তাকে বিয়ে করার আগে ছিল এক অত্যন্ত সুন্দরী মেয়ে যাকে কি না পাড়ার ছেলেরা সপ্তাহে দুটো চিঠি অবশ্যই দিতো।,,তাহলে কার জন্য বুড়ি হয়েছিল মেয়েটা,,উত্তর হচ্ছে তার জন্য, তার সংসারের জন্য।আমার মেয়ে কিছুই বলে নি কেঁদে গেছে সারাটাদিন।শুধুমাত্র আমার মামাদের কারণে বাবা ঐ মহিলাদের ঘরের চৌকাঠে আনতে পারেন নি না হলে তো বিয়ে করে নিয়েই আসতো।কিন্তু অবশেষে সে নিজের ভুলটা বুঝতে পেরেছিল হয়তো দেরী হয়েছে কিন্তু বুঝতে পেরেছে। সে নিজের ভুলটা বুঝতে পারলেও আমার মনে একটা কথা বসে গিয়েছিল,”পুরুষদের চোখের আড়ল হতে দিলে সে চিরদিনের জন্য তোমাকে নিজের হৃদয়ের আড়ালে ফেলে দিবে।” তাই আমি কখনোই চাই নি তোমাদের বাবা আমার চোখের আড়ালে গিয়ে আমাকে ধোঁকা দিক।হয়তো সে এমনটা কখনোই করতো না,,কিন্তু আমি বলেছি “হয়তো” তাই করার সম্ভাবনাও তো ছিল।আমি অর্ণবের সঙ্গে দেশে বিদেশ ঘুরেছিলাম তোমাদের রেখে কিন্তু তোমাদের ভুলে নয়।তোমরা সবসময় আমাদের হৃদয়ে থাকতে।প্রতি বেলা খাবারের আগে মেডদের ফোন দিয়ে জিজ্ঞেস করতাম তোমরা কি খেয়েছো, ঠিকমতো কি না?তোমরা হয়তো ভাবতে আমরা তোমাদের কখনোই ভালোবাসি নি সবসময় জোর করে সবকিছু চাপিয়ে দিয়েছি তোমাদের উপর কিন্তু কথাটা কতটুকু সত্য তা কি জানো?,,আমরা সবসময় তোমাদের ভালোবেসেছি।আর ভালোবেসেই হয়তো একটু বেশি পজেসিভ হয়ে পড়েছিলাম যার কারণে তোমাদের উপর একটু বেশিই কঠোরতা প্রয়োগ করেছি।আমি সরি এসবের জন্য,,যা হয়েছে সব ভুলে যাওয়া যায় না?আমরা সবাই সবকিছু নতুন করে শুরু করি।’
সুহানা কান্নার গতি আরো বাড়িয়ে দেয়।সারিকার বুকটা চিনচিন করছে মাকে এভাবে কাঁদতে দেখে।সে মাকে জড়িয়ে ধরে কেঁদে দিয়ে নাক টেনে টেনে বলল,
-‘মম প্লিজ আর কেঁদো না আমার ভালো লাগে না তোমাকে কাঁদতে দেখে।তোমার এই কিউট সুন্দর চোহারায় এই বাজে চোখের জল মানায় না।’
-‘প্রমিস করো আজ থেকে আমরা সবাই একসাথে এই বাসায় থাকবো।’
-‘আই প্রমিস মম।’
অভিনব তার বাবার স্টাডি রুমে বসে আছে।এই স্টাডি রুমে সে শেষবার এসেছিল প্রায় যখন তার বয়স এগারো বছর বয়স।নিজের ডিভেট কম্পিটিশনের ট্রফিটা দেখে সে মনে মনে বলল,
-‘ওহ এটা তাহলে ড্যাডের কাছে ছিল।আমি তো এটার কথা ভুলেই গিয়েছিলাম।’
অর্ণব কেশে গলা পরিষ্কার করে বলতে শুরু করলো,
-‘অভি আমি চাই তুমি নিজের স্ত্রী সমেত আজ থেকে নিজের বাসায় থাকবে এটা আমার হুকুম।’
অভিনব অবাক হয়ে নিজের বাবার দিকে তাকায় মনে হচ্ছে তার বাবা কথাটা নিজের ইচ্ছেতে নয় অনেকটা জোরপূর্বক বলেছে।অভিনব ভ্রূ কুঁচকে বলল,
-‘তা হঠাৎ তুমি এমন কথা কেন বলছো?আমার জানা মতে তুমি আমার ওয়াইফকে পছন্দ করো না।’
-‘আমি অর্ণব খান কারো কথাতে কাজ করার মানুষ আমি নই আমার ইচ্ছে হয়েছে তাই বলেছি।তুমি আমার একমাত্র ছেলে তুমি যদি নিজের বাসায় না থাকো তবে মানুষ কি ভাববে।’
-‘ড্যাড আমি কিন্তু একবারও বলি নি তুমি কারো কথায় এমনটা করছো।,,,আর তুমি মানুষের অর্ডার শুনবে কেন?তুমি তো সবাইকে নিজের হুকুমে চালাও।সবার উপরে নিজের সিদ্ধান্ত চাপিয়ে দেওয়াটাই তো তোমার কাজ তাই না ড্যাড।’
-‘তুমি এখনো সেই বিষয়গুলো নিয়ে কেন পড়ে ধরে বসে আছো?’
-‘আমি যখন ছোট ছিলাম তুমি আমাকে সাইকেলের সাথে একা ছেড়ে দিয়েছিলে।ওটা কোনো ট্রাই সাইকেল ছিল না,,আমি তোমার ভরসায় সাইকেলে উঠেছিলাম ভেবেছিলাম আমি পড়ে গেলে তুমি ধরবে কিন্তু তুমি ধরো নি।’
-‘আমি চেয়েছি তুমি পড়ে গেলে যেনো নিজের থেকে উঠে দাঁড়াও।’
অভিনব চিৎকার করে বলল,
-‘আমি শুধুমাত্র একটা ছয় বছরের বাচ্চা ছিলাম।আমার পা ছিলে রক্ত ঝড়ছিল আমি ব্যথা পেয়ে কান্না করছিলাম।’
-‘আমি নিজেকে ঠিক করার চেষ্টা করছি অভি।’
-‘তুমি কখনোই বদলাতে পারো না।,,তুমি কেন চাইছো আমি এখানে আসি বলো তো নিশ্চিত তোমার এতে কোনো স্বার্থ আছে তাই না?’
অর্ণব এবার রেগে গেল চিৎকার করে হাতের কাছের ফুলদানিটা ছুঁড়ে ফেলে দিয়ে বলল,
-‘আমি তোমার মায়ের জন্য এসব বলছি।তোমার মা চায় তুমি নিজের স্ত্রী নিয়ে আমাদের সাথেই থাকো।সে বেশ অনেকদিন যাবত আমার সঙ্গে এসব নিয়ে তর্কবিতর্ক করছিল।আমার সঙ্গে অভিমান করে সে বেশ কয়েকদিন ঠিকমতো খাওয়া দাওয়া করে নি যার দরুন আজ সে অসুস্থ হয়ে পড়েছিল।’
অভিনব হাসলো অর্ণবের কথায় কারণ সে জানতো অর্ণব অন্তিকে মেনে নেয় নি এখনো।অভিনব ফ্লোরে পড়ে থাকা ভাঙ্গা ফুলদানির দিকে তাকিয়ে একটা তাচ্ছিল্যের হাসি দিয়ে বলল,
-‘তুমি কখনো বদলাতে পারো না আর এই ভাঙ্গা ফুলদানিটাই তার প্রমাণ।,,মনে আছে আমার যখন এগারো বছর বয়স ছিল তখন তুমি আমার রেজাল্ট কার্ড দেখে রেগে গিয়ে এই রুমের বেশ কিছু জিনিস ভেঙ্গে ফেলেছিলে।’
–‘আমি শুধু রেগে গিয়েছিলাম কারণ তোমার রেজাল্ট ভালো ছিল না তাই।’
–‘বাজে রেজাল্ট!আমি শুধু একটা সাবজেক্টে পঞ্চান্ন পেয়েছিলাম বাকিগুলোতে নব্বই এর উপরে।,,,যাইহোক আমি মমের জন্য বাসায় আসতে রাজি হলাম না হয় আমার ইচ্ছে ছিল না এখানে থাকার।আর হ্যা অন্তির সঙ্গে খারাপ ব্যবহার যখনই করবে আমি সেই সময় তোমার বাড়ি ছেড়ে চলে যাব।’
অভিনব চলে যেতে নেবে তখনই অর্ণব পেছন থেকে বলল,
–‘তুমি সবসময় শুধু ভেবেছো আমি তোমাকে অনাদর করেছি।হ্যা হয়তো আমি ভালো বাবা হতে পারি নি কিন্তু তোমাকে ভালো মানুষ বানাতে পেরেছি।,,তোমার জীবনের প্রত্যেকটা এচিভমেন্ট আমার কাছে তোমার কাছে যতটা গুরুত্বপূর্ণ আমার কাছে তার চেয়েও বহুগুণ বেশি স্পেশাল।ঐ যে ডিভেট কম্পিটিশনের ট্রফিটা তুমি দেখতে পাচ্ছো?মনে আছে তুমি সেটা জেতার মন মানসিকতাই হারিয়ে ফেলেছিলে তখন তোমার দাদুভাই তোমাকে হেল্প করেছিল।আসলে হেল্পটা সে করে নি আমি করেছিলাম।আমি তোমার দাদুভাইকে বলে দিয়েছিলাম কি বলতে হবে তোমাকে।আর আমার কথা লুকিয়ে রাখতে বলেছিলাম।আমি সেই প্রতিযোগিতায় উপস্থিত ছিলাম বিচারক হিসেবে।যদি জানতে আমি তোমাকে সাহায্য করেছি তাহলে তোমার মনে হতো আমি ইচ্ছে করে তোমাকে জিতিয়ে দিয়েছি যা আমি চাই নি।,,,এটা তাই আমি নিজের কাছে যত্ন করে রেখে দিয়েছি।’
অভিনব পেছনে ঘুরে বাবার দিকে তাকালো কিন্তু তার বাবা এখন তার দিকে পিঠ করে দাঁড়িয়ে আছে।দুজনে দুজনের চেহারা দেখাতে চাইছে না একে অপরকে।
অভিনব দরজার দিকে হাঁটা ধরে শুধু একটা কথাই বলে,
-‘দেখা হচ্ছে আগামীকাল ড্যাড।’
অন্তি ব্ল্যাঙ্কেটের ভেতরে মুখ গুঁজে কান্না করছে।তার কষ্ট লাগছে খরগোশটার জন্য।
যখন তার নয় কিংবা দশ বছর বয়স ছিল তখন রাস্তায় একটা বিড়াল ছানাকে পড়ে থাকতে দেখে মায়া।বিড়াল ছানাটা নিয়ে অনাথ আশ্রমের পেছনের দিকে ইট দিয়ে ঘর বানিয়ে সেটার মধ্যে রাখে।প্রতিদিন নিজের খাবারের একটা অংশ সে সেই বিড়ালকে খাওয়াতো।কিন্তু একদিন একজন কেয়ারটেকার ব্যাপারটা লক্ষ করে আর বিড়ালটাকে অন্য কোথাও ফেলে দিয়ে আসে।তখন থেকেই অন্তির অনেক শখ একটা প্যাট পালন করবে সে যখন তার নিজের একটা বাড়ি হবে, নিজের টাকা হবে।
অন্তি নাক টান টানতে বিড়বিড় করে বলল,
-‘আজ আমার নিজের বাড়ি হলে কেউ কি পারতো সেই খরগোশটাকে আমার থেকে নিয়ে নিতে?,,,আজ তার কাছে টাকা পয়সা আছে বলে আমার মাথা কিনে নিয়েছে না কি?হ্যা কিনেই তো নিছে।,,সমস্যা নেই একদিন আমি একটা বেকারির মালিক হবো।আমার কাছে ওনার মতো এতো টাকা না হলেও একটা কুকুর,না হয় বিড়াল,না হয় ছাগল কিছু না কিছু পালার সামর্থ্য তো অবশ্যই হবে।’
হঠাৎ অন্তি কম্বলের নিচ থেকেই অনুভব করে কেউ তার পায়ে সুরসুরি দিচ্ছে।অন্তির সুরসুরি অনেক বেশি তাই হাসতে কম্বল ফেলে দিয়ে বলতে শুরু করলো,
-‘কি হচ্ছেটা কি?কে করছে এমন?’
অভিনব খরগোশের খাচাটা নিচে রেখে অন্তিকে আরো সুরসুরি দিতে শুরু করে।অন্তি খিলখিল করে হাসতে থাকে সুরসুরির কারণে।পুরো রুম অন্তির হাসির ঝঙ্কারে ভড়ে উঠেছে।অভিনবর কেমন যেন নেশা ধরে যাচ্ছে এই হাসি দেখে।অভিনব অন্তিকে সুরসুরি দিতে দিতে এক পর্যায়ে অন্তির অনেক কাছে চলে আসে।সে নিজেও জানে না সে কি করছে।অভিনবকে নিজের এতটা কাছে আসতে দেখে অন্তির হাসি উবে যায়।সে হাসি থামিয়ে দিয়ে তাকিয়ে দেখে অভিনব এগিয়েই চলেছে ওর দিকে যেন অভিনব নিজের মাঝে নেই।অন্তির চোখের দিকে তাকাতেই অভিনবর এগিয়ে যাওয়ার ইচ্ছেটা আরো প্রবল হয়।নীল চোখের মালকিনের চোখেও সে এতটা আসক্ত হয় নি যতটা এই খয়েরি মনির চোখ জোড়ায় হচ্ছে।অন্তি ভয়ে শুকনো ঢোঁক গিলে বিছানার চাদর খামচে ধরে সে অভিনবর থেকে দূরে যাওয়ার চেষ্টা করতে থাকে।কিন্তু বিধি বাম!অভিনব নিজের বাম হাত দিয়ে অন্তির কোমর পেঁচিয়ে ধরে। অন্তি কেঁপে উঠে ঠোঁট নাড়িয়ে কিছু বলতে যাবে কিন্তু তার আগেই অভিনব ডান হাতের শাহাদাত আঙ্গুল দিয়ে অন্তির ঠোঁট ছুঁয়ে দেয়।অন্তি আগের থেকে বেশি কম্পিত হয় নিজের ঠোঁটে হিম শীতল হাতের স্পর্শ পেয়ে।
সাথে থেকো প্রিয় পর্ব ১৮
অভিনব অন্তির মুখের দিকে এগিয়ে যায়।অন্তি নিজের হাত দিয়ে এতক্ষণ ধীরে ধীরে অভিনবকে ধাক্কা দিলেও এবার নিজের সর্বশক্তি দিয়ে ধাক্কা দেয়।অভিনব পড়ে যায় বিছানায় অন্তিও অভিনবর উপরে পড়ে।কিন্তু এর চেয়ে বড় কিছু ঘটাও হয়তো বাকি ছিল।অভিনবর ওষ্ঠাধর আর অন্তির ওষ্ঠাধর একে অপরকে ছুঁয়ে দেয়।দুজনেই তরিৎ গতিতে একে অপরের থেকে তিন মিটার দূরে সরে যায়।
অন্তি নিজের ঠোঁট জোড়া দুই হাত দিয়ে ঢেকে নেয় চোখ বড় বড় করে অভিনবর দিকে তাকিয়ে বলল,
-‘আমার প্রথম লিপ কিস!’