সাথে থেকো প্রিয় - Golpo Bazar

সাথে থেকো প্রিয় পর্ব ২ || sathe theko priyo

সাথে থেকো প্রিয়

সাথে থেকো প্রিয় পর্ব ২
লেখক:রিয়ান আহমেদ

অভিনব নিজের ঠোঁটে ডান পাশ চেপে ধরে অন্তির দিকে অগ্নি দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে।অন্তির চোখ দিয়ে যেনো আগুন ঝড়ছে যা অভিনবকে জ্বালিয়ে পুড়িয়ে শেষ করতে চাইছে।অন্তি অভিনবর লার্টের কলার ডান হাত দিয়ে চেপে ধরে দাঁতে দাঁত চেপে বলল,

-‘কি মনে করেছেন আপনি আমাকে?আমাকে আপনি শুধুমাত্র নিজের ইনভেস্টমেন্ট হিসেবে ব্যবহার করেছেন তাই না?আমার বাম হাতে হয়তো সমস্যা হয়েছে কিন্তু আমার ডান হাত সম্পূর্ণ ঠিকাছে আর আপনার মতো মানুষদের জন্য ওটাই যথেষ্ট।,,আপনার মতো ধনীর দুলালদের কাছে হয়তো বিয়ে একটা সাধারণ ইভেন্ট মাত্র কিন্তু আমার মতো মেয়েদের কাছে এটা একটা স্বপ্ন একটা উৎসব।আমার কাছে বিয়ে মানে একজন এমন মানুষকে পাওয়া যে একান্তই আমার নিজের,যে আমার বন্ধু হবে। আমার জীবনে কখনোই আপন বলতে আমি কাউকে পাইনি জন্মের আগে আমার কাপুরুষ বাবা আমার মাকে ছেড়ে চলে গেছে আর জন্মের সময় মা।তাই ভেবেছিলাম বিয়ের পর আমি নিজের একটা পরিবার পাবো,,,কিন্তু সবটাই আপনি শেষ করে দিলেন।আমি আপনার কি ক্ষতি করেছিলাম বলুন না। শুধুমাত্র এই হুইল পেপারের খাতিরে যেই বিয়েটা হয়েছে সেটাকে কি আদৌ কোনো বিয়ে বলে মানা যায়?,,,আপনারা পুরুষরা এমন কেন?সবসময় মেয়েদের উপরে নিজেদের সিদ্ধান্ত চাপিয়ে দেন।আমাদের কি মন বলতে কিছু নেই?,,,,,,,,’

আরও গল্প পড়তে আমাদের গুপ এ জয়েন হউন

অন্তি কথাগুলো বলতে গিয়ে অঝোর ধারায় কাঁদতে কাঁদতে ফ্লোরে বসে পড়ে।অন্তির এমন কান্না দেখে অভিনবর রাগটা নিমেষেই পানি হয়ে যায়।তাঁর ভেতরের অপরাধবোধ তাঁকে ঘিরে ধরে।আজ এই নিষ্পাপ মেয়েটির চোখের প্রতিটি জলের ফোঁটার জন্য দায়ী সে।মেয়েটা তো বেশি কিছু চায়নি জীবন থেকে শুধুমাত্র চেয়েছিল আপন বলতে পারে এমন কিছু মানুষ।অন্তির বাম হাতের সমস্যা হচ্ছে সে ঐ হাতে জোর পায় না।বাম হাত দিয়ে কোনো কিছু ধরতে গেলে হাত কাঁপে ভারী জিনিস তোলা তো অসম্ভব আর পুরোপুরি সোজা করতে অনেক কষ্ট হয়। অন্তিকে ডান হাতে ভর দিয়ে উঠে দাঁড়ানোর চেষ্টা করতে দেখে অভিনব সাহায্য করতে চায় কিন্তু অন্তি নিজেকে গুটিয়ে নিয়ে বলে,
-‘আলগা পিরিত দেখাতে আসবেন না।মাইন্ড ইওর ওন বিজনেস।’
অন্তি উঠে দাঁড়িয়ে নিজের রুমে চলে যায়।কিছুক্ষণ পর নিজের জিনিসপত্রের ব্যগ এনে মেইন দরজা দিয়ে বের হয়ে যায়।অভিনব অন্তির পিছু পিছু যায় না।শুধু দারোয়ানকে ফোন করে বলে,
-‘ম্যাডামকে বাইরে বের হতে দিও না।’

অভিনব চুপ করে বসে থাকে দশ মিনিট হয়ে যায় কিন্তু অন্তির আসার খবর নেই।অভিনব এবার বাড়ির বাইরে বের হয়ে দেখে অন্তি দরজার সামনে একটা বেঞ্চে বসে আছে।দারোয়ান তাঁকে বারবার ভিতরে যেতে বলছে কিন্তু অন্তি সেখানেই বসে আছে।কৃষ্ণচূড়া গাছের নিচে লালা শাড়ি পড়া মেয়েটাকে দেখতে অসাধারণ লাগছে।কথাটা অভিনবর মস্তিষ্কে আসতেই অভিনব মাথাটা এমনভাবে ঝাড়া দেয় যেনো কথাটা মাথায় আনা দণ্ডনীয় অপরাধ।অভিনব অন্তির সামনে গিয়ে দাঁড়িয়ে বলল,
-‘এখানে বসে আছেন কেন?আমার এতো বড় বাড়ি থাকতে আমার সদ্য বিবাহিতা স্ত্রী একটা গাছের নিচে বেঞ্চে বসে থাকবে এটা তো মানা যায় না।চলুন বাড়ির ভেতরে আমরা এই বিষয় নিয়ে একটা সঠিক সিদ্ধান্তে নাহয় পৌছাবো কি করে?’
কথাটা বলে অভিনব অন্তির হাতটা ধরতেই অন্তি এমনভাবে তাকায় যেনো অভিনবকে খেয়ে ফেলবে।অন্তি বেশ শান্ত গলায় বলল,
-‘আমাকে এখান থেকে যেতে দিন আর হাত ছাড়ুন না হলে এর পরের পরিণতির জন্য আপনি পস্তাবেন।’
অন্তির শান্ত গলার কথাটা অভিনবর কাছে বেশ ভয়ংকর মনে।তবুও সে দমে যাওয়ার পাত্র না।অভিনব আবার বলল,

-‘দেখুন আমি জানি আমি আপনার সঙ্গে অন্যায় করেছি এন্ড আই রিগ্রেট ফর দ্যাট বাট আমি আপনাকে কথ্,,,,,আহহ।’
অন্তি অভিনবর হাতে একটা কামড় দিতেই অভিনব আর না পেরে হাত ছেড়ে দেয়।অভিনব আশেপাশে তাকায় এটা দেখার জন্য যে গার্ড এই ঘটনা দেখেছে কি না কিন্তু ভাগ্যবশত কেউই ঘটনাটা খেয়াল করেনি।অন্তির প্রতি এবার অভিনবর রাগ হচ্ছে একটা মেয়ে যে কিনা একদিনও হয়নি তাঁর বাসায় এসেছে সে কি না দুই দুইবার তাঁকে মারাত্নকভাবে আঘাত করে ফেলেছে।
আঘাতটা মারাত্মক না হলেও অভিনবর কাছে মারাত্মক কারণ অভিনব নিজের মুখে একটা ব্রন সেটা নিয়ে এমনভাবে সিরিয়াস হয়ে যায় যেন ওটা একটা বিরাট রোগ।অভিনব অন্তিকে দাঁতে দাঁত চেপে বলল,
-‘তুমি এখনই যদি ঘরে না যাও তবে তোমার একদিন কি আমার যতদিন লাগে।’
অভিনব অন্তিকে তুমি করে বলছে ব্যাপারটা অন্তির খেয়াল হলেও ইগনোর করলো।অন্তি বেঞ্চে আরো ভালোভাবে আসন করে বসলো আর বলল,
-‘আমি আপনার সঙ্গে যাব না আপনি দয়া করে দরজাটা খুলে দিতে বলুন।এরপর আর কোনো দয়া করতে হবে না আপনার রাস্তায় আপনি আর আমার রাস্তায় আমি।’

-‘আর যদি না খুলতে বলি তবে?যদি তোমাকে না যেতে দেই এখান থেকে?’
-‘তাহলে আমি এখানেই বসে থাকবো তবুও আপনার বাড়িতে যাবো না।’
অন্তির কথা শুনে অভিনব অবাক না হয়ে পারলো না।মেয়েটা বড্ড বেশি জেদি অভিনব ভেবেছিল অন্তি হয়তো নরম স্বভাবের,ভীতু প্রকৃতির মেয়ে হবে কিন্তু এখন সে উপলব্ধি করছে অন্তির সম্পর্কে তাঁর ধারণাগুলি নিতান্তই ভুল।অভিনব মেয়েদের কখনোই গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করেনি তবে এটা ঠিকই বলতে পারবে অন্তি নামের এই মেয়েটিই এমন একজন যে তাঁকে বারবার চ্যালেঞ্জ করছে।অভিনবর সামনে তাঁর নিকটতম মানুষগুলোও কখনো এতোটা সাহস দেখায়নি।অভিনব বাড়ির দিকে পা বাড়ায় এই মেয়ের সঙ্গে তর্কবিতর্ক করে তাঁর মেজাজ গরম হয়ে গেছে আর এমনিতেও ঠোঁটে আর হাতে মেডিসিন লাগাতে হবে।
অভিনব বারান্দায় দাঁড়িয়ে ল্যাপটপে কাজ করার ফাঁকে ফাঁকে অন্তির দিকে তাকাচ্ছে।মাগরিবের আজান দিয়ে দিয়েছে কিন্তু অন্তি এখনো সেখানেই বসে আছে।এই কড়া শীতে বাইরে এভাবে বসে থাকাটা অভিনবর কাছে জেদ নয় বোকামি মনে হচ্ছে।অভিনব বিড়বিড় করে বলল,
-‘কি মেয়েরে বাবা যা বলবে তাই করতে হবে।একা একা একটা মেয়েকে যে কিনা আমার স্ত্রী তাঁকে আমি বাড়ি থেকে চলে যেতে দেব?ইমপসিবল,,,আচ্ছা ওর কি শীত করছে না?কিছু স্নেক্স আর কফি পাঠাই।’
যেই কথা সেই কাজ অভিনব সার্ভেন্টকে দিয়ে অন্তির জন্য স্ন্যাক্স আর কফি পাঠায়।
অন্তির চুপ করে বসে থাকতে থাকতে পিঠ ধরে গেছে।অন্তি কোমর ধরে উঠে দাঁড়িয়ে দারোয়ানকে বলল,
-‘আরে দরজাটা খুললে কি হয় চাচা?আমার হাত তো ভেঙেই গেছে এখন মনে হয় কোমরের অবস্থাও খারাপ হবে।’
দারোয়ান বললেন,

-‘ম্যাডাম স্যার আমার চাকরি কেড়ে নেবে দরজা খুললে।’
-‘দেখুন আমি আপনার চাকরি তো কেড়ে নেব না কিন্তু আমার ধৈর্য্যের বাঁধ ভেঙ্গে গেলে আপনাকে গুলি অবশ্যই মেরে দেব।’
দারোয়ান অন্তির কথায় চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে সেখান থেকে দ্রুত পায়ে চলে গেল।অন্তি ভেঙচি কেটে হাঁটাহাটি করতে লাগলো তখনই নাহিদা এসে অন্তির দিকে এক ট্রে খাবার এগিয়ে দিয়ে বলল,
-‘ম্যাডাম এগুলো খেয়ে নিন।’
অন্তি চোখ ছোট ছোট করে বলল,
-‘এগুলো আপনার স্যার পাঠিয়েছে?’
-‘জ্বী।’
-‘এগুলো নিয়ে যান আমি এসব খাবো না আমার গাট সেন্স বলছে এগুলো তে বিষ মিশিয়ে দেওয়া হয়েছে।’
-‘জ্,,জ্বী?’
-‘যান এগুলো ওনাকে নিয়েই খাওয়ান।’
অভিনব অন্তির বলা সব কথা শুনছে।অভিনব নাহিদাকে ব্লুটুথে বলল চলে আসতে তাই নাহিদা খাবার সেখানে রেখেই চলে এলেন।অভিনব বাঁকা হেসে বলল,
-‘এতো ভাব নিচ্ছো তো নেও সমস্যা নেই।তবে তোমাকে এই অভিনবর ঘরেই ফিরতে হবে।’
বিধান অভিনবর ঘরের দরজার সামনে দাঁড়িয়ে বলল,
-‘স্যার আসতে পারি?’
-‘হুম এসো, তোমাকে যে বলেছিলাম প্রফেসর তারেক কবিরের সঙ্গে কথা বলতে বলেছিলে?’

-‘জ্বী স্যার বলেছি উনি দুইদিন পরের এপয়েন্টমেন্ট দিয়েছেন।’
-‘ওকে।’
বিধান অভিনবর ‘ওকে’ বলার পর কখনোই দাঁড়িয়ে থাকে না তবে আজ দাঁড়িয়ে আছে আর মনে হচ্ছে সে কিছু একটা বলতে চায়।অভিনব বিধানের জড়তাটা বুঝতে পেরে নিজেই প্রশ্ন করলো,
-‘কিছু বলতে চাও।’
-‘জ্বী স্যার আসলে আসার সময় ম্যামকে দেখলাম বাইরে বেঞ্চে বসে আছে,,,,।’
-‘হুম তো?’
-‘না মানে স্যার রাত আটটা বাজে এতো রাতে শীতের মধ্যে উনি বাইরে বসে থাকলে অসুস্থ হয়ে পড়বেন।’
-‘ওনাকে আসতে বলা হয়েছে উনি আসেননি যদি বাড়ির ভেতরে না ঢুকতে চান তাহলে জোর করে কোলে তুলে তো আর আনতে পারবো না আমি তাই না?’
বিধান কিছুক্ষণ চুপ থেকে বলল,
-‘স্যার আপনি কি ওনাকে শুধুমাত্র সম্পত্তি রক্ষা করতে বিয়ে করেছেন?’
অভিনবর মুখের রঙ পাল্টে যায় প্রশ্নটা শুনে অভিনব মুখ শক্ত করে বলল,
-‘বিধান তুমি এখন যেতে পারো।’
বিধান বুঝতে পারে অভিনব প্রশ্নটার উত্তর দিতে চাইছে না।বিধান গেট খুলে চলে যেতে নেয় কিন্তু আবার ফিরে এসে বলে,

-‘স্যার আপনি কিন্তু চাইলে ম্যামকে কোলে তুলে বাড়িতে আনতে পারেন।’
বিধান কথাটা বলে আর এক মিনিটও অপেক্ষা করে না দ্রুত কদমে সেখান থেকে প্রস্থান করে।অভিনব ভ্রূ কুঁচকে গম্ভীর মুখ করে বলল,
-‘ছেলেটা কি বলে গেল পাগল টাগল হয়নি তো?’
অভিনবর মোবাইলে তখনই ওর মায়ের কল আসে।অভিনব কল রিসিভ করতেই অপর পাশ থেকে ওর মা সুহানা খান ঝাঁঝালো গলায় বললেন,
-‘অভি (অভিনবর ক্লোজ যাঁরা তাঁরা ওকে অভি বলে ডাকে) তুমি আমাদের না জানিয়ে এমন একটা কাজ কি করতে পারলে?আমরা কি তোমার লাইফে কোনো ম্যাটার করি না?তুমি কিভাবে পারলে ওমন থার্ড ক্লাস লেভেলের একটা মেয়েকে বিয়ে করতে?’
অভিনব শান্ত গলায় বলল,
-‘সবাই যেভাবে বিয়ে করে সেভাবে।’
-‘অভি আমি মজা করছি না।আমি আর তোমার ড্যাড পরশুর ফ্লাইটে ডুবাই থেকে ফিরছি।’
-‘ওহ ভালো।’

সাথে থেকো প্রিয় পর্ব ১

-‘ভালো না মন্দ সেটা আমরা তোমাকে এসে বোঝাবো।তুমি নিজের লিমিট ক্রস করে দিয়েছো।তোমাকে আমরা বলেছিলাম না তোমার দাদুভাইয়ের ঐ পেপার্স কোনো কিছুই করতে পারবে না আমরা ব্যাপারটা দেখে নেব?তবুও তুমি বিয়েটা করলেই।’
-‘আচ্ছা রাখছি।’
অভিনব নিজের মাকে আর কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে ফোন কেটে দেয়।

সাথে থেকো প্রিয় পর্ব ৩

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.