সাথে থেকো প্রিয় পর্ব ২০
লেখক:রিয়ান আহমেদ
পুরো রুমের পরিবেশ ঠান্ডা হয়ে আছে।এই পিনড্রপ সাইলেন্স এর কারণ হচ্ছে একটা চুমু।অন্তি এখনো মুখে হাত দিয়ে চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে আছে যেনো তার চোখের পলক পড়তে চাইছে।অভিনব কি বলবে?কি করবে?কোথায় গিয়ে নিজের মুখ লুকাবে?সেসব ভাবতেই ব্যস্ত।অভিনব নিজের অপরাধটা বেশ ভালোই উপলব্ধি করতে পারছে।মেয়েটার সঙ্গে এতটা ক্লোজ সে কখন হলো?হয়েছিল যেহেতু সময়মতো সরে আসাটাও জরুরি ছিল।কারণ তাহলে হয়তো ব্যাপারটা এতোটা ভয়াবহ দিকে যেত না।অভিনব বেড থেকে নেমে দাঁড়িয়ে বলল,
-‘অ,,অন্,,অন্তি আম,,,।’
অভিনবর গলার শব্দটা অন্তিকে বাস্তবে ফিরিয়ে আনলো।অভিনবর সুরেলা গলাটা এই মুহুর্তে তার কাছে ডোরেমনের জিয়ানের গানের চেয়েও বেশি অসহ্য মনে হচ্ছে।এতো তিক্ততা এই গলার মাঝে সে আগে কখনোই আবিষ্কার করতে পারে নি।অন্তি হুংকার দিয়ে বলে,
-‘আপনি আমার সাথে এই জঘন্য কাজটা কিভাবে করতে পারলেন?আর যাইহোক আপনার দ্বারা এটা কখনো আশা করি নি।আপনি আর দশটা ছেলের মতোই মেয়েদের ভোগের বস্তু মনে করেন।চলে যান এই রুম থেকে,,জানি বাড়িটা আপনার কিন্তু ঘরটা যেহেতু দিয়েছেন থাকার জন্য সেহেতু আমার নিজের প্রাইভেসি ও তো আছে তাই না?’
আরও গল্প পড়তে আমাদের গুপ এ জয়েন হউন
অন্তির চোখ অশ্রুশিক্ত হয়।সে বারবার চাইছে অভিনব তার থেকে দূরে থাকুক কিন্তু অভিনব অন্তির মনের ভালোবাসার দিকটায় ক্রমশ এগিয়েই চলেছে।অভিনব বলেছিল সে শুধুমাত্র অন্তির বন্ধু হয়েই থাকবে।কিন্তু অভিনব নিজের কথা রাখে নি।সে বন্ধুত্বের গন্ডি পেরিয়ে দিনকে দিন প্রিয়তম গন্ডির দিকে এগিয়ে আসতে চাইছে।অভিনবকে এখনো দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে অন্তি চিৎকার করে বলল,
-‘আপনি যাবেন এখান থেকে না আমি মরে যেতাম?আমার আপনার প্রতি ঘৃণা আসছে।আপনি আমার জীবনটাকে তিলে তিলে শেষ করে দিচ্ছেন।এর চেয়ে ভালো ছিল আমি নদীতে ঝাপ দিয়ে মরে যেতাম।’
অভিনবর কষ্ট হয়।বুকের ভেতরের দুর্বিষহ ব্যাথাটা তাকে বারবার বলে দিচ্ছে মেয়েটা, মরে যাওয়াটা সে সহজভাবে নিতে পারবে না।অভিনব কঠিন গলায় বলল,
-‘প্লিজ চুপ করো।আমি কখনোই চাই না তুমি আমার জন্য মরে যাও।আজ আমি একটু ড্রিংক করেছিলাম যার কারণে তোমার মধ্যে আমি অন্য কাউকে দেখতে পাচ্ছিলাম।আম সরি আর কখনো এমনটা হবে না যদি হয় ,,,।’
-‘যদি হয় তবে?’
-‘তবে আমি আবার সরি বলবো।ঐ যে তোমার সেই খরগোশ ঐ ছেলেকে টাকা দিয়ে এটা কিনে নিয়েছি আর কান্না করার প্রয়োজন নেই।’
অভিনব দ্রুত কথাগুলো বলে রুম থেকে এক প্রকার দৌড়ে চলে যায়।অন্তি কথাটার মানে বুঝতে পেরে বিছানার নিচের থেকে খরগোশটা খাঁচা থেকে বের করে বলল,
-‘ইশশ কি অবস্থা হয়েছে তোর!আমি তোর নাম দিলাম আজ থেকে টেরি।ইউ আর মাই অনলি ফ্রেন্ড।আমার কোনো ফ্রেন্ড ছিল না,,অভি কিভাবে পারলো আমার সঙ্গে এমনটা করতে?’
অন্তি খরগোশটাকে বুকে জড়িয়ে ধরে চোখ বন্ধ করে কেঁদে দেয়।অন্তির কষ্টটা যেন দ্বিগুণ বেড়ে গিয়েছিল যখন অভিনব বলেছে সে অন্তির মাঝে অন্য কাউকে দেখতে পাচ্ছিল।অন্য কাউকে!কাকে দেখতে পাচ্ছিল অভিনব সেই নীল চোখের মারিহাকে?হয়তো তাই।সেই মেয়েটাই তো অভিনবর জীবনের প্রথম ভালোবাসা ছিল।অন্তির ডুকরে কান্না করাটা কেউ শুনতে পায় না।এই কান্নাটা বন্দি হয়ে থাকে ঘরের চার দেয়ালের মাঝে আর কালে থাকা টেরির কানে।কিন্তু টেরি তো একটা খরগোশ যে কি না একটা নির্বোধ প্রাণী সে কি আর বুঝবে সৃষ্টির সেরা জীব মানুষের মনের কষ্ট?
-‘নিজের স্ত্রীকে কোনো স্বামী অন্য নারী হিসেবে কল্পনা করে আমার জানা নেই তবে আমার সো কল্ড হাজব্যান্ড করে।,,আমি ভেবেছিলাম আমার লাইফ কখনো না কখনো অন্যদের মতো স্বাভাবিক হবে কিন্তু আমি ভুলে গিয়েছিলাম আমার জীবনে সেটা ভাবনায় আনাও ভুল কারণ আমার লাইফ যেমন আছে তেমনই থাকবে হয়তো কখনো কখনো এর চেয়েও বেশি বিগড়ে যাবে কিন্তু এর চেয়ে ভালো হবার নয়।’
অভিনবর চোখে সকালের মিষ্টি রোদের আলো পড়তেই সে চোখমুখ কুঁচকে নেয়।চোখের ভেতরটা তীব্র আলো ফেস করার জন্য কিছু সময় চাইছে তার কাছে।ধীরে অভিনব চোখ খুলে সোফা থেকে উঠে বসে।সে রাতেরবেলা নিজের ঘরে যায় নি হল রুমের পাশের বড় বারান্দার দোলনায় ঘুমিয়ে পড়েছিল।টেবিলের এঁটো কফির কাপটা আগের জায়গায় আছে মানে সার্ভেন্টরা এখনো নিজেদের রাতের স্বপ্নের সমাপ্তি টানতে ব্যস্ত।অভিনব নিজে দিকে তাকিয়ে চমকে যায়।টার্কিশ কালার অথবা ফিরোজা রঙের যে শার্টটা সে পড়ে আছে তাতে রক্তের ছোপ ছোপ দাগ লেগে আছে।
অভিনব মনে মনে বলল,
-‘ইশশ কাল অন্তি দেখে নি তো?নাহ্ হয়তো তখন ওসবের মাঝে খেয়াল করে নি।আমি ড্রিংক্স করি নি কাল কিন্তু পরিস্থিতিকে সামাল দিতে আমি তখন সেটা বলেছি।আসলে তো আমি অন্তিকে অন্তি ভেবেই ওর কাছে গিয়েছি।কেন আমি অমন অদ্ভুত আচরণ করলাম ওর সাথে?ও আগের থেকেই আমাকে কত নেগেটিভ ধারণা রাখে তার উপর আবার ওকে,,,ছিঃ স্যাম অন মি।মেয়েটাকে আমি আজ থেকে তার যোগ্য সম্মান দেওয়ার যথাযথ চেষ্টা করবো।নিজের ভুলগুলো শুধরানোর যতগুলো সুযোগ পাব সেই সবগুলো কাজে লাগাব।,,আচ্ছা অন্তির প্রতি কি আমার কোনো ফিলিংস তৈরি হয়েছে?,,নাহ্ এসব ফিলিংস টিলিংস সব বাজে বিষয়।একবার জ্বলেছি সে আগুনে আর জ্বলতে চাই না।হয়তো বন্ধু হিসেবে অন্তির প্রতি আমার মনের ভেতরে একটা সফ্ট কর্ণার তৈরি হয়েছে।’
অভিনব নিজের ঘরের দিকে পা বাড়াতে যাবে তখনই দেখে অন্তি এদিকেই আসছে।অভিনবকে দেখে অন্তি একবার আড়চোখে তাকায় এরপর আবার চোখ ফিরিয়ে নিয়ে হাঁটতে শুরু করে কিন্তু একটা বিষয় লক্ষ করে আবার অভিনবর দিকে ফিরে তাকিয়ে বলল,
-‘আপনার হাতে কি হয়েছে আর শার্টে এগুলো কি?’
অভিনব চিন্তায় পড়ে গেল কি বলবে।অভিনব আমতা আমতা করে বলল,
-‘এটা শার্টের ডিজাইন।আর হাতে ব্যাথা পেয়েছি।’
-‘কিভাবে এমন ব্যাথা পেলেন যে হাত এভাবে কেটে গেল?’
-‘মা,,মানে আসলে দরজার সঙ্গে ব্যাথা পেয়ে কেঁটে গেছে।’
-‘ইসস কি বাজে ভাবে কেটেছে দিন আমি ব্যান্ডেজ করে দেই।আপনি দাঁড়ান আমি ফার্স্ট এইড বক্স আনছি।’
-‘না না দরকার নেই আমি করে নিতে পারবো।’
-‘আরে চুপ করে এখান বসুন নড়বেন না একদম আমি আসছি,ওয়েট করুন।’
অভিনবকে সোফায় বসিয়ে দিয়ে অন্তি চলে গেল।অভিনব অবাক অন্তির আচরণে।গতকাল রাতেই তো মেয়েটি তাকে বেশ ভালোভাবে ঝেড়ে দিয়েছিল আর আজ কত কেয়ার নিচ্ছে।কিছুক্ষণ পর অন্তি ফার্স্ট এইড বক্স হাতে ফিরে এলো।অভিনবর হাত সুন্দর করে ব্যান্ডেজ করে দিল।
অভিনব অন্তির দিকেই তাকিয়ে আছে।অন্তি সেটা আড়চোখে দেখে বলল,
-‘এভাবে তাকিয়ে থাকার কিছু নেই আমার সবাইকে সাহায্য করতে ভালো লাগে।’
-‘আমাকে কেমন লাগে?’
অভিনব মুখ ফসকে হঠাৎ প্রশ্নটা কিভাবে যেন করে ফেলল।অভিনবর প্রশ্নে সে নিজে যেমন বিপত্তিতে পড়েছে তেমনই অন্তিকেও অস্বস্তিতে ফেলে দিয়েছে।অন্তি কিছুক্ষণ কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে বসে থাকে।এরপর ছোট্ট একটা নিঃশ্বাস ফেলে ব্যান্ডেজ করায় ব্যস্ত হয়ে বলে,
-‘বাজে লাগে।,,বাই দ্যা ওয়ে আমি জীবনে প্রথম এরকম শার্টের ডিজাইন দেখলাম।ডিজাইনটা বাজে লাগছে বুঝলেন।টার্কিশ কালারের সঙ্গে রক্ত লাল ডিজাইন জাস্ট ওয়াক,,কিন্তু আমার কেন জানি না মনে হচ্ছে এটা কোনো ডিজাইন না সত্যিকারের রক্ত।’
-‘মনে হতেই পারে।মানুষের তো কতো কিছু মনে হয় সবকিছু কি সত্যি হয় না কি?তোমাকে একটা কথা বলতে চাই।’
-‘হুম বলুন।’
-‘আমরা আজ খান ম্যানশনে মানে তোমার শশুড় বাড়িতে শিফ্ট হচ্ছি।’
-‘কিহহ?'(অবাক হয়ে)
-‘তুমি কি এতে খুশি না?আমার বাবা মা চায় আমি তোমাকে নিয়ে সেখানেই থাকি।’
-‘নাহ্ মানে ওনারা আমাকে ঠিক কেমনভাবে নেবে তা নিয়ে একটু ভয় পাচ্ছিলাম আর কি?’
-‘ডোন্ট বি,,আমার মা বাবা একটু গম্ভীর স্বভাবের কিন্তু মনের দিক দিয়ে ভালো।’
অভিনব অন্তিকে এসব কথা শুধুমাত্র শান্তনা স্বরূপ বলছে।সে নিজেও জানে না তার বাবা খান ম্যানশনে অন্তির সঙ্গে ঠিক কেমন আচরণ করবে।অর্ণব খান যে এতো সহজেই ওর কাছে হার মানবে না তা ওর ভালো মতো জানা আছে।
সারিকা জামাকাপড় সব গুছিয়ে লাগেজ নিয়ে নিজের ফ্লার্ট থেকে বের হতেই একটা বড় ফুলের দোকান দেখতে পায়।না না এটা ফুলের দোকান না অনেক বড় সাদা গোলাপের বুকে নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকা একজন জ্যান্ত মানুষ।
-‘শুভ্র গোলাপ দিয়ে দিনটি শুরু হোক তোমার শুভ সকাল।’
সারিকা চোখমুখ কুঁচকে বিরক্তি প্রকাশ করে।শুভ্রর মতো ছেলে প্রেম নিবেদনের পর প্রত্যাখ্যাত হয়ে আবার ফিরে আসবে সেটা সারিকা আশা করে নি।তবুও এসেছে যখন বিদায় তো করতেই হবে।সারিকা ল্যাগেজটা রেখে শুভ্রর সামনে গিয়ে দাঁড়িয়ে শান্ত গলায় প্রশ্ন করলো,
-‘শুভ্র কি চাই আপনার?’
-‘তুমি চাইলে আমি তোমার হবো কিন্তু আমি চাইলে কি তুমি আমার হবে?’
সাথে থেকো প্রিয় পর্ব ১৯
-‘ফালতু বকবক না করে যেটা প্রশ্ন করেছি সেটার উত্তর দিন।’
-‘প্রথমত আমি তোমাকে চাই
দ্বিতীয়ত আমি তোমাকে চাই
তৃতীয়ত আমি তোমাকে চাই
শেষ পর্যন্ত তোমাকে চাই…
নিঝুম অন্ধকারে তোমাকে চাই
রাতভোর হলে আমি তোমাকে চাই
সকালের কৈশোরে তোমাকে চাই
সন্ধের অবকাশে তোমাকে চাই
বৈশাখী ঝড়ে আমি তোমাকে চাই
আষাঢ়ের মেঘে আমি তোমাকে চাই
শ্রাবণে শ্রাবণে আমি তোমাকে চাই
অকালবোধনে আমি তোমাকে চাই…’
(বাকিটুকু নিজেরা শুনে নিন পাঠক পাঠিকাগন)