সাথে থেকো প্রিয় - Golpo Bazar

সাথে থেকো প্রিয় পর্ব ২১ || sathe theko priyo

সাথে থেকো প্রিয়

সাথে থেকো প্রিয় পর্ব ২১
লেখক:রিয়ান আহমেদ

-‘বন্ধ করুন আপনার এই এই গান।কি চান এখানে তাই বলুন।দেখুন আমি আপনাকে সেদিন কোনোভাবে রিজেক্ট করার সময় অপমান করতে চায় নি যদি করে থাকি তাহলে সরি।এবার এখান থেকে যান।’
সারিকা রেগে কথাটা বলে লাগেজ নিয়ে লিফ্টের দিকে এগিয়ে যাবে তখনই শুভ্র আবার পেছন থেকে ডেকে বলে উঠে,
-‘কেন?কেন?আমি আজ সারাদিন তোমার সঙ্গেই কাটাবো বুঝলে?আজ অফিস নেই কোনো কাজ নেই তাই তুমি আর আর আমি আজ ডেটে যাব।প্রকৃতিও তাই চাই,,,দেখতে পাচ্ছো না আজ কি সুন্দর করে হাসছেন সূর্য মামা,পাখিরা গান গাইছে,আহা এমন দিনে যদি আমরা ঘোরাঘুরি না করি তবে দিনটাই দুজনের জন্য অপচয় হবে।'(হেসে)
সারিকার ইচ্ছে করছে চেঁচামেচি করে মানুষ ডেকে শুভ্রকে গণধোলাই দিতে এতটা বিরক্তিকর মানুষ কি করে হতে পারে।সারিকা কথা আর বাড়ায় না।পাগল মানুষদের সঙ্গে বেশি কথা বলা মানে তাদের মতোই ধীরে ধীরে পাগলে পরিণত হতে হবে।সারিকাকে লিফ্টে উঠতে দেখে শুভ্রও দৌড়ে সারিকার কাছে যায়।

দুজন একসাথে লিফ্ট উঠে।শুভ্র সারিকার দিকে তাকিয়ে বাঁকা হেসে বলল,
-‘সুইট হার্ট আমরা তো শুধু ঘুরতে যাচ্ছি কয়েক ঘন্টার জন্য এতো বড় লাগেজ কেন নিয়েছো আমরা তো আর হানিমুন যাচ্ছি।’
লিফ্টে একটা মধ্য বয়স্ক লোক ছিল।শুভ্রর কথা শুনে তিনি বড্ড বিরক্ত হলেন।তার মনে হচ্ছে সবার কথাই ঠিক ইয়াং জেনারেশনের ছেলে মেয়েরা দিনকে দিন অভদ্রতার উপরে ডিগ্রি নিচ্ছে না হলে পাব্লিক প্লেসে কেউ এমন ধরনের অদ্ভুত,উদ্ভট,অভদ্র কথা বার্তা বলতে পারে?লোকটা কেশে নিজের উপস্থিতি জানান দেয়।সারিকা শুভ্রর দিকে চোখে গরম করে তাকিয়ে থাকে শুভ্রর দিকে আর ইশারায় মুখ সংযত করতে বলে।কিন্তু শুভ্র যেন এতে আরো বেপরোয়া হয়ে উঠে।সে আবারও বলে,

আরও গল্প পড়তে আমাদের গুপ এ জয়েন হউন

-‘আজ একটা শাড়ি পড়লেও তো পারতে কি যে পড়ো এসব?ঘুরতে যাওয়ার সময় কেউ এমন কালো লং শার্ট আর জিন্স পড়ে সাথে আবার সাদা স্কার্ফ।একেবারেই রঙহীন জামাকাপড়।এরপর ঘুরতে যাওয়ার সময় একটা গোলাপি শাড়ি পড়বে বুঝলে?’
সারিকা এবার আর না পেরে শুভ্রর দিকে অনেকটা চেপে এসে দাঁতে দাঁত চেপে বলে,
-‘আর একটা কথা বললে আপনাকে এই লোকটার সামনেই ঘুষি মেরে বসবো।নিজের নাক বাঁচাতে চাইলে চুপ থাকুন।’
কথাটা বলতে বলতে সারিকা একটা পিন নিয়ে শুভ্রর পিঠে খোঁচা মারে।শুভ্র খানিকটা জোরে চেঁচিয়ে উঠে একটু দূরে চলে যায়।হাতে দিয়ে পিঠ ডলতে ডলতে বিরক্তি নিয়ে বলে,
-‘আজকাল লিফ্টেও পিপড়াদের বসবাস শুরু হয়েছে নাকি?’
সারিকার দিকে তাকাতেই শুভ্র দেখঃ সারিকা মিটমিট করে হাসছে আর হাতে পিন।শুভ্রর যা বোঝার সে বুঝে যায়।তার রাগ উঠছে সারিকার উপর এই মুহুর্তে তবুও নিজেকে সে সংযত করে কারণ ‘রেগে গেলেন তো হেরে গেলেন ‘।শুভ্র হারতে চায় না।

লিফ্ট থামতেই শুভ্র আর সারিকা বের হয়ে আসে।সারিকা পার্কিং লটে গাড়ীর ডিকিতে নিজের লাগেজ রাখতে যাবে।তখনই শুভ্র এসে একজন জেন্টাল ম্যানের মতো সারিকার হাত থেকঃ লাগেজ নিয়ে নিজে রেখে দিতে চায়।কিন্তু সেটা টেনে নিজের হাতে নিয়ে নেয় আর রেগে বলে,
-‘সমস্যা কি আপনার?আমার কাজ আমি নিজে করতে পারি বুঝলেন?আই ডোন্ট নিড ইউর হেল্প।’
-‘আরে হেল্প কোথায় করছি?লাইফ পার্টনার হবো আমরা ভবিষ্যতে তাই আমাদের দুজনের উচিত একে অপরের কাজকে নিজের কাজ ভাবা।’
-‘লাইফ পার্টনার!ইন ইওর ড্রিমস।এই জীবনে আপনার এই ইচ্ছে পূরণ হবার নয়।’
সারিকা গাড়িতে উঠে সেখান থেকে নিজের বাড়ির উদ্দেশ্যে রওয়ানা হয়।শুভ্র সেখানেই দাঁড়িয়ে থাকে।রেগে গিয়ে একটা গাড়িতে লাথি মারে আর মনে মনে বলে,
-‘তোমার উপর আমি যা এফোর্ট দিচ্ছি তার এক অংশ অন্য মেয়ের উপর দিলে সে আমার ভালোবাসায় পাগল হয়ে মরতেও রাজি থাকতো।নো প্রবলেম তুমি আজ আমাকে ঘুরাচ্ছো ঠিকাছে কিন্তু সময় সবার আসে সুইটি সেটা মনে রেখো।’

অন্তি বারান্দায় বসে টেরিকে সবজি খাওয়াচ্ছিল ওর মনে হলো কেউ ওকে পর্যবেক্ষণ করছে।আচমকা পেছনের দিকে তাকালো যা ভেবেছিল তাই পাশের বাসার সেই ছেলেটা দাঁড়িয়ে আছে আর ওকে অদ্ভুতভাবে দেখছে।ছেলেটা ওর চেয়ে কিছুটা বড় হবে বয়সে।ছেলেটার ঠোঁটের দিকে কাঁটা দাগ আর হাতে ব্যান্ডের সাথে কপালেও ব্যান্ডেজ দেখে অন্তির কেমন যেন খটকা লাগলো।কাল তো ছেলেটা একদম ঠিক ছিল ফিট এন্ড ফাইন আজ এমন অবস্থার কারণটা কি?ছেলেটার সাথে চোখাচোখি হতেই ছেলেটা কেমন যেন ভয়ার্ত দৃষ্টিতে অন্তির দিকে তাকালো আর দ্রুত পায়ে নিজের ঘরে চলে গেল।

অন্তির মনে পড়লো সকালে অভিনবর হাতের কাঁটা দাগ আর শার্টের ডিজাইনটা সত্যি বলতে অন্তির কাছে ডিজাইন নয় রক্তই মনে হচ্ছে।
অন্তি অভিনবর রুমে গিয়ে নক না করেই ঢুকে পড়লো।অভিনব ওয়াশরুমে আছে তার শার্ট প্যান্ট সে বাইরে রেখে দিয়েছে ম্যাড এসে নিয়ে যেতে পারে ধোঁয়ার জন্য।অন্তি অভিনবর শার্টটা হাতে নেয়।রক্তের দাগগুলো সে হাত দিয়ে স্পর্শ করে আবার ঘ্রাণ নিয়ে দেখে।একটা মিষ্টি ঘ্রানের সঙ্গে রক্তের গন্ধটাও পাওয়া যাচ্ছে।অন্তি এবার শিওর অভিনব কিছু একটা উল্টাপাল্টা তো করেছে যার কারণে তার শার্টে ব্লাড লেগেছে।অন্তি মনে মনে বলল,

-‘উনি কি করেছেন?,,আচ্ছা ছেলেটাকে কি উনিই মেরেছেন নাকি?কিন্তু কেন?আমার জন্য!’
অন্তির ভাবনার মাঝে ব্যাঘাত ঘটায় অভিনবর কন্ঠস্বর।অভিনব নিজের ভারী পুরুষালি বলে,
-‘অন্তি তুমি এখানে কি করছো?’
অন্তির হাত থেকে শার্ট পড়ে যায় সে তাড়াহুড়োর মাঝে পেছনে ঘুরে আর অভিনবর এমন রুপ দেখে তার মাথা ব্ল্যাংক হয়ে যায়।মুভিতে সে হিরোদের এমন শার্টলেস রূপে দেখেছে কিন্তু আজ সে এই রূপের দর্শন বাস্তবে করছে।মনের অজান্তেই অন্তির মুখ হা হয়ে যায়।অভিনব শুধু একটা কালো টাওয়েল জড়িয়ে রেখেছে নিজের কোমরে।কালো চুলগুলো থেকে এখনো পানির কনা বিন্দু বিন্দু করে ঝড়ে চলেছে।অন্তিকে নিজের দিকে হা করে তাকিয়ে থাকতে দেখে অভিনব বুঝতে পারে তার বউ তাকে চোখ দিয়ে গিলে খেয়ে ফেলবে আজ আর কিছুটা সময় এভাবে শার্টলেস অবস্থায় থাকলে।অভিনব খাট থেকে টি শার্ট নিয়ে নিজের গায়ে জড়িয়ে নেয়।অন্তির চিবুকে হাত দিকে মুখটা বন্ধ করে দিয়ে বলে,

-‘তুমি আর কতক্ষণ আমার দিকে এভাবে তাকিয়ে থাকবে জানতে পারি?’
অন্তি থতমত খেয়ে গিয়ে নিজের চোখ নামিয়ে নেয়।অভিনবকে এইভাবে তাকিয়ে দেখাটা তার উচিত হয় নি কিন্তু অভিনব ওকে এভাবে লজ্জা না দিলেও পারতো। অন্তির হঠাৎ মনে পড়ে ওর এই রুমে আসার উদ্দেশ্য কি ছিল।অন্তি নিজের লজ্জা টজ্জা সব জানালা দিয়ে ছুঁড়ে ফেলে দিয়ে অভিনবর চোখে চোখ রেখে বলল,
-‘আপনাকে কি ছেলেটা এমনি এমনি খরগোশটা দিয়ে দিল না কি?’
-‘না,,মানে কিছু টাকা দিতে হয়েছে।’
-‘আপনি মিথ্যা কেন বললেন?এই শার্টে রক্ত লেগে আছে এটা কোনো ডিজাইন নয়।আপনি কি করেছেন সত্যি করে বলুন।’
-‘তোমাকে বলার প্রয়োজনবোধ করছি না।’
-‘আমাকে বলতে আপনি বাধ্য কারণ আমি আপনার ওয়াইফ,,আপনি ঐ ছেলেটাকে মেরেছেন তাই না?’

সাথে থেকো প্রিয় পর্ব ২০

-‘,,,,,,,,,
-‘কি হলো জবাব দিন।’
-‘আই এগ্রিড আমি ওকে মেরেছি।’
-‘কেন?’
-‘বিকজ সে তোমাকে অপমান করেছিল তাই আমি রেগে গিয়ে ওকে মেরেছিলাম এবার এখান থেকে যাও।’
অন্তি কথাটা শুনে অবাক হয়ে অভিনবর দিকে তাকিয়ে রইলো কারণ ওর জীবনে এই প্রথম কেউ ওর জন্য প্রতিবাদ করেছে।অন্তি কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থেকে নিঃশব্দে রুম ত্যাগ করে।
অভিনব নিজেও কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে গেছে।কারণ এই প্রথম অন্তি নিজেকে ওর ওয়াইফ বলে দাবি করেছে।

সাথে থেকো প্রিয় পর্ব ২২

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.