সাথে থেকো প্রিয় পর্ব ২২
লেখক:রিয়ান আহমেদ
-‘আসসালামু ওয়ালাইকুম আন্টি এবং আংকেল।’
সুহানা হাসি মুখে সালামের উত্তর দিলেও অর্ণব অনেকটা গম্ভীর হয়েই সালামের উত্তর দিল।অন্তি মুখে হাসি বজায় রেখেছে কারণ কিছু কিছু সময় হাসিটার সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন হয় সকলের সঙ্গে মিশে যেতে।অন্তি আজ প্রথম খান ম্যানশনে এসেছে তাই সে চেষ্টা করছে সকলের সঙ্গে সহজ হওয়ার।সুহানার মাঝে অন্তি মা মা ভাব দেখেছে যেটা তাকে সুহানার প্রতি আরো ইন্টারেস্টেড করে তুলেছে।সুহানার বয়সের তুলনায় তাকে ততটা বয়স্ক মনে হয় না কেউই দেখলে বলতে পারবে না তার দুটো বড় বড় ছেলে মেয়ে আছে আবার ছেলের বউও আছে।
সুহানা অন্তিকে আর অভিনবকে বলল,
-‘যাও রুমে গিয়ে ফ্রেস হয়ে নেও তোমরা সারিকাও চলে এসেছে ঘরে আছে।কিছুক্ষণ পর আমরা লাঞ্চ করবো।’
-‘ওকে,অন্তি আমার সঙ্গে চলো।’
–‘ঠিকাছে,,আরে দাঁড়ান অভি টেরিকে আমি গাড়িতে রেখে এসেছি আনছি এখনি।’
অন্তি দৌড়ে চলে গেল টেরিকে আনতে।অর্ণব আর সুহানা অভিনবর দিকে জিজ্ঞাসা বোধক দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলল,
-‘হু ইজ টেরি?’
অভিনব হেসে বলল ,
-‘আসলেই দেখতে পাবে।’
কিছুক্ষণের মাঝেই অন্তিকে সাদা একটা খরগোশ হাতে বাড়িতে ঢুকতে দেখে সুহানা আর অর্ণবের চক্ষু চড়কগাছ।একটা খরগোশের নাম টেরি!’রেডিকিউলাস’ কথাটা বিড়বিড় করতে করতে অর্ণব নিজের হল রুম থেকে চলে যায়।অন্তি টেরিকে নিয়ে এসে সুহানার সামনে দাঁড়িয়ে বলল,
আরও গল্প পড়তে আমাদের গুপ এ জয়েন হউন
-‘আন্টি এটা আমার ফ্রেন্ড টেরি।’
সুহানা জোরপূর্বক হাসলেন সে ছোটবেলা থেকে পশু পাখির থেকে দুরত্ব বজায় রেখে চলেন তাই কিছুটা অপ্রস্তুত ভঙ্গিতে বললেন,
-‘সু,,সুন্দর তোমার বন্ধু আমি যাচ্ছি।’
সুহানা দ্রুত নিজের পা চালান।তার হাটার ধরণ দেখে মনে হচ্ছে টেরি ওনার পেছনে ধাওয়া করছে বিশাল দানব আকার নিয়ে।ধরতে পারলে টপাটপ গিলে খেয়ে ফেলবে।
অভিনবর পেছন পেছন অন্তি একটা রুমে প্রবেশ করে।রুমটাকে দেখে মনে হচ্ছে কোনো স্পোর্টস লাভিং পার্সোনের রুম।সাদা,কালো,আর ছাই দিয়ে রুমটার প্রতিটি কোনা পরিপূর্ণ।অন্তি দেয়ালের দিকে তাকিয়ে দেখে বেশ কিছু খেলোয়াড় অভিনবর ছবি।ছবিগুলোতে অভিনব কোনোটাতে বাস্কেটবল প্লেয়ার তো কোনোটাতে ফুটবলা প্লেয়ার হয়ে দাঁড়িয়ে আছে।আর পাশেই বেশ কিছু চকচকে ট্রফি যা অভিনব নিজের প্রতিভা ধারা অর্জন করেছে।অন্তি অভিনবর দিকে তাকিয়ে বলল,
-‘এটা আপনার ঘর না কি?’
অভিনব নিজের লাগেজটা থেকে কিছু জিনিসপত্র বের করতে করতে বলল,
-‘হ্যা এনি ডাউটস?’
অন্তি বিরক্তি নিয়ে বলল,
-‘তাহলে আমার ঘরটা আমাকে প্লিজ দেখিয়ে দিন।আমি আপনার রুমে আর কতক্ষণ এভাবে দাঁড়িয়ে থাকবো?’
-‘এটাই তোমার রুম।’
-‘কিহহ?আমার রুম মানে কি আমি আপনার সাথে থাকবো না কি?কখনোই না আপনি আমাকে অন্য রুমে থাকার ব্যবস্থা করে দিন আর না হয় আমাকে আমাদের আগের বাড়িতে রেখে আসুন।’
অভিনব এবার কোমরে হাত দিয়ে গম্ভীর ভঙ্গিতে অন্তির সামনে গিয়ে দাঁড়াল আর বলল,
-‘এটা আমাদের দুজনের রুম আজ থেকে তাই তোমাকে আর আমাকে এখানেই থাকতে হবে বুঝলে।’
-‘হোয়াই?দেখুন মুভির মতো বা নাটকের মতো আমাদের অস্বাভাবিক বিয়ের কাহিনী যে আপনার বাড়ির লোকজন জানে না এমনটা তো নয় তাই না?তাই আমরা দুজন একসাথে থাকলেও কি আর না থাকলেও কি।’
অভিনব কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে বলল,
-‘আমি মম ড্যাডকে বলেছি আমাদের সম্পর্ক এখন স্বাভাবিক।’
অন্তির মাথায় আকাশ ভেঙ্গে পড়ার মতো অবস্থা।অন্তি চোখ বড় বড় করে বলল,
-‘এমন ঠাডা পড়া মিথ্যা কথা কিভাবে বললেন?,,ভাই আমি আপনার কি এমন ক্ষতি করেছি যে আমার জীবন নেয়ার জন্য উঠে পড়ে লেগেছেন?’
অন্তির মুখে ভাই ডাক শুনে অভিনব রেগে গেল।এটা কেমন কথা স্বামীকে ভাই বলে ডাকবে!স্বামী হচ্ছে আদর করে জান,প্রাণ,বাবু,সোনা,মনা এসব বলে ডাকার জন্য।যদিও তার আর আর অন্তির সম্পর্কটা এসব আদরের নিক নেম দেয়ার পরিস্থিতিতে নেই কিন্তু তাই বলে যে ভাই বলতে হবে এমন কি কোনো কথা আছে?
-‘দেখ অন্তি আমার মায়ের খুশির জন্য আমি সব করতে পারি।আমার মা আমাকে বলেছেন তার জন্য হলেও আমি যেন আমাদের সম্পর্কটাকে আরেকটা সুযোখ দেই।কিন্তু বাস্তবে সেটা যে সম্ভব নয় তা তুমিও জানো আমিও জানি।তবুও আমরা দুজন ভালো কাপল হওয়ার অভিনয় তো করতেই পারি?আমার ড্যাড আমি আর সারিকা মায়ের হ্যাল্থ কন্ডিশন নিয়ে খুবই চিন্তিত।উনি কিছুদিন যাবত প্রায়ই অসুস্থ হয়ে পড়ছেন।ডক্টর বলেছেন ওনাকে যতটা সম্ভব চিন্তামুক্ত রাখার চেষ্টা করতে।তাই প্লিজ আমার রিকোয়েস্টটা রাখো।আমি কথা দিচ্ছি এই রুমে তোমার প্রাইভেসি তোমাকে দেওয়া হবে।আমি সোফায় ঘুমাবো আর তুমি বিছানায় কেমন?’
অভিনব যখন ওর মায়ের বিষয়ে কথা বলছিল তখন অভিনবর চোখে মায়ের প্রতি ভালোবাসাটা স্পষ্ট ফুটে উঠছিল।অন্তির মা নেই মায়ের ভালোবাসা কি তাও সে জানে না।কিন্তু মানব জাতির না জানা,না পাওয়া বিষয়বস্তুর প্রতিই আগ্রহ বেশি থাকে।অন্তির ক্ষেত্রেও তাই মায়েথ কি তা জানার এবং পাওয়ার ইচ্ছা তাকে গ্রাস করেছে।অন্তির কেন যেন মনে হচ্ছে সুহানা নামক মহিলাটি তার সেই ইচ্ছে হয়তো পূরণ করতে পারবে।কিন্তু অন্তি তো নিজেকে স্বার্থপর মানুষ হিসেবে গড়ে তোলার প্রতিজ্ঞা নিয়েছিল।তাই এই পরিস্থিতিতে একটু ভাব দেখাতে হবে।ভাব নেয়ার ছাড়া স্বার্থপর ব্যক্তিদের খাতায় নাম লেখানো যায় না। অন্তি বলল,
-‘ঠিকিছে,,, কিন্তু আপনি তো আবার সুবিধার মানুষ না।আলাদা আলাদা রুমে থাকা অবস্থায় অনেক কিছুই করেছেন।আর এখন থেকে তো আমি আপনার হাতে কাছে থাকবো।তাই বলছি বি কেয়ারফুল নিজেকে ভালো করুন না হলে আপনার ঐ ট্রফি আপনার মাথা ফাটানোর কাজে ব্যবহার করবো।’
-‘দে,,দেখ একদিন ভুল হতেই পারে এর মানে এই না প্রতিদিন আমি এক ভুল করবো।’
-‘প্রতিদিন এক ভুল করলে সেটা ভুল না অভ্যাস হয়ে দাঁড়ায়।’
-‘ওহ প্লিজ তোমাকে কিস করার বিন্দুমাত্র ইন্টেনশন আমার ছিল না আমি তো জাস্ট,,,।’
-‘আমি তো জাস্ট কি বলুন থেমে গেলেন কেন?’
-‘তোমার গালে মশা ছিল সেটা তাড়াতে গিয়েছিলাম।’
-‘সিরিয়াসলি!মশা কোত্থেকে এসেছিল আমার ঘরে?আপনি মিথ্যা বলতে পারেন না বুঝলেন।যারা কথা কম বলে তাদের মিথ্যা বলার অভ্যাসটাও সীমিত হয়।যারা বেশি কথা বলে তাদের মিথ্যাও বেশি বলতে হয়।’
-‘তাই না কি?তাহলে তুমি কোন দলের?’
-‘জানি না।’
অন্তি দরজা খুলে ওয়াশরুমে চলে গেল।অভিনবর রুমটি অনেকটা ফ্লাটের মতো।কেউ আসলে তাকে প্রথম প্রবেশ করতে হয় স্টাডি রুমে এরপর সেখান থেকে বেডরুমে।ওয়াশরুমটা স্টাডি রুমের সাইডে একটি সরু জায়গায় অথবা বলা যায় বেড রুমের স্লাইডিং ডোর খুলে দুই কদম পা রাখলেই ওয়াশরুম।
সবাই ডাইনিং টেবিলে বসে খাবার খাচ্ছে এরই মাঝে সারিকার সঙ্গে অন্তি কুশল বিনিময় করে নিয়েছে।
সারিকা খাবার খাওয়ার সময় হঠাৎ পরিচিত কারো গলার শব্দ শুনে।আর এতেই তার গলায় খাবার আটকে যায়।সারিকা খকখক করে কাশতে থাকে।গলার আওয়াজের মালিক বলে উঠে,
-‘হ্যালো আঙ্কেল আন্টি কেমন আছেন আপনারা?’
ব্যক্তিটা আর কেউ নয় শুভ্র।শুভ্রর গলার আওয়াজ শুনেই সারিকার নাকে মুখে খাবার উঠে জান যাওয়ার মতো অবস্থা।সবাই সারিকাকে নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়ে।
পানি খেয়ে সারিকা শান্ত হয়।শুভ্র এসে সারিকার পাশে দাঁড়িয়ে আদুরে গলায় বলল,
-‘আহারে বেচারির কি অবস্থা হয়েছে?ইশশ এভাবে কেউ খাবার খায় এরপর থেকে একটু সাবধানে খাওয়া দাওয়া করবে বুঝলে।’
অর্ণব আর সুহানা বাদে সকলে শুভ্রর দিকে অদ্ভুতভাবে তাকিয়ে আছে।সারিকা কথাটা শুনেই শুভ্রর দিকে অগ্নি দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলল,
-‘আপনি এখানে কি করছেন?আমার বাসায় ও কি আপনার থেকে নিস্তার পাব না?’
-‘তুমি যেখানে, আমি সেখানে
ছেড়ে যাব না।
একি বাঁধনে বাধা দুজনে,,,,।’
শুভ্রর গানে ব্যাঘাত ঘটায় সারিকার বড় ভাই অভিনব।বোনের সঙ্গে বাড়ি বয়ে এসে কোনো ছেলে প্রেম আলাপ করলে যে কোনো বড় ভাই রেগে আগুন হবেই।অভিনব রেগে বলল,
-‘এই কি শুরু করেছেন কি আপনি?আমার বোনের সঙ্গে আর এরকম ধরনের কথা বলার সাহস করলে ফলাফল ভালো হবে না আপনার জন্য।’
-‘আরে অভিনব আমাকে চিনতে পারছিস না আমি কে?’
-‘নাহ্ পারছি না।কে আপনি?'(বিরক্ত হয়ে)
-‘আরে আমাকে আর তোকে যে সবাই ফরেইনার বলতো স্কুলে।’
অভিনব কিছুক্ষণ ভাবতে সময় নেয়।এরপর মনে পড়তেই উচ্ছ্বসিত হয়ে শুভ্রকে জড়িয়ে ধরে বলল,
সাথে থেকো প্রিয় পর্ব ২১
-‘আরে শুভ্র তুই।’
-‘হ্যা আমি।’
অভিনব শুভ্রর থেকে এক ক্লাস জুনিয়র হলেও খেলাধুলার জন্য দুজনের মাঝে বেশ ভালো বন্ধুত্ব ছিল।