সাথে থেকো প্রিয় - Golpo Bazar

সাথে থেকো প্রিয় পর্ব ২৩ || romantic golpo

সাথে থেকো প্রিয়

সাথে থেকো প্রিয় পর্ব ২৩
লেখক:রিয়ান আহমেদ

“তা এতদিন পর কিভাবে মনে পড়ল আমাদের কথা?তোকে তো সেই ক্লাস নাইনের পর আর স্কুলের ত্রিসীমানায় দেখি নি?”
“আর বলিস না মম ড্যাডের সাথে জাপান মুভ করেছিলাম ড্যাডের বিজনেস ইস্যুর কারণে।এরপর দুই বছরের মাথায় ড্যাড দেশে ফিরে আসলেও আমার পড়াশুনা আমি জাপানেই শেষ করার সিদ্ধান্ত নেই।পুরনো ফ্রেন্ডদের সঙ্গে কন্ট্রাক্ট ও রাখতে পারি নি হঠাৎ দেশ ছাড়তে হয়েছিল বলে।আজকে তো আন্টি আর আংকেল আমাকে ইনভাইট করেছে তোদের বাসায়।”
শুভ্র কথাটা বলতেই সুহানা বলে উঠে,

“শুভ্র অনেক ভালো একটা ছেলে ও’ই আমি অজ্ঞান হয়ে মার্কেটে পড়ে যাওয়ার পর আমাকে বাসায় নিয়ে আসতে সাহায্য করেছিল।তাই আজ ওকে লাঞ্চের জন্য ইনভাইট করেছিলাম।ও বলেছিল আসতে পারবে না হয়তো আর অনেক্ষণ অপেক্ষা করার পর যখন দেখলাম শুভ্র আসছে না তখন আমরা লাঞ্চ শুরু করে দিল,,,থ্যাংকস শুভ্র আমাদের সঙ্গে লাঞ্চে যোগ হওয়ার জন্য।”
শুভ্র হেসে বলল,
“সরি আন্টি আসলে আমার একটা কাজ পড়ে গিয়েছিল তাই বলেছিলাম হয়তো আসতে পারবো না।”
“আচ্ছা তুমি আর অভিনব একে অপরকে আগে থেকে চেনো তাই না?”
অভিনব বলল,

আরও গল্প পড়তে আমাদের গুপ এ জয়েন হউন

“মম আমরা এক’ই স্কুলের স্টুডেন্ট ছিলাম শুভ্র আমার সিনিয়র হলেও আমরা ভালো ফ্রেন্ড ছিলাম।”
অভিনব হঠাৎ রেগে বলল,
-‘শুভ্র তুই সারিকার সাথে প্রথমে ওভাবে কেন কথা বললি?’
শুভ্র হেসে সারিকার চোখে চোখ রেখে বলল,
-‘আসলে ওকে দেখে পুরনো অনুভূতি জেগে উঠেছিল।’
সবাই চোখ বড় বড় করে তাকায় শুভ্রর দিকে।সারিকা থমকে যায় শুভ্রর শীতল কন্ঠে এক ধরনের মাদকতা কাজ করছে।সারিকা নিজেকে সামলে নেয় এই মাদকতায় আসক্ত হলে চলবে না।অভিনব রেগে বলল,
-‘হোয়াট??’
-‘আরে ভাই রাগছিস কেন?আমি তো বললাম পুরনো অনুভূতি মানে আমার আর ওর টম এন্ড জেরির মতো ঝগড়া করার কথা,,,আসলে কি বলতো ওকে জ্বালাতে ভালো লাগে আমার তাই এখনো সুযোগ পেলেই জ্বালাই।’
অন্তি বলল,

-‘আপনি কি আগুন না কি যে আপুকে সুযোগ পেলেই জ্বালাবেন?তাছাড়া আপনার নামও তো আগুন না।’
শুভ্র সহ সবাই হেসে দেয় অন্তির কথায়।অন্তি বুঝে না এখানে সে হাসির কি বলেছে।
সারিকা পরিস্থিতি সামলাতে বলল,
-‘উনি আমার অফিসের বস তাই সুযোগ পেলেই কাজের চাপ দিয়ে আমাকে অসুবিধায় ফেলেন সেই কথাই বলছেন।’
অভিনব শুভ্রর দিকে তাকিয়ে বলল,
-‘ওহ তুই সারিকার বস।তাই তো বলি সারিকা তোকে এখানে দেখে কেন অবাক হয়েছে।’
সুহানা বলল,

-‘অনেক কথাবার্তা হয়েছে।এখন খাওয়া দাওয়া শুরু করা যাক।শুভ্র বসো।আমাদের পরিবারের সবার সঙ্গে তোমার পরিচয় হয়েছে কিন্তু আমার ছেলের বউ এর সঙ্গে হয়তো তোমার পরিচয় হয় নি।অন্তিকা খান আমরা অন্তি বলেই ডাকি ও অভিনবর ওয়াইফ।’
শুভ্র দুষ্টু হাসি দিয়ে বলল,
-‘বাহ্ আমার আগে বিয়ে করে ফেলেছিস দেখছি।ভাবী আপনার স্বামী কিন্তু খুব ডিসেন্ট ওনার প্রতি সন্দেহ করবেন না বুঝলেন।স্কুলের সবচেয়ে ভদ্র ছাত্র ছিল সে।’
অন্তি মেকি হাসি দিল।কিন্তু মনে মনে বলছে অন্য কথা।অন্তি বলছে,
-‘আমার ঠেকা পড়েছে যে ওনার উপর নজর রাখবো।উনি যদি অন্য মেয়েকে বিয়ে করতে চান বা ভালোবাসেন তাহলে তো আলহামদুলিল্লাহ।উনি যাবেন ১০ বছরের জন্য জেলে আর আমি মুক্ত পাখির মতো আকাশে উড়বো।’

সবাই খাওয়া দাওয়া করছে।সারিকা একটু পরপর শুভ্রর দিকে তাকাচ্ছে।সে একেবারে শিওর যে শুভ্র তার জন্যই এখানে এসেছে তাকে আরো কিছুক্ষণ জ্বালিয়ে তন্দুরি চিকেন বানানোর ধান্দা করছে শুভ্র।

অভিনব আর শুভ্র এতদিন পর দেখা হওয়ার কারণে নিজেদের মনের সব কথা একে অপরকে বলার চেষ্টা করছে যদিও সেটা সম্ভব নয়।কারণ দুজনের দেখা প্রায় ১৪ বছর পর।চৌদ্দ বছরে সব ঘটনা দুজনের মস্তিষ্কে উপস্থিত নেই তবুও যতটুকু মনে আছে বলার চেষ্টা করছে চেষ্টা করতে ক্ষতি কি?
সারিকা দুজনের পাশে বসে থাকলেও দুজনের মাঝেই সারিকার উপস্থিতির ব্যাপারটা লক্ষ করা যাচ্ছে না।সারিকা একটু সাইডে চেপে বসলো মানে দুজনের থেকে কিছুটা দূরে।কারণ সারিকা বিরক্ত এদের প্রতি।

শুভ্র চলে যাওয়ার জন্য উঠে দাঁড়ায়।অভিনবর হঠাৎ একটা ফোন কল আসায় সে সাইডে চলে যায় কথা বলতে।অভিনবকে যেতে দেখে শুভ্র বাঁকা হেসে সারিকার দিকে তাকায়।সারিকা চোখ বড় বড় করে।এই হাসির মানে কি?উত্তরটা সারিকা দ্রুত পেয়ে যায় শুভ্র সারিকার কাছে এসে তার সোফার দুইপাশে হাত রেখে সারিকার দিকে কিছুটা ঝুঁকে যায়।শুভ্র এক হাতে নিজের কপালে পড়ে থাকা সিল্কি চুলগুলো সরিয়ে বলল,

-‘মিস সারিকা!আমি তো এখন তোমার মা বাবাকেও ইমপ্রেস করে ফেলেছি এখন বলো তুমি কবে ইমপ্রেস হবে?’
সারিকা শক্ত গলায় বলল,
-‘আপনি আমাকে কখনোই ইমপ্রেস করতে পারবেন না।না নিজের চার্ম দিয়ে না নিজের ফ্লার্টিং টাইপ কথাবার্তা দিয়ে।সরুন এখন।’
শুভ্র দাঁত বের করে হাসলো। সারিকার মুখে ফু দিতেই সারিকা চোখ বন্ধ করলো তিন সেকেন্ডের জন্য।শুভ্র আর কিছু না বলে সোজা হয়ে দাঁড়াল।তখনই অভিনব এলো।শুভ্রকে বলল,
-‘আবার দেখা হবে,আমি যাচ্ছি একটা কাজে তুইও তো বের হবি।’
-‘হ্যা চল।’

দুজনে চলে যায়।শুভ্র চলে যেতেই সারিকার মনে হলো পরিবেশটা এখন হালকা হয়েছে।এতক্ষণ তার হাত পা কাঁপছিল সাথে বুকটাও।এটা হওয়া স্বাভাবিক শুভ্র নামক ছেলেটা এতো কাছে থাকলে সারিকার মনে একটা অদ্ভুত ভয় কাজ করে যার কারণে সবকিছু কনফিউজিং মনে হয়।

হসপিটালে নীল পোশাক পরিহিত একজন ব্যক্তি শুয়ে আছে একটা বিছানা। অভিনব তার সামনেই দাঁড়িয়ে আছে।ডাক্তার মারুফ হোসেন বললেন,
-‘অভিনব মিস্টার আগুনের চেতনা ফেরার পর আমরা তাকে প্রথমে কিছু শব্দ বলি এবং সেগুলো মিমিক্রি করে আমাদের বলতে বলি।সে প্রায় এক বছর কোমায় থাকার কারণে ঠিকমতো কথা বলতে পারছে না অতি ধীর আওয়াজে শব্দগুলো বলেছে।এতে বোঝা যায় তা ষষ্ঠ ইন্দ্রিয় ঠিকমতো কাজ করছে।এরপর তাকে আমরা আয়না দেখালে সে হঠাৎ উন্মাদের মতো বিড়বিড় করে কি যেন বলতে থাকে এবং তার শ্বাসকষ্ট শুরু হয় তাই তাকে শান্ত করতে আপাদত ওনাকে ঘুম পাড়িয়ে রেখেছি।,,,,উনি সম্ভবত নিজের জীবনে কিছু বছরের স্মৃতি হারিয়ে ফেলেছেন কারণ মিস্টার আগুন বিড়বিড় করে বলছিলেন,”এই বয়স্ক লোক আমি নই।”মানে ওনার সব কথা না শুনলেও এতটুকু আমি শুনেছি।’

অভিনব বিছানায় শুয়ে থাকা ছেচল্লিশ বছর বয়সী আগুনের দিকে তাকায়।এই সেই ব্যক্তি যাকে ও গত এক বছর যাবত সব শত্রুদের থেকে লুকানোর চেষ্টা করে আসছে।লোকটা ওর বস।ও এই লোকটার অধীনেই সেই সিক্রেট দলটির সদস্য হয়।কীভাবে হয়েছে? সেটা এক লম্বা ইতিহাস যা অন্য একদিন বলা যাবে।
প্রায় দুইঘণ্টা পর আগুন চোখ খুলে।সবাই বেশ উৎকন্ঠা নিয়ে ওনার দিকে তাকিয়ে আছে।অভিনব আগুনের পাশে বসে।ডাক্তার ইশারায় অভিনবকে আগুনের হাত ধরতে বলে।অভিনব আগুনের ডান হাত ধরে ধীরে ধীরে বলল,
-‘স্যার আপনি ঠিক আছেন?’
আগুন মিনমিনে গলায় বলল,
-‘আমি নিজেকে আয়নায় দেখতে চাই।’
-‘ঠিকাছে।’

একটা বড় আয়না আনা হয়।আগুন নিজেকে সেই আয়নায় দেখে একবার কাঁপা কাঁপা হাতে নিজের গালে হাত বুলায় তো একবার আয়নায় নিজের প্রতিচ্ছবির দিকে তাকায়।আগুন বললেন,
-‘এটা কি সত্যিই আমি?’
-‘জ্বী আপনি।’
আগুন এবার আর আগের মতো উত্তেজিত হয় না।ঘরের টিভি চলছিল সাউন্ড অবশ্য জিরোতে।কিন্তু আগুন টিভি দেখে হতবিহ্বল হয়ে বলল,
-‘এটা কে টিভিতে?’
-‘এটা হচ্ছেন যুক্তরাষ্ট্রের বর্তমান প্রেসিডেন্ট।আপনি কোমায় থাকার কারণে ওনাকে চিনতে পারছেন না।’
-‘আ,,আমার বয়স কত?এটা কত সাল?’
-‘আপনার নাম আগুন আর বয়স ৪৬ এটা হচ্ছে ২০২১ সাল।’
আগুন অবাক হয়ে বলল,

-‘না আমি আগুন আর না আমার বয়স এত বেশি।তোমরা সবাই আমার সঙ্গে মিথ্যা কথা বলছো।এটা ২০০১ সালের জানুয়ারি মাস।সেদিন আমার এক্সিডেন্ট হয়েছিল।’
আগুন আবার উত্তেজিত হয়ে পড়ে যার কারণে তার ব্লাড প্রেশার বেড়ে যায় এবং সাথে শ্বাসকষ্ট।ডাক্তাররা আবার ওনাকে মেডিসিন দেন কারণ আগুনের মানসিক অবস্থা বেগতিক দিকে গেলে ব্রেন ড্যামেজের চান্স আছে। আগুন আবার ঘুমিয়ে যায়।ডাক্তার অভিনবর দিকে তাকিয়ে বললেন,

-‘অভিনব আমি যা ভেবেছিলাম তা না ব্যাপারটা তার চেয়েও বেশি কমপ্লিকেটেড।মিস্টার আগুনের ব্রেইন বর্তমানে ১৯-২০ বছর আগের স্মৃতিতে ফিরে গেছে।সে তার সাথে ঘটে যাওয়া তখনকার দুর্ঘটনা ছাড়া এর পরের কিছুই মনে রাখে নি।,,কিন্তু সবচেয়ে অদ্ভুত ব্যাপারটা হচ্ছে উনি কেন বললেন ওনার নাম আগুন না।আর যাইহোক ওনার কথা ধারা এটুকু বোঝা যায় ওনার মস্তিষ্ক থেকে শুধু কয়েক বছরের স্মৃতি হারিয়ে গেছে ওনার পরিচয় ওনার ঠিকই মনে আছে।ওনার নাম কি সত্যিই আগুন?’
-‘জানি না ডক্টর।ছয় বছর ধরে আমি ওনাকে এই নামেই চিনে আসছি।যদি ওনার নাম আগুন না হয় তাহলে কি ওনার নাম?’
-‘সেটা তো ওনার জ্ঞান ফেরার পরেই জানা যাবে।’
-‘কখন জ্ঞান ফিরবে?’
-‘আমার মতে দশ বারো ঘন্টা লাগবে আরো তুমি বাসায় চলে যাও।যদি জ্ঞান ফিরে তাহলে তোমাকে কল করবো ওকে।’
-‘ঠিকাছে।’

অভিনব নিজেদের সিক্রেট বেসের মধ্যে যায়।আজ এখান থেকে কয়েকটা বেইমানকে যোগ্য শাস্তি দিতে হবে।ব্ল্যাক শ্যাডো গ্যাঙ্গের কিছু বিশেষ লোক ছাড়া আগুনের ঠিকানা কেউই জানে না।
অভিনব নিজেদের টর্চার রুমে যায়।সারা রুম লাল লাইটের আলোতে আলোকিত।দুটো ছেলেকে শেকলে বেঁধে রাখা হয়েছে হাতে হ্যান্ডকাফ।অভিনব ছেলেগুলোর কাছে গিয়ে একটা একটা গ্যাস লাইটার জ্বালায়।সিগারেটে আগুন ধরিয়ে অভিনব সিগারেটটা টানতে শুরু করে আর বলে,
-‘ফাঁসির আসামিদের দেখেছিস?তারা মৃত্যুর আগের মুহূর্তে একটা রুমালের দিকে অসহায় দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে কারণ কি জানিস?সেই রুমালের সঙ্গে তার জীবনটা জড়িয়ে থাকে সেই মুহূর্তে।রুমালটা মাটিতে পড়তেই তাদের জীবনের সময় রেখা ফুরিয়ে যায়।ঝুলে পড়ে তারা ফাসির দড়িতে।এখন বলতো আমি এসব কেন বলছি?’
ছেলেগুলো কান্না করে দিয়ে বলল,

-‘স্যার প্লিজ ক্ষমা করে দেন আপনি যা বলবেন আমরা তাই করবো।আমাদের পরিবারের খাতিরে আমাদের মাফ করে দেন।’
অভিনব হাসলো।অভিনব বিদ্রুপমূলক হাসি দিয়ে বলল,
-‘পরিবার!তোরা না নিজেদের পরিবারের কথা ভাবিস আর না অন্যদের।শত শত বাচ্চাদের পাচার করে দেওয়ার সময় মনে থাকে না তাদের পরিবার আছে কিংবা বাঁচার অধিকার আছে?মানুষের খাবারে ড্রাগ মিশিয়ে তাদেরকে সেগুলো অমৃত বলে খাওয়ানোর সময় মনে থাকে না সেগুলো খেলে মানুষগুলো ধুকে ধুকে মরবে এবং তাদের পরিবার অসহায় হয়ে পড়বে?তোদের একার পরিবার আছে শুধু পৃথিবীতে আর কারো নেই তাই না?আচ্ছা যাহ্ ধরলাম তোদের একার পরিবার আছে তাহলে তাদের খেয়াল কি তোরা রাখিস ,,হাবিব তোর বোনকে তো তুই পতিতাবৃত্তির জন্য বিক্রি করে দিয়েছিস আর নাইম তোর ছেলেকে তুই হাত ভেঙ্গে ভিক্ষাবৃত্তিতে পাঠিয়েছিস তাই না?’
হাবিব আর নাইম দুজনেই কাঁদছে কারণ অভিনবর প্রতিটা কথা সত্য।অভিনব আবার বলল,

-‘যাইহোক অনেক কথা বলেছি এখন আসল কথা বলি প্রথমে আমি যেই প্রশ্ন করেছিলাম মানে ফাঁসির আসামির এবং রুমালের কথা আমি কেন বলছিলাম জানিস?আমার হাতের সিগারেটটা এই মুহুর্তে সেই রুমালের মতো তোদের জীবনে ইতি টানতে চলেছে।অনেক শখ ব্ল্যাক শ্যাডো গ্যাঙ্গের লিডারকে খুঁজে বের করার তাই না?আমাদের মাঝে মিশে গিয়ে আমাদের মতো হওয়ার চেষ্টা?সবই এখন ভেস্তে যাবে বুঝলি?আমার সিগারেটের শেষ নিঃশ্বাস নিয়ে এটাকে আমি পায়ের নিচে পিষে ফেলতেই তোদের যে শেকলে বাঁধা হয়েছে সেটা দিয়ে তোদের বৈদ্যুতিক শক দেয়া হবে এবং কয়েক মিনিটের মাথায় তোরা দেহ ত্যাগ করবি।’
হাবিব ও নাহিদ অভিনবর সিগারেটটার দিকে অসহায় চোখে তাকিয়ে আছে।আল্লাহকে তারা এই জীবনে বুঝ হওয়ার পর কখনো ডাকে নি কিন্তু আজ ডাকছে।আল্লাহর কাছে তাদের শুধু একটাই দোয়া এই সিগারেটটা যেন শেষ না হয়।

কিন্তু এই মানুষ নামক অমানুষ গুলোর দোয়া কবুল হলো না।অভিনব সিগারেটের শেষ টান দিয়ে সেটকে পা দিয়ে পিশে ফেলতেই ইলেকট্রিক শক দেওয়া শুরু হলো।কয়েক মিনিট পর হাবিব এবং নাইম দেহ ত্যাগ করে।তাদের মুখ ছাই হয়ে গেছে দাত সবগুলো কালো হয়ে গেছে।অভিনব পৈশাচিক হাসি দিয়ে বলল,
-‘পৃথিবীতে যতদিন খারাপ মানুষেরা বসবাস করবে ততদিন তাদের ধ্বংসের কাজটাও কাউকে না কাউকে করতে হবে।’

‘প্রাণ দিতে চাই, মন দিতে চাই
সবটুকু ধ্যান সারাক্ষন দিতে চাই
তোমাকে, ও.. তোমাকে।
স্বপ্ন সাজাই, নিজেকে হারাই
দুটি নিয়নে রোজ নিয়ে শুতে যাই
তোমাকে, ও.. তোমাকে।
জেনেও তোমার আঁখি চুপ করে থাকে
রোজ দুইফোঁটা যেন আরও ভালো লাগে
গানে, অভিসারে, চাই শুধু বারেবারে
তোমাকে, ও.. তোমাকে।’

অন্তি রুমের বারান্দায় দাঁড়িয়ে গানটা গাইছিল যেহেতু ঘরে কেউ নেই তাই গলার আওয়াজ বাজে হলেও দুই এক লাইন গান গাইতে ক্ষতি কি?অন্তি বাথ রুম সিঙ্গার কখনো কারো সামনে গান গায়নি একা একা থাকলে নিজে নিজে একটু গুনগুন করাটাই তার জন্য এনাফ।অন্তিকে থামতে দেখে অভিনব তখন পেছন থেকে বলে উঠলো,
-‘কি হলো থামলে কেন?বেশ ভালোই তো গান গাইছিলে।’
হঠাৎ অভিনবর গলার শব্দ পেয়ে অন্তি ভয় পেয়ে কেঁপে উঠলো।সূরা পড়ে বুকে ফু দিয়ে অন্তি পেছনে ঘুরে খানিকটা রাগ নিয়ে বলল,
-‘এভাবে হঠাৎ কেউ কথা বলে?আমি ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম।’
-‘আমি ভয় দেখাতে চাই নি তোমায়।ঘরে ঢুকেই দেখলাম তুমি একাএকা গান গাইছো।আমিও কিছু না বলে তোমার গান শুনতে লাগলাম তাই তুমি হঠাৎ থেমে যাওয়ার কারণটা কি জানতে চাইছিলাম।’
অন্তি ভাব নিয়ে বলল,

-‘আমি যাকে তাকে গান শোনাই না।আমার ইচ্ছে হলে গাইবো নইলে গাইব না।তাছাড়া,,,গানের পরের লাইন আমি পারি না।’
কথাটা বলে অন্তি রুম থেকে হনহন করে চলে গেল।অভিনব মুখ টিপে হাসলো অন্তির আচরণে।

ঘুমানোর সময় বেঁধেছে এখন আরেক ঝামেলা।কে খাটে শোবে আর কে কাউচে এই নিয়ে ঝগড়া ।অন্তি বলল,
-‘দেখুন আমি খাটে শোব কারণ আপনার ভুলভাল কথার জন্য আমাদের দুজনকে এক রুমে থাকতে হচ্ছে।’
-‘না আমি খাটে ঘুমাবো এটা আমার রুম।’
-‘আমি বললাম তো।'(রেগে)
-‘আমি কি তাহলে হিব্রু ভাষায় বলেছি আমিও তো বললাম আমি।’
দুজনে কিছুক্ষণ আমি আমি করে হাঁপিয়ে উঠে।অভিনব বলল,
-‘আচ্ছা চলো স্টোন,পেপার,সিজার খেলে ডিসাইড করি কেমন?’
-‘ওকে।’
দুজনে স্টোন,পেপার,সিজার খেলার পর ফলাফল হলো অন্তি জিতেছে।অভিনব হার মানতে রাজি না কারণ তার নামের সঙ্গে বিজয় শব্দটা যুক্ত সে হারলে কিভাবে চলবে।অভিনব তাই বলল,
-‘এরকম আরো দুইবার খেলবো।যে তিনবারের মধ্যে অন্তত দুইবার জিতবে বিছানা তার।’
-‘আই হ্যাভ নো প্রবলেম।’

আরু দুইবার খেলার পর একবার অন্তি আরেকবার অভিনব।তাই দুইবার জেতার কারণে বেড অন্তির।অন্তি অভিনবকে ভেঙচি কেটে বেডের দিকে দৌড় দেয়।অন্তি শুয়ে পড়তেই অভিনব লাফ দিয়ে অন্তিরর পাশে শুয়ে পড়ে।অন্তি চোখ পাকিয়ে অভিনবর দিকে তাকিয়ে হাত দিয়ে অভিনবকে ধাক্কা দেয়ার চেষ্টা করতে করতে বলে,
-‘আপনি এখানে কেন?সরুন বেড থেকে কাউচে গিয়ে ঘুমান বিছানা আমার।’
কিন্তু অন্তি অভিনবকে একটুও সরাতে পারলো না।অভিনব বিছানায় আরাম করে শুয়ে বলল,

সাথে থেকো প্রিয় পর্ব ২২

-‘এতো বড় বিছানায় তুমি একা এতটুকু মানুষ ঘুমালে ভয় পাবে তাই আমাকে একটু শেয়ার দেও।ইউ নো শেয়ারিং ইজ কেয়ারিং।’
অভিনব বাম চোখ টিপ্পনি দিয়ে কথাটা বলল।অন্তি থামলো না ধাক্কানোটা অব্যাহত রাখলো।কিন্তু একটা সময় ক্লান্ত হয়ে অভিনবকে ধাক্কাতে ধাক্কাতে অন্তি ঘুমিয়ে পড়লো।অভিনবও ঘুমিয়ে পড়েছে।অন্তি ঘুমের মাঝে অভিনবর গলা জড়িয়ে ধরলো।অভিনবও ঘুমের মধ্যে অন্তির পেটের উপর হাত রাখলো।

সাথে থেকো প্রিয় পর্ব ২৪

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.