সাথে থেকো প্রিয় পর্ব ২৪
লেখক:রিয়ান আহমেদ
অর্ধেক রাতে অন্তি নড়েচড়ে উঠে। সে পাশে তাকাতেই তার চোখ বেরিয়ে আসার উপক্রম।অভিনবকে সে জড়িয়ে জড়িয়ে ধরে আছে তার নাক অভিনবর গলায় স্পর্শ করছে আর অভিনবর হাত অন্তির পেটের উপর।অন্তি অভিনবর থেকে নিজেকে দূরে সরানোর জন্য অভিনবর হাতে একটা চিমটি মারে।
অভিনব এতে একটু নড়েচড়ে উঠে এবং চোখমুখ কুঁচকে অন্তির দিকে না তাকিয়ে বলল,
-‘ঘুমাতে দেও।’
কথাটা বলে সে এবার অন্তিকে জড়িয়ে ধরে।ঠিক ততটা জোরে যতটা জোরে জড়িয়ে ধরলে একজন মানুষের পক্ষে শ্বাস নেওয়াটাও একটু কঠিন হয়ে পড়ে।অন্তি এবার অভিনবর থেকে নিজেকে ছাড়াতে পারে না শত চেষ্টার পরও।অন্তি খানিকটা চেঁচিয়ে রেগে বলল,
-‘আমি নিঃশ্বাস নিতে পারছি না ছাড়ুন আমাকে।’
অভিনব এবার আধো আধো চোখে অন্তির দিকে তাকায়।কিন্তু এটা তো অন্তি না এটা তো রূপকথার দেশের সেই রাজ কন্যা যার গাল হয় টমেটোর মতো লাল চোখে থাকে লাল আভা।আগুনের দেশের রাজকন্যা বলে মনে হচ্ছে অভিনবর।অভিনব ঘুমের মধ্যে হেসে দেয় কথাগুলো ভেবে।অভিনব অন্তিকে আরো কাছে টেনে নেয় অন্তির নাক টেনে দিয়ে ঘুম ঘুম গলায় বলল,
-‘তুমি এংগ্রিবার্ড থেকে আগুনের দেশের রাজকন্যা কবে হলে?তোমার রাগী রাগী ভাবটা আমাকে তোমাকে নিয়ে বারবার ভাবতে বাধ্য করে।’
অন্তি বিরক্ত হয় এমন ধরনের কথায়।অভিনবকে বলে,
-‘আপনি কি নেশাটেশা করেছেন না কি?আমার হিসাবে তো এমন কিছু আজ আমি আপনাকে করতে দেখি নি।,,,(অন্তি কিছু একটা ভেবে এইটু চোখ বড় বড় করে বলল)ওওও এবার বুঝতে পেরেছি আপনি লুচুগিড়ি করছেন।আমি তো ভুলেই গিয়েছিলাম আপনি সুবিধার লোক না,,সরুন বলছি!’
আরও গল্প পড়তে আমাদের গুপ এ জয়েন হউন
-‘তোমার চুলে কি ওয়াইন লাগিয়েছো না কি এতো নেশাময় গন্ধ আমি এই গন্ধে ডুবে যাচ্ছি।’
অভিনবর কথায় এবার অন্তি আকাশ থেকে পড়ে।বলছে কি এই ছেলে!নিশ্চিত কোনো কিছু ঘটেছে।অন্তির হঠাৎ মনে অভিনবর কপালে হাত রেখে দেখা দরকার জ্বরটর আছে কি না কারণ অভিনবর শরীরটা একটু বেশিই গরম যা অন্তি অভিনবর কাছে থাকার কারণে বুঝতে পারছে।সে অভিনবর কপালে হাত রাখতেই শিওর হয় তার ধারণাই ঠিক অভিনবকে প্রচন্ড জ্বর কাবু করে ফেলেছে যার দরুন সে বেশ অনেকটা সময় ধরে আবোলতাবোল কথা বলছে।অন্তি এবার নিজের শরীরের সর্বশক্তি দিয়ে অভিনবকে কয়েকটা ধাক্কা মারে নিজেকে ছাড়ানোর জন্য।অন্তি অবাক একটা মানুষের জ্বর থাকা সত্তেও এতো শক্তি সে কোত্থেকে আসে।অবশেষে অভিনবর থেকে নিজেকে ছাড়াতে সক্ষম হয়।এই ঘরের কোন বস্তু কোথায় আছে সেটা ও আসার পরই এক্সপ্লোর করে ফেলেছিল তাই থার্মোমিটার আর মেডিসিন পেতে খুব একটি ঝামেলা পোহাতে হয় না ওকে। অন্তি অভিনবর জ্বর মেপে দেখে ১০৩৹ সেলসিয়াস।প্রথমে অভিনবকে সে কিছু জরুরী মেডিসিন দিয়ে দেয় আপাদত জ্বর কমানোর জন্য এরপর গ্লাসে পানি নিয়ে রুমাল ভিজিয়ে অভিনবর কপালে জল পট্টি দিতে শুরু করে।অভিনব শীতে কাঁপতে শুরু করে তাই অন্তি অভিনবকে কম্বলটা আরো ভালো করে জড়িয়ে দেয়।অন্তির মনে হঠাৎ অভিনবর চুলে হাত বুলিয়ে দেওয়ার ইচ্ছে জাগে।সে নিজেকে আটকায় না অসুস্থ মানুষের মাথায় হাত বুলিয়ে দেওয়াটা ক্ষতির কিছু নয়।এতে মানুষটা আরাম লাগে সে মানসিকভাবেও একটু প্রশান্তি পায় নিজের পাশে কেউ আছে এটা ভেবে।অভিনবর চুলে হাত বুলিয়ে দিতে গিয়ে অন্তি মনে মনে বলতে শুরু করে,
-‘পৃথিবীর নিয়ম অদ্ভুত,পৃথিবীর মানুষ অদ্ভুত,পৃথিবীতে থাকা সকল জীব অদ্ভুত।এই এতসব অদ্ভুতের মধ্যে আমার ভাগ্যটাও প্রতিদিন অদ্ভুত দিকে মোড় নেয়।এমন একজন মানুষ যার ছবি প্রতিদিন খবরের কিংবা ম্যাগাজিনের পাতায় থাকে তার সহধর্মিণী হব এমনটা কখনোই ভাবি নি।চার বছরের জন্য তার স্ত্রী হব এটাও ভাবি নি।মানুষের জীবন কখনোই তাদের ভাবনা অনুযায়ী চলে না।আমি চেয়েছিলাম এমন কাউকে যার জীবনের অনেক বড় একটা অংশ জুড়ে আমার বসবাস হবে।তার সকালের চা বানিয়ে তাকে গুড মর্নিং উইশ করা এরপর তার সাথে ভালোবাসাময় গুটিশুটি।দুপুরের লাঞ্চটা তার হাতে দিতেই ধন্যবাদ হিসেবে একটা ছোট্ট ভালোবাসার স্পর্শ দিয়ে সে আমার কপাল ছুঁয়ে দিবে।,,,,কিন্তু সবকিছু স্বপ্ন আর কল্পনার পৃথিবীতেই থেকে গেল সেই পৃথিবীর দেয়াল ভেদ করে তারা আমার বাস্তব জীবনে এসে নিজেদের ছোঁয়া দিতে পারলো না।আজ এই লোকটাকে বলতে ইচ্ছে করছে আমি তো এই সম্পর্কের আরেক নাম ভালোবাসা দিতে চেয়েছিলাম তবে আপনি কেন এর উপর চুক্তি নামক ট্যাগ লাগিয়ে দিলেন?কিন্তু বলা হবে না কখনোই বলা হবে না।আপনিও আমাকে ভালোবেসে কখনো বলবেন না সাথে থেকো প্রিয় আর আমারও কখনো আপনাকে নিজের স্বপ্নগুলো নিজের অনুভূতিগুলো বলা হবে না।’
অন্তি খেয়াল করলো তার গাল ভিজা সে গাল মুছে নিল।ভাবনার বাইরের জগতে ফিরে এসেছে সে।অভিনবর কপালে হাত রেখে বুঝলো জ্বর অনেকেটা কমে এসেছে কিন্তু অভিনব ঘেমে নেয়ে একাকার।অন্তি কম্বল সরিয়ে দেয়।অভিনবর টি-শার্ট বদলে দেয়া প্রয়োজন কারণ ইতিমধ্যেই সেটা ভিজে গিয়ে ঘামে চুপচুপে হয়ে গেছে।এটা পড়ে থাকলে আবার বুকে ঠান্ডা লাগবে।অন্তি তোয়ালে ভিজিয়ে এনে অভিনবর সামনে একটা টি শার্ট নিয়ে।অন্তি অনেকটা অস্বস্তি নিয়ে অভিনবকে ডেকে তুলে,
-‘অভি,,অভি,,আপনি কি আমার কথা শুনতে পাচ্ছেন?অভি একট উঠুন আপনার শরীরটা একটু মুছে এই টি-শার্টটা পড়ে নিন।’
জ্বরের রেশ কমার কারণে অভিনব সেন্সে ফিরেছে কিছুটা হলেও।সে চোখ খুলে অন্তিকে দেখে।অন্তি আবার বলে,
-‘একটু কষ্ট করে উঠে বসার চেষ্টা করুন শরীর মুছতে হবে।’
অভিনব ধীরে ধীরে উঠে বসে অন্তিও সাহায্য করে।অন্তি অন্য দিকে চোখ রেখে বলল,
-‘টি-শার্ট খুলুন।’
অভিনব বিরক্ত হয়ে যায় তার মাথা ব্যথা করছে শরীরটাও বেশ ভালোই ব্যথা করছে।এই মুহূর্তে অন্তির এমন লজ্জাবতী লতা টাইপ আচরণ তার হজম হচ্ছে না।অভিনব বলল,
-‘আমি ঘুমাবো যা করার জলদি করো আমার ভালো লাগছে না।’
-‘একটু টি,,,।’
-‘বললাম তো ভালো লাগছে না।’
অভিনব শুয়ে পড়তে চাইলে অন্তি দ্রুত বলে,
-‘দাঁড়ান একটু ওয়েট করুন আপনার শরীর মুছে দিচ্ছি।’
অন্তি কোনোমতে নিজের শরম লজ্জাকে সাইডে রেখে অভিনবর টি শার্ট খুলল।ধীরে ধীরে অন্য দিকে তাকিয়ে তোয়ালে দিয়ে শরীর মুছিয়ে দিতে লাগলো।অভিনব অন্তির হাতে কব্জি ধরে নিজের দিকে ঘুরিয়ে বলল,
-‘কি সমস্যা কি?আমার গলা এতক্ষণ যাবত মোছার মানে কি?আমার দিকে তাকিয়ে যা করার করো।’
অন্তি এবার অভিনবর দিকে তাকিয়েই নিজের কাজ করে।সে এতোটাই সাধু নারী নয় যে নিজের স্বামীর এমন রূপ দেখে ক্রাশ খাবে না।সে রীতিমতো ভয়াবহভাবে আহত হচ্ছে অভিনবর বডি ফিটনেস দেখে।অন্তি মনে মনে বলছে,
-‘আজ শুধু তোর জ্বর বলে তোর একটু সেবা করছি।আমাকে খুন করতে চায় নাকি এই ছেলে।এতো সুন্দর মানুষ কিভাবে হয়?সাদা শেয়ালের এই আবেদনময় রূপকে উপেক্ষা করা আমার অসভ্য দৃষ্টির পক্ষে সম্ভব নয়।সবকিছু জলদি করতে।’
অন্তি শরীর মুছিয়ে দিয়ে টি-শার্ট পড়াতেই অভিনব ধপ করে বিছানায় শুয়ে পড়ে যেন সে এতক্ষণ এটার অপেক্ষায়ই ছিল।অভিনব শুয়ে ঘুমিয়ে পড়লেও অন্তির আর ঘুম আসবে না।সে ঘড়ির দিকে তাকিয়ে বুঝতে রাত শেষ হতে আরো দুই ঘন্টার মতো বাকি।একেবারে নামাজ পড়েই ঘুমানো যাবে না হয়।অন্তি রুমে কিছুক্ষণ হাঁটাহাটি করে বারান্দায় যায় টেরিও ঘুমাচ্ছে।অন্তি বারান্দা থেকে ফিরে এসে চেয়ারে টেবিলের বইখাতা নাড়তে গিয়ে তার হাতে একটা ছবি এসে পড়ে অন্তি ছবিটা তুলে ধরে নিজের চোখের সামনে কিছুটা সময় ভালো মতো পর্যবেক্ষণ সে বুঝতে পারে ছবিতে নৌকার উপর বসে থাকা ছেলেটা অভিনব আর পাশে থাকা সুন্দর তরুণীর নাম মারিহা।নীল চোখ দেখেই অন্তি ধরে ফেলেছে এটা মারিহা ছাড়া অন্য কেউ হতেই পারে না।
-‘এই মেয়েটির সাথে আপনাকে খুব সুন্দর মানিয়েছে,,আম নট দ্যা পার্ফেক্ট ওয়ান ফর ইউ তাই হয়তো আপনি ককনোই আমাকে ভালোবাসতে পারবেন না।মারিহা আপনাকে সেদিন না ঠকালে আপনি হয়তো দুনিয়া উল্টে গেলেও আমাকে বিয়ে করতেন না।সম্পত্তি অর্থ এসব কিছু ভালোবাসার কাছে অতি নগণ্য।মানুষের জীবনে বেঁচে থাকার জন্য টাকার প্রয়োজন হলেও ভালোবাসা ছাড়া মানব জীবন নিষ্প্রাণ।’
-‘আপনি আমাকে আর কত জ্বালাবেন?এভাবে মাঝ রাস্তায় সারিকা ডার্লিং বলে ডাকার কোনো মানে হয়।’
সারিকা আশেপাশে চোখ বুলিয়ে রাগী চোখে শুভ্রর দিকে তাকিয়ে কথাগুলো বলল।বাট হু কেয়ার্স,,,শুভ্র ড্যাম কেয়ার ভাব নিয়ে বলল,
-‘দেখো আমি অনেক ভদ্র ঘরের ছেলে আমি মানুষকে ঠিক ততটাই জালাই যতটা জালালে সে কেঁদে দেয়।এর বশি আমি করি না।তুমি এখনো কাঁদো নি তাই তোমাকে আরো জ্বালাতে হবে।’
সারিকা মাঝরাস্তায় এবার শুভ্রর পায়ে জুতো দিয়ে লাথি মারলো আর দাঁতে দাঁত চেপে বলল,
সাথে থেকো প্রিয় পর্ব ২৩
-‘আমি অনেক ভদ্র ঘরের মেয়ে ইভ টিজারদের ততটুকুই মারি যতটুকু তারা ডিজার্ভ করে।’
শুভ্র পায়ে ব্যথা পাওয়ায় একটু নিচু হয়ে পা ডলতে ডলতে বলল,
-‘আমি ইভ টিজার না কি?আমি তো তোমার বয়ফ্রেন্ড।’
-‘আপনার বয়ফ্রেন্ডগিড়ি আমি এটা দিয়ে ছুটিয়ে দেব।(একটা গাছর ডাল নিয়ে)চাকরি গেলে আমার কোনো যায় আসে না আমার মনের শান্তি আমার কাছে সবচেয়ে জরুরী।’
-‘যাচ্ছি কিন্তু যাচ্ছি না।’
-‘তালাশের ডায়লগ না দিয়ে রাস্তা মাপুন।’
তখনই গোলাগুলির শব্দ শোনা গেল।সবাই ছুটছে যে যেদিকে পারছে।শুভ্র সারিকার হাত খপ করে ধরে নিয়ে দৌড়াতে শুরু করলো আর সারিকা তাকিয়ে রইলো।