সাথে থেকো প্রিয় - Golpo Bazar

সাথে থেকো প্রিয় পর্ব ২৫ || লেখক:রিয়ান আহমেদ

সাথে থেকো প্রিয়

সাথে থেকো প্রিয় পর্ব ২৫
লেখক:রিয়ান আহমেদ

সারিকা আর শুভ্র একটা পার্কের ঝোপের আড়ালে বসে আছে।এই পুরো এড়িয়াটাকে অনেকগুলো গুন্ডা নিজেদের মধ্যে ঘটে যাওয়া চলা যুদ্ধের ময়দান বানিয়ে ফেলেছে।সারিকা ফিসফিস করে বলল,
-‘আমরা এখানে এভাবে লুকিয়ে আছি কেন?ওরা তো এখানে নেই।’
শুভ্র ফিসফিস করে বলল,
-‘চুপ করো তুমি এতো বেশি কথা বলো কেন?ওরা নেই কিন্তু আসতে কতক্ষণ।এই মুহূর্তে এখান থেকে বের হলে তুমি কোনো না কোনো বিপদে অবশ্যই পড়বে।আমি বাংলা সিনেমার হিরো না যে তোমাকে এতোজন লোকের হাত থেকে বাঁচিয়ে নিয়ে যেতে পারবো তাও অক্ষত অবস্থায়।ওদের হাতের অস্ত্রগুলো দিয়ে প্রথমে আমার বুক ঝাজড়া করবে তোমার তোমাকে হয় খুন করবে না হয় তুলে নিয়ে যাবে।’

সারিকা কিছু বলল না কিছুক্ষণ চুপ করে থাকলো।সারিকা নিজের ব্যগ থেকে হ্যান্ডি ক্যাম বের করলো এই অমানুষগুলোর কীর্তিকলাপ পুরো দেশকে তার দেখাতে হবে।সাধারণত সে এমন সিচুয়েশনের জন্যই হ্যান্ডি ক্যাম সাথে রাখে।সারিকা ঝোপের আড়াল থেকে কিছুটা বেরিয়ে আসে পরিস্থিতি দেখার জন্য।নাহ্ কেউ নেই এখানে সে আর অপেক্ষা করে না ক্যামেরা হাতে বেরিয়ে আসে ঝোপ থেকে।

আরও গল্প পড়তে আমাদের গুপ এ জয়েন হউন

শুভ্র হতবাক,সারা রাত রামায়ণ শোনানোর পর সীতা কার পিতা সেই অবস্থা।এতক্ষণ কাকে সে এতগুলো কথা বলল এই ঘাসগুলোকে না এই লতা পাতাগুলোকে?উত্তর হচ্ছে কেউই না কারণ শুভ্র সারিকার উদ্দেশ্যে কতাগুলো বলেছে।কিন্তু এখন মনে হচ্ছে ঘাস আর লতাপাতাকে এসব বললেও তারা সারিকার চেয়ে বেশি গুরত্ব দিতো শুভ্রর কথার।শুভ্র নিজেও আর আড়ালে থাকে না সারিকার পিছু পিছু ছুটে চলে।সারিকা একটা রেস্টুরেন্টকে আড়ালে দাঁড়িয়ে ভিডিও করছে।গুন্ডাগুলো ঝগড়ার উদ্দেশ্যে এড়িয়াতে হামলা করে নি বলেই এখন তাদের মনে হচ্ছে কারণ রেস্টুরেন্টের ভেতরে অনেকগুলো লোকের পাহাড়ায় বসে আছে একজন সুদর্শন যুবক যার গাঁয়ে একটা দামী কোর্ট পরিহিত এবং চোখে হলুদ বড় ফ্রেমের চশমা। লোকটা হয়তো এই গুন্ডাগুলোর বস।সমানেই বসে আছে রেস্টুরেন্টের সকল কর্মচারী যারা ভয়ে রীতিমতো কাঁদছে।রেস্টুরেন্ট পুরোটা খালি করে দেওয়া হয়েছে বলতে গেলে কর্মচারী ছাড়া সেখানে কোনো গ্রাহক উপস্থিত নেই।সারিকা দূর থেকে দেখে বুঝতে পারছে না রেস্টুরেন্ট মালিককে লোকটা কি বলছে কিন্তু যাই বলছে তাতে লোকটা কাঁদতে কাঁদতে অস্থির।

-‘মিস্টার দুর্জয় প্লিজ আমাদের ছে,,ছেড়ে দিন।’
দুর্জয় নামক লোকটা হাসলো ভয়ংকর সেই হাসি।নিজের চশমা নাকের ডগায় নিয়ে সে বলল,
-‘ছেড়ে দেব?ছেড়ে দিতেই তো চাই কিন্তু তুমি তো ছাড়তে দিচ্ছো না আমায়।,,এখন ভালোয় ভালোয় বলে ফেলো সেই হীরাগুলো কোথায়?’
রেস্টুরেন্ট মালিক আজিজ কিছু বলছেন না সে চুপ করে আছেন।দুর্জয় এবার একটা জোরে চিৎকার দিয়ে গর্জে উঠে বলে,
-‘আমি উত্তর চেয়েছি নীরবতা না।’
-‘আ,,আমি জানি না।’
-‘ওহ রিয়েলি ইউ ডোন্ট নো?ওকে,,হেই গার্ল ইউ কাম হেয়ার।’
দুর্জয়ের কথায় মেয়েটা কেঁপে উঠে।সে এখনো নিজের আগের স্থানেই দাঁড়িয়ে আছে সে সাহস পাচ্ছে হিংস্র মানুষটার দিকে এগিয়ে যাওয়ার।আজিজ অসহায় দৃষ্টিতে দুর্জয়ের দিকে তাকালেন।এই মেয়েটা আর কেউ না তার একমাত্র কন্যা নিশা কলেজ বন্ধ থাকায় তার রেস্টুরেন্টে এসেছিল তাকে সাহায্য করার জন্য।কিন্তু আজ হয়তো তার জীবনে দুর্জয় নামের লোকটা কাল ডেকে আনবে।দুর্জয় গর্জে উঠে লাল চোখে তাকিয়ে বলল,

-‘আই সেইড কাম হেয়ার ইউ স্টুপিড।’
মেয়েটা নিজের বাবার দিকে তাকায় অসহায় চোখে কিন্তু তার বাবারও কিছুই করার নেই সে নিরুপায়।নিশা চোখের জ্বল হাতের উল্টো পিঠ দিয়ে মুছে দুর্জয় এর দিকে এগিয়ে আসে।দুর্জয় বাঁকা হেসে নিশার দিকে তাকায় তার চাহনিতে নিশার অস্বস্তি বাড়ছে কারণ এই দৃষ্টির মানে মেয়ে হিসেবে সে অনেক আগেই চিনে ফেলেছে।
নিশা কাছে আসতেই দুর্জয় উঠে দাঁড়ায় নিশার কপালে বন্দুক ধরে।আজিজ এবার আঁতকে উঠে কিছু বলতে যাবেন কিন্তু দুর্জয় তার আগেই ওনাকে থামিয়ে দেয় আর নিশার দিকে তাকিয়ে ডেভিল স্মাইল দিয়ে বলে,
-‘আর ইউ এফরেইড?’
নিশা ফাঁকা ঢোঁক গিলে হ্যা বোধক মাথা নাড়ায়।
-‘গুড ভেরি গুড সবার উচিত ভয় পাওয়া।’
দুর্জয় অনেকগুলো কাঁচের গ্লাস ফ্লোরে ফেলে ভেঙ্গে দেয় এরপর নিশার দিকে তাকিয়ে বলে,
-‘এটার উপরে ক্যাট ওয়াক করো।’
আজিজ এবার হাত জোড় করে বলে,
-‘দুর্জয় প্লিস লিভ হার।আমি তোমার আমার সঙ্গে শত্রুতা আমার মেয়েকে ছেড়ে দেও।’
দুর্জয় ঘাড় কাত করে আজিজের দিকে তাকায় আর বলে ,
-‘দুর্জয় কথার মাঝে কথা বলা পছন্দ করে না,টম ওকে গান পয়েন্টে নেও।’

আজিজের কপালে বন্দুক ধরতেই নিশা শব্দ করে কেঁদে দেয় আর বলে,
-‘প্লি,,জ বাবাকে ছেড়ে দেন আমি আপনি যা বলবেন তাই করবো।’
দুর্জয় হাসলো তার হাসিতে নিশার শরীর শিড়শিড় করে উঠলো।নিশা কথা বলতে পারে না কিন্তু শুনতে পারে।
আজিজ বলে,
-‘আমার মেয়েকে ছেড়ে দেও।’
-‘দুর্জয় কোনো শাস্তি কাউকে দিলে তা আর ফিরিয়ে নেয় না।সো ওকে করতে হবে।’
দুর্জয় নিশার দিকে তাকিয়ে বলল,
-‘বাবার রাজকন্যা এখন এই কাঁচের টুকরোগুলোর উপর ক্যাট ওয়াক করুন।’
নিশা কিছু বলার চেষ্টা করলো না কারণ বললে দুর্জয় আরো হিংস্র হবে।নিশা ধীরে ধীরে পা রাখে কাঁচের উপর সে ডুকরে কেঁদে দেয় ব্যাথা
দুই কদম রাখার পর দুর্জয় বলল,

-‘স্টপ,,সো আজিজ আজ যা হলো তা যেন আর ভবিষ্যতে আমাকে করতে না হয় এই ব্যবস্থা আশা করি থাকবে,,,এখন বলো হীরা কোথায়?’
-‘আমি ওটা অভিনবকে দিয়ে দিয়েছি।’
দুর্জয় আজিজের কলার ধরে দাঁড় করিয়ে দেয়।রেগে সে আজিজের চোয়াল চেপে ধরে বলল,
-‘তোর সাহস কি করে হয় অভিনবকে ঐ হীরা দেয়ার।ঐ হীরাতে আমাদের সব ইনফরমেশনের কোড ছিল।অভিনব এখন ঐ কোড দিয়ে আমি কোথায় কোন অবৈধ বিজনেস করি সব ইনফোরমেশন পেয়ে যাবে।আমাদের এতো বড় লোকশান করার পর তোকে কিভাবে ছেড়ে দেই বল?কিভাবে ছেড়ে দেই?'(চিৎকার করে)

টম বন্দুক লোড করে দুর্জয়ের হাতে দেয়।দুর্জয় যখনই শ্যুট করতে যাবে আজিজকে তখন দেখে ওর পায়ে হাত দিয়ে কেউ একজন কান্না করছে।মেয়েটা আর কেউ নয় নিশা।নিশার দিকে তাকিয়ে আজিজ বলেন,
-‘মা সরে যা এখান থেকে এই বিজনেসে আমার ধ্বংস একদিন না একদিন হবে আমি জানতাম সেই দিনটা হয়তো আজকেই ছিল।তুই সর।’
দুর্জয় আজিজকে ছেড়ে দিয়ে নিশার চুলের মুঠি ধরে ওকে তুলে দাঁড় করিয়ে বলল,
-‘বাবাকে মরতে দেখতে কষ্ট লাগছে তাই না।’
কান্নারত নিশা বলে,
-‘আমার বাবা আমার সব।’
-‘ওকে তাহলে আজ থেকে এই বাবার জন্য তোমাকে সব ছাড়তে হবে।,,হেই আজিজ আই এম টেকিং হার তুমি যত দ্রুত আমার কাছে অভিনবকে এনে দিবে ততো দ্রুত নিজের আদরের মেয়েকে পাবে।’
নিশার হাত দুর্জয় টেনে নিয়ে যেতে চাইলে আজিজ দুর্জয়ের দিকে তাকিয়ে মেয়ের হাত ধরে বললেন,

-‘তুমি আমায় মেরে ফেল কিন্তু আমার মেয়েকে ছেড়ে দেও প্লিজ আমার মেয়েটা অবুঝ।’
দুর্জয় বলল,
-‘দেখো তোমার মেয়েকে আমি আগামী বাহাত্তর ঘন্টার মাঝে কিছু করবো না।আবার করতেও পারি তাই যত দ্রুত সম্ভব অভিনবকে আমার সাথে মিট করাও।’
কথাগুলো বলে দুর্জয় নিজের দলবল নিয়ে চলে যায় সাথে নিয়ে যায় নিশাকে।দুর্জয় বের হতেই একটু দূরে ঝোপের আড়ালে কিছু একটা চকচক করতে দেখতে পায়।আসলে সেই চকচকে বস্তুটা হচ্ছে সারিকার হাতের সোনালি একটা ঘড়ি সূর্যের আলো পড়ার কারণে চকচক করছিল যা দুর্জয়ের চিলের মতো তীক্ষ্ম দৃষ্টি এড়ালো না।সারিকা দুর্জয়কে নিজের দিকে আসতে দেখতে পায় না কারণ তার চোখ ক্যামেরায়।শুভ্র জলদি সারিকাকে টান দিয়ে সেখান নিয়ে পালায়।শুভ্রর তাড়াহুড়োর কারণে সারিকার ক্যামেরা সেখানেই পড়ে যায়। দুর্জয় সেখানে এসে কাউকেই পায় না।

শুভ্র সারিকার মুখ চেপে ধরে একটা দেয়ালের সঙ্গে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে।সারিকা চোখ পিটপিট করে করে তাকিয়ে আছে শুভ্রর দিকে।শুভ্র একটা পাথর নিয়ে অন্য একটা ঝোপে ছুঁড়ে মারে।দুর্জয় এতে অন্যদিকে নিজের মনযোগ দেয় কারণ সে ভবেছে ঐদিকে কেউ লুকিয়ে আছে।
সারিকা আর শুভ্র রাস্তা দিয়ে হেঁটে চলেছে।সারিকা দেখে দোকান পাট অনেকগুলোই ভেঙ্গে দিয়েছে দুর্জয়ের লোকেরা।অনেকেই আহত হয়েছে একজন মহিলাকে দেখে দুজনেই আতকে উঠে কপালের রক্তে তার মুখ ভিজে গেছে কিন্তু সে নিজের সন্তানকে কোলে নিয়ে তার অবস্থা দেখতে ব্যস্ত হয়তো এটাই মায়ের ভালোবাসা।

-‘ঐ মেয়েটাকে ওরা নিয়ে চলে গেল কেন?’
-‘আমার মনে হচ্ছে দুর্জয়ের আসল উদ্দেশ্য ছিল ঝামেলা করে মানুষকে সরিয়ে দেয়া যেন ওরা নির্ভয়ে ঐ রেস্টুরেন্টে যেতে পারে।’
-‘কিন্তু আপনি আর আমি ফোন করার পরেও পুলিশ কেন এলো না?’
-‘কারণটা সহজ দুর্জয়ের কারণে। ও সাধারণ জনগনের কাছে ব্যাপারটাকে এমনভাবে শো করেছে যেন সবার মনে হয় এটা একটা সাধারণ ঝামেলা ছিল।আর পুলিশকে টাকা খাইয়ে অথবা ভয় দেখিয়ে চপ করিয়ে দেবে আর সাধারণ মানুষজনও জানতে পারবে না দুর্জয় এই সবের মূলে ছিল।’

সারিকার মনে হচ্ছে পুলিশ বলতে কিছুই নেই বাস্তবে না হলে এতো বড় একটা ঘটনা ঘটার পর কিভাবে পুলিশরা আসে না।কিছুক্ষণ পর আসবে এসে ক্ষয়ক্ষতির কথা জেনে আবার চলে যাবে এইটুকুই তাদের ডিউটি।দুর্জয় নামের লোকটাকে ও চেনে।প্রচন্ড হিংস্র এবং বাজে একজন লোক যত ধরণের অবৈধ এবং অনৈতিক কাজ কারবার আছে সব এ করে।এর বিরুদ্ধে প্রমাণ অনেকেই যোগাড় করেছে কিন্তু আজ অব্দি সেগুলো জনগণের সামনে আনতে পারে নি।
সারিকা বলল,
-‘চলুন আমার হ্যান্ডি ক্যামটা নিয়ে আসি ঝোপের মধ্যে পড়ে গেছে।’
শুভ্র ধমক দিয়ে সারিকার হাত ধরে দ্রুত হাঁটতে হাঁটতে বলল,
-‘একদম না ঐ হ্যান্ডি ক্যামে যা ভিডিও করেছো তার কথা ভুলে যাও।এসব মানুষের সামনে নিয়ে আসলে দুর্জয় তোমার বংশ নিরবংশ করার আগে দ্বিতীয়বার ভাববে না।’
-‘আপনার যেতে হবে না আমিই যাচ্ছি।’
সারিকা যেতে নিবে তার আগেই শুভ্র ওকে টেনে নিজের কাছে নিয়ে এসে বলে,

-‘তুমি এই মুহুর্তে আমার সঙ্গে এখান থেকে যাবে বুঝলে আমি আর একটা শব্দও তোমার মখে শুনতে চাই না এই বিষয়ে।যদি শুনতে বাধ্য করো তাহলে আমিও তোমার মুখ মাঝ রাস্তায় এমন একটা পদ্ধতিতে বন্ধ করতে বাধ্য হবো যে তুমি লজ্জা কাদা কাদা হয়ে যাবে।’
সারিকা বুঝতে পারলো শুভ্র কি মিন করছে তাই চুপচাপ শুভ্রর সাথে যেতে লাগলো।কিন্তু সারিকার ভেতরটা চুপ নেই সে ঐ মেয়েটার বিষয়ে টেন্সড অভিনবর সঙ্গে ওকে এই বিষয়ে কথা বলতেই হবে।

অভিনবর ঘুম আজ বেশ দেরীতে ভাঙ্গে।সে ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখে দুপুর বারোটা বাজে।তার মাথায় হাত দিয়ে ঘড়ির দিকে তাকায় সকাল নয়টার চেয়ে বেশি দেরী পর্যন্ত সে ঘুমায় নি।ছোটবেলা থেকেই বেশ পান্চুয়াল সে কাজ কর্মের বিষয়ে।অভিনব দেখতে পায় টেবিলের কোনায় থার্মোমিটার আর মেডিসিন রাখা পাশে একটা নোট।অভিনব নোটটা হাতে নেয়।

-‘মিস্টার অভি ঘুম থেকে উঠে জ্বরটা মেপে নেবেন আর খাবার খেয়ে ওষুধ খেয়ে নেবেন।আজ ভার্সিটিতে ইম্পর্টেন্ট ক্লাস ছিল বেশি জরুরী বলেই যেতে হলো আপনি নিজের খেয়াল রাখবেন।’
শেষে অন্তি নিজের নামের সঙ্গে একটা স্মাইলি লাগিয়ে দিয়েছে।অভিনব কাল রাতের কথা মনে করার চেষ্টা করে তার শুধু এইটুকু মনে আছে অন্তি তার কপালে জ্বলপট্টি দিচ্ছিল আর তার শরীর মুছে দিচ্ছিল।
-‘মেয়েটা কাল রাতে আমার অনেক সেবা করেছে হয়তো সারা রাত ঘুমায়নি।,,আমি আজ ওকে ভার্সিটি থেকে পিক করতে যাব।’
অভিনব বিছানা থেকে নেমে পড়ে।অন্তি তাকে দেখলে নিশ্চয়ই খুশি হবে সাথে অবাক হবে।

অন্তি সিড়ি দিয়ে নামছিল তখনই সে ধাক্কা খায় একজনের সঙ্গে।অন্তি তাকিয়ে দেখে ব্যক্তিটা আর কেউ না মাহির।মাহির সবসময়ের মতো অন্তিকে দেখে তিতা করলা খাওয়ার মতো ভাব করে মুখ কুঁচকে বলে,
-‘উফফ যত্তসব।’
অন্তি ভ্রূযুগল কুঁচকে নিয়ে ভাবে সে কি ইচ্ছে করে ধাক্কা খেয়েছে না কি দোষটা তো মাহিরের।সে বইয়ের পাহাড় নিয়ে সিড়ি দিয়ে উঠার সময় ধাক্কা খেয়েছে।অন্তি মাহিরের ব্যালেন্স দেখে অবাক ধাক্কা খাওয়ার পরেও তার হাত থেকে একটা বইও নিচে পড়ার সাহস করে নি।হয়তো বইগুলোও ভার্সিটির অন্যান্য স্টুডেন্টদের মতো মাহিরকে ভয় পায়।অন্তি ‘স্যরি’ উচ্চারণ করে চলে যেতে নেয় কিন্তু এবারেও দুজনের ধাক্কা লাগে।এবার বইগুলো নিচে পড়ে।মাহির রেগে বলে,

-‘মিসেস অন্তি দেখে চলতে পারেন না আপনি?’
-‘স্যার আম রিয়েলি স্যরি আমি সাহায্য করছি বইগুলো তুলতে।’
-‘দরকার নেই।কোনো খুনির ওয়াইফের সাহায্য আমি নেওয়ার প্রয়োজনবোধ করি না।’
মাহিরের কথাটা অন্তির ইগো হার্ট করে।মাহির এভাবে অভিনবকে বিনা দোষে বারংবার খুনী বলতে পারে না তার চেয়ে বড় কথা সে নিজে ভালো না কি?নিজের ফ্রেন্ডকে আধমরা অবস্থায় ফেলে যে চলে আসে সে কখনো ভালো হতে পারে না অন্তত।

অন্তি সবগুলো বই তুলে মাহিরের হাতে দিয়ে মুখ শক্ত করে বলল,
-‘আমি এখানে একাই পড়াশুনা করতে এসেছি আমার স্বামীকে নিয়ে আসি নি তাই কথায় কথায় তাকে টেনে আনবেন না।অভি ভালো না খারাপ তা চিন্তা করার আগে এটা ভাবুন যে আপনি ভালো কি না?নিজের বন্ধুকে আধমরা অবস্থায় ফেলে আসাটা কোন ভালোগিড়ির মধ্যে পড়ে?আর আপনার বোনের লাশ পেয়েছেন?অভিনবকে খুনি হিসেবে জাজ না করে একবার নিজের বোনকে খোঁজার চেষ্টা করুন।সে যে মরেই গেছে এটা ভাবার কারণ কি?সে তো নিখোঁজ হতে পারে?পালাতেও পারে কোনো কারণে তাই না?কথাগুলো ভেবে দেখবেন,আসছি।’

অন্তি কাঁধের ব্যাগ ঝুলিয়ে সামনে এগিয়ে যায়।আজ সে মহা খুশি কারণ মাহিরকে সে ইনডাইরেক্টলি বোঝাতে পেরেছে মারিহা মৃত পয় জীবিত।মাহির বুদ্ধিমান ব্যক্তি তাই কথাগুলোর গভীরতা সে আবশ্যই বুঝতে পারবে।
অন্তি আবার ধাক্কা খায় আসলে নিচের দিকে তাকিয়ে ও মিটমিট করে হাসছিল তাই বুঝতে পারে নি।অভিনব গম্ভীর গলায় বলল,
-‘কি কথা বলছিলে মাহিরের সাথে?’
অন্তি অভিনবর কন্ঠ শুনে অবাক।সামনে তাকাতেই দেখে কালো মাস্ক আর ক্যাপ পড়া একজন লোক দাঁড়িয়ে আছে।অন্তি বুঝতে পারে অভিনব নিজেকে লুকিয়ে রাখতে এমন পদ্ধতি অবলম্বন করেছে।অন্তি ফিসফিস করে বলল,

-‘আপনি এখানে কেন?আপনাকে কে আসতে বলেছে?’
-‘মাহিরের সাথে কিসেয এতো কথা তোমার?’
অভিনবর গলায় চাপা রাগ।অন্তি বুঝতে পারে না মাহিরের সঙ্গে কথা বলাতে এতো রেগে যাওয়ার কি আছে?মাহির ওর টিচার কত কথাই তো হতে পারে?যদিও এতক্ষণ মাহিরের সাথে বলা কথাগুলো পড়াশুনা বহির্ভূত।
অন্তি কনফিডেন্স নিয়ে অভিনবর দিকে সাহস করে তাকিয়ে বলল,
-‘ওনার বই সিড়ি দিয়ে ওঠার সময় পড়ে যাচ্ছিল তাই আমি ওঠাতে সাহায্য করছিলাম।’
-‘কেন?’
-‘কারণ আমার সঙ্গে ধাক্কা লেগে পড়ে গিয়েছিল আপনি এতো প্রশ্ন করছেন কেন?’

-‘তুমি আর কখনো ওর সাথে কথা বলবে না চলো বাসায়।’
অভিনব অন্তির হাত ধরে টানতে টানতে নিয়ে গিয়ে গাড়িতে।আজ সে ড্রাইভার আনে নি নিজে ড্রাইভ করবে।অভিনবর চেহারা রাগে লাল হয়ে যাচ্ছে।অন্তি সিরিয়াস সময়েও সিরিয়াস হতে পারছে না আজ তাই হেসে দিয়ে মজার ছলে বলল,
-‘আপনি তো এমনভাবে রাগ করছেন যেন মাহির স্যার আমাকে চুরি করে নিয়ে যাবে কথা বললে।’
অভিনব হঠাৎ হার্ড ব্রেক দিয়ে গাড়ি থামায়।অন্তির দিকে আহত চোখে তাকিয়ে থাকে কিন্তু অন্তি এই দৃষ্টির মানে বুঝতে পারে না।
অভিনব গাড়ি থেকে নেমে গিয়ে সিগারেট ধরায়।অন্তি অভিনবকে সিগারেট খেতে এই প্রথম দেখছে সে অভিনবর পাশে দাঁড়িয়ে মজা করে বলল,

-‘বন্ধু একটা সিগারেট দেও।’
অভিনব রাগী চোখে তাকায় অন্তির দিকে।অন্তি সিগারেটের প্যাকেটটা অভিনবর হাত থেকে নিয়ে বলল,
-‘এখানে লেখা আছে ধূমপান স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর কিন্তু এটা জানা সত্তেও সবাই ধূমপান করে আর অন্যকেও উৎসাহিত করে কেন বলুন তো?’
-‘কেন?’
-‘কারণ নিষিদ্ধ জিনিসের প্রতি আমাদের আগ্রহ বেশি।আমাদেরকে যেই কাজটা করতে বারণ করা হয় সেই কাজটা করতেই আমরা বেশি উৎসাহ দেখাই।ভালোবাসাও একটা নিষিদ্ধ অনুভূতি এই অনুভূতির স্বীকার যারা হয় তারা জানে এটাতে কষ্ট আছে দুঃখ আছে তবুও তারা ভালোবাসে।আপনি প্রথম সিগারেটটা কবে জ্বালিয়েছিলেন?’

সাথে থেকো প্রিয় পর্ব ২৪

-‘মারিহা হারিয়ে যাওয়ার পর।’
-‘ওহ তাহলে মুভিতে ঠিকই দেখায় নায়ক নায়িকা চলে গেলে ছ্যাঁকা খেয়ে ব্যাকা হয়ে নেশা করে দেবদাস হয়।’
অভিনব রেগে যায়।
-‘আমি কোনো হিরো নই আর মারিহাও কোনো হিরোইন নয়।আমার ভালোবাসাটা এক তরফা ছিল।আমার মতো মানুষেরা মুভির সাইড ক্যারেক্টার হয় মেইন না।’
-‘তাহলে হার্ট ব্রোকেন হিরোর মতো সিগারেট না খেয়ে এখন থেকে চুইংগাম খাবেন বুঝলেন।আমি নাতি নাতনির বিয়ে না খেয়ে আপনাকে ওপারে যেতে দিচ্ছি না।’
-‘আমাদের ছেলে মেয়ে কবে হলো?’
-‘,,,,,,,,,,,।’
অন্তি চুপচাপ গিয়ে গাড়িতে বসে পড়ে কারণ অভিনব ভুল কথা জিজ্ঞেস করে ফেলেছে যেটার উত্তর ওর কাছে নেই।

সাথে থেকো প্রিয় পর্ব ২৬

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.