সাথে থেকো প্রিয় - Golpo Bazar

সাথে থেকো প্রিয় পর্ব ২৬ || golper thikana

সাথে থেকো প্রিয়

সাথে থেকো প্রিয় পর্ব ২৬
লেখক:রিয়ান আহমেদ

জীবনে চরম সত্যগুলো মানুষ ফেস করতে চায় না তাই তারা এড়িয়ে যায়।তাদের মস্তিষ্ক উপলব্ধি করতে পারছে যে কথাগুলো সত্য কিন্তু মন সেটা মেনে নিতে পারছে না।আগুনের সাথেও এরকমটাই ঘটেছে।সে মেনে নিতে পারছে না তার জীবনের থেকে বিশটা বছর হারিয়ে গেছে।আগুনের জ্ঞান অনেকক্ষণ আগেই ফিরে এসেছে কিন্তু সে অচেতন হওয়ার নাটক করে আছে।আগুনের মন বলছে তার আশেপাশের লোকগুলো তার শত্রু তারা ওনার অসুস্থতার সুযোগ নিয়ে ওনাকে এখানে আটকে রেখেছে আর এখন নাটক করছে।এই নাটক করার কারণ একটাই হতে পারে আগুনের কাছে থেকে কোনো জরুরী তথ্য পাওয়ার চেষ্টা করবে এরা।এই ধারণাগুলো একান্তই আগুনের নিজের।

ডাক্তার মারুফ আগুনের স্যালাইনে একটা ইন্জেকশন দিচ্ছিলেন তখনই আগুন সার্জিক্যাল নাইফ দিয়ে ওনার হাতে স্ট্রেপ করে।মারুফ হতবাক হয়ে দুই কদম পিছিয়ে যায় সে চিৎকার করতে যাবে তার আগেই আগুন ওনার মাথায় ল্যাম্প শেট ছুঁড়ে মারে আর এতে বেহুশ হয়ে যান।রুমটা সাউন্ডপ্রুফ হওয়ার দরুন বাইরে এই শব্দ যায় না।আগুন বিছানা থেকে নেমে দাঁড়ায়।তার পা কাঁপছে হয়তো অনেকদিন অকেজো থাকার কারণে।আগুন রুমের জিনিসপত্র ধরে রুমের জানালার কাছে গিয়ে পর্দাটা সড়ায়।আর যা দেখেন তাতে তার মাথা ঘুরে যাওয়ার অবস্থা কারণ উনি এই মুহুর্তে একটা জঙ্গলের মধ্যে আছেন যেখানে শুধুমাত্র গাছ আর লতাপাতা ছাড়া কিছু নেই।বাড়িটা মেঝেগুলো কাঠের তৈরি তবে দেয়ালগুলো ইটৈর।আগুন কাঠের দরজাটা একটু খুলতেই কারো আসার শব্দ শুনতে পায়।সে দরজার আড়ালে লুকিয়ে পড়েন হাতে একটা স্টিলের স্টিক নিয়ে।লোকটা রুমে প্রবেশ করে ডক্টর মারুফকে দেখে যেই চিৎকার করতে যাবেন তখনই তার মাথায় আগুন আঘাত করে।লোকটাও অচেতন হয়েপড়ে যায়।আগুন লোকটার কাছে একটা রিভলবার দেখে সেটা হাতে তুলে নেয় আর লোকটার পকেটের মানিব্যাগ থেকে কিছু টাকা নিয়ে নেয়।কারণে এখান থেকে বড় রোডে গিয়ে তাকে গাড়িতে উঠতে হবে।

আরও গল্প পড়তে আমাদের গুপ এ জয়েন হউন

আগুন রিভলবার হাত অতি সাবধানে পা ফেলে সামনে এগিয়ে যেতে থাকে যদিও হাঁটতে তার কষ্ট হচ্ছে আবার হাত থেকে ক্যানোলা টেনে খুলে ফেলার কারণে হাত থেকে রক্তও পড়ছে কিন্তু এসব কিছু এখন মাথায় রাখলে চলবে না।
আগুন গেটের কাছে গিয়ে দেখে একজন দাঁড়িয়ে ফোনে কথা বলছে।বাইরে একটা জিপ দাঁড়িয়ে আছে লোকটার কাছে নিশ্চয়ই জিপের চাবি আছে।আগুন বন্দুকটা ভালো করে দেখে লোড করে নেয় আর লোকটার মাথার পেছনে পয়েন্ট করে।আগুন বলল,
-‘আ,,আমি আগুন আমাকে গাড়ির চাবি দেও নাহলে তোমাকে শ্যুট করতে বাধ্য হব।’

লোকটা ভয় পায় না কারণ এরচেয়েও ভয়ানক পরিস্থিতির মুখোমুখি সে হয়েছে।লোকটা কোনো বাক্য বিরোধিতা ছাড়াই নিজের জিপের চাবিটা আগুনের দিকে এগিয়ে দিয়ে বলল,
-‘বস আপনার জন্য তো জানও হাজির,আপনার জিপ আপনি যেখানে খুশি সেখানে নিয়ে যেতে পারেন।’
আগুন অবাক হয় কিন্তু এখন অবাক হওয়ার সময় নেই তাকে গাড়িতে করে বের হতে হবে এখান থেকে।আগুন জিপ স্টার্ট দিতেই লোকটা যার নাম জাহিন সে অভিনবকে ফোন দিয়ে বলল,
-‘স্যার বস জিপ নিয়ে বের হয়েছেন।’
-‘হোয়াট?’

অভিনব জানে আগুনের গায়ে বিনা অনুমতিতে টাচ করার অনুমতি এদের কারো নেই তাই এরা আটকানোর চেষ্টা করে নি।তাছাড়া আগুন ওদের বস ওরা আগুনের অর্ডার মানতে বাধ্য তাই হয়তো জিহান চাবি দিয়ে দিয়েছে।অভিনব দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল,
-‘তুমি স্যারকে ফলো করো আর আমাকে লোকেশন পাঠাও আমি সেখানে আসছি।’

আগুন একটা পুরাতন বাড়ির সামনে দাঁড়িয়ে আছে।বাড়িটা ডুপ্লেক্স বাড়ির আশেপাশে ময়লা জমে আছে পরিষ্কার করার কেউ নেই।বাড়ির সাদা রঙটা ময়লা হয়ে গেছে।বাগানের ঝোপঝাড়গুলো জঙ্গলে পরিণত হয়েছে।এক কথায় বাড়িটাকে দেখতে বর্তমানে একটা ভুতরে বাড়ি বাদে আর কিছুই মনে হচ্ছে না।

কিন্তু এই বাড়িটা কি আদৌ কখনো ভূতের বাড়ি ছিল?আগুনের এখনো মনে হচ্ছে এই তো সেদিন সে আর তার সদ্য বিবাহিত স্ত্রী আম গাছের নিচে একটা দোলনায় হাতে হাত রেখে বসে ছিল।কোথায় তার স্ত্রী এখন? আশেপাশের সবকিছু বদলে গেছে।বাড়ির বিপরীত পাশে রাস্তার ওপারে অনেকগুলো ছোটখাটো দোকান ছিল কিন্তু এখন সেগুলোর জায়গায় তৈরি হয়েছে একটি বিরাট শপিং মল।আগের মতো গাছপালাও এখন আর নেই।বাড়ির পাশের চায়ের দোকানটা এখন আর নেই দেখে আগুন আরো হতাশ হলো তার স্ত্রীর খোঁজ এখন তাকে কে দিবে?হঠাৎ আগুনের চোখ পড়লো একটা খাবারের গাড়ির উপর।গাড়ির পাশে একটা লোক দাঁড়িয়ে সবাইকে চা বানিয়ে খাওয়াচ্ছে।আগুনের মনে হচ্ছে এই লোক তার চেনা কিন্তু সে ঠিক মনে করতে পারছে না।লোকটার কাছে গিয়ে সে দাঁড়ায়।দূর থেকে মানুষকে দেখে পুরোপুরি চেনা সম্ভব না এর জন্য কাছে আসাটা জরুরি।

কিছুক্ষণ তাকিয়ে থাকার পর আগুনের চোখে আশার কিরণ জ্বলে উঠে।
-‘নাদিম ভাই।’
চাওয়ালা নাদিম চা বানাতে বানাতে নিজের নামটা কারো মুখে ভাই হিসেবে সন্মোধিত শুনে একটু অবাক হন।আজকাল কোনো কাস্টমার তাকে ভাই বলে ডাকে না প্রায় সবাই মামা বলে ডাকে।নাদিম একবার লোকটার দিকে তাকিয়ে,
-‘জ্বী ভাই বলেন কি চা নেবেন?’
-‘ভাই আমি চা চাইছি না।আমার স্ত্রী এই বাড়িতে থাকতো সে কোথায়?’
নাদিম এবার আগুনের দিকে তাকায়।কে এই লোক আর ভুতুড়ে বাড়ির দিকে তাকিয়ে নিজের স্ত্রীর কথা কেন জানতে চাইছে?নির্ঘাত কোনো পাগল হবে পাগলাগারদ থেকে পালিয়ে আসা।নাহলে এরকম হাসপাতালের পোশাক পড়া বড় বড় চুলওয়ালা আর দাড়িওয়ালা মানুষ কি কোনো সুস্থ স্বাভাবিক মানুষ হয় না কি?নাদিম নিজের কপালের ঘাম মুছে বিরক্ত হয়ে বললেন,

-‘যাও তো ভাই এখান থেকে কাজের সময় তোমাদের মতো পাগলের জ্বালা ভালো লাগে না।’
নাদিমের কথা শুনে আগুন এক কদম পিছিয়ে যায়।এসব কি হচ্ছে তার সাথে?যা হচ্ছে তা তো হওয়ার কথা ছিল না।তবুও আরো একবার জিজ্ঞেস করার চেষ্টা করতেই লোকজনের ধাক্কাধাক্কাধাক্কির কারণে উনি পিছনে গিয়ে পড়ে যান।রাস্তায় পড়ে থাকা উন্মাদের মতো মানুষদের কেউ গুরত্ব দেয় না।
আগুন মাথায় হাত দিয়ে নিজের চুল টানতে থাকে।তার পরিবার বলতে শুধু তার স্ত্রীই ছিল সে এখন কোথায় তা তার জানা নেই।কেউ তাকে চিনতে পারছে না।কে’ই বা ২০ বছর আগে নিখোঁজ হওয়া কোনো ব্যক্তিকে মনে রাখে?যেখানে গতকাল কারো মৃত্যু ঘটলে পরেরদিন থেকে পরিবারের লোকজন আগের জীবনে ফিরে যায়।
আগুনের কানে হঠাৎ একটা মিষ্টি গলার আওয়াজ ভেসে আসে।কেউ একজন বলে,

-‘আপনি ঠিকাছেন?আপনার হাত দিয়ে রক্ত পড়ছে আমি ব্যান্ডেজ করে দিব?’
আগুন তাকায় আওয়াজের উৎসের দিকে।একটা ১৮/১৯ বছর বয়সী মেয়ে দাঁড়িয়ে আছে পড়নে সাদা ফতুয়া লাল স্কার্ট আর সাদা হিজাব।
আগুন নিচু গলায় বলল,
-‘ দরকার নেই।’
মেয়েটা শুনলো না।সে আগুনের হাতটা ধরে নিজের ব্যাগ থেকে ব্যান্ডেজ বের করে লাগিয়ে দিতে দিতে বলল,
-‘অন্তি কারো বিপদে পিছিয়ে যায় না।আপনার হাতে কি ক্যানোলা লাগানো ছিল না কি?’
আগুন নিজের হাত জলদি করে অন্তির থেকে ছাড়িয়ে নিয়ে রাগী গলায় বলল,
-‘বলছি না দরকার নেই।যাও এখান থেকে আমি কাউকে কৈফিয়ত দেই না।’

অন্তি রেগে গেল।এইদিক দিয়ে সে একটা লাইব্রেরির থেকে বই কিনে বাসায় ফিরছিল।খান ম্যানশন এখান থেকে আধ ঘন্টা দূরে তাই বিকেলবেলা হাঁটাহাটি করাই যায় এই সুযোগে তাই অন্তি পায়ে হেঁটেই লাইব্রেরি গিয়েছিল বাসা থেকে আর পায়ে হেঁটেই বাসায় ফিরছিল।কিন্তু মাঝ রাস্তায় মনের মাঝে চা পানের উদ্যম ইচ্ছেকে দমন করতে না পেরে সে চায়ের দোকানে দাঁড়িয়ে যায় তখনই দেখে একজন মধ্যবয়স্ক লোক মানুষের ধাক্কায় পড়ে গেছে তাই অন্তি ওনাকে সাহায্য করতে এগিয়ে আসে।কিন্তু এখন এই লোকটা উল্টো অন্তিকেই ঝাড়ি মারছে।
অন্তি মনে মনে বলল,

-‘দেখতে যেমন পাগল আচরণও পাগলের মতো নাহলে কেউ সাহায্য করলে এভাবে তাকে অপমান করে নাকি?’
অন্তি মেকি হাসি দিয়ে বলল,
-‘আংকেল আপনাকে কেমন যেন ডেস্পারেট মনে হচ্ছে কিছু নিয়ে।আপনি তখন ঐ চাওয়ালা আংকেলকে কি যেন জিজ্ঞেস করছিলেন।’
আগুন মেয়েটার মুখের দিকে তাকায় চোখের চাহনি দেখেই তার বেশ মায়া লেগে গেল মেয়েটার প্রতি।আগুন কেঁদে দিয়ে বললেন,
-‘আমি সব হারিয়েছি।আমার জীবনের অনেকটা সময় আমার জীবন থেকে হারিয়ে গেছে।আমার স্ত্রীকেও আমি হারিয়েছি।’
অন্তির মায়া হলো আগুনের প্রতি।কত কষ্ট লোকটার জীবনে তা তার চোখের মাঝে স্পষ্ট ধরা পড়ছে।অন্তি কিছুক্ষণ চুপ থেকে বলল,
-‘আপনি আপনার স্ত্রীকে কিভাবে হারিয়েছেন?’
-‘আ,,আমি জানি না।কিছু জানি না।’

হঠাৎ অন্তি নিজের হাতে টান অনুভব করলো।কেউ তাকে টেনে নিয়ে যাচ্ছে।অন্তি তাকিয়ে দেখে ব্যক্তিটা আর কেউ নয় অভিনব।
অভিনব রাগী গলায় বলল,
-‘এভাবে রাস্তায় বসে পাগলদের সঙ্গে গল্প করছো কেন?সন্ধ্যার আজান দিবে চলো বাসায় চলো।’
অন্তি নিজের হাত টেনে ছাড়িয়ে নিয়ে বলল,
-‘আপনি এখানে কি করছেন?’
-‘আমি এই রাস্তা দিয়ে যাচ্ছিলাম তখনই তোমাকে এখানে দেখলাম।’
-‘আমি লাইব্রেরি গিয়েছিলাম বই কিনতে।আর এই লোকটা পাগল না ইনি,,,,।’
অন্তি পেছন ফিরে আগুনের দিকে তাকাতেই দেখলো আগুন নেই।অন্তি চোখ কচলে ভালো করে দেখলো।কি হলো ব্যাপারটা একটু আগেই তো একটা লোক এখানে বসেছিল।সে গেল কোথায়?অভিনব বলল,
-‘এখানে কেউ নেই চলো বাসায়।’

-‘কিন্তু একটু আগেই তো ছিল।উনি হয়তো অন্যদিকে গেছেন আমি এক্ষুণি ওনাকে খুঁজে বের করে আনছি দাঁড়ান আপনি।’
অন্তি যেতে চাইলে অভিনব অন্তির হাত টেনে গাড়ির দিকে নিয়ে যেতে যেতে বলল,
-‘কোনো দরকার নেই একটা পাগলকে খোঁজার।পাগলরা রাস্তায় রাস্তায় ঘুরে এটাই তাদের কাজ।সে তোমার সাথে কথা বলতে চায় নাই তাই চলে গেছে।’
অন্তি আর কিছু বলল না অভিনবর সাথে হাঁটা ধরলো কিন্তু সে এখনো আগুনের কথাই ভাবছে লোকটার থেকে আরো কিছু জানার দরকার ছিল।
অভিনব হাঁটতে হাঁটতে পেছনে তাকিয়ে দূরে থাকা জাহিনের উদ্দেশ্যে একটা থামজাপ দিয়ে অন্তির সাথে এগিয়ে যায়।এদিকে জাহিন আগুনকে অজ্ঞান করে গাড়িতে উঠিয়ে দিয়েছে।

এখন এখানে কি ঘটেছিল তা ক্লিয়ার করা যাক।অভিনব আর জাহিন আগুনকে ফলো করে এখানে আসে কিন্তু এখানে এসে আগুনকে সাথে নিয়ে যেতে পারছিল না কারণ অন্তি আগুনের সঙ্গে কথা বলছিল।অভিনব সামনে গেলে অন্তি চিনে ফেলতো আর হাজারটা প্রশ্ন করতো পরে এক পর্যায়ে অভিনবর ব্ল্যাক শ্যাডো গ্যাঙ্গের সদস্য হওয়ার ব্যাপারটা বেরিয়ে আসতো।
তাই অভিনব সাধারণভাবে অন্তির কাছে যায় আর এমন ভাব নেয় যেন অন্তির মনে হয় সে অন্তির জন্যই এসেছে।এদিকে আগুন অভিনবকে দেখে চিনে ফেলে।কিন্তু সে অন্তিকে কিছু বলার আগেই অভিনবর লোকেরা অন্তির চোখের আড়ালে অতিদ্রুত আগুনকে সেখান থেকে নিয়ে চলে যায়।

শুভ্র আর সারিকা একই কেবিনে বসে আলোচনা করছে।দুজনেই সকালের ঘটনার প্রতি বেশ পজেসিভ হয়ে আছে।নিশার বাবা আজিজ পুলিশকে কিছু বলেন নি চুপ করে বসে আছেন তিনি এর কারণটাই শুভ্র বুঝতে পারছে না।যদিও সারিকা এই বিষয়ে জানে কিন্তু শুভ্রকে এসব বলা যাবে না।
-‘সারিকা আমার মনে হচ্ছে মেয়েটা কি যেনো নাম ওর,,নিশা হ্যা।নিশার বাবা আজিজ মানে ঐ রেস্টুরেন্ট মালিক দুর্জয়ের সঙ্গে কোনো একটা ঝামেলা করেছে।হয়তো সেও কোনো অবৈধ কাজ কারবারে যুক্ত তাই পুলিশের কাছে ব্যাপারটা বলছে না।তাছাড়া দুর্জয়ের জন্য ভয় তো মনে আছেই।’
সারিকা কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে বলল,

-‘আমার মনে আপনার কথাই যদি ঠিক হয় তাহলে হয়তো আজিজ দুর্জয়ের সাথে কোনো বেইমানি করেছে।আমি শুনেছি দুর্জয়ের সাথে যাদের শত্রুতা থাকে তাদের দূর্বলতাকে ও টার্গেট করে।আজিজের মেয়ে নিশাই তার একমাত্র দূর্বলতা।’
-‘হতে পারে।’
সারিকা ইনডাইরেক্টলি ব্যাপারটা রিভিল্ড করলো যেন শুভ্র কিছু বুঝতে না পারে।
অনেকক্ষণ কথা বলে দুজন উঠে দাঁড়ায়।বসে থাকতে থাকতে তাদের কোমর ব্যথা হয়ে গেছে।সারিকা ঘড়ি দেখে বলল,
-‘সন্ধ্যা শেষ হয়ে রাত শুরু হয়েছে।এবার আমার যাওয়া উচিত।চ্যানেলের ভাইস প্রেসিডেন্টের কেবিনে এতক্ষণ বসে থাকাটা দৃষ্টিকটু।’
সারিকা চলে যাওয়ার জন্য পা বাড়াতেই শুভ্র সারিকার হাত ধরে বলল,
-‘সারিকা কিছু কথা ছিল।’
সারিকা শান্ত দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলল,
-‘বলুন।’
শুভ্র কিছুটা ইতস্তত বোধ করে বলল,

-‘আমাদের জীবনে অনেক অপ্রীতিকর ঘটনাই ঘটে থাকে।আর এই এই ঘটনাগুলো আমাদেরকে কখনো কখনো একটু একটু বেশিই মানসিক আঘাত দিয়ে ফেলে।আমি সেদিন বেশ অপমাবোধ করেছিলাম যেদিন তুমি আমাকে প্রত্যাখ্যান করেছিলে স্কুলের সকলের সামনে।ঐ ঘটনাটাকে এতটা সিরিয়াসলি না নিলেও হয়তো ভালো হতো।তুমি আমাকে নিজের শত্রুর মতো মনে করতে।যদি সেই শত্রুই একদিন এসে তোমাকে প্রপোজ করে তাহলে আমি মনে করি তোমার রিয়েকশনটা স্বাভাবিক।তার উপর আমরা দুজন ছিলাম ছোট,অবুঝ।এখন আমরা বড় হয়েছি বুঝতে শিখেছি তাই আগের সব ঝগড়া ভুলে আমরা নতুন করে বন্ধু হতে পারি না?’
সারিকা কিছুক্ষণ চুপ করে শুভ্রকে দেখলো এরপর হেসে বলল,

সাথে থেকো প্রিয় পর্ব ২৫

-‘বন্ধু হতে সমস্যা নেই।আমরা আজ থেকে কিছু বছর পল এই সময়টা হয়তো ফিরে পাবো না তখন আফসোস করবো নিজের করা ছোট ছোট ভুলের জন্য।হতে পারে আপনার সঙ্গে বন্ধুত্ব নাহলে আমার জীবনে ছোট অথবা বড় কোন ভুল হবে আবার নাও হতে পারে।কিন্তু তাতে কি?বন্ধু সবাই চায়।কিন্তু আমার সঙ্গে ঝগড়া না করে থাকতে পারবেন?’
শুভ্র সারিকার কথায় খানিক হেসে বলল,
-‘তুমি সাথে থাকলে ঝগড়া তো হবেই।’
কথাটা বলে দুজনে হা হা করে হেসে দিল পুরো রুমে তাদের হাসি প্রতিধ্বনিত হতে লাগলো।

সাথে থেকো প্রিয় পর্ব ২৭

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.