সাথে থেকো প্রিয় পর্ব ২৭
লেখক:রিয়ান আহমেদ
অভিনব আজ বাসা থেকে চেয়েও বেরোতে পারছে না কারণ তার মা অন্তির সঙ্গে নিজের ফ্রেন্ডস রিলেটিভদের মিট করানোর জন্য বাসায় একটা অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছেন।অনুষ্ঠানটা বেশ বড় আকারেই আয়োজন করা হয়েছে।
অভিনব অন্তিকেও দেখছে না বেশ অনেকক্ষণ যাবত।বাড়িতে আসার পরপরই অন্তিকে অভিনবর মা নিজের ঘরে তলব করেছেন।সেই যে অন্তি গেল আর ফিরে নি।
অভিনব বারান্দায় গিয়ে দেখলো অন্তির খরগোশটা একটা ঝুড়িতে বসে ঘাস খাচ্ছে বেশ চুপচাপ।অভিনব ভ্রূ কুঁচকে টেরিকে হাতে তুলে নিয়ে বলল,
-‘কি এমন আছে এটার মধ্যে যে এটার জন্য অন্তি পাগল?এমনিতে তুই কিউট কিন্তু আমার চেয়ে বেশি না।আমার কিউটনেস আর চার্মের উপর হাজারো নিজের হাতের রগ কাটতেও প্রস্তুত হয়ে যায়।তোর জন্য কেউ এমনটা কখনো করবে?,,দেখ আমি নিজের প্রশংসা নিজে করতে চাই না তবুও সত্যি যেটা সেটাই বলবো অভিনব খান বিজয় ইজ দ্যা মোস্ট কিউট এন্ড হ্যান্ডসাম ম্যান ইন বাংলাদেশ।’
অভিনব এমনই নিজের প্রশংসা নিজে করতে সে পছন্দ করে।লাইফে একটা জিনিস সবসময় মনে রাখা জরুরী যে তোমার চেয়ে জরুরী তোমার জীবনে আর কেউ নেই।নিজেকে ভালোবাসতে পারলে পৃথিবীকে ভালোবাসা সহজ হয়ে যায়।
অভিনব পেছন থেকে অর্ণবের কন্ঠ শুনতে পায়,
-‘নিজের প্রশংসা যদি শেষ হয়ে থাকে তাহলে এদিকে এসে দাঁড়াও তোমার সাথে কথা আছে।’
আরও গল্প পড়তে আমাদের গুপ এ জয়েন হউন
অভিনব উঠে অর্নবের সামনে পকেটে হাত দিয়ে দাঁড়ায়।অর্ণব একটা স্যুট অভিনবর দিকে এগিয়ে দিয়ে বলল,
-‘নেও এটা পড়ে নেও গেস্টরা চলে আসবে।’
অভিনব স্যুটটা নিয়ে অবাক হওয়ার মতো করে বলল,
-‘ওহ তুমি আমার সাইজ জানো?আমি এটা আশা করি নি তোমার কাছে।’
অর্ণব বিরক্ত হন ছেলের কথায়।অভিনব কথায় কথায় ওনাকে খোঁচা মেরে কথা বলে এতো সাহস এই ছেলের!কই সে তো তার বাবার সাথে কখনো ঠিকমতো চোখে চোখ রেখে কথা বলেন নি।অর্ণব বিরক্তি নিয়ে বললেন,
-‘কথায় আমাকে টোন্ট করাটা কি জরুরী?’
-‘আমি তোমাকে খোঁচা মেরে কথা বলি নি আমি জাস্ট একটু অবাক হয়েছি তোমার আচরণে তাই কিউরিসিটির কারণে কথাটা বললাম।'(ইনোসেন্ট চেহারা নিয়ে)
-‘নিজের বাবার সঙ্গে কথা বলার ভদ্রতাটা তোমার নেই তাই না?’
-‘যার শেখানোর কথা ছিল সে শেখায় নি তাই আমিও নিজে থেকে শেখার চেষ্টা করি নি।’
-‘,,,হোয়াট এভার তৈরি হয়ে নিচে চলে এসো আর এই খরগোশটা এখানে কেন রেখেছো?বাড়িটা কি চিড়িয়াখানায় পরিণত করতে চাইছে নাকি তোমার ওয়াইফ?'(তাচ্ছিল্যের স্বরে)
-‘এটা চিড়িয়াখানা হতে যাবে কেন এটা তো খান ম্যানশন যেখানে শুধুমাত্র বুদ্ধিমানরা থাকে।আর এই খরগোশটা শুধু একটা খরগোশ না অন্তি এটাকে সন্তানের মতো মনে করে।কোনো বুদ্ধিহীন প্রাণীই এই ছোট্ট জীবনটাকে উপেক্ষা করতে পারবে।’
-‘তোমাকে কিছু বলা মানে নিজের পায়ে নিডে কুড়াল মারা।'(রেগে)
-‘তাহলে বলো কেন?’
-‘থাকো তুমি আমি যাচ্ছি,,,আশা করছি তোমার ওয়াইফ অনুষ্ঠানে আমাদের হাই সোসাইটির মানুষের সাথে এডজাস্ট হওয়ার চেষ্টা করবে।’
-‘ড্যাড হাই সোসাইটি,লো সোসাইটি বলতে কিছু হয় না।আমরাই এটা তৈরি করেছি।হাই সোসাইটির লোকজনের মাঝে টাকার অভাব না থাকলেও সুখের অভাব আছে। তুমি ঘড়ি কিনতে পারবে কিন্তু সময় কিনতে পারবে না।তুমি একজন বেস্ট ডাক্তার হায়ার করতে পারবে কিন্তু স্বাস্থ্য কিনতে পারবে না।তুমি খাবার কিনতে পারবে কিন্তু ক্ষুধা কিনতে পারবে না।তুমি দামী বিছানা কিনতে পারবে কিন্তু ঘুম কিনতে পারবে না।তুমি একজন নারী কিনতে পারবে কিন্তু তার ভালোবাসা কিনতে পারবে না।,,এই কথাগুলো যে বলেছে সে একটা শব্দও মিথ্যা বলে নি।টাকা দিয়ে তুমি পৃথিবীর বাহ্যিক সৌন্দর্য উপভোগ করতে পারবে কিন্তু এর ভেতরের সুখটা কখনোই অনুভব করতে পারবে না।তাই টাকা দিয়ে মানুষের ক্লাস বিচার করাটা নেহাত বোকামি।’
অর্ণব কিছুক্ষণ স্তব্ধ হয়ে তাকিয়ে রইলো।এতো সুন্দরভাবে কথা বলতে পারে তার ছেলে?কিন্তু আফসোস এই কথাগুলো উনি শেখায় নি অভিনবকে।শেখালে আজ হয়তো তার নিজের প্রতি গর্ব হতো যদি অভিনব এই কথাগুলো তার থেকে শিখতো।
অর্ণব রুমের থেকে অতিদ্রুত পায়ে চলে যায়।
অভিনব শুভ্রর সাথে কথা বলছিল হেসে হেসে।
অভিনব আজ ডার্ক গ্রিন কালারের স্যুট পড়েছে সিল্কি চুলগুলো কপালে পড়ে আছে।
শুভ্র ডার্ক ব্লু কালার স্যুট পড়েছে আর চুলগুলো স্পাইক করে রেখেছে।
তখনই চারপাশ অন্ধকার হয়ে যায় স্পট লাইটের আলো গিয়ে পড়ে সিড়ির উপর।অন্তি আর সারিকা নেমে আসছে।অভিনব আর শুভ্রর চোখে মুগ্ধতা। নারীদের স্বভাব বোঝাটা যেমন কঠিন তেমনই নারীর সৌন্দর্য বোঝাটাও কঠিন।সবাই নারীকে সকল রূপে সৌন্দর্যের রানী হিসেবে মেনে নিতে পারে না আসলে তাদের চোখে সৌন্দর্য ধরা দেয় না।
তবে ভালো লাগা বা ভালোবাসার মানুষটার সব রূপ আমাদের প্রিয়।শুভ্রর মনে প্রেমের ঘন্টা বাজছে।সে পারলে এখনই সারিকার হাত ধরে সবার সামনে বলে বসবে,
-‘আজ কি আমাকে পাগল করার জন্য এই সাদা গাউনে নিজেকে আবৃত করেছেন?আপনার চুলের মাতালময় গন্ধ তো আমার নাকে এসে লাগছে।আপনি কি আমাকে কাছ থেকে সেই সুগন্ধ নেয়ার অধিকার দেবেন।’
শুভ্র গালে হাত দিয়ে কথাগুলো ভাবছে আর মিটমিট করে হাসছে।
এদিকে অভিনবর অবস্থা আরো করুণ।সে বুঝতে পারছে না তার হার্ট এতো দ্রুত গতিতে স্পন্দন করছে কেন।অভিনব বুকের বা পাশে হাত রেখে মনে মনে ভাবছে,
-‘কি হচ্ছেটা কি আমার সাথে?আমার হৃদয়ে ভূমিকম্প হচ্ছি কেন?এই ডার্ক গ্রিন লেহেঙ্গা পড়া মেয়েটা কি এই স্পন্দনের কারণ?মেয়েটা হয়তো আজ অভিনব নামক পুরুষের হৃদয়কে ক্ষতবিক্ষত করতেই এই সাজে নিজেকে সাজিয়েছে।আমি তার প্রতি দূর্বল হয়ে পড়ছি?পড়লে সমস্যা কি এই মেয়েটি তো আমার স্ত্রী আমার বিয়ে করা বউ।আমি জানি না আমার সাথে কি হচ্ছে আমি হৃদয়ের এই যন্ত্রণা সহ্য করতে পারছি না আমার এর ওষুধ চাই।’
অভিনব দ্রুত হেঁটে গিয়ে অন্তির হাত ধরে।সঙ্গে সঙ্গে এতক্ষণ ধরে ঘটে তীব্রতর হৃদয়ের কম্পন ধীরে ধীরে কমে আসতে শুরু করে।অভিনব অন্তির দিকে তাকায় অবাক চোখে।অন্তি মিষ্টি হেসে বলল,
-‘আপনি ঠিক আছেন?আপনার কপালে ঘাম জমে আছে।’
অভিনব দ্রুত মাথা নাড়িয়ে নিঃশ্বাস নিয়ে অন্তির হাত ধরে সামনে এগিয়ে যেতে যেতে বলল,
-‘আমি ঠিকাছি।’
অভিনব মনে মনে বলতে লাগলো,
-‘অন্তির মুখের মিষ্টি হাসি আমি হৃদয়ে কেন এমন শীতলতা এনে দিল?কেন ওর ছোঁয়া আমাকে শান্ত করে দিল?তাহলে কি আমার হৃদয়ের কম্পনে এবং তীব্র ব্যাথার ওষুধটা অন্তি?হ্যা অন্তি’ই সেই ওষুধ।’
সারিকা হেঁটে হেঁটে ডেকোরেশন দেখছিল।তার মা সবকিছু সারপ্রাইজ হিসেবে আয়োজন করলেও অল্প সময়ে বেশ ভালোই সাজানো হয়েছে বাড়িটা।সন্ধ্যায় শুভ্রর কেবিন থেকে বের হতেই ওর মায়ের ফোন পায়।এরপর মায়ের জরুরী তলবে বাসায় হাজির হয়ে তার কথা অনুযায়ী সাজগোজ করতে হয়।শুভ্রর পরিবারকেও ইনভাইট করা হয়েছে তাই শুভ্রও এসেছে।
সারিকা একটু এগিয়ে যেতেই দেখে শুভ্র একটা ফুল হাতে নিয়ে মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে মোবাইল স্ক্রল করছে।সারিকা শুভ্রর কাছে গিয়ে একটু ধমকের সুরে বলল,
-‘শুভ্র আপনি এমন বাচ্চাদের মতো আচরণ করবেন সেটা আমি আশা করি নি।’
হঠাৎ নিজের নাম কারো মুখে শুনে শুভ্র একটু হকচকিয়ে যায় যার ফলে তার হাত থেকে মোবাইলটা পড়ে যায়।শুভ্র মোবাইলটা উঠিয়ে বলল,
-‘মানে কি?আমি কোনো বাচ্চাদের মতো আচরণ করি নি।আর এতো সুন্দর একটা ড্রেস পড়েছো চেহারার নকশাটাও ঠিক করেছো তাহলে একটু ভালো ব্যবহার করতেও শিখো।’
-‘আপনি ডেকোরেশনের থেকে ফুল নেন নি?এটা বাচ্চাদের মতো কাজ না?আর হোয়াট ডু ইউ মিন বাই ড্রেস,আর চেহারার নকশা।আমি এরকমই দেখতে ছিলাম আজীবন।আর ভালো ব্যবহার আপনার সাথে করা আমার পক্ষে কখনোই সম্ভব নয়,,হুহ।’
-‘ওয়েট আমি এই কোথাও থেকে নেই নি।এটা আমাকে একটা মেয়ে দিয়ে বলেছে,”ইউ আর লুকিং সো হ্যান্ডসাম ম্যান দিস ইজ ফর ইউ।”তো এখন আমি কি করবো মেয়েটা আমাকে দিয়েছে বলেই তো নিতে হয়েছে।’
-‘বাহ্ ভাই আপনাকে যেকোনো মেয়ে ফুল দেবে আপনি সেটাই নিয়ে নেবেন?’
-‘অফ কোর্স।এখন মেয়েরা আমাকে নিজেদের হৃদয় দিয়ে বসলে এতে আমার কি দোষ?’
-‘চাপাবাজি করবেন না।”মেয়েরা আমাকে নিজেদের হৃদয় দিয়ে বসলে এতে আমার কি দোষ?”(শুভ্রকে ব্যঙ্গ করে) কোনো পাগল আপনাকে হৃদয় দিলে সেটা সিরিয়াসলি নেবেন না।আপনাকে কোনো সুস্থ মানুষ নিজের হৃদয় দেয়ৃর জন্য বসে নেই।’
সারিকা কথাটা বলে চলে যেতে নিলে শুভ্রর কথায় থমকে দাঁড়ায়।
-‘তুমি কি আমাকে হৃদয় দিয়ে উন্মাদদের দলে নাম লেখাতে চাও নাকি?’
সারিকা শুভ্রর দিকে একনজর তাকিয়ে ছোট করে উত্তর দিয়ে সেখান থেকে চলে যায়।
-‘একদম না।’
সাথে থেকো প্রিয় পর্ব ২৬
শুভ্রর মা হালিমা জামান এবং বাবা নিলয় শাহেদ জামান উভয়েই খুব ধৈর্য নিয়ে অপেক্ষা করে চলেছেন সারিকাকে দেখার জন্য।হালিমা জামান বললেন,
-‘সুহানা ভাবি কোথায় সারিকা মামুনি আর অভিনব এবং তার ওয়াইফ অন্তিকা কোথায়?’
-‘জ্বী আসছে ওরা আসলে,,ঐ তো অভি আর অন্তি।’
অভিনব আর অন্তি সালাম দিল হালিমা আর নিলয়কে।দুজনেই অন্তির বেশ প্রশংসা করলেন।
সারিকা আসতেই শুভ্রর মা মনে মনে বললেন,
-‘মাশাল্লাহ আমার ছেলের জন্য আমি এমন মেয়েই তো চাই।একদম ফুলের মতো নির্মল তার মুখ,কি পবিত্র চাহুনি।আমার ছেলের পছন্দ আছে বলতে হবে।’