সাথে থেকো প্রিয় পর্ব ২৯
লেখক:রিয়ান আহমেদ
ঘুম থেকে উঠতেই অন্তি নিজের মাথায় প্রচণ্ড ব্যথা অনুভব করে।সে গতকালের কথা মনে করার চেষ্টা করে।অন্তির গতকালের শেষ স্মৃতিটা ছিল ওয়েটারের দিয়ে যাওয়া একটা ককটেইল পান করা।এরপর কি ঘটেছিল তা ওর স্পষ্ট মনে পড়ছে না।নাকে তীব্র গোলাপের গন্ধ পায় সে।চোখ খুলে আশেপাশে তাকাতেই ওর চোখ ছানাবড়া হয়ে যায় মুখটা আপনাআপনি হা হয়ে যায়।এতো এতো গোলাপ দিয়ে এই ঘরটা কখন সাজানো হলো?গোলাপের সংখ্যা গুনে হয়তো শেষ করা যাবে না দেখে মনে হচ্ছে এটা একটা বাসর ঘর।অন্তি আশেপাশে চোখ বুলিয়ে দেখে অভিনব একটা লাভ শেপড বালিশ আছে সাথে অনেকগুলো ক্যান্ডেল,,কিন্তু অভিনব কোথায়?অভিনবর কথাটা মাথায় আসতেই অন্তি বেশ কিছুক্ষণ থম মেরে বসে থাকে।গতকাল অভিনবকে দিনার সঙ্গে দেখে ওর রাগ হয়েছিল,হিংসা হয়েছিল,কষ্ট হয়েছিল।তাই এতোগুলো বাজে অনুভূতিকে সামাল দিতে না পেরে ড্রিংক্স করার সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছিল।কিন্তু এখন এর ফল অন্তি হারে হারে পাচ্ছে ওর মাথায় অনবরত কেউ তবলা বাজিয়ে চলেছে বলে ওর ধারণা।মাথা চেপে ধরে বিছানা থেকে উঠতে গেলে ওর টনক নড়ে।গায়ের লেহেঙ্গার ওরনাটা গায়ে নেই বরং ফ্লোরে পড়ে আছে আর অর্নামেন্টসগুলোও গাঁয়ে নেই।তখনই ওয়াশরুম থেকে বেরিয়ে আসে অভিনব।তার গায়ে সাদা শার্ট জড়ানো এবং বাটনগুলো খোলা আর কালো প্যান্ট পড়া।অন্তি অভিনবর দিকে তাকিয়ে গায়ে হাত দিয়ে ব্ল্যাংকেটটা ভালোভাবে জড়িয়ে নিয়ে অস্বস্তি নিয়ে অভিনবর দিকে তাকায়।অভিনব একটা হাসি দিয়ে বলল,
-‘তুমি বসো আমি বাটলারকে বলছি তোমার জন্য লেবুর রস দিয়ে যেতে।’
-‘আমাদের ঘরের অবস্থা এমন কেন এতো ফুল কোত্থেকে এলো?আমার ওরনা আর অর্নামেন্টসগুলো আপনি খুলেছেন?’
অন্তির গলায় স্পষ্ট ভয় প্রকাশ পাচ্ছে।অন্তি এতো ভয় কেন পাচ্ছে তা বুঝতে অভিনবকে খুব বেশি একটা বেগ পেতে হলো।অভিনবর মনে শয়তানি করার ইচ্ছে জাগলো।অন্তি কখনোই ভয় পায় না আজ যখন পেয়েছে আর একটু ভয় দেখাতে ক্ষতি কি?অভিনব লজ্জা পাওয়ার ভঙ্গিতে বলল,
-‘এটা আমাদের ফুলসজ্জার জন্য করা হয়েছে।গতকাল রাতটা ভীষণ স্পেশাল ছিল আমাদের জন্য।’
অন্তি চোখ গোল গোল করে বলল,
-‘মানে কি?কিসের স্পেশালের কথা বলছেন?আমাদের মাঝে কোনো স্পেশাল কিছু ঘটার এক বিন্দু সম্ভাবনা নেই।আপনি মজা করছেন আমার সাথে।’
অভিনব মনে মনে বলল,
-‘স্পেশাল তো অবশ্যই ছিল।কাল রাতে তুমি আমার কাছে নিজের মনের ভেতরে লুকিয়ে রাখা সুপ্ত অনুভূতিগুলোকে প্রকাশ করেছিলে।আজ আমি তোমাকে মন থেকে কথা দিচ্ছি যত যাইহোক তোমার হাত কখনো ছাড়বো না।জীবনের প্রতিটা ক্ষণে “সাথে থেকো প্রিয়”।’
অন্তি অভিনবর চুপ করে থাকাটাকে সহ্য করতে পারছে না।গুরুত্বপূর্ণ কথোপকথনের মাঝে যদি সামনের ব্যক্তিটা হঠাৎ চুপ হয়ে যায় তাহলে তার মাথা ফাটিয়ে দিতে ইচ্ছে করে অন্তির।অভিনব ছোট্ট নিঃশ্বাস ছেড়ে বলল,
আরও গল্প পড়তে আমাদের গুপ এ জয়েন হউন
-‘তোমার সত্যিই বিশ্বাস হচ্ছে না আমার কথা?ওকে তাহলে এই দেখো আমার হাতে তোমার নখের খামচির দাগ।আর আমি এই সকালবেলা গোসল করবোটাই বা কেন?নিশ্চয়ই গোসল করাটা জরুরি ছিল বলেই করেছি।’
অভিনবর কাছে গিয়ে অন্তি দেখে আসলেই খামচির দাগ বসে আছে।আসলে সত্যিকার অর্থে এই খামচি অন্তি দিলেও অভিনব যেই মিন করছে সেটা আসলে ঘটে নি।অন্তি নেশার ঘোরে অভিনবর থেকে নিজেকে ছাড়ানোর সময় দাপাদাপি করে এই খামচি দিয়েছে।
অন্তির হার্ট অ্যাটাক হওয়ার উপক্রম যদিও সে এখনো বিশ্বাস করতে পারছে না অভিনব সাথে,,,,।অন্তি ফুঁপিয়ে কেঁদে দেয় এইবার।কান্না করতে করতে কিছু বলে যা অভিনব বুঝতে পারে না।অভিনব বলল,
-‘আরে আরে কান্না করছো কেন?কান্না থামাও।’
অন্তি আরো জোরে কেঁদে দেয়।অভিনব অন্তির এমন কান্না এই প্রথম দেখছে।অভিনব অন্তির কাছে গিয়ে ওর গাল নিজের হাতের তালুতে নিয়ে বলল,
-‘হুশশ কান্না করো না।শান্ত হয়ে আমাকে বলো কি বলতে চাও।’
অন্তি বলল,
-‘আ,,আমার মাথা ব্যথায় ফেটে যাচ্ছে আর আপনি সে,,সেই কখন থেকে মজা করেই চলেছেন।’
-‘ঠিকই ধরেছেন ম্যাডাম আম জাস্ট কিডিং।এবার শান্ত হয়ে বসো,,ঐ যে দরজায় টোকা পড়লো আমি লেমন জ্যুস নিয়ে আসছি।’
কিছুক্ষণ পর অন্তির মাথা ব্যথা তুলনামূলক কমে যেতেই সে অভিনবর দিকে রক্তচক্ষু নিয়ে তাকায়।অভিনব ঢোঁক গিলে এই ভয়ংকর চোখ দেখে।বাঘের খাঁচায় হাত দিয়ে যে সে কত বড় ভুল করেছে তা এখন সে হারে হারে টের পাবে।অন্তি অভিনব কাছে যায় দুজনেই বিছানার উপর বসে আছে।অন্তি অভিনবর কাঁধে হাত রেখে ইনোসেন্ট গলায় বলল,
-‘কাল রাতের কারণে আপনার শরীরের জায়গায় জায়গায় অনেক আঁচড় লেগেছে তাই না?’
-‘নাহ্ একদম না।আমি পুরোপুরি ঠিক আছি।আর কাল রাতে কি হয়েছে?কিছুই তো হয় নি আমি কাউচে ঘুমিয়েছিলাম আর তুমি বিছানায়,দ্যাটস ইট।’
-‘আপনি হয়তো ভুলে গেছেন কিন্তু আমি ভুলিনি।কালকের রাতটার কথা আমি কি করে ভুলতে পারি।দাঁড়ান আপনার পিঠে আচড় লেগেছে কি না দেখি।’
কথাটা বলে অন্তি এক টানে অভিনবর শার্ট খুলে ফেলে আর পিঠে একটা আঁচড় মারতে যায় প্রতিশোধ নেওয়ার জন্য কিন্তু তার আগেই অভিনব ওর হাত খপ করে ধরে ফেলে নিজের সামনে এনে কোলে বসিয়ে দেয়।দুজনের মাঝে এক ইঞ্চি দুরত্ব নেই।তারা একে অপরের চোখে মগ্ন।অভিনব নিজের হালকা বাদামি চোখ গুলো দিয়ে খয়েরি চোখের রহস্য উদঘাটন করতে ব্যস্ত আর অন্তি সেই রহস্য লুকিয়ে রাখার ব্যর্থ চেষ্টা করে চলেছে।অভিনব অন্তির নাকের উপর আঙ্গুল দিয়ে স্লাইড করে বলল,
-‘এংগ্রিবার্ড ইউ আর ঠু মাচ কিউট।তুমি গতকালের মতো কিউট একটা হাসি দেও না।আমার ভালো লাগে সেই হাসিটা দেখতে।’
অন্তি আর কি বলবে সে তো ভাষা হারিয়ে ফেলেছে অভিনবর কথা শুনে।অভিনবর এতো কাছে আসাতে অন্তির মন এবং মস্তিষ্ক দুটোতেই বসন্ত ঋতু বাতাস বইছে।বসন্তের বাতাসের ঘ্রাণে একটা আলাদা প্রেম প্রেম ভাব আছে।অভিনব অন্তির ঘাড়ে নিজের উষ্ণ হাতের স্পর্শ দিতেই অন্তি কেঁপে উঠে।
সে বাস্তবে ফিরে আসে।এই আবেগ শুধুমাত্র ক্ষণিকের অভিনব হয়তো কিছু মুহূর্ত পরেই এই আবেগকে ভুলে গিয়ে নিজের দৈনন্দিন জীবনে ব্যস্ত হয়ে যাবে কিন্তু অন্তি পারবে না।এই আবেগ তাকে সারাটা দিন তাড়া করবে আর একটা সময় অন্তির মন অভিনবর প্রতি আরো দূর্বল হয়ে পড়বে।কথাগুলো অন্তির মাথায় আসতেই সে অভিনবর বুকে ধাক্কা মেরে অভিনবর থেকে দূরে সরে যায়।
অন্তি রেগে একটু চেঁচিয়ে বলল,
-‘ আপনার সমস্যাটা কি?বারবার আমার কাছে এসে কেন আমাকে আপনার প্রতি দূর্বল হতে বাধ্য করছেন?’
অভিনব অবাক হয়ে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থাকে কিছু বলতে যাবে তার আগেই অন্তি অভিনবর পেটে কনুই দিয়ে ধাক্কা দেয় যার ফলে অভিনব নিচে পড়ে যায় বেড থেকে।অভিনবকে না উঠিয়ে অন্তি হনহন করে ওয়াশরুমে চলে যায় আর দরজা ঠাস করে লাগিয়ে দেয়।অভিনব বোকার মতো তাকিয়ে থাকে আর মনে মনে ভাবে,
-‘এটা কি হলো?’
শুভ্র রাগে ফুঁসছে সারিকার দিকে তাকিয়ে তাকিয়ে।কিন্তু সারিকার সেদিকে কোনো ভ্রুক্ষেপ নেই সে নিজের বহুদিনের পুরনো বন্ধু জিবরানের সঙ্গে কথা আর হাসি মজায় ব্যস্ত।
শুভ্র কফির চুমুকের ফাঁকে ফাঁকে সেই দৃশ্য দেখছে আর লাল হচ্ছে।
কিছুক্ষণ আগের ঘটনা শুভ্র সারিকার সাথে কথা বলতে সারিকার কেবিনে যাচ্ছিল তখনই দেখে জিবরান আর সারিকা একসাথে কথা বলতে বলতে সারিকার কেবিন থেকে বের হচ্ছে।জিবরান সেই স্কুল লাইফ থেকে সারিকার ফ্রেন্ড বেস্টফ্রেন্ড না হলেও গুড ফ্রেন্ড আর শুভ্র জিবরানের ডান কানের দুল আর হাতের একটা চিরচেনা ব্রেসলেট দেখতেই জিবরানকে চিনে ফেলল।কারণ জিবরান অনেক আগে থেকেই এরকম লুক ফলো করে আসছে।শুভ্র সারিকার সাথে জিবরানকে দেখে একটু রেগে দুজনের সামনে গিয়ে বলল,
-‘মিস এরোগেন্ট,,আই মিন মিস সারিকা আপনি এই মুহুর্তে কোথায় যাচ্ছেন?’
সারিকা অবাক হয়ে বলল,
-‘কেন?’
-‘যেটা জিজ্ঞেস করেছি সেটা বলুন।’
-‘অফিসের অপোজিট সাইডের রেস্টুরেন্টে লাঞ্চ করতে যাচ্ছি।’
-‘আপনি যেতে পারবেন না আমার আপনার সঙ্গে কিছু জরুরী কথা আছে।’
সারিকা জিবরানের দিকে একবার তাকিয়ে শুভ্রর দিকে তাকিয়ে বলল,
-‘সরি স্যার এই মুহুর্তে আমি লাঞ্চ করতে যাচ্ছি আমাকে যে ব্রেক টাইমে কাজ করতে হবে ভাইস প্রেসিডেন্টের অর্ডারে এমন কিছু কখনো বলা হয় নি।আসছি স্যার,,জিবরান চল।’
সারিকা জিবরানের সঙ্গে এগিয়ে যায় আর পেছন থেকে শুভ্র চোখ দিয়ে আগুন ছুঁড়তে থাকে।
রেস্টুরেন্টে সারিকার টেবিলের একটু দূরের টেবিলে শুভ্র বসে আছে।তার জানার খুব ইচ্ছা জিবরানের সঙ্গে সারিকা কি এমন কথা বলে।কিন্তু শুভ্র কিছুতেই ওদের কথা শুনতে পাচ্ছে না শুধু দুজনের হাসিটাই দেখতে পাচ্ছে।শুভ্র কফি চুমুক দিতে দিতে বিড়বিড় করে বলতে লাগলো,
-‘এতো হাসি আসে কোথা থেকে তোমার?আমার সাথে কথা বলার সময় তো মুখটা বাংলার পাঁচের মতো করে রাখো।আমি এই জিবরানের কানের দুল টান দিয়ে ছিড়ে ফেলবো।একে আমার আগেও সহ্য হতো না এখনো সহ্য হয় না।আগে তোমার চামচাগিড়ি করতো আর এখন প্রেমিকগিড়ি শুরু করেছে।এর কথায় এমন কি জাদু আছে যেটা আমার কথায় নেই?,,হাহ্ তুমি আজ অফিসে আসো তোমাকে আমি দেখে নেব।’
কথাটা বলে শুভ্র আর বসে থাকে না উঠে দাঁড়ায়।এখানে থাকলে তার হাতে যে জিবরানের ভালোই খাতিরদারি হবে।
-‘আপনি এভাবে পালানোর চেষ্টা করলেন কেন স্যার?স্যার এখানকার যেকোনো মানুষকে অর্ডার দিলেই তারা আপনাকে নিয়ে যেত।’
আগুন অভিনবর কথা শুনে রেগে গিয়ে বলল,
-‘নাটক করছো তোমরা আমার সাথে।আমি তোমাদের কোনো স্যার নই আমি নিজের স্ত্রীকে খুঁজে বের করতে চাই তাই আমি আমার বাড়িতে গিয়েছিলাম।’
আগুনের কথা শুনে ডাক্তার আর অভিনব একে অপরের মুখ চাওয়াচায়ি করতে লাগলো।ডাক্তার মারুফ বললেন,
-‘আপনার স্ত্রী কে?আপনার নাম কি?আমার চেনা আগুনের তো কখনো বিয়েই হয় নি।'(ডাক্তার মারুফ)
আগুন চিৎকার করে বলল,
-‘কত বার বলছি আমি আগুন না।আর আমি বিবাহিত।’
-‘তাহলে আপনার নাম কি?’
-‘আমার নাম অনন্ত,,,অনন্ত রাহমান,,,হয়েছে এবার আমাকে এখান থেকে যেতে দিন আপনারা আমার কাছে কি চান বলুন?আমি সব বলবো কিন্তু আমাকে তবুও যেতে দিন।আমার লাইফের থেকে বিশটা বছর হারিয়ে গেছে এখন আর আমি এসব সিক্রেট এজেন্টের চাকরি দিয়ে কি করবো।’
সাথে থেকো প্রিয় পর্ব ২৮
-‘হোয়াট কি বলছেন আপনি এসব! আপনি সিক্রেট এজেন্ট?'(অভিনব)
-‘হ্যা আমি সিক্রেট এজেন্ট ছিলাম একটা শিশু পাচার চক্রের সব প্লেন আমি চুরি করে নিয়েছিলাম আমার সিনিয়রদের দেখানোর জন্য যেন এটা হওয়ার আগে আমরা আটকাতে পারি। কিন্তু রাস্তায় সেই লোকগুলো আমাকে গুলি করে এরপর একটা গাড়ির সঙ্গে ধাক্কা লাগে আমার তারপর আমার আর কিছুই মনে নেই।’
অভিনব অনন্তর ঘরের বাইরে দাঁড়িয়ে আছে তার মনে হচ্ছে সে কোনো একটা বিষয় মিস করছে কিন্তু সেটা কি? কফির কাপে সিপ করতে করতে সে কথাগুলো ভাবছে।ডাক্তার মারুফ তাকে রুম থেকে বের করে দিয়েছে অনন্তর সঙ্গে একান্ত কিছু কথা বলার জন্য।