সাথে থেকো প্রিয় - Golpo Bazar

সাথে থেকো প্রিয় পর্ব ৩ || sathe theko priyo golpo

সাথে থেকো প্রিয়

সাথে থেকো প্রিয় পর্ব ৩
লেখক:রিয়ান আহমেদ

-‘স্টেজে আমি নীল লাইট জ্বালাতে বলেছি তুমি সবুজ কেন জ্বালিয়েছো?’
সারিকা চোখমুখ কুঁচকে কথাটা বলল ঠিক লাইট জ্বালাতেই স্টেজে একজন লোককে দেখা গেল।লোকটার মুখ দেখা যাচ্ছে না পেছন ফিরে আছে সে।সারিকার মাথা আগের থেকেও তিনগুণ বেশি গরম হয়ে যায়।কিছুক্ষণের মধ্যেই নিউজ টেলিকাস্ট করা হবে এর মধ্যে যদি এমন সব ঘটনা ঘটে তাহলে দায়িত্বরত ব্যক্তির মাথা গরম হওয়াটা অস্বাভাবিক কিছু নয়।সারিকা এক প্রকার চেঁচিয়ে বলল,
-‘কি হচ্ছেটা কি এখানে?এই লোক এখানে কি করছে মিস মারজান কোথায়?আমি পাগল হয়ে যাব এমন চলতে থাকলে।’
সারিকা নিজেই স্টেজের উপর উঠে যায়।সারিকা লোকটার কাঁধে হাত রাখতে যাবে এমন সময় পেছন দিকে পিঠ করে সেখান থেকে চলে যায়।সারিকা বুঝতে পারে লোকটা হয়তো ভুল করে চলে এসেছিল।সারিকা আবার নিজের জায়গায় গিয়ে দাঁড়ায়।

অনুষ্ঠান শেষ হতেই সারিকা ক্লান্ত হয়ে সোফায় বসে পড়ে।সারিকা একটা টিভি চ্যানেলে ক্যামেরা ম্যান হিসেবে চাকরি করে।মা বাবা ভাই সবাই আছে কিন্তু একমাত্র ভাই ছাড়া কারো সঙ্গে ও তেমন যোগাযোগ রাখে না।সারিকা আর সারিকার ভাই দুজন টুইনস।গলার আইডি কার্ড হাতে ঘুরাতে ঘুরাতে সারিকা ওয়াশরুমে চলে যায়। ওয়াশরুমে যেতেই শুনতে পায় দুজন মেয়ে বলাবলি করছে,
-‘চেয়ারম্যান স্যারের ভাতিজাকে দেখেছিস কি হ্যান্ডসাম হি ইজ লাইক আ ফরেইনার।’
-‘দেখ ছেলেদের দিকে একটু কম নজর দে বুঝলি আজ না তোর আর সাদাতের ডেটে যাওয়ার কথা।’
মেয়েটা মুখ পানসে করে বলল,
-‘হুমম ধুরর একটুও ভালো লাগছে না আমার এখন ওকে।ইশশ যদি ঐ হ্যান্ডসাম ছেলেটা আমাকে ডেটের জন্য জিজ্ঞেস করতো।’
-‘তোকে জীবনেও দাম দেবে না মুখের মেকাপের পরিমাণ তো দিনে দিনে বাড়ছে তোর।’

আরও গল্প পড়তে আমাদের গুপ এ জয়েন হউন

সারিকা হাত ধুতে ধুতে মেয়ে গুলোকে বলল,
-‘কি এমন ছেলে যে এভাবে পাগল হয়েছো তোমরা?’
মেয়ে দুটোর মধ্যে একজনের নাম তানি আরেকজনের নাম মনি।তানি খুশি হয়ে বলল,
-‘ওহ মিস সারিকা আপনি এখানে!কি যে ভালো লাগলো আপনাকে দেখে কিভাবে বলি।’
সারিকা জানে এই মেয়ে ওর সঙ্গে খাতির করতে চাইছে কম্পানিতে একটা ভালো জায়গা করে নিতে।এছাড়া সারিকার বাবার টাকা সম্পর্কে যাঁরা জানে তাঁরা সারিকাকে স্পেশালি ট্রিট করে যদিও সারিকাকে প্রথমবার দেখে বোঝার উপায় নেই যে এই মেয়েটা ঢাকার অন্যতম বিত্তশালী পরিবারের একমাত্র কন্যা।সারিকা সাধারণভাবে বলল,
-‘আমাদের প্রতিদিনই দেখা হয় তাই এটা এতো ঘটা করে বলার কিছু নেই।’
-‘জ্বী,,,আসলে ছেলেটা চেয়ারম্যান স্যারের ভাতিজা শুভ্র শাহেদ জামান।’
মনি এসে বলল,
-‘ম্যাম আপনাকে আজ খুবই সুন্দর লাগছে জাস্ট লাইক আ ফেইরি।’
সারিকা নিজের দিকে তাকিয়ে আবার মেয়ে দুটোর দিকে তাকিয়ে গম্ভীর গলায় বলল,

-‘আমার জানামতে কোনো ফেইরি এমন কালো ওভার কোর্ট আর সাদা শার্ট ,জিন্স পড়ে না।’
মেয়ে দুটো ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গেল সারিকার কথায়।সারিকাও আর তাঁদেরকে অস্বস্তিতে ফেলতে চায় না তাই সে ওয়াশরুম থেকে বেরিয়ে এলো।সারিকার বিরক্ত লাগে এমন মানুষদের যাঁরা বড়লোকদের শুধুমাত্র টাকার কারণে প্রিভল্যাজ দিয়ে থাকে।

অন্তি খাবারের দিকে একবার তাকিয়ে আবার মুখ ফিরিয়ে নেয়।রাত ন’টা বাজতে চলল এখনো দরজা খুলে দেয়নি লোকটা।সারাদিন তেমন কিছু খায়নি তাই খিদেটা পেটের সঙ্গে মস্তিষ্কেও জেকে বসেছে।অন্তি এই খাবারে মরে গেলেও হাত লাগাবে না তবুও না চাওয়া সত্তেও চোখ সেদিকে চলে যাচ্ছে কারণ,’দিল তো বাচ্চা হ্যা জ্বী’।অন্তির মস্তিষ্ক বলছে,’সাবধান ভুলেও ঐ খাবার খাবি না।ঐ খাবার খেলে আমার প্রেস্টিজ ধ্বংস হয়ে যাবে।খেলে তোর সঙ্গে আমার আড়ি।’
আর পেট বলছে,’আর পারছি না আমি।দেখ আমার সামনে খাবার রেখে তাকিয়ে থাকাটা একটা বড্ড বড় অপরাধ আর তুই সেই অপরাধের অপরাধী।আমার যদি মৃত্যু হয় আমার মৃত্যুর জন্য দায়ী হবি তুই।’

অন্তি আর না পেরে উঠে দাঁড়ায় এই খাবারটার থেকে দূরে গিয়ে বসাই ভালো।অন্তি বাগানের ভেতরে চলে যায়।অভিনবর বাগানে একটা বিরাটা আকারের আম গাছ আছে।অন্তি সেটার শিকরের উপর বসে পড়ে।অন্তি ব্যগ থেকে নিজের মায়ের ছবিটা বের করে।কি নিষ্পাপ হাসি লেগে আছে মুখটাতে সদ্য ফোঁটা শিমুল ফুলের মতো চেহারা।অন্তির এখনো বিশ্বাস হয় না ওর বাবা এমন একজন মানুষকে বিয়ের এক মাসের মাথায় ফেলে চলে গেছেন।অন্তি দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে নিয়ন আলোয় ছবিটার দিকে তাকিয়ে থাকে।অন্তি নিজের মায়ের সঙ্গে নিজের চেহারার তেমন কোনো মিল খুঁজে পায় না।বাবার ছবি সে কখনো দেখেনি তবে ওর ধারণা হয়তো ওর চেহারা ওর বাবার সঙ্গেই মিলে।লোকটার কথা ভাবলেই ওর গা ঘিনঘিন করে।অন্তির মা আনিকা কথা বলতে পারতেন না তবে তাঁর রূপ ছিল অমায়িক।অন্তির মায়ের সতেরো বছর বয়সে ওর বাবা অনন্তর সঙ্গে বিয়ে হয়।অনন্ত না কি নিজেই বিয়ে করেছিলেন আনিকাকে তবে কেন সে বিয়ের এক মাসের মাথায় নিজের স্ত্রীকে ফেলে হারিয়ে গেলেন।যদি অন্তির মায়ের কথা বলতে না পারাটাই চলে যাওয়ার কারণ হয় তবে বিয়েটা উনি কেন করেছিলেন?প্রশ্নগুলোর উত্তর উত্তরদাতার সঙ্গে হারিয়ে গেছে।
অন্তি দেখে ব্যগের ভিতরে কয়েকটা কার্ড সাথে নীলকন্ঠ ফুল।অন্তি কার্ড খুলে বুঝতে পারে এগুলো অনাথ আশ্রমের বাচ্চারা ওর জন্য নিজেদের ছোট ছোট হাত দিয়ে তৈরি করেছে।অন্তির চোখ ভিজে উঠে আবার হেসেও দেয় একটা কার্ড পড়ে

-‘অন্তি আপি তুমি আমাদের ভুলে যেও না তোমার জামাইকে নিয়ে এসো এখানে আর হ্যা আসার সময় আমাদের জন্য চকলেট এনো কেমন।তুমি ঠিকমত খাওয়া দাওয়া করো আর তোমার জামাই যদি তোমার সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করে তবে বলে দিবে অনিক দ্যা সুপারম্যান তাঁকে মারবে।আর দশটা বছর ওয়েট করলে আমি একটা চাকরি করে তোমাকে বিয়ে করতাম,বাই।’
অন্তি হঠাৎ অনুভব করে তাঁকে কেউ পাজকোলে তুলে কোথাও নিয়ে যাচ্ছে।অন্তি চেষ্টা করেও হাত পা নাড়াতে পারছে না মুখ দিয়ে শব্দ পর্যন্ত বের হচ্ছে না।অন্তি সেই গাছের ওখানেই ঘুমিয়ে পড়েছিল।আর ঘুম ভাঙ্গতেই নিজেকে এই অবস্থায় পায়।আলোর সংস্পর্শে আসতেই অন্তি দেখতে পায় লোকটা আর কেউ নয় অভিনব।অভিনব অন্তিকে রুমে নিয়ে চেয়ারে বসিয়ে দেয়।অন্তি অভিনবর দিকে এমনভাবে তাকাচ্ছে যেন হাত দুটো খুলতে দেরী হবে কিন্তু অভিনবকে খুন করতে দেরী হবে না।অভিনব অন্তির দিকে তাকিয়ে বলল,
-‘দেখো আমি তোমার মুখ খুলে দেবো কিন্তু তুমি চিৎকার না করে আমার কথা শান্ত হয়ে শুনবে।আমি জানি যে আমার কোনো কথাই তোমার এই মুহুর্তে পছন্দ হবে না কিন্তু শুনতে হবে তোমায় বুঝলে?’
অন্তি চুপ করে থাকে।অভিনব নীরবতাকে হ্যা ভেবে নিয়ে অন্তির মুখ খুলে দেয়।অন্তি বড় বড় কয়েকটা নিঃশ্বাস নেয়।অভিনব জিভ দিয়ে ঠোঁট ভিজিয়ে বলতে শুরু করে,

-‘তোমার প্রতি যে আমি অন্যায় করেছি সেটা আমি জানি।হয়তো এই অন্যায়ের ক্ষমা হয় না তাই আমি ক্ষমা চাইবো না।তুমি এই বাড়িতে থাকতে অনীহা কেন প্রকাশ করছো আমার জানা নেই।আইনত এবং ধর্মগত দুইভাবে তুমি আমার স্ত্রী আর এই বাড়িটাতেও আমার যতটুকু অধিকার আছে তোমারও ঠিক ততটুকুই অধিকার আছে তাই তুমি এই বাড়িতে থাকবে।তুমি যে বারবার বাড়ি থেকে চলে যেতে চাইছো কিন্তু একবারও কি এটা ভেবেছো তুমি একলা একজন মেয়ে কোথায় যাবে?,,,হয়তো তুমি ভাবছো এখান থেকে অনাথ আশ্রমের পথে রওনা হবে কিন্তু পথে কত বিপদ হতে পারে তা ভেবে দেখেছো?আর অনাথ আশ্রমের কর্তৃপক্ষ তোমাকে এখন আর নিজেদের কাছে রাখতেও পারবে না কারণ ইউ আর এডাল্ট।তাই বলছি তুমি আমার স্ত্রী হিসেবে এখানেই থাকবে এন্ড ইটস্ নট মাই সাজেশান ইটস্ মাই অর্ডার।’
-‘আমাকে আপনি বিয়ে করেছেন নিজের সম্পত্তি রক্ষা করতে কিন্তু এখন তো আমার আর কোনো কাজ নেই এখানে তাই না?তাহলে কেন রাখতে চাইছেন আমায়।’

-‘তোমার প্রতি আমার কিছু দায়িত্ব আছে আমি নিজের সেই দায়িত্বগুলো পালন করতে চাই।তোমার হয়তো মনে হচ্ছে আমি তোমার জীবনটা এলোমেলো করে দিয়েছি তোমাকে না ভালোবাসা সত্তেও বিয়ে করে।তাহলে একটা কথা বলতে চাই আদিলও তোমাকে ভালোবাসতো না সেও বিয়ে করে তোমার দায়িত্বই নিতো।সে নিজের বাবা আতশ মাহমুদ যে কি না একজন এমপি তাঁর ইমেজ বড় করার জন্য দয়া দেখিয়ে তোমাকে বিয়ে করছিল।তোমার বিশ্বাস না হলেও এটাই সত্যি আর আদিল যে ভালো ছেলে তাও কিন্তু নয় সে অনেক মেয়ের সঙ্গে বেড শেয়ার করেছে এই দেখো প্রুভ(কিছু মেয়ের সঙ্গে আদিলের ক্লোজ ছবি দেখালো অভিনব),,,,,, আমি চাইলেই তোমার থেকে দাদুভাইয়ে হুইলের বিষয়টা লুকিয়ে রাখতে পারতাম কিন্তু আমি চাইনি এমনটা হোক।আমি চেয়েছি তুমি আমার সম্পর্কে সম্পূর্ণ সত্যটা জানো।দেখো দুপুরে আমি তোমাকে শুধু নিজের দিকটা ভেবে অনেকগুলো কথা বলে ফেলেছিলাম যা আমার বলা ঠিক হয়নি,,,,,, আমি সেই কথাগুলোর জন্য স্যরি।’
অন্তি চুপ করে আছে।অভিনব উত্তরের আশায় অভিনবর দিকে তাকিয়ে আছে।

সারিকা uber এ টেক্সি বুক করে অফিসের বাইরে দাঁড়িয়ে আছে।সারিকা মশার কামড়ে অতিষ্ট হয়ে গেছে।দশ মিনিট হয়ে গেছে এখনো টেক্সি আসছে না। সারিকা ফোনে ওর বাবার কল আসে।সারিকা না চাইতেও রিসিভ করে।অপরপাশ থেকে অর্ণব খান বললেন,
-‘সারিকা রাস্তায় ওভাবে দাঁড়িয়ে থাকার কোনো কারণ আমি দেখছি না নিজেদের গাড়িতে উঠে বাসায় চলে যাও।তোমার থেকে দশ মিটার দূরে কালো গাড়িটা আমাদের।’
সারিকা বিরক্ত হয়ে বলল,
-‘ড্যাড তোমাকে কতবার বলেছি আমার পেছনে গার্ডস লাগাতে না।তুমি কেন বুঝতে চাও না আমার তোমাদের এইসব বিলাসিতায় নূন্যতম ইন্টারেস্ট নেই।আমি যা তাই হবে আমার পরিচয়।প্লিজ রাখছি আমি।’
-‘ওয়েট কাল তোমার বার্থ ডে আর মাত্র এক ঘন্টা বাকি এটা নিশ্চয়ই মনে আছে?’
-‘আমার মনে আছে কিন্তু অবাক করা ব্যাপার হলো তোমার আর মমের এই প্রথম এমন সাধারণ একটা দিন মনে আছে।’

সাথে থেকো প্রিয় পর্ব ২

-‘তোমার ভাই বিয়ে করে নিয়েছে আমাদের না বলে।’
-‘হুম তো?বিয়ে করা ফরজ তাই আমার মনে হচ্ছে না এটা কোনো অস্বাভাবিক খবর রাখছি।’
সারিকা ফোন কেটে দেয়।টেক্সি চলে এসেছে সারিকা টেক্সিতে উঠতে যাবে তখনই স্টেজের সেই আগন্তুককে দেখতে পায়।আসলে তাঁর কোর্ট দেখে সারিকা চিনতে পেরেছে এই সেই ব্যক্তি।সারিকার মনে লোকটা দেখার ইচ্ছে হয় একটি বারের জন্য।সারিকা লোকটা এক নজর দেখে বিড়বিড় করতে করতে টেক্সিতে উঠে বসে।সারিকা বিড়বিড় করে বলল,
-‘লোকটা হ্যান্ডসাম।’

সাথে থেকো প্রিয় পর্ব ৪

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.