সাথে থেকো প্রিয় পর্ব ৩০
লেখক:রিয়ান আহমেদ
-‘আজ থেকে আমাদের চ্যানেলের সকল এম্প্লই এর জন্য একটি নতুন নিয়ম চালু করা হচ্ছে।আপনারা প্লিজ মনযোগ সহকারে আমার কথা শুনুন।’
সবাই স্পিকারে শুভ্রর আওয়াজ শুনে নিজেদের কাজ বন্ধ করে দিয়ে মনযোগ দেয় শুভ্রর কথা মতো।
শুভ্র আবার বলতে শুরু করলো,
-‘আমি আজ থাকে প্রতিদিন অফিসের সকল এম্প্লইদের মধ্যে কাউকে না কাউকে তার কাজের রিভিউ দেব প্রতিদিন রাতে ইমেইলের মাধ্যমে।আমাদের কম্পানির ইমেইল এড্রেস থেকে প্রতিদিন আপনাদের ইমেইলে রাত বারোটার মধ্যে সেই রিভিউ পৌছে যাবে।রিভিউ আপনাদের ভালো লাগবে না খারাপ লাগবে তা আমার জানা নেই আর জেনেও কোনো লাভ নেই।তবে নিজের খারাপ লাগা কিংবা ভালো লাগা গুলোকে নিজের ভেতরেই সীমাবদ্ধ রাখবেন আপনারা আশা করছি।অফিসের মধ্যে কানে কানে এই বিষয়ে কথা বলে নিজেদেরকে আনপ্রফেশনাল প্রমাণ করবেন না।যদি আপনাদের রিভিউ খারাপ লাগে তাহলে ভাইস প্রেসিডেন্ট মানে শুভ্র শাহেদ জামানের অফিসে আসবেন সাথে করে রিজাইন লেটার আনতে ভুলবেন না।আপনার রিজাইন লেটার সসম্মানে গ্রহণ করা হবে এবং আপনি নিজ পায়ে হেঁটে অফিস থেকে বেরিয়ে যাবেন।সবাই কথাগুলো মস্তিষ্কে ঠিকমতো প্রবেশ করিয়ে নিন কারণ কথাগুলো দ্বিতীয়বার রিপিট করা হবে।সবাই এবার নিজ নিজ কাজে মনযোগ দিন ধন্যবাদ।’
সবাই হা হয়ে গেছে এই শান্ত ভাষার থ্রেট শুনে।কিছুক্ষণ নীরবতা বজায় রাখার পর শুভ্রর ইমেইল থেকে বাঁচার জন্য সবাই তোড়জোড় নিয়ে কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়ে।তানি গালে হাত দিয়ে মুগ্ধ হয়ে হেসে বলল,
-‘হুমমম ভাইস প্রেসিডেন্ট এর গলার স্বরটা কত সুন্দর শুনলে শুধু শুনতেই ইচ্ছে করে।’
মনি বিরক্ত হয়ে তানির কাঁধে ধাক্কা দিয়ে বলল,
-‘এটা গলার স্বরের মালিকের প্রশংসা করার সময় না ভালো মতো কাজ কর তাহলে স্যারের কাছে ভালো এম্প্লই হতে পারবি হয়তো।’
-‘সত্যিই।’
মনি কিছু বলল না চুপচাপ নিজের কাজে চলে গেল।
আরও গল্প পড়তে আমাদের গুপ এ জয়েন হউন
সারিকা শুভ্রর ডেস্কের অপজিটে বসে আছে।শুভ্র মাশম্যালো কফিতে মেশাতে ব্যস্ত শুভ্রর নিস্তব্ধতা দেখে সারিকা নিজে থেকে কিছু বলছে না।কারণ শুভ্র যেহেতু তাকে ডেকে পাঠিয়েছে সেহেতু শুভ্রকেই আগে কথা বলতে হবে।শুভ্র এক কাপ কফি সারিকার দিকে এগিয়ে দিয়ে বলল,
-‘মিস সারিকা আপনি কি আজ লাঞ্চ ইন্জয় করেছেন?’
সারিকা মুখে মুচকি হাসি বজায় রেখে বলল,
-‘জ্বী স্যার।’
শুভ্র সারিকার কাছে এমন কথা আশা করে নি।সে ভেবেছিল রিয়েক্ট করে বলবে,’আপনাকে আমি কেন বলতে যাব আমি লাঞ্চ ইন্জয় করেছি কি না?’ কিন্তু এমনটা না করে সারিকা ওকে সুন্দরভাবে সুন্দর একটা জবাব দিল।
-‘নিন কফিটা পান করুন।’
-‘সরি আমি মিষ্টি খাই না।’
-‘ওহ আমার মনে পড়েছে,,আচ্ছা আরেকটা আনতে বলছি।’
-‘নাহ্ তার দরকার নেই আপনি হয়তো কিছু বলতে আমাকে ডেকেছিলেন।’
শুভ্র মনে পড়ার ভান করে বলল,
-‘ইয়াহ্ আই গট ইট,,,আচ্ছা সেই ছেলেটা কে ছিল তোমার সাথে?ঐ যে কানে ইয়ার রিং পড়া।’
-‘স্যার এই প্রশ্নের সম্পর্ক কি আমাদের কাজের সাথে আছে?’
শুভ্র উঠে এসে সারিকার সামনে গিয়ে দাঁড়াল এরপর কিছুটা ঝুঁকে গেল।সারিকা সেভাবেই বসে আছে তার কোনো ভাবান্তর নেই।শুভ্র অনেকটা ঝুঁকে গেল সারিকার দিকে।সে অদ্ভুত দৃষ্টি নিক্ষেপ করছে সামনের নারীটির চোখের দিকে নারীটিকে বিভ্রান্ত করার জন্য।
সারিকা হঠাৎই উঠে দাঁড়িয়ে যায় যার ফলে শুভ্রর চোয়ালের সঙ্গে তার মাথা বেশ জোরে আঘাত পায়।সারিকা এতে বেশি একটা আঘাত না পেলেও শুভ্র বেশ ব্যাথা পেল নিজের চোয়ালে।শুভ্র ডেস্কের উপর বসে পড়ে চোয়াল ধরে ব্যাথাতুর গলায় বলল,
-‘আমার চোয়াল আউচ আমার দাত মনে হয় সব নড়ে গেছে।’
সারিকা আসলে নিজেও বুঝতে পারে নি এমনটা হবে।সে শুধু অস্বস্তি অনুভব করছিল শুভ্র কাছে আসায় কিন্তু তা প্রকাশ করছিল না।কিন্তু একটা পর্যায়ে শুভ্রর কাছে আসাটা ওর জন্য শ্বাসরুদ্ধকর একটা অবস্থা তৈরি করে তাই সারিকা আচমকাই শুভ্রর থেকে দূরে যাওয়ার জন্য উঠে দাঁড়ায়।সারিকা চিন্তিত গলায় বলল,
-‘আর ইউ ওকে?’
শুভ্র ধমক দিয়ে নিজের চোয়াল শক্ত চেপে ধরে বলল,
-‘ডোন্ট সেয় দিস ‘ওকেইই’ আম এম নট ওকে।তুমি এখনই আমার জন্য আইস ব্যগ আনতে বলো আমি ওয়াশরুম থেকে আসছি।এন্ড এন্ড এই জায়গার থেকে এক চুল নড়ার চেষ্টা করবে না।’
শুভ্র দ্রুত পদে ওয়াশরুমে চলে গেল।তার মনে হচ্ছে তার মুখের ভেতর রক্তক্ষরণ ঘটছে।ওয়াশরুমে গিয়ে কুলি করে মুখ থেকে পানি ফেলতেই শুভ্রর ধারণাটা বাস্তব হয়ে যায়।মুখ থেকে বের হওয়া পানিটা কিছুটা লাল।শুভ্র বার কয়েক কুলি করে মুখ মুছতে মুছতে ওয়াশরুম থেকে বের হয়।সারিকা আইস ব্যগ টেবিলের উপর রেখে মোবাইলে কিছু একটা করতে ব্যস্ত।শুভ্র চেয়ারে গিয়ে বসতেই সারিকা মোবাইলের কাজ শেষ করে শুভ্র দিকে একবার তাকিয়ে বলল,
-‘আমি যেতে পারি?’
-‘না।’
-‘আমাকে একটা প্রোগ্রামের রেকর্ডিং এর জন্য যেতে হবে।’
-‘আজ তোমার শিডিউল এ এমন কোনো কাজ আমি দেখতে পাচ্ছি না।সো চুপচাপ এখানে বসে থাকো আমার কাজ আছে তোমার সঙ্গে ভীষণ গুরুত্বপূর্ণ কাজ।’
শুভ্র গালে আইস ব্যগ লাগাতে লাগাতে বলল,
-‘নিশার বাবা আজিজ পুলিশের সঙ্গে এখনো এই বিষয়ে কন্টাক্ট করেন নি এর মানে হচ্ছে হয় উনি নিজের মেয়েকে বাঁচাতে চান না আর না হয় দুর্জয় কোনো কিছুর বিনিময়ে ওনার মেয়েকে ওনার কাছে ফেরত দেবেন বলেছেন।’
সারিকা চুপ করে থাকে কিছুক্ষণ এরপর বলে,
-‘আপনার কি মনে হয় ব্যাপারটা কি?’
-‘আমি জানি না।আজ আমি নিশার বাবার সঙ্গে সন্ধ্যার পর এই বিষয়ে কথা বলতে যাব ভেবেছি।’
সারিকা ভড়কে যায়।শুভ্রর সেখানে যাওয়ার কোনো প্রয়োজন সে দেখতে পাচ্ছে না।তাছাড়া এমন অনেক কিছুই আছে যার মাঝে শুভ্রর না যাওয়াটাই ভালো।
সারিকার ভাবনার মাঝে কেউ ওর গাল চেপে ধরে কিছু বুঝে উঠার আগেই ওর ঠোঁট ডোড়া কারো হালকা গোলাপি ঠোঁটের মাঝে মিশে যায়।সারিকা একবার চোখ বন্ধ করে আবার চোখ খুলে।এমন পরিস্থিতির স্বীকার যে তাকে হতে হবে সেটা সে ভাবে নি তাই পূর্ব প্রস্তুতিটাও নেওয়া হয় নি।সারিকা শুভ্রকে ধাক্কা দিতে যাবে এর আগেই শুভ্র নিজে সারিকার ঠোঁটে কামড় দিয়ে সারিকাকে ছেড়ে দিয়ে টেবিল থেকে নেমে দাঁড়ায়।সারিকা ঠোঁটে তীব্র ব্যাথা অনুভব করে।সে ঠোঁটে হাত দিয়ে শুভ্রর দিকে তাকায়।
শুভ্র ঠোঁট কামড়ে তার দিকে তাকিয়ে থেকে বলল,
-‘ব্যাথার বদলে ব্যাথা তবে আমি তোমাকে ভালোবাসি তাই ভালোবেসেই ব্যাথাটা দিলাম।,,Don’t dare to quit your job যদি রিজাইন করো তাহলে আমার রুমের সিসিটিভিতে রেকর্ড হওয়া এই কিসিং ভিডিওটা শুধুমাত্র তোমার পরিবারকে দেখাবো আর বলবো তোমার আর আমার বহুদিনের ভালোবাসা কিন্তু তুমি ক্যারিয়ার ক্যারিয়ার করে বিয়ে করতে চাইছো না।আর তোমার মা বাবা তো আমাকে কত পছন্দ করে তা তো তুমি জানোই।তারা হাসতে হাসতে আমাদের বিয়ে দিয়ে দেবে।’
সারিকা রাগে জিদে কি করবে ভেবে পাচ্ছে না।সে টেবিলের সব ফাইল টাইল ছুঁড়ে ফেলে দিল।পিসি যখনই ছুঁড়ে মারতে যাবে তখনই দরজায় নক হয়।সারিকা শুভ্রর দিকে একটা কাঁচি ছুঁড়ে দিয়ে দরজা খুলে কেবিন থেকে বেরিয়ে গেল।শুভ্র স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলল একটুর জন্য কাঁচিটা একটুর জন্য তার গায়ে লাগে নি।
-‘আজিজ আপনি নিজের মেয়েকে ফিরে পেতে আজ আমার কাছে হাত জোর করছেন তাই না?’
অভিনব সিগারেটের ধোঁয়া উড়িয়ে দিল আজিজের মুখের উপর।আজিজ অসহায় হয়ে বলল,
-‘স্যার আমার ওয়াইফ না খেয়ে বাসায় বসে আছে দরজার দিকে তাকিয়ে সে শুধু চায় তার মেয়েটা জীবিত অবস্থায় বাসায় ফিরুক।আপনি আমার জীবনের বদলেও যদি আমার মেয়েকে ফিরিয়ে দেন আমার কোনো আপত্তি নেই।’
-‘প্রত্যেক মা বাবা নিজের সন্তানের জন্য সব কিছু করতে রাজি থাকে কেউ কেউ হয়তো ব্যতিক্রম হয়।কিন্তু অধিকাংশ মা বাবার কাছে সন্তানের চেয়ে আর কিছু হয় না।আপনি রেস্টুরেন্টের নিচে লুকিয়ে থাকা আন্ডারগ্রাউন্ড ক্লাবে হাজারো মেয়ে বিক্রি হয়েছে এই পর্যন্ত।এ নিষ্পাপ মেয়েগুলোরও একটা পরিবার ছিল।ওদের মা বাবাও ওদের ভালোবাসতো।কিন্তু দুর্জয়ের লোকেরা সেই মেয়েদেরকে স্কুল,কলেজ,ভার্সিটি, বাজারের থেকে তুলে এনে সেখানে বিক্রি করে দিত কোনো মানুষ নামক পশুর রক্ষিতা হিসেবে।সত্যি কথা বলতে আপনার চেহারা দেখে কেউ বলতে পারবে না যে আপনি এসব কালো ব্যবসায়ের সঙ্গে যুক্ত থাকতে পারেন।কিন্তু আল্লাহর এই পৃথিবীতে বর্তমানে সবকিছুই সম্ভব।,,,আপনার মেয়ে কি জানে আপনি নিষ্পাপ মেয়েদের বিক্রি করতে দুর্জয়কে সাহায্য করতেন?’
আজিজ মাথা নিচু করে রাখে।অভিনব হেসে বলে,
-‘জানানোর সাহস পাননি তাই না?আসলে বাবারা সন্তানের চোখে নিজের কালার হতে দিতে চায় না।আমি আপনাকে সাহায্য করবো যদি আপনি ঐসব মেয়েগুলোকে ফিরিয়ে দিতে পারেন যাদের আন্ডারগ্রাউন্ড ক্লাবে বিক্রি করা হয়েছিল।’
আজিজ চোখের পানি ছেড়ে দিয়ে বললেন,
-‘স্যার প্লিজ আমার মেয়েটাকে বাঁচান।ঐ দুর্জয় ওকে জিন্দা লাশ বানিয়ে দিবে।তাছাড়া আমি তো আপনাকে দুর্জয়ের সেই ডায়মন্ডটা দিয়েছিলাম যার মাধ্যমে আপনি ওর সব অবৈধ কাজের খোঁজ পেয়েছিলেন।’
-‘হ্যা দিয়েছিলে কিন্তু এর বদলে তোমাকে আমি বেশ মোটা অংকের টাকা দিয়েছি।’
-‘আপনি নিজের সব টাকা নিয়ে নেন তবুও আমার মেয়েটাকে ফিরিয়ে দেন।আমার মেয়ে ভেবে না হলেও নিজের বোন ভেবে ওকে আমার বুকে ফিরিয়ে দিন।’
অভিনব থমকায় আজিজের কথায়।নিশা মেয়েটার ছবি ও দেখেছে হঠাৎ ওর কেন যেন নিশাকে সারিকার মতোই নিজের বোন মনে হচ্ছে।অভিনব নিশাকে বাঁচাতে অবশ্যই যেত কারণ তার ভেতরে মানবিকতা আছে।সে শুধু আজিজকে চোখে আঙ্গুল দিয়ে তার ভুলগুলো দেখিয়ে দিল।
অভিনব উঠে যেতে যেতে বলল,
-‘তোমার পাপের শাস্তি তোমার মেয়ে পাবে না কারণ এটা অন্যায়।অভিনব কখনো অন্যায়কে জেনে বুঝে ঘটতে দেয় না।’
সাথে থেকো প্রিয় পর্ব ২৯
অন্তি অভিনবর অফিসে এসেছে আজ।তার শাশুড়ি মা সুহানা তার হাতে লাঞ্চ বক্স দিয়ে জোর করে এখানে পাঠিয়ে দিয়েছে।অন্তির আসার যদিও বিন্দুমাত্র ইচ্ছা ছিল না তবুও সুহানার কথা সে ফেলতে পারেনি।
অন্তি ঠাস করে দরজাটা খুলে কেবিনে ঢুকে।অভিনব হাটছে হাতে একটা ফাইল নিয়ে।অন্তির উপস্থিতি কি সে বুঝতে পারেনে?অন্তি কেশে গলা ঝাড়লো কিন্তু অভিনবর এটেনশন পেল না।অন্তি এবার রেগে বলল,
-‘কি হচ্ছেটা কি?একটা জলজ্যান্ত মানুষ কি আপনার চোখে পড়ছে না?’
তখনই পেছন থেকে ‘এংগ্রিবার্ড ‘ নামটি ধরে অন্তিকে কেউ ডাকে।অন্তি পেছনে ঘুরে অভিনবকে দেখে একবার তো সামনে ঘুরে একবার দেখে।কোনটা অভিনব?!!!!