সাথে থেকো প্রিয় পর্ব ৩১
লেখক:রিয়ান আহমেদ
অন্তি দুজন অভিনবকে দেখে একটা চিৎকার দিয়ে বলল,’আআআআ।’এরপর সে অজ্ঞান হয়ে যেই পড়ে যেতে নিবে তখনই পেছন থেকে অভিনব এসে ওকে ধরে ফেলে ।অভিনব চিন্তিত হয়ে অন্তির গালে হালকা থাপ্পড় দিয়ে বলল,
-‘এংগ্রিবার্ড তুমি আমার কথা শুনতে পাচ্ছো?’
অন্তি একটু চোখ খুলে ‘হুম’ বলে পুরোপুরি জ্ঞান হারালো।অভিনব ধরে নিয়ে অন্তিকে সোফায় শুইয়ে দিয়ে বলল,
-‘এখন কি হবে অন্তি উঠে গেলে আমি ওকে কি বলবো?’
অভিনব এসব আকাশ পাতাল চিন্তা করতে করতে প্রজেক্টর অফ করে দিয়ে অন্তির চোখে পানি ছিটিয়ে দিয়ে আস্তে করে ডাকতে থাকে।অন্তি পিটপিট করে চোখ খুলে অভিনবর দিকে একটু তাকিয়ে কিছুক্ষণ আগের ঘটনা মনে করে লাফ দিয়ে উঠে বসে।অভিনবর থেকে এক হাত দূরে গিয়ে ভীতু কন্ঠে প্রশ্ন করলো,
-‘আপনি কে?অভিনব কোথায়?’
অভিনব অন্তির কাছে গিয়ে ওর কপালের চুল কানে গুঁজে দিয়ে নরম গলায় বলল,
-‘আমিই অভিনব ডোন্ট এফ্রেইড।’
অভিনব কথাটা বলতেই অন্তি আশেপাশে তাকিয়ে অভিনবকে হঠাৎ জড়িয়ে ধরলো।অভিনব হঠাৎ এভাবে ধাক্কাটা সামলাতে না পেরে পড়ে যাওয়া ধরলো নিজেকে সামলে নিয়ে সেও অন্তিকে জড়িয়ে ধরলো।দুজনেই কিছুক্ষণ সেই অবস্থায় থাকে।অন্তি নিজের পুরনো সেন্সে ফিরে আসতেই অভিনব থেকে সরে যেতে চায় কিন্তু অভিনব ছাড়ে না।অন্তি বিরক্ত হয়ে বলল,
-‘ছাড়ুন আমাকে।’
অভিনব ছেড়ে দেয়।অন্তি সোজা হয়ে বসে নিজের ধারা ঘটে যাওয়া একটু আগের অপ্রত্যাশিত ঘটনাটা ঢাকতে বলল,
-‘আম সরি আমি আসলে ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম একটু তাই ভুল হয়ে গেছে।’
-‘ওহ্ নট আ বিগ ডিল।’
অন্তি এবার নব্বই ডিগ্রি এঙ্গেলে ঘুরে বসে অভিনবর দিকে।গোয়েন্দাদের মতো একটা ভাব নিয়ে তাকা অভিনবর দিকে।অভিনব ভ্রু কুঁচকে বলল,
-‘আমি জানি তুমি কি প্রশ্ন করবে?’
-‘আপনার কি আরেকটা জমজ ভাই আছে না কি?’
অভিনব বোকা বনে চলে যায়।অন্তি ভাবছে অভিনবর আরেকটা জমজ ভাই আছে!হাউ ক্রেজি!
অভিনব মাথা না বোধক নাড়িয়ে বলল,
আরও গল্প পড়তে আমাদের গুপ এ জয়েন হউন
-‘না আমার কোনো জমজ ভাই নেই আর না কখনো ছিল।আমার শুধু একটা জমজ বোনই আছে যে সম্পর্কে তোমার ননদ হয়।’
অন্তি চোখ বড় বড় করে বলল,
-‘তাহলে আমি কিছুক্ষণ আগে কাকে দেখেছিলাম?,, আপনার অফিসে আপনারই বহুরূপী ঘুরছে?কেমন সিকিউরিটি আপনাদের?’
অভিনব দ্রুত বলল,
-‘না না সেটা আমার কোনো বহুরূপী ছিল না।’
অন্তি এবার চোখ এতটাই বড় করে যেন চোখ কোটর থেকে বেরিয়ে আসবে আরেকটু হলে।সে কপালে হাত দিয়ে বলল,
-‘ও আল্লাহ্ কি বলে এইসব!তার মানে সেটা একটা জ্বীন ছিল ঐ জ্বীন আপনার রূপ নিয়ে ঘুরছে।আজকে অফিসে আপনার রূপ নিয়েছে কাল বাড়িতে যাবে হায় আল্লাহ্ আমাদের রক্ষা করো।’
অভিনব হতাশ হয়ে অন্তির চিবুক ধরে নিজের একটু কাছে এনে বলল,
-‘নিজের ছোট মাথায় আর জোর দিও না।,,,ওটা কোনো জ্বীন টিন ছিল না ওটা আমার 3d Holographic image ছিল।’
অন্তি কিছুক্ষণ বোকার মতো তাকিয়ে থেকে অভিনব থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে নিয়ে বলল,
-‘আপনি আজকাল এতো গা ঘেঁষে থাকেন কেন আমার?,,,আর কি বলছেন এসব আমি কিছুই বুঝতে পারছি না।’
অভিনব উঠে দাঁড়িয়ে বলল,
-‘ওয়েট আমি বুঝাচ্ছি।’
অভিনব প্রজেক্টর অন করতেই দুটো প্রজেক্টরের মাধ্যমে কয়েক মুহূর্তেই অভিনবর প্রতিবিম্ব অন্তির চোখে সামনে হাজির হলো।অন্তি কিছুটা সময় হা করে থেকে প্রতিবিম্বটার দিকে এগিয়ে গেল।অবিকল অভিনবর দেখতে এই থ্রিডি ইমেজটা।অন্তি গালে হাত দেয় কিন্তু কিছু অনুভব করে না।তার হাত শূন্যে ভাসছে।অন্তি অবাক হয়ে বলল,
-‘আপনি কেন নিজের থ্রিডি ইমেজ তৈরি করেছেন?আর এটা কেনই বা অন করে রেখেছিলেন?’
অভিনব কিছুক্ষণ চুপ করে থাকে।অন্তিকে আজ সে নিজের জীবনের অনেক বড় একটা সত্য প্রকাশ করতে যাচ্ছে।একদিন আগেও সে ভেবেছিল অন্তিকে এই বিষয়ে কখনোই জানানো যাবে না।কিন্তু এখন যেহেতু অন্তি তার ভালোবাসার মানুষ এবং একই সাথে তার জীবন সঙ্গিনী তাই অন্তিকে এই সত্যিটা জানিয়ে দেওয়া প্রয়োজন।এই সত্যটা জানার পর যদি অন্তি তাকে না ভালোবাসে তাহলে তার কোনো আফসোস নেই।মানুষ নিজের জীবনটা কার সাথে কাটাবে সেই সিদ্ধান্তটা একান্তই তার নিজের।এমনিতেই অভিনব অন্তির জীবনে অনেকবার অনেক ধরনের ক্ষতিই করে ফেলেছে তাই নতুন করে কোনো ক্ষতি আর সে করতে চায় না।অভিনব একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বলল,
-‘আমি ব্ল্যাক শ্যাডো গ্যাঙ্গের সদস্য যেই গ্যাঙ্গের কাজ হলো কালো ব্যবসায়ের সাথে যুক্ত মানুষগুলোর সর্বনাশ ঘটানো।আমাকে যখন সেটার কাজে যেতে হয় তখন আমি অফিসে আমার কেবিনে আমার থ্রিডি ইমেজ অন করে চলে যাই।আমি বিধানকে বলে দিয়েছি যখনই আমি কেবিনে পাইচারি করবো তখন যেন কেউ আমার কেবিনে না আসে আর যদি জরুরি কেউ হয় তবে যেন আমাকে কল করে নেয়।আজ তুমি এসেছিলে বলে বিধান তোমাকে আটকানোর প্রয়োজনবোধ করেনি।কিন্তু পরমুহূর্তেই যখন সে বুঝতে পারে আমাকে ফোন করা জরুরি তখন আমাকে ফোন করে।বাট আমি তুমি বাড়ি থেকে বের হওয়ার পরপরই জেনে গিয়েছিলাম ব্যাপারটা তাই যেখানে এতটা সময় ছিলাম সেখান থেকে রওনা দেই তখনই। আমি যত দ্রুত সম্ভব অফিসের সিক্রেট রাস্তা ওর ইউ ক্যান সেয় শর্টকাট দিয়ে এখানে এসে পৌছাই।আমি ভেবেছিলাম তুমি হয়তো লিফ্টের কারণে আরো বিভিন্ন কারণে আসতে দেরি করবে বাট আই ওয়াজ রঙ্গ তুমি আমার আগেই পৌছে গেছো।’
অভিনব কথাগুলো এক নিঃশ্বাসে থামে।অন্তির মনে হচ্ছে সে কোনো অ্যাকশন থ্রিলার মুভির নায়ককে দেখছে।এই ব্যক্তি তো এক কথায় বলতে গেলে একজন সুপারম্যান।সুপারম্যান সকলের চোখের আড়ালে একজন সাধারণ মানুষ হয়ে ঘুরে আর তলে তলে শত্রুদের জন্য গর্ত খুঁড়ে।
অন্তি অবাক হয়ে বলল,
-‘আপনি কি এসব সত্যি বলছেন নাকি আমাকে কোনো থ্রিলার মুভির গল্প শুনাচ্ছেন?’
-‘সত্যি বলছি একদম সত্যি।’
-‘আপনি যে এই কাজ করেন সেটা কি আংকেল আন্টি সারিকা জানে?’
-‘শুধু সারিকা জানে ওকেও জানাতে চাইনি এক্সিডেন্টলি জেনে গেছে আর এখন সেও আমার বিভিন্ন কাজে হেল্প করে আর কোনো কাছের মানুষ জানে না আজ থেকে তুমিও জানবে।’
-‘আমি আপনার কাছের মানুষ?’
-‘হুম,,,।’
অভিনবর অস্পষ্ট জবাব।অন্তি ধপ করে চেয়ারে বসে দুই আঙ্গুল দিয়ে নিজের কপাল ঘষছে।
-‘এসবের সঙ্গে আপনি কবে থেকে যুক্ত?’
-‘তুমি কি সত্যিই আমার এই জগতে আসার ইতিহাসটা জনতে চাও?’
-‘হ্যা।’
অভিনব অন্তির পাশে আরেকটা চেয়ার টেনে বসে এরপর বলে,
-‘আমাকে যে মাহির অনেক মেরে ফেলে চলে গিয়েছিল মনে আছে তোমার?’
-‘হ্যা আপনি বলেছিলেন।’
-‘সেখান থেকে এসবের শুরু,,আমাকে ফেলে চলে যাওয়ার পর আমার সারা শরীর ছিল রক্তে জর্জরিত।আমি শুধু আল্লাহর কাছে একটাই দোয়া করছিলাম আল্লাহ যেন আমাকে বাঁচাতে কাউকে পাঠায়।তখনই একটা গুলির শব্দ আমার কানে আসে আমি বুঝতে পারি আশেপাশে মানুষের অস্তিত্ব আছে।নিজের অবশিষ্ট সব শক্তি দিয়ে ডাক দেই সাহায্যের জন্য।কিছুক্ষণ পর একটা টর্চের আলো আমার চোখে এসে পড়ে।আমি একজোড়া খয়েরি চোখ দেখতে পাই।একজন সুঠাম দেহের লোক যে কালো পোশাক পরিহিত।লোকটি আমার গালে হাত দিয়ে বলছিল,’এই ছেলে তুমি কি বেঁচে আছো?তুমি কি এখানে কি ঘটেছে তা দেখেছো?’লোকটির কথার কোনো জবাব না দিয়ে আমি জ্ঞান হারাই।জ্ঞান ফেরার পর নিজেকে হসপিটালের বেডে পাই সাথে পাই আমার মা বাবা এবং সারিকাকে।সবাই আমাকে আমার সেই করুণ অবস্থার কথা জিজ্ঞেস করলে আমি শুধু বলি অপরিচিত কিছু মানুষ ছিল মুখোশ পড়া তাদের চেহারা আমি দেখিনি।
কিছুদিন পর সুস্থ হতেই হঠাৎ একদিন দুপুরে আমার রাস্তা আটকে দাঁড়ায় কিছু লোকজন।আমি ভেবেছিলাম এদের হয়তো মাহির পাঠিয়েছে কিন্তু লোকগুলো আমাকে না মেরে কিডন্যাপ করে কোথাও একটা নিয়ে যায়।এরপর আবার দেখা হয় সেই লোকটির সাথে।তার নাম আগুন সে জানায়।আগুন আমাকে বলে,”সেদিনের মার্ডারের ব্যাপারে আমি যদি কাউকে কিছু বলি তবে আমাকে সে বড় কোনো শাস্তি দেবে।”আমি ভয় পাই নি কথাটায় আমি উল্টো আগুনকে ব্ল্যাকমেল করে বলি যদি আমাকে তার গ্যাঙ্গের সদস্য করে তবে আমি খুনের ব্যাপারটা গোপন রাখবো।এদিকে কিন্তু আমি খুনের ব্যাপারে কিছুই জানতাম না আমি শুধু একটা গুলির শব্দ শুনেছিলাম।’
-‘আপনি চোরের উপরে বাটপারি কেন করলেন?আপনি এই ভয়ংকর গ্যাঙ্গের সাথে কেন যুক্ত হলেন?’
-‘আমি বলছি।আমি ততদিনে অনেক জায়গায় মারিহার খোঁজ নিয়েও তেমন কোনো সুবিধা করে উঠতে পারি নি।শেষে আমি একজনের কাছে হিউমান ট্রাফিকিং এর ব্যাপারে জানতে পারি।আমি ভেবেছিলাম ঐ গ্যাঙ্গের সদস্য হলে আমি এই বিষয়টা আরো খুঁটিয়ে দেখতে পারবো।কারণ আমি অতি সাধারণ একজন ভার্সিটিতে পড়ুয়া ছেলে ছিলাম চাইলেই এমনি এমনি এই বিষয়ে ইনফরমেশন বের করে আমার কাছে অসম্ভব ছিল।আমি ভেবেছিলাম মারিহাকে হয়তো পাচার করা হয়েছে পরে অবশ্য আমার ধারণা ভুল প্রমাণিত হয়েছে।,,, যাইহোক যেই কথা বলছিলাম।তো আগুন এক প্রকার বিরক্তি ও রাগ নিয়েই আমাকে সেই গ্যাঙ্গের সদস্য করে।আমিও কিছুদিন তাকে ডিস্টার্ব করতে থাকি।কিন্তু হঠাৎ ড্যাড আমাকে আর সারিকাকে সিঙ্গাপুর পাঠিয়ে দেওয়ায় আমি সেই গ্যাঙ্গের কাজ সল্প সময়ের জন্য ছেড়ে দেই।এতে আগুন অবশ্য একটু শান্তি পায় কারণ তখন আর তাকে আমার জ্বালা সহ্য করতে হয় না।কিন্তু কয়েক বছর পর দেশে ফিরে সিনসিয়ারিটির সাথে আমি ঐ গ্যাঙ্গের নেতৃত্ব নিজের হাতে নেই আগুনের সাথে কারণ ততদিনে মারিহার সত্যিটা আমার সামনে এসে পড়েছিল।,,,তাই এবার গ্যাঙ্গের লিডার হয়ে আমি অন্যায়কারীদের আমার এই হাতে মৃত্যুর দরজা পর্যন্ত পৌছে দিতে শুরু করি।’
সাথে থেকো প্রিয় পর্ব ৩০
অভিনব নিজের হাতের তালু ঘষতে ঘষতে শেষের কথাটা বলল।অন্তি কিছুক্ষণ স্তব্ধ হয়ে তাকিয়ে থাকে এরপর বলে,
-‘আপনি আমাকে কথাগুলো কেন বললেন?’
-‘আমি তোমার কাছে ব্যাপারটা আর গোপন করতে চাইনি।আজকের এই ঘটনার আসল সত্যটা লুকানোর জন্য আমাকে হাজারটা মিথ্যে বলতে হতো তোমার কাছে।আমি মিথ্যা কথা বলতে পারি না তাই হয়তো একপর্যায়ে মিথ্যে বলতে গিয়ে ধরা পড়ে যেতাম।তাই এতো পরিশ্রম করে লাভ যেই সত্যটা তোমার একদিন না একদিন আসার ছিল সেটা আজ এসে হাজির হয়েছে এটা কি ভালো ব্যাপার নয়?’