সাথে থেকো প্রিয় - Golpo Bazar

সাথে থেকো প্রিয় পর্ব ৩৩ || nill cafer valobasha

সাথে থেকো প্রিয়

সাথে থেকো প্রিয় পর্ব ৩৩
লেখক:রিয়ান আহমেদ

-‘এই উঠুন ঘুমের থেকে উঠুন বলছি।এখন না উঠলে সারাজীবনের মতো ঘুম পাড়িয়ে দিবো।’
অন্তি বিছানায় ঘুমিয়ে থাকা অভিনবকে ধাক্কাতে ধাক্কাতে কথাগুলো বলল।অভিনব ঘুম ঘুম গলায় বলল,
-‘কি হলো সকাল সকাল ডাকছো কেন?’
অন্তি এবার অভিনবর মুখে পানি মারতেই অভিনব ধরফরিয়ে উঠে বসলো।অভিনব চোখ কটমট করে অন্তির দিকে তাকালো।কিন্তু একি!অন্তি তো ভয় পাচ্ছে না তাকে দেখে আরো মনে হচ্ছে সে অভিনবর চেয়েও কয়েকগুণ বেশি রেগে আছে।অন্তির কান,গাল এবং নাক লাল হয়ে গেছে চোখ দিয়ে আগুন ঝড়ছে।কিন্তু এতো রাগের কারণটা ঠিক কি?সেটা অভিনবর বোধগম্য হচ্ছে না।

অন্তি হঠাৎ অভিনবর গলা চেপে ধরে দাঁতে দাঁত চেপে বলতে শুরু করে,
-‘শয়তান লোক আমার ঘুমিয়ে থাকার সুযোগ নিতে তোর লজ্জা করলো না?আমি জানতাম তুই আমাদের এক রুমে থাকার সুযোগ নিবি।’
অভিনব নিজেকে ছাড়ানোর চেষ্টা করে রাগী গলায় বলল,
-‘ছাড়ো আমাকে আমার এসব তুইতোকারি পছন্দ না।আর আমি করেছিটা কি সেটাই তো আমার মনে পড়ছে না।’
অন্তি অভিনবকে ছেড়ে দিয়ে মোবাইলের একটা ছবি অভিনবর সামনে ধরলো।অভিনব ছবিটা দেখে চোখ অন্যদিকে ফিরিয়ে নিল আর বিড়বিড় করলো,

আরও গল্প পড়তে আমাদের গুপ এ জয়েন হউন

-‘এই ছবিটা আমি মোবাইল থেকে কেটে দিলাম না কেন?’
অন্তি অভিনবর চোয়াল ধরে নিজের দিকে মুখ ফিরিয়ে বলল,
-‘কি এখন মুখ দিয়ে কথা বের হচ্ছে না?এই ছবিটা কেন তুলেছেন তাও এবার,,,ছিঃ।আমি ভেবেছিলাম আপনি একটু বেশি খারাপ এখন দেখছি আপনি অনেক বেশি খারাপ।’
অভিনব কি বলবে ভেবে পাচ্ছে না ছবিটার সম্পর্কে এক্সপ্লেন করার আগে এটা জানা দরকার অন্তি ওর মোবাইলের লক কিভাবে খুললো?ওর মোবাইল তো ফিঙ্গারপ্রিন্ট লক দেয়া।
-‘তুমি আমার মোবাইলের লক কিভাবে খুলেছো আর আমার মোবাইল চেক কেন করছিলে।’

-‘আপনার মোবাইলে কল এসেছিল কোনো এক আগুন নামের ব্যক্তির কথা বলছিল এক লোক আর কল কেটে যাওয়ার পর আমার আপনার মোবাইলটা একটু দেখতে ইচ্ছে করছিল তাই আপনি ঘুমের মধ্যে থাকায় আপনার হাতের ফিঙ্গারপ্রিন্ট নিয়ে খুলে দেখছিলাম।,,এখন তো মনে হচ্ছে যা করেছি ভালোই করেছি নাহলে আজ আপনার আসল রূপ দেখতে পারতাম না।আপনি,,।’
অভিনব অন্তির কথা শেষ হওয়ার অপেক্ষা করে না।অন্তিকে সে পরে সামলে নিতে পারবে কিন্তু এখন তার নিজের কাজে যেতে হবে।আগুন ওরফে অনন্তর সাথে ওর জরুরি কথা বলতে।
অন্তি চোখ গোল গোল করে অভিনবর যাওয়ার পানে তাকিয়ে থেকে মনে মনে বলে,

-‘আমি কি এতোগুলো কথা এতটা সময় ধরে একটা গাছকে বললাম।,,আমার কথা শেষ হওয়ার আগেই চলে গেল ওয়াশরুমে একে আমি পরে দেখে নেব।’
অন্তি মোবাইলটা হাতে নিয়ে ছবিটা দেখতে থাকে।সবগুলো ছবিগুলো ওর কেন যেন নিজের কাছে রাখতে ইচ্ছে করছে।পরমুহূর্তেই অন্তি নিজেকে সামলে নিয়ে ফোনটা বিছানায় ছুঁড়ে মেরে বলল,
-‘কি সব ফালতু ছবি।আচ্ছা অভি কিছুদিন যাবত এমন অদ্ভুত আচরণ করছে কেন?সে কি আমাকে পছন্দ করে?সে কি আমাকে ভালোবাসে?,,,না না এসব কি ভাবছি!উনি নিশ্চিত আমার উপর স্বামীর অধিকার ফলাতে চাইছেন। ওনার থেকে দূরে থাকতে হবে।ছেলেরা সুবিধার না যেটা চাইছে সেটা পেয়ে গেলে তুমি কে আর আমি কে এমন একটা ভাব ধরবে।,,সম্পর্কটা চার বছরের তাই এই চার বছরের সম্পর্কে আর কোনো টান না রাখাই ভালো।আমরা দুজনেই দুটো ভিন্ন জগতের মানুষ আমরা কখনোই একে অপরকে সারাটা জীবন সঙ্গ দিতে পারবো না।কখনো না কখনো দুজনকে আলাদা হতেই হবে।তাই এই চিরন্তন সত্যটা মেনে নিয়ে ভালোবাসা নামক মরীচিকার পেছনে না ছুটাই ভালো।’
অভিনব কোনোমতে ফ্রেশ বের হলো।অন্তি অবাক হয়ে অভিনবর দিকে আছে।আজ অভিনব কোনো ফর্মাল লুকে নেই সে একটা ব্ল্যাক টি শার্টের উপর ব্লু শার্ট পড়েছে সাথে ব্ল্যাক জিন্স এবং হাতে একটা কালো ঘড়ি।অন্তির কাছে অভিনবকে আজ ইউনিভার্সিটিতে পড়ুয়া তার এক সিনিয়র বলে মনে হচ্ছে।সে এই সিনিয়রের উপর ক্রাশিত হতে বাধ্য।অন্তির মুখ ফসকে বেরিয়ে এলো,

-‘জোস লাগছে আপনাকে।’
অভিনব অন্তির দিকে তাকিয়ে এক ভ্রু উচু করে ঠোঁট কামড়ে হাসলো।অন্তি এই হাসিতে আরেক দফা পা পিছলে প্রেমের পুকুরে পড়ে।অভিনব এগিয়ে এসে অন্তির কপালে টপ করে একটা চুমু খায়।অন্তি ব্যাপারটা ধরতে পারার আগেই অভিনব পালিয়ে যায়।অন্তি কপালে হাত দিয়ে বলে,
-‘উনি দিন দিন নির্লজ্জ হচ্ছেন।’
কথাটা বলে সে নিজেই হেসে দেয়।আমার অনেক কিছুই মুখে অপছন্দ বললেও মনে মনে সেসব ব্যাপারগুলোকে পছন্দ করি।আবার অনেক কিছু মুখে পছন্দ বললেও মনে মনে আমরা সেসব ব্যাপারগুলো পছন্দ করি না।আসলে কিছু অনুভূতি গোপন করে রাখাটাই মানুষ শ্রেয় বলে মনে করে।

অভিনব অনন্তর দিকে তাকিয়ে আছে।কোমার থেকে সপ্তাহখানেক আগে বের হওয়া লোকটা আর এই লোকটার মধ্যে এখন অনেক পার্থক্য।সেই আগের লোকটিকে দেখলে যে কেউ উন্মাদ ভাবতে বাধ্য কিন্তু এই লোকটির ভেতরে বা বাহিরে কোনো উন্মাদতা নেই।ছেচল্লিশ বছর বয়স হলেও তার চেহারায় এখনো আলাদা একটা তারুণ্য রয়ে গেছে।অভিনব নিজের বাবা অনন্তর মাঝেও এই ব্যাপারটা লক্ষ করেছে। তারা মধ্যবয়স্ক হওয়া সত্তেও কেউ ব্যাপারটা এক দেখায় ঠিক ধরতে পারবে না এই ব্যাপারে অভিনব নিশ্চিত।
অনন্তর চোখ এতটা সময় চলন্ত গাড়ির বাইরে ছিল এইবার সে অভিনবর দিকে তাকিয়ে বলেন,

-‘বিয়ে করেছো নাকি?’
-‘জ্বী।’
-‘ঐ মেয়েটাই কি তোমার স্ত্রী ছিল?’
-‘জ্বী আপনার সঙ্গে রাস্তায় যার কথা ছিল সেই আমার স্ত্রী।আপনি কোমায় থাকাকালীন আমাদের বিয়ে হয়েছে।’
-‘মেয়েটা ভালো মনের মানুষ সে কি তোমার এইসব গ্যাঙ্গের ব্যাপারে অবগত?’
-‘জ্বী সে জানে।’
অনন্ত কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে বললেন,
-‘আমার স্ত্রী আমার কাজের ব্যাপারে আসল সত্যটা জানত না সে শুধু জানতো তার স্বামী একজন সাধারণ কলেজের প্রফেসর।,,,সে হয়তো আমার পথ চেয়ে আছে এখনো।’
-‘সে যদি অন্য কাউকে বিয়ে করে থাকে?’
অনন্ত চোখ গরম করে অভিনবর দিকে তাকালো।অভিনব একটু ঘাবড়ে গেল অনন্তকে সে ভয় পায় না শুধু এই লাল চোখগুলো তার ভেতরে সামান্য আতংক সৃষ্টি করছে।অনন্ত মুখ শক্ত করে বলল,
-‘আমার স্ত্রী এমন না সে আমাকে ভালোবাসে।’

অভিনব আর অনন্ত একটা তিনতলা বাড়ির সামনের বাগানে থাকা সোফায় বসে আছে।অনন্ত ছটফট করতে করতে চারদিকে চোখ বুলিয়ে চলেছে।কিছুক্ষণ পর তাদের দুজনের অপেক্ষার অবসান ঘটিয়ে একজন লোক তাদের সামনের এসে বসে।লোকটার মুখ ভর্তি দাড়ি মাথায় সাদা টুপি বোঝা যাচ্ছে লোকটি বেশ ধার্মিক।লোকটা পান চিবুতে চিবুতে প্রশ্ন করলো,

-‘যে জনাব আপনারা কার খোঁজ করতে এসেছেন?’
অনন্ত অস্থির হয়ে বলল,
-‘এখানে দোতলায় হামিম শিকদার নামে একজন লোক থাকতো তার পরিবার সমেদ,, তার বোনের নাম আনিকা চিনতে পারছেন?’
-‘জ্বী ঠিক মনে করতে পারছি না।’
অভিনব হেসে একটা পঞ্চাশ হাজারের চেক এগিয়ে দিয়ে বলল,
-‘একটু মনে করার চেষ্টা করুন।’
লোকটা চোখ সরু করে চেকটার দিকে একবার তাকিয়ে অভিনবর দিকে তাকিয়ে চোখ বড় বড় করে বলল,
-‘আপনি অভিনব খান বিজয় না খান ইন্ডাস্ট্রিজ এর ভাইস প্রেসিডেন্ট আর বিখ্যাত মডেল।’
অনন্ত অবাক হয়ে অভিনবর দিকে তাকাল এই ছেলে যে এতো গন্যমান্য কেউ তা উনি এতটা সময় বুঝতে পারেননি।অনন্ত অবাক হয়ে বলল,
-‘তুমি খান ইন্ডাস্ট্রিজ এর ভাইস প্রেসিডেন্ট কিন্তু আমি তো জানতাম অর্ণব খান খান ইন্ডাস্ট্রিজ এর,,,,।’
অনন্তর মুখের কথা কেড়ে নিয়ে অভিনব বলল,
-‘আমার দাদার মৃত্যুর পর আমার বাবা কম্পানির প্রেসিডেন্ট হয়ে গেছেন আর এখন আমি ভাইস প্রেসিডেন্ট।’

অনন্ত বুঝতে পারলো সে এখনো সময়ের পার্থক্যটা ঠিকমতো মেনে নিতে পারে নি।সেই যুগের মানুষ এখনো যে আগের মতো আগের পর্যায়ে থাকবে এটা ভাবাটা ঠিক না।অভিনব আবার বলল,
-‘নজরুল সাহেব আপনি চেকটা নিন আর আমাদের হামিম শিকদারের ঠিকানাটা দিন।’
নজরুল সাহেব কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে বললেন,
-‘হামিম শিকদারের ঠিকানাটা আমি ঠিক বলতে পারছি না আজ থেকে উনিশ বিশ বছর আগেই ওনারা এই বাসা ছেড়ে চলে গেছেন।এরপর তাদের সাথে হাতে গোনা কয়েকবার দেখা হয়েছে।’
অনন্ত বলল,
-‘ওনার বোন আনিকা সম্পর্কে কিছু জানেন?’
-‘ওহ্ ঐ মেয়েটা যাকে তার স্বামী ছেড়ে চলে গিয়েছিল?,,ওর সম্পর্কে তেমন কিছু জানি না তবে এই বাড়ি থেকে যাওয়ার আগে শুনেছিলাম মেয়েটা পোয়াতি (গর্ভবতী)।স্বামী চলে যাওয়ার পর ঐ মেয়ের পোয়াতি হওয়াটা কেউ ভালো চোখে দেখতো না তাই এক প্রকার বাধ্য হয়ে ওরা এই এলাকা ছাড়ে।’

অনন্তর শরীর কাঁপছে কথাটা শুনে।যদি আনিকা প্রেগনেন্ট হয় তাহলে সন্তানটা কার? নিশ্চয়ই তার।এতদিনে হয়তো তার সন্তান অনেক বড় হয়ে গেছে।আচ্ছা সে কি ছেলে না মেয়ে?এইসব কথাই অনন্তর মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছিল।
অভিনব বলল,
-‘আচ্ছা হামিম শিকদার কি কাজ করতেন কি চাকরি করতেন সেই বিষয়ে কিছু জানেন।’
-‘আমার বাসায় থাকাকালীন সে একটা প্রাইভেট ফার্মে কাজ করতো।নামটা বোধহয় **** হ্যা এই নাম।’
-‘ধন্যবাদ আপনাকে ইনফরমেশনগুলো দেওয়ার জন্য।,,স্যার চলুন।’
অনন্তর ভাবনায় ছেদ ঘটে অভিনবর কথায়।সে টলমলে চোখে তাকায় এরপর উঠে দাঁড়ায়।সে হাঁটছে কিন্তু তার পথটা কেমন যেন এলোমেলো হয়ে আছে কেউ একজন যদি পথটা গুছিয়ে দিত তবে বোধহয় হাঁটতে সুবিধা হতো।

অভিনব অনন্তর পেছনে পেছনে হাঁটছে।অনন্ত হাঁটার মাঝে মাঝেই কেঁপে কেঁপে উঠছে।সে এমনভাবে হাটছে যেন না ধরলে একটা সময় পড়েই যাবে।অভিনব গিয়ে অনন্তর পাশে দাঁড়ায় যেন পড়ে গেলে ধরা যায়।অনন্ত হঠাৎ ফুটপাতের উপর বসে পড়ে।অভিনব চমকিত হয়ে বলে,
-‘স্যার আপনি এখানে বসেছেন কেন উঠুন।আপনার খারাপ লাগলে আমি আপনাকে গাড়িতে বসতে সাহায্য করছি এরপর ডাক্তারের কাছে যাব।’
অনন্ত জবাব দেয় না।অভিনব ফুটপাতের দিকে তাকায়।এমন ধুলোবালিমাখা রাস্তায় সে বসবে?কিন্তু এখন বসতে হবে।যেহেতু তার লিডার বসেছে সেহেতু লিডারকে অনুসরণ করে তারও বসা উচিত।অভিনব বসে পড়ে নিজের দ্বিধাদ্বন্দ্বকে নর্দমায় ফেলে দিয়ে।
অনন্ত নিজের চোখকে আটকে রাখতে পারলো না।জলগুলো আপন গতিতে ঝড়ে পড়লো।অনন্ত রাস্তার দিকে তাকিয়ে থেকে বলল,
-‘আমার একটা সন্তান আছে হয়তো।আমি তাকে বড় হতে দেখতে পারিনি।তাকে জন্মের পর সবার আগে কোলে নিতে পারিনি।তাকে প্রতিদিন কোলে নিয়ে ঘুরতে পারি নি।তার মুখ থেকে প্রথম বাবা ডাকটা কখনো শুনতে পারি নি।তাকে স্কুলের প্রথম দিন হাতে ধরে স্কুলে দিয়ে আসতে পারি নি।সে ছেলে না মেয়ে তাও জানতে পারি নি।তার হৃদয়ে কি আদৌ আমি বলতে কেউ কখনো ছিল?আমার সম্পর্কে কি সে আদৌ কিছু জানে?,,,হয়তো জানে না।আমিও তো এতোগুলো বছর স্বার্থপরের মতো তাদের ছেড়ে ছিলাম।সে হয়তো ভেবেছে আমি একজন পলাতক বাবা একজন পলাতক স্বামী যে ওর মাকে ফেলে চলে গেছে।’
অভিনব কথাগুলো শুনে প্রতিউত্তরে কিছু বলার মতো খুঁজে পায় না।কথাগুলোর গভীরতা একমাত্র সেই বুঝতে পারবে যে অনন্তর মতোই একই অবস্থার মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে।হয়তো এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া মুশকিল। তবে অনন্তকে শান্তনা দিতে পারে সে।
অভিনব বলল,

-‘স্যার মানুষের জীবনে অনেক অপ্রকাশিত ঘটনাই ঘটে। সেই ঘটনাগুলোর ছাপ আমাদের জীবনে সবসময় থেকে যায়।কিন্তু কিছু মানুষ আছে সেই ছাপগুলোকে উপেক্ষা করে জীবনে এগিয়ে যায়।আমি তাদের মধ্যে একজন।আমার প্রথম ভালোবাসা আমাকে ফেলে পালিয়ে গিয়েছিল।আমি তার তৈরি করা অন্ধকারে তিনটা বছর পার করেছি কিন্তু হঠাৎ সেই অন্ধকারটা দূর হয়ে যায় তার সঙ্গে শেষ সাক্ষাতের মাধ্যমে।কিন্তু অন্ধকারটা দূর হলেও আমার জীবনে আলোর দেখা তখনও মেলেনি।চারপাশের কৃত্রিম আলোয় পথ চলছিলাম আর বিশ্বাস করে নিয়েছিলাম ভালোবাসা বলতে কিছু হয় না।কিন্তু তখনই আমার জীবনে আসে আমার স্ত্রী যে আমার দ্বিতীয় এবং শেষ ভালোবাসা।আপনি আমার পাস্ট সম্পর্কে আগে জানতেন কিন্তু এখন হয়তো ভুলে গেছেন।তবে মোরাল অফ দ্যা স্টোরি হলো অন্ধকার ঠেলে আপনার জীবনে আলো আসবেই।আমি কথা দিচ্ছি আমি আমার সর্বোচ্চ চেষ্টা করবো আপনার স্ত্রী ও সন্তানকে খোঁজার জন্য।’
অনন্ত অভিনবর কথায় আশার আলো দেখতে পায় তার চোখ জ্বল জ্বল করে করে উঠে।অভিনব নিজের মনটাও একটু ভালো লাগছে এখন।কারো চোখে নিজের প্রতি ভরসা দেখতে পাওয়াটা ভাগ্যের ব্যাপার।

অন্তি ক্লাস থেকে বের হতে নিবে তখনই মাহির ওকে আটকায়।অন্তি বেশ বিরক্ত হলেও সেটা মুখে প্রকাশ করে না কারণ যত যাইহোক মাহির তার শিক্ষক।মাহির চশমা ঠিক করে বলল,
-‘মিসেস অন্তিকা আপনাকে আটকানোর জন্য আমি বেশ দুঃখিত।’
-‘সমস্যা নেই স্যার।’
-‘মারিহা যে বেঁচে আছে এবং আপনি আর অভিনব এই বিষয়ে জানেন সেটা নিয়ে আমি একেবারে নিশ্চিত।’
অন্তি নিশ্চুপ থাকলো।মাহির আবার বলল,
-‘আপনার হাজব্যান্ড আমার সঙ্গে কথা বলবে না তাই আপনি যদি সত্যটা আমাকে খুলে বলেন তবে ভালো হয়।’
-‘আপনি নিজের বোনকে নিজে খুঁজে বের করুন না আমাদের কেন টেনে আনছেন এই বিষয়ে।’
-‘ওয়েল আপনারা আগে থেকে এই ব্যাপারে যুক্ত ছিলেন।’
-‘আপনার আর আমার সম্পর্কটা শিক্ষক ছাত্রীর কিন্তু আপনি দেখছি এটাকে শত্রুতার মধ্যে নিয়ে যেতে চাইছেন।’
-‘আপনি আমার প্রশ্নের জবাব দিয়ে দিলে কথা হয়তো শত্রুতার দিকে এগোবে না।’
-‘আচ্ছা তাহলে নিজের ঐ প্রশ্ন নিয়েই বসে থাকুন, আজকের মতো বিদায়।

অন্তি চলে যেতে নিলে মাহির হাত ধরে নেয়।মাহির রাগী গলায় বলল,
-‘মিসেস অন্তিকা আমি আপনার এসব ত্যাড়া জবাব আশা করছি না যা বলবেন আশা করি সত্যিই বলবেন।’
অন্তি কিছু বলতে যাবে তার আগেই একটা বলিষ্ঠ হাতের ঘুষি মাহিরের গিলে এসে পড়ে।মাহিল ছিটকে দূরে সরে যায়।সে অবাক হয়ে গেছে এমন ঘটনায়।ভার্সিটির কোনো শিক্ষকের গায়ে যে কেউ হাত তুলতে পারে তা তার ধারণার বাইরে ছিল।
অভিনব হচ্ছে সেই লোক যে মাহিরকে মেরেছে এছাড়া আর কার সাহস হবে এই কাজ করার।
অভিনব মাহিরকে তুলে দাঁড় করিয়ে কলার ঠিক করে দিতে দিতে শান্ত গলায় বলল,

-‘তুই একজন ভার্সিটির টিচার হয়ে এমন কাজ করবি সেটা আমি আশা করি নি।যাইহোক এখন শোন “মাহির হাসান নিজের ছাত্রীকে ছুটির পর আলাদা ডেকে হাত টানাটানি করেছে” কথাটা কেমন শোনায়?অবশ্যই বাজে।তাই এই মারটার কথা আশা করি তুই নিজেদের মাঝেই রাখবি।আর হ্যা ফারদার যদি আমার ওয়াইফের গায়ে হাত দেওয়ার সাহস করিস তবে তোর দেহ কবরে থাকবে আর আমার হাতে কুড়াল থাকবে।আশা বাকিটা মগজে সেট হয়ে গেছে।,,অন্তি চলো।’
মাহির রাগে ফসফস করছে।অভিনব অন্তির হাত ধরে একপ্রকার টেনে ওকে নিয়ে যায়।অন্তি এতদিনে অভিনব কখন রেগে থাকে আর শান্ত থাকে সেটা বেশ ভালোভাবে বুঝতে শুরু করেছে।অভিনবর কান লাল হয়ে আছি আর চ্যাপ্টা নাকটাও লাল এর মানে এটা অভিনবর রাগের সর্বোচ্চ পর্যায়ের আগের ধাপ।অভিনব একপ্রকার ধাক্কা দিয়ে অন্তিকে গাড়িতে বসিয়ে দেয়।অন্তি গাড়িতে বসে অবাক কারণ তার পাশে একটা মধ্যবয়স্ক লোক বসে আছে।

সাথে থেকো প্রিয় পর্ব ৩২

অন্তি লোকটাকে অনেক চেষ্টা করেও ঠিক চিনতে পারলো না।অভিনব সামনের সিটে ড্রাইভিং করতে করতে বলল,
-‘এটা আমার লিডার।’
অন্তি চোখ বড় বড় করে বলল,
-‘আপনার সেই গ্যাঙ্গের লিডার?’
-‘ইয়ার্প।’
অন্তি চুপ করে গাড়ির এক কোন ঘেঁষে বসে রইলো।এইসব মাফিয়া টাফিয়া টাইপ লোকেরা ভয়ানক হয়।অন্তির কান্ড দেখে অনন্তর বেশ হাসি পেল তবে সে হাসলো না মুখে গাম্ভীর্য বজায় রেখে বসে রইলো।অনন্ত মনে মনে বলছে,
-‘হয়তো আমার মেয়ে হলে বয়সে এই মেয়েটার সমানই হতো।মেয়েটা আমাকে এতো ভয় পাচ্ছে কেন?,,ও হ্যা আমি তো একজন গ্যাঙ্গের লিডার।’
অনন্ত মুখ খুললেন,

-‘তুমি আমাকে বোধহয় ভীষণ অস্বস্তিতে পড়েছো?’
অন্তিকে প্রশ্নটা যেহেতু অনন্ত করেছে তাই উত্তরটা দেওয়ার দায়িত্বও অন্তির কিন্তু অভিনব তা হতে দিল না সে আগ বাড়িয়ে বলল,
-‘ওর পুরো জীবনটাই অস্বস্তিতে ভরা।সবার সামনে ভীতুর ডিম হয়ে থাকে আর সুযোগ পেলেই আমাকে জ্বালায়।’
অনন্ত হেসে বলল,
-‘ওহ বাইরে ভেজা বিড়াল আর ভেতরে বাঘ হা হা হা।’
অনন্তর এই মনখোলা হাসিটা দেখার পর অন্তির আর এতক্ষণে জমে থাকা জড়তাটা থাকলো না।অন্তি অনন্তর সঙ্গে টুকটাক কথা বলতে লাগলো।দুজনের কথা বলার ধরণ দেখলে মনে হবে তাদের মাঝে বহুদিনের সম্পর্ক।

সাথে থেকো প্রিয় পর্ব ৩৪

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.