সাথে থেকো প্রিয় - Golpo Bazar

সাথে থেকো প্রিয় পর্ব ৩৪ || লেখক:রিয়ান আহমেদ

সাথে থেকো প্রিয়

সাথে থেকো প্রিয় পর্ব ৩৪
লেখক:রিয়ান আহমেদ

-‘হ্যালো স্যার হামিম শিকদারের খোঁজ পাওয়া গেছে।উনি এই এই মুহুর্তে যেই বাড়িতে অবস্থান করছেন সেই বাড়ির সামনেই আমি দাঁড়িয়ে আছি আপনাকে লোকেশন পাঠাচ্ছি।’
-‘ওকে পাঠাও।’
অভিনব ফোন কেঁটে দিয়ে অপেক্ষা করতে থাকে লোকেশন পাওয়ার।হঠাৎ তার মোবাইলে তার বাবার নাম্বার থেকে একটা কল।অভিনব কল পিক করতেই অর্ণব গম্ভীর গলায় বললেন,
-‘অভি তুমি এই মুহূর্তে আমার অফিসে আসো।’
-‘কোনো জরুরি বিষয় না কি?’
-‘হ্যা।’
-‘ওকে আসছি।’
অভিনব বিধানকে ডেকে পাঠালো।বিধান আসতেই বলল,
-‘আমরা এখন মূল ভবনে যাব।’
-‘জ্বী স্যার চলুন।

অর্ণবের অফিসে যেতেই দেখা গেল অর্ণব বেশ চিন্তিত হয়ে দুইহাত টেবিলের উপর রেখে বসে আছে।অর্ণবের কুঁচকে যাওয়া কপাল বেশ ভালো মতোই বলে দিচ্ছে ব্যাপারটা বেশ সিরিয়াস কিছু।হঠাৎ অভিনবর মোবাইলে টুং করে শব্দ হলো।সাধারণত সে ব্যাপারটা ইগনোর করতো কিন্তু আজ পারলো না।মোবাইলটা বের করতেই দেখলো তার ফোনে সিঙ্গাপুরের থেকে একটা মেইল এসেছে।বিধান অর্ণবকে বলল,
-‘আসসালামু ওয়ালাইকুম স্যার।’
-‘ওয়ালাইকুম আসসালাম।’
দুজনেই অর্ণবের সামনের চেয়ারে বসলো।অর্ণব অভিনবর পা থেকে মাথা পর্যন্ত চোখ বুলিয়ে ভ্রু কুঁচকে বলল,
-‘আজ হঠাৎ ফর্মাল ড্রেস না পড়ার কারণ?’
-‘আজ হঠাৎ নিজেকে একটু আলাদা রূপে দেখার ইচ্ছে হলো।’
-‘হোয়াটএভার এখন মূল কথায় আসি তোমাকে সিঙ্গাপুরের জন্য রওনা হতে হবে আগামী সপ্তাহের শেষের দিকে।আমাদের কম্পানির একটা জরুরি মিটিং আছে।’

আরও গল্প পড়তে আমাদের গুপ এ জয়েন হউন

অভিনব অবাক হলো কারণ তার বাবা সাধারণত বিদেশে যেকোনো মিটিং বা ডিল হলে সেটা সে নিজেই দেখে।কম্পানির কাজের জন্য তাকে হাতে গনা দুইবার বিদেশ যেতে হয়েছে এর বাইরে মডেলিং এর ফটোশুট এর জন্য সে কর্মসূত্রে বিদেশ গিয়েছে।অভিনব ব্যাপারটা হঠাৎ ঘটার কারণটা ঠিক ধরতে পারছে না।অর্ণবের হঠাৎ এতো চিন্তিত হওয়ার কারণ কি?অভিনব প্রশ্ন করলো,
-‘ড্যাড তুমি হঠাৎ আমাকে কেন দেশের বাইরে মিটিং এর জন্য পাঠাচ্ছো?’
অর্ণব বোধহয় প্রশ্নটার কারণে আরো অস্বস্তিতে পড়ে গেছেন।তবুও নিজেকে সামলে নিয়ে স্বাভাবিক থাকার ভঙ্গিতে বললেন,
-‘কম্পানির ভাইস প্রেসিডেন্ট হিসেবে বিদেশে গিয়ে মিটিং এটেন্ড করাটা তোমার দায়িত্ব তাছাড়া আমার একটা জরুরি কাজ আছে যেটার জন্য আমাকে একটু আউট অফ টাউন যেতে হবে।ওহ্ হ্যা অন্তিকারও পাসপোর্ট ভিসা টিকেট তৈরি করা ফেলা হবে।’
অভিনব কিছু বলতে গিয়েও বলতে পারলো না।বিধানকে এখান থেকে চলে যেতে বলে বাবার সঙ্গে একটু খোলামেলাভাবে কথা বলা উচিত।অর্ণব আসল কথাটা বলছেন না এটা তার ভাবসাব বেশ ভালোই বলে দিচ্ছে।কিন্তু কাজটা করবে করবে বলেও অভিনবর আর বলা হয়ে উঠে না।হয়তো বাবার সঙ্গে তার সম্পর্কের বিভিন্ন জটিলতা কিংবা জড়তার কারণে।তবে বিধান বেরিয়ে যেতেই অভিনব দরজা থেকে ফিরে এসে বলল,
-‘ড্যাড তুমি কি আমাকে আরো কিছু বলতে চাও?’
অর্ণব নির্বিকার ভঙ্গিতে বলল,
-‘না।’

অভিনব আর কিছু না বলে বেরিয়ে গেল।অভিনব বেরিয়ে যেতেই অর্ণব হাফ ছেড়ে বাঁচল।অভিনব যেভাবে সন্দেহ করে প্রশ্ন করছিল তাতে ওনার মনে হচ্ছিল ওনার ছেলে কোনো এক গোয়েন্দা।
অর্ণবের গলার টাইটা লুজ করলো ড্রয়ার থেকে কিছু পিল বের করে পানি দিয়ে গিলে খেলেন।ওনার ঘুম পাচ্ছে ভীষণ।কিন্তু বাড়িতে যাওয়ার এখনো সময় হয়নি এখনমাত্র বাজে বিকাল পাঁচটা।চেয়ার ছেড়ে উঠে গিয়ে কেবিনের ডিভান পর্যন্ত যাওয়ার ইচ্ছা অর্ণবের মাঝে দেখা গেল না।চেয়ারে বসেই ছোটখাটো একটা ঘুম দেওয়া যায় এতে ব্যাপারটা খুব একটা মন্দ হবে না।কোথাও নিয়ম করে লেখা হয় নি ঘুমাতে একটা আরামদায়ক জায়গা দরকার।আরামের ঘুম সব জায়গায় ঘুমানো যায় মাঝ রাস্তায় কত মানুষ আরামে ঘুমিয়ে থাকে আবার দামি বিছানায় অনেকের আরামের ঘুম হয় না।একটা আরামের ঘুমের জন্য প্রয়োজন সারাদিনের হাড়ভাঙা পরিশ্রম।অর্ণব পরিশ্রম করে নি তবুও ঘুম আসছে তার।চোখ জোড়া ধীরে ধীরে বন্ধ হয়ে আসে তার।

অভিনব তার লোকের দেওয়া ঠিকানায় দাঁড়িয়ে আছে।তার সামনে একটা পুরনো দুইতলা বাড়ি।যদি তার অনুমান ঠিক হয় তবে বাড়ির বয়সটা খুব সম্ভবত সত্তর আশি হবে।বাড়িটিতে বোধহয় বহুবছর রঙ ছোঁয়ানো হয় না।জায়গাটা পুরান ঢাকা না তবুও এই পুরানো বাড়িটি দেখতে বেমানান লাগছে না।
অভিনব বাড়িতে ঢুকতে নিলে একজন লোক তাকে দাঁড় করায়।লোকটি হয়তো বাড়ির দারোয়ান।অভিনব অবাক এমন বাড়িতেও কি তবে দারোয়ান থাকে?লোকটি অভিনবর দিকে তাকিয়ে বিরক্ত হয়ে বলল,
-‘ওদিকে কোথায় যাচ্ছেন কাকে চান?’
-‘আমি হামিম শিকদারের সঙ্গে দেখা করতে চাই।’
-‘কি প্রয়োজন?’
-‘প্রয়োজনটা আমি না হয় ওনাকেই বলবো।’
-‘চলুন।’

লোকটার কন্ঠে বিরক্তি।অভিনব অনন্তকে এই ব্যাপারে এখনো কিছু জানায় নি।সে সিদ্ধান্ত নিয়েছে পুরোপুরি সব জেনে সে অনন্তর কাছে এই ব্যাপারে বলবে।ডাক্তার মারুফ বলেছেন অনন্তকে একটু সময় নিয়ে রহস্যগুলো উদঘাটন করতে কিন্তু অনন্ত সময় নিচ্ছে না।সে সব কাজের সমাধানে বেশ দ্রুতই পৌছে যাচ্ছে যেটা ভালো ব্যাপার না।অনন্তর মস্তিষ্ক হয়তো সব সত্য একসাথে মেনে নিতে পারবে না এবং ব্রেইন ড্যামেজ হয়ে যাবে বলে ধারণা করেছেন ডাক্তার মারুফ।
তাই অভিনব অনন্তর গোপনে সবকিছু করছে।খবর খারাপ হলে অনন্তকে সময় নিয়ে সবকিছু এক্সপ্লেইন করবে।

অভিনব বসার ঘরে সোফায় বসে আছে।কিছুক্ষণের মাঝে একজন শাড়ি পরিহিতা ভদ্রমহিলা এসে তাকে চা নাস্তা দিয়ে যায়।তার মিনিট দুয়েক পরেই ঢিলেঢালা পাঞ্জাবি পড়া চোখে মোটা ফ্রেমের চশমা পড়া একজন লোক আসেন।অভিনব বুঝতে পারেন ইনিই হামিম শিকদার।হামিম শিকদার বসে পড়েন সোফায় এরপর ক্লান্ত গলায় বললেন,
-‘কে আপনি?কি চাই?’
অভিনব মাস্ক আর ক্যাপ খুলে ফেলে এতটা সময় যাবত তার খেয়ালই ছিল না এসবের কথা।হামিম শিকদার অনেকটা বিস্মিত হয়ে বলল,
-‘আপনি তো অভিনব খান বিজয়!’

-‘জ্বী।আমি এখানে একজন ভদ্রমহিলার খোঁজে এসেছি আপনি নিশ্চয়ই আমাকে তার সম্পর্কে বলতে পারবেন কারণ সে আপনার বোন।’
হামিম শিকদার বিস্ময়ে হয়তো এভারেস্টের চূড়ায় পৌছে গেছেন এমটাই তার মুখভঙ্গি।উনি কিছুক্ষণ চুপ থেকে কঠোর গলায় বললেন,
-‘আমার কোনো বোন নিয়ে আপনি হয়তো ভুল ঠিকানায় এসেছেন।’
-‘আপনার বোন নেই মানে!আপনি মিথ্যা কেন বলছেন?আপনার বোনের নাম আনিকা তাই তো?'(রেগে)
হামিম শিকদার একটু ভেজা আর একটু শক্ত গলায় বলেন,
-‘মরে গেছে।আমার বোন মরে গেছে অনেক আগেই।’
অভিনব চমকে যায়।চোখের পাতা বড় বড় করে কয়েকটা পলক ফেলে বলল,
-‘কিভাবে?’
হামিম শিকদার কঠোর হয়ে বললেন,
-‘আপনাকে আমি সেটা বলতে বাধ্য নই।’
-‘আপনি আমাকে জানাতে বাধ্য কারণ আমাকে অনন্ত রাহমান পাঠিয়েছেন।’

অনন্ত নামটা শুনার সাথেই হামিমের চেহারায় অবাকতার চেয়ে বেশি রাগ ফুটে উঠে।সে লাল চোখে তাকায় অভিনবর দিকে।
-‘তোমাকে অনন্ত রাহমান পাঠিয়েছেন?’
মানুষ রেগে থাকলে সামনের মানুষটাকে পূর্বে আপনি বললেও রেগে যাওয়ার পর তুই কিংবা তুমি বলে সম্বোধন করে।হামিম শিকদার অভিনবকে তুমি বলছেন এতে বোঝা যাচ্ছে তুই পর্যন্ত যেতে ওনার বেশি সময় লাগবে না।
-‘হ্যা আমাকে উনিই পাঠিয়েছেন।’
হামিম শিকদার নিজের কন্ট্রোল হারিয়ে ফেলেন।রেগে চিৎকার করে বলতে থাকেন,
-‘কু*বা* এতো বছর পর কিসের পিরিত দেখাতে এসেছে?আমার বোনকে ফেলে চলে যাওয়ার সময় এসব মনে পড়ে নি?আমার বোনের জানাযার সময় তো একটা বার আসে নি।এখন বা*র ভালোবাসা দেখাতে এসেছে।’
হামিম শিকদারের শ্বাসকষ্টজনিত সমস্যা আছে বোধহয় অতিরিক্ত রেগে যাওয়ার কারণে তার শ্বাস নিতে সমস্যা হচ্ছে।
-‘প্লিজ কেউ একটু এদিকে আসুন মিস্টার হামিমের শ্বাসকষ্ট হচ্ছে।'(অভিনব)

কিছুক্ষণ পর সেই ভদ্রমহিলা এসে হামিমকে ইনহিলার দেয়।হামিম এখন বোধহয় একটু ভালো অনুভব করছেন।উনি অভিনবর দিকে এবার শান্ত চোখে তাকিয়ে বললেন,
-‘বলো কি জানতে চাও আনিকার সম্পর্কে আমি বলবো।ঐ জানোয়ারটা আসতো তাহলে ওর জীবন আমি নিজের হাতে নিতাম। তোমাকে বলা কথাগুলো অনন্তর কানে গেলে কি হবে আমি জানি না তবে অনন্তর এতোটুকু জানা উচিত তার স্ত্রীর কিভাবে মৃত্যু হয়েছিল এতে হয়তো ওর ভেতরে কিছুটা অনুতপ্তবোধ তৈরি হবে।’
-‘আপনি স্যারের বিষয়ে ভুল ভাবছেন,,।’

-‘ভুল ভাবছি নাকি ঠিক ভাবছি তা জেনে আমার লাভ নেই।তুমি যেহেতু ওকে স্যার বলছো সেহেতু ও জীবনে পালিয়ে যাওয়ার পর বেশ ভালোই উন্নতি করেছে বলে মনে হচ্ছে।,,আনিকা ছিল আমার একমাত্র বোন।রূপে গুণে সবদিক দিয়ে সে ছিল অনন্য শুধু একটাই ছিল তার কমতি সে কথা বলতে পারতো না।তবে আমার আর আমাদের কাছে ওর এই অক্ষমতাটা মেনে নেয়া সহজ হলেও সমাজের কাছে এমনটা ছিল না।ওর বিয়ের বয়স হলে আমাদের কাছে বিয়ের জন্য সম্বন্ধ পাঠায় অনন্ত রাহমান পেশায় কলেজের লেকচারার দেখতে তখনকার সময়ের হিরোদের চেয়েও বেশি সুদর্শন।প্রথমে আমাদের বিশ্বাস হয়নি ব্যাপারটা মানে আমাদের বোবা মেয়েটা যাকে সারাজীবন সমাজ ধিক্কার জানালো তার জন্য এতো ভালো সম্বন্ধ!কিন্তু বিশ্বাস যে করতে হবে।আমি অনন্তর সঙ্গে কথা বলি ব্যক্তিগতভাবে বোঝার চেষ্টা করি সে মানুষ হিসেবে কেমন।বিশ্বাস করো আমি ধারণাও করতে পারি নি এই লোকটা বিয়ে মাস খানেক পর আমার বোনকে ছেড়ে অন্যত্র চলে যাবে।যাইহোক অনন্ত বলেছিল সে বেশ কয়ক বছর যাবত আনিকাকে ভালোবাসতো কিন্তু সময়ের অপেক্ষায় ছিল সে।আমাদের সবার মতেই এরপর ধুমধাম করে বিয়েটা সম্পন্ন হলো।বিয়ের পর সব ঠিকই ছিল অনন্তর মা বাবা আত্মীয় বলতে তেমন কেউ ছিল না তবে তাতে আমাদের কোনো আপত্তি ছিল না কারণ আমাদের মেয়েকে সুখে রাখলেই সেটা আমাদের জন্য যথেষ্ট হতো।কিন্তু বিয়ের একমাস পর হঠাৎ অনন্ত গায়েব হয়।পুলিশের কাছে মিসিং ডায়েরি করি জায়গায় জায়গায় খোঁজ করি কিন্তু কোথাও ওকে পাই না।কিন্তু এরচেয়েও বড় কিছু হয়তো আমাদের জন্য অপেক্ষা করছিল কিছুদিন পর জানতে পারি আনিকা অন্তঃসত্ত্বা।নিখোঁজ হয়ে গেছে স্বামী এরপর মেয়ে কিভাবে পোয়াতি হয়? এমন প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হতো আমাদের প্রতিদিন তাই এলাকা ছেড়ে দিয়ে এদিকে এসে কম টাকায় এই পুরনো বাড়িটা কিনি।বাচ্চা এবরশন করাতে চেয়েছিলাম আমরা যদিও আনিকা আর আমার বাবা এর বিরুদ্ধে ছিল।কিন্তু শেষ পর্যন্ত এবরশন আর করানো হয়ে উঠে না কারণ সময় ততদিনে পার হয়ে গেছে।এরপর যখন আনিকা নয় মাসের প্রেগনেন্ট তখন একদিন বাজার থেকে সবজি কিনতে গিয়ে তার রিকশা এক্সিডেন্ট হয়।যদিও ঐ সময়ে কাজ করা তার বারণ ছিল কিন্তু সে সবার কথা অমান্য করে কাজ করতো।যাইহোক রিকশা উল্টে সে ফুটপাতে গিয়ে পড়ে।মাথায় ব্যাথা পাওয়ায় তার ব্রেইন সেখানেই ডেড হয়ে যায়।মানে সে প্রায় মৃত্যু আর জীবনের মাঝখানে ঝুলে ছিল আল্লাহর হয়তো ইচ্ছে ছিল বাচ্চাটা পৃথিবীতে আসুক তাই বাচ্চার কিছু হয় নি।আনিকার হার্টবিট চলার হয়তো একটাই কারণ ছিল তার বাচ্চাকে বাঁচিয়ে রাখা।হসপিটালে নেয়ার পর সিজারিয়ান পদ্ধতিতে তার পেট থেকে একটি কন্যা সন্তান বের করা হয় এবং এরপর তাকে মৃত ঘোষণা করা হয়।জানো আমি ঐ ফুটফুটে বাচ্চাটাকে কখনোই আপন করে নিতে পারি নি।ওর চুল থেকে শুরু করে পুরোটা মুখ ছিল অবিকল অনন্তর মতো।ওকে দেখলেই আমার নিজের বোনকে ধোঁকা দেওয়া মানুষটার কথা মনে পড়তো।কিন্তু আমার বাবার চোখের মনি ছিল মেয়েটা বাবা বেঁচে থাকাকালীন ওকে একটা বেস্ট লাইফ দিতে চেয়েছিল।কিন্তু তার মৃত্যুর পর আমি আর ঐ মেয়েটির দায়িত্ব নিতে চাইনি কারণ আমাল কাছে ও আর ওর বাবা ছিল আমার বোনের খুনী।তাই ওকে আমি পথের আলো নামের একটা অরফানেজে রেখে আসি এখন হয়তো ও বেশ বড় হয়ে গেছে।আমার বাবা লিয়াকত শিকদার এর এক বন্ধুর নাতির সঙ্গে না কি অন্তিকার বিয়ে ঠিক করে রেখেছিলেন।’
অভিনব কথাটা শুনতেই থতমত খেয়ে গিয়ে বলল,

সাথে থেকো প্রিয় পর্ব ৩৩

-‘কি কি বললেন?আপনার বাবার নাম কি?আর আপনার ভাগ্নির নাম কি বললেন?’
-‘লিয়াকত শিকদার আমার বাবার নাম আর আমার ভাগ্নির নাম অন্তিকা রাহমান আমার বাবা অনন্তর সঙ্গে মিলিয়ে রেখেছিলেন পিতৃ পরিচয় বজায় রাখতে,,কেন?’
-‘ওনার বন্ধুর নামটা কি?’
-‘ঠিক মনে পড়ছে না তবে কি খান যেন।’
-‘আপনার ভাগ্নিকে কোনো অরফানেজে কত বছর বয়সে রেখে এসেছিলেন?’
-‘পথের আলো অরফানেজ এর ওর চার কিংবা পাঁচ বছর বয়স তখন।’
অভিনব আর একটা শব্দও জিজ্ঞেস করার প্রয়োজন বোধ করে না।আজ প্রশ্নগুলোর উত্তর সে পেয়ে গেছে।সবকিছু একদম ঝকঝকে চকচকে পরিষ্কার।
অভিনব গাড়িতে উঠে অনন্ত আর অন্তির ছবি একসাথে মিলিয়ে দেখতে দেখতে বিড়বিড় করে বলল,

-‘বাবা আর মেয়ের মাঝে আসলেই অনেক মিল।এতটাই মিল যে যেকোনো অপরিচিত ব্যক্তিও এদের একসাথে দেখলে নির্দ্বিধায় বলে দিতে পারবে এরা বাবা মেয়ে।আমি কি ব্যাপারটা বুঝেও অবুঝ ছিলাম?’

সাথে থেকো প্রিয় পর্ব ৩৫

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.