সাথে থেকো প্রিয় - Golpo Bazar

সাথে থেকো প্রিয় পর্ব ৩৬ || নীল ক্যাফের ডায়েরী

সাথে থেকো প্রিয়

সাথে থেকো প্রিয় পর্ব ৩৬
লেখক:রিয়ান আহমেদ

-‘আংকেল আপনাকে বেশ ক্লান্ত দেখাচ্ছে আপনি কি ঠিক আছেন?’
অন্তির কথায় অর্ণব কিছুটা হকচকিয়ে যায়।কিছুটা গম্ভীর গলায় বললেন,
-‘আমার ক্লান্তি সম্পর্কে জেনে তোমার কোনো কাজ নেই।আর আমি তোমাকে পুত্রবধূর মর্যাদা দেইনি তাই আমার ব্যক্তিগত বিষয় নিয়ে হস্তক্ষেপ করবে না।’
কথাটা বলে অর্ণব টেবিল থেকে ম্যাগাজিন নিয়ে পড়তে শুরু করে।
-‘আমি কি বলেছি আমাকে পুত্রবধূর মর্যাদা দিতে? যাইহোক আন্টি লাঞ্ঞের জন্য ডেকেছেন।’
-‘আসছি যাও আর এই খরগোশটাকে সারাদিন কোলে নিয়ে কেন ঘুরো?অসহ্যকর এটা আমার বাড়ি নাকি চিড়িয়াখানা!’
অর্ণব একরাশ বিরক্তি নিয়ে কথাটা বলল।অন্তি টেরিকে নিয়ে কিছুটা এগিয়ে এসে দুষ্টু হাসি দিয়ে বলল,

-‘আপনার ছেলের মতো অদ্ভুত প্রাণী এ বাড়িতে থাকতে পারলে তার বউয়ের খরগোশটা কি দোষ করেছে?’
অর্ণব ভেবেছিল অন্তি অপমানিত বোধ করে চলে যাবে কিন্তু তা না করে অন্তি আরো উল্টো তার সঙ্গে একপ্রকার ঝগড়া করছে।অর্ণব রাগী গলায় বলল,
-‘আমার ছেলেকে এটা বলার সাহস কি করে হলো তোমার?এটা আমার বাড়িতে আমার ছেলে থাকবে না তো কে থাকবে?’
-‘এক্সেক্টলি এটা আপনার ছেলে যদি থাকতে পারে তাহলে আমার ছেলে টেরিও থাকতে পারে।’
-‘লাইক সিরিয়াসলি এই প্রাণীটা তোমার ছেলে?’
-‘হ্যা তো?এটাতে আপনার সমস্যা হওয়ার কথা নয়।’
অন্তি কথাটা বলে আর দাঁড়াল না চলে গেল।অর্ণব আর কি বলবে বলার মতো শব্দই তার কাছে বরাদ্দ নেই।অর্ণব হঠাৎ হেসে দিল।বহুদিন পর সে হাসছে হাসতে বাধ্য হয়েছে সে এমন অদ্ভুত কথা শুনে কে না হাসবে।অভিনব আর সারিকা দুজনেই ছোটবেলা থেকে বেশ সেন্সেটিভ সবকিছু নিয়ে। তাদের কথায় হাসি মজা খুব একটা দেখতে পায়নি অর্ণব কখনো।অর্ণব বলল,

আরও গল্প পড়তে আমাদের গুপ এ জয়েন হউন

-‘পাগলি মেয়ে একটা।’
-‘কাকে পাগলি বলছো?’
অর্ণব দেখে সামনে সুহানা দাঁড়িয়ে আছে।অর্ণব আবার মুখটা গম্ভীর করে ফেলে এরপর বলে,
-‘ঐ এমনিতেই,,,তুমি কেন আসলে আমিই নিচে আসছিলাম।’
-‘আমি অন্তিকে পাঠিয়েছিলাম তোমাকে ডাকার জন্য কিন্তু ভরসা পাইনি আসলে তুমি তো অন্তিকে পছন্দ করো না তাই আমিই এলাম।’
-‘সার্ভেন্টকে পাঠিয়ে দিতে।’
-‘ইচ্ছে করছিল না তাই।’
-‘ওহ্ চলো।’
অর্ণব খাবার শেষ করে ঘরে এসে কিছু একটা খুঁজতে থাকে।হঠাৎ সুহানা সামনে এসে কিছু ওষুধের বোতল অর্ণবের সামনে ধরে বলল,
-‘এগুলোই খুঁজছিলে তাই না?’
অর্ণব সুহানার দিকে তাকিয়ে অবাক হয়ে বলল,
-‘এগুলো কোথায় পেলে তুমি?’

-‘অর্ণব তুমি আমার কাছে ব্যাপারটা কেন গোপন করছিলে?আমাকে একবারও এই ব্যাপারটা শেয়ার করার প্রয়োজনবোধ করলে না?আমাকে ডাক্তার সাদি ফোন দিয়ে না জানালে তুমি আমি জানতেই পারতাম না।’
-‘দেখো এটা একটা সাধারণ বিষয়।’
-‘সাধারণ বিষয়!এটা কোনো সাধারণ বিষয় না তুমি ধীরে ধীরে নিজেকে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দিচ্ছো।’
সুহানা কথাটা বলে কান্না শুরু করে দেয় আর বলে,
-‘তোমার কিডনিতে টিউমার ধরা পড়েছে আর তুমি বলছো সাধারণ একটা বিষয়।আমি সত্যিই তোমার এমন অদ্ভুত কথা শুনে অবাক হচ্ছি।’
অর্ণব নিজের প্রিয়তমা স্ত্রীকে জড়িয়ে ধরে বলে,
-‘প্লিজ কান্না করো না আমি একদম ঠিক হয়ে যাব।’
সুহানা অর্ণবকে জড়িয়ে ধরে অনেক জোরে যেন ছেড়ে দিলেই হারিয়ে যাবে।সুহানা বলল,

-‘তুমি এত বড় একটা বিষয় এতদিন যাবত আমার কাছে লুকিয়ে রেখেছিলে কেন?তোমার কিছু হলে আমার কি হবে?কতবার বলেছিলাম সিগারেট ছেড়ে দেও, ছেড়ে দেও কিন্তু তুমি ছাড়লে না।যদি সিগারেট ছাড়তে তবে এই দিন কি দেখতে হতো?’
অর্ণব সুহানাকে ছেড়ে দিয়ে বলল,
-‘দেখো আমি চেয়েছিলাম বিষয়টা গোপন রাখতে কারণ ডক্টর বলেছে এটা মেডিসিন দিয়ে কিওর করা সম্ভব আর কিছু থেরাপি নিতে হবে।’
-‘জাস্ট থেরাপি!তুমি আবার আমাকে মিথ্যা বলছো।তুমি আগামী সপ্তাহে সার্জারি করানোর চিন্তাভাবনা করছিলে।তুমি এই বিষয়েও আমাকে জানানোর দরকার মনে করো নি।সত্যি করে বলো এই কারণেই তো তুমি অভি আর অন্তিকে দেশের বাইরে পাঠাচ্ছিলে তাই না?’
অর্ণব মাথা নিচু করে বলল,

-‘আমি তোমার কাছ থেকে ব্যাপারটা গোপন রাখতে চেয়েছিলাম কারণ তোমার হার্ট এমনিতেই বেশ দূর্বল অল্প সময়ে তুমি চিন্তিত হয়ে অসুস্থ হয়ে যাও আমি চাই নি তুমি অসুস্থ হও।’
-‘হ্যা তুমি চাওনি আমি অসুস্থ হই তুমি চেয়েছো আমি মরে যাই তাই না?,,তোমার কিছু হলে আমার বেঁচে থাকার তো কোনো মানেই হয় না।’
অর্ণব আহত দৃষ্টিতে সুহানার দিকে তাকিয়ে আছে।সুহানার মনে এক পাহাড় সমান অভিমান।বৃদ্ধ বয়সে স্বামী স্ত্রী একে অপরের সবচেয়ে বড় বন্ধু হয় এই সময়ে তারা কোনো বিষয় একে অপরের কাছে গোপন রাখে না।কিন্তু অর্ণব এই নিয়মটা মানেনি যেটা সুহানাকে বেশ কষ্ট দিচ্ছে।অর্ণব বলল,

-‘অভি আর সারিকে এই বিষয়ে বলো না।’
-‘কেন?তুমি আগামী সপ্তাহে সার্জারি করাবে অপারেশনের আগে কি ছেলে মেয়েকে এই বিষয়ে জানাতেও পারবো না?তুমি কি বলো না বলো আমি সত্যিই কিছুই বুঝতে পারছি না।’
-‘দেখো অভির এই মুহুর্তে একটা জরুরি মিটিং এ যেতে হবে আমাদের কম্পানির না হলে কোটি টাকার লস হয়ে যাবে আর সারিকাও তো নিজের একটা কাজে আউট অফ টাউন আছে।এখন যদি তুমি ওদেরকে এই বিষয়ে বলো তাহলে ওরা নিজেদের কাজ ছেড়ে আমার কাছে পড়ে থাকবে যা আমি চাই না।’
-‘নিজেদের বাবার অসুস্থতাটা তাদের কাছে সবথেকে বড় তাই নয় কি?তুমি না বললে আমি বলবো।’

-‘সুহানা প্লিজ কথা বুঝার চেষ্টা করো।আমি কখনোই চাই না আমার ছেলে মেয়ের দূর্বলতার কারণ হতে ছোট্ট একটা অপরাশনের জন্য ওদের প্রফেশনাল লাইফ হার্ম করতে চাই না।’
-‘তুমি নিজের সন্তানদের কাছে দূর্বল হতে চাও না সেটা ঠিক আছে কিন্তু এখানে দূর্বলতার কথা আসছে কোথা থেকে তুমি এই মুহুর্তে অসুস্থ।আমাকে ডাক্তার সাদি বলেছেন যে অপারেশনে রিস্ক আছে যদি তোমার কিছু,,,তখন আমি ওদের কি জবাব দেব?’
সুহানা আবারও কেঁদে দেয়।তার স্বামী সবসময় প্রফেশনাল লাইফ নিয়ে পড়ে থাকেন কিন্তু পার্সোনাল ক্রাইসিস নিয়ে কখনোই ভাবেন না।অমর খানও এমনই ছিলেন সুহানার চিন্তা হয় অভিনবকে নিয়ে সে যদি বাপ দাদার মতো হয় তবে?
অর্ণব অনেক ভাবে বোঝানোর পরে সুহানা আর না পেরে রাজি হয়ে যায় তবে সে মনে মনে এখনো পুরোপুরি রাজি হতে পারছেন না।

অন্তি ভাবলেশহীনভাবে ক্যান্টিনে বসে বইয়ের পাতা উল্টাচ্ছে কিন্তু তার মন বইয়ের দিকে নেই।সে শুধু ভাবছে গতকাল অনন্তর সাথে কথা বলার মুহূর্তগুলির কথা।জীবনে প্রথমবার কাউকে নিজের ফাদার ফিগার হিসেবে দেখেছিল সে।অনন্তকে নিজের খুব কাছের কেউ মনে হয়েছিল ওর।অন্তি ভার্সিটিতে ভর্তি হয়েছে অনেকদিন কিন্তু এখনো অব্দি তার কোনো বন্ধুবান্ধব হয়নি।সবাই অন্তিকে কেন যেন ইগনোর করে।অন্তিও মাথা ঘামায় না কারণ ছোটবেলা থেকে ও লেস সোশ্যাল।ওর ফ্রেন্ড যে কজন ছিল সবাই এখন হারিয়ে গেছে।
-‘হ্যালো আমি তিসান তুমি বোধহয় আমার জুনিয়র।’
অন্তি মাথা তুলে তাকিয়ে ভ্রূ কুঁচকে বলল,
-‘তো কি করবো?’
ছেলেটা মাথা নেড়ে হাসে।অন্তি বুঝলো না ওর কথায় কি এমন মজা পেল ছেলেটা।তিসান চেয়ারে বসে বলল,
-‘তোমাকে আজকে সুন্দর লাগছে।’
-‘তো গতকাল আমাকে বাজে লাগছিল?’
তিসান থতমত খেয়ে যায় কারণ সে এমন কথা আশা করে নি।
-‘না মানে তোমার এই ড্রেসটা খুব সুন্দর।’
-‘তো আপনার পছন্দ হয়েছে?এড্রেস দিয়ে দেব দোকানের আপনি চাইলে কিনতে পারেন।’
-‘আমি ড্রেস কিনে কি করবো?’
-‘আমি কি জানি।যেহেতু দোকানের ঠিকানা প্রয়োজন নেই তাহলে এখান থেকে যান।’
-‘কেন?’
-‘কারণ আপনাকে আমার পছন্দ হচ্ছে না।’
-‘আমাকে পছন্দ না হওয়ার কারণ?’
-‘আপনাকে পছন্দ করার একটা কারণ বলুন।’
তিসান ঠিক কি বলবে ভেবে পেল না।আসলেই তো তাকে পছন্দ করার কি কোনো কারণ আছে?তিসানকে টেবিল ছাড়তে না দেখে অন্তি নিজেই উঠে দাঁড়াল।এখানে আর থাকা যাবে না ছেলেটা তার সাথে ফ্লার্ট করছে এটা স্পষ্ট।

অভিনব অন্তির ভার্সিটির সামনে গিয়ে ওকে ফোন দেওয়ার কিছুক্ষণের মাঝেই অন্তি এসে হাজির কিন্তু সে যে এমন একটা কথা বলবে তা অভিনব আশা করে নি।
-‘আপনি আমার সঙ্গে এত কেয়ারিং বিহেভ করবেন না আমার ব্যাপারটা ভালো লাগে না।’
অভিনব কিছুক্ষণ চুপ থেকে বলল,
-‘কেন?’
-‘কারণটা অতি সোজা আমি আপনার প্রতি দূর্বল হতে চাইছি না।আমাদের মাঝে বোঝাপড়া ভালো হয়ে গেছে মানে এই না আমাদের সম্পর্কটা ভালোবাসাময় হয়ে গেছে।চার বছর মানে অনেকটা সময়।আমরা এক ছাদের নিচে এক ঘরে থাকছি তাই আমি আপনার সাথে বোঝাপড়াটা ঠিক করে নিয়েছি।আমাদের মাঝে ঝগড়া হলে আপনার পরিবারকে সমাজে কৈফিয়ত দিতে হবে যেটা আমি চাই না।কারণ আপনার পরিবারটা এখন আমারও তবে আপনি মানুষটা আমার নন।তাই বলছি আমাকে দূর্বল করবেন না ।তা না হলে হয়তো কোনো একদিন আপনাকে ছাড়া পথ চলাটা আমার জন্য অসম্ভব হয়ে পড়বে।’

অন্তি গাড়িতে উঠে বসে কথাগুলো বলে।অন্তির কথাগুলো ষোল আনা সত্য তাই অভিনব পাল্টা উত্তর দিতে পারলো না।সে অন্তির কাছে নিজের ভালোবাসার কথা বলবে অবশ্যই বলবে কিন্তু কিছুদিন পরে।অভিনব মনে মনে অনেক আয়োজনের কথা চিন্তা করে রেখেছে তাদের ভালোবাসার উৎসব পালন করতে।এই উৎসবে শুধু থাকবে সে এবং তার প্রেয়সী।বীশেষ কিছু পাওয়ার জন্য বিশেষ অপেক্ষা করতে হয় আর বিশেষ অপেক্ষায় থাকে একটু কষ্ট।অন্তিকেও করতে হবে কিন্তু অভিনব সেই কষ্টের প্রাপ্য ভালোবাসার চেয়েও বেশি পরিমাণ ভালোবাসা ওকে দিবে বলে ঠিক করে রেখেছে।
অভিনবকে নিঃশব্দে নিজের পাশে বসে ল্যাপটপে কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়তে দেখে অন্তি জানালার দিকে তাকিয়ে দীর্ঘশ্বাস ছাড়লো।আজকের কথাগুলো বলার একমাত্র কারণ ছিল অভিনবর মনের কথাটা জানার চেষ্টা।অন্তির মনে হয়েছিল অভিনব হয়তো তাকে ভালোবাসে তাই পরীক্ষা নিয়েছে সে অভিনবর এসব বলে।সে ভেবেছিল অভিনব হয়তো রেগে গিয়ে নিজের মনের কথা মুখে এনে ফেলবে কিন্তু তা না করে অভিনব একেবারেই সাধারণ আচরণ করলো যেন অন্তির কথায় তার বিন্দুমাত্র যায় আসে না।
অন্তি মনে মনে বলল,

-‘সত্যিই আমি বড্ড বোকা।আপনার কাছে আসা কেয়ার করা এসবকে ভালোবাসা ধরে নিলাম।আসলে কি বলুন তো আমার মতো মানুষ যারা কারো কাছে কখনো ভালো ব্যবহার পায়নি তারা কেউ তাদের সাথে ভালো ব্যবহার করলেই সেই মানুষটির ভালোবাসার মানুষ ভাবতে শুরু করে নিজেকে।যাইহোক ভুল একবার হওয়াই ভালো।ভবিষ্যতে এই ভুল ধারণা পোষণ করবো না কখনো নিজের মনের ভেতরে।’
এদিকে অভিনব মনে মনে বলছে,
-‘তোমাকে আমি না ভালোবেসে থাকতে পারিনি।তুমি আমার জীবনে কখনোই কোনো অপশন ছিলে না তুমি আমার কাছে সবসময় অনলি অন ছিলে আছো থাকবে।খুব তাড়াতাড়ি তুমি নিজের জীবনের সবচেয়ে বড় সারপ্রাইজ পেতে চলেছো।’

সারিকা আর শুভ্র একটা রেস্টুরেন্টে বসে খাওয়া দাওয়া করছে।দুজনেই বেশ ক্লান্ত এতটা জার্নি করে।নিজেদের প্রতি তাদের রাখ হচ্ছে রোড ট্রিপ করার কোনো প্রয়োজন ছিল না।এডভেঞ্চার বলতে কিছুই নেই গাড়ি নিয়ে দুজন মানুষ মিলে রোড ট্রিপ করাতে।সারাদিন হয় ঘুমিয়ে থাকতে হয় আর নাহলে জানালা দিয়ে বাইরের দৃশ্য উপভোগ করতে হয়।
সারিকা জানালার বাইরে দৃষ্টি রেখে দুইঘণ্টার মাথায় ক্লান্ত হয়ে গেছে।প্রথম দিকে তো ভালোই লাগে গাছপালা নদ নদী দেখতে কিন্তু একটা পর্যায়ে এসবের প্রতি একঘেয়েমি চলে আসে।
খাওয়া শেষ করে সারিকা আগে রেস্টুরেন্টের বাইরে আসে।জায়গাটা বেশ ভালো লেগেছে ওর।রেস্টুরেন্টটা একটা ঝিলের পাশে।ঝিলটায় অনেকে নৌকা ভাড়া করে ভ্রমণ করছে।আশেপাশে গাছপালায় ভরা একটা জঙ্গলের মতো পরিবেশ।এই রেস্টুরেন্ট ছাড়া তেমন কোনো জনবসতি দেখা যাচ্ছে না।সাধারণত এটা একটা ট্যুরিস্ট স্পট বলেই মনে হচ্ছে।
শুভ্র নিজের উদরপূর্তি করে হাই তুলতে তুলতে সারিকার সামনে এসে বলল,

-‘চলো গাড়িতে গিয়ে বসি।’
-‘নাহ্ গাড়িতে বসতে ইচ্ছে করছে না।তারচেয়ে বরং চলুন আমরা ঐ নৌকায় গিয়ে উঠে কিছুক্ষণ নৌকা চালাই।’
-‘মন্দ কথা বলো নি গাড়িতে বসে থাকতে থাকতে আমার অবস্থা খারাপ হয়ে গেছে একটু ঘুরলে মন আর শরীর দুটোই তরতাজা হয়ে যাবে।’
দুজনে একটা নৌকা ভাড়া নিয়ে ঝিলের মধ্যে চালাতে শুরু করে।সারিকা প্যাডেল মারতে মারতে বলল,
-‘আকাশটা বেশ ভালো লাগছে দেখতে।অনেকদিন পর মনে হচ্ছে আমি একটা ঠিকঠাক আউটিং এ এসেছি।’
-‘কেন তুমি ফ্রেন্ডস এন্ড ফ্যামিলির সাথে আউটিং এ যাও না?’
-‘উঁহু আমার ফ্যামিলির সবাই সবসময় বিজি থাকে আর আমার ফ্রেন্ডসরাও।শুনুন জীবনে একটা ভুল কাজ করে ফেলেছি সব ভালো,ভদ্র,ব্রিলিয়ান্ট স্টুডেন্টদের ফ্রেন্ড বানিয়ে।এখন তাদের ফোন দিলে তাদের এসিসটেন্টরা রিসিভ করে বলে স্যার বিজি আছে ম্যাম বিজি আছে।এমন একটাই ফ্রেন্ড ছিল যে কখনো বিজি থাকতো না সে ছিল জিবরান।’
শুভ্র বিড়বিড় করে বলল,

সাথে থেকো প্রিয় পর্ব ৩৫

-‘শালা বিজি থাকবে কিভাবে তুমি ফোন দিলে।ও তো মনে হয় তোমার ফোনের অপেক্ষায় থাকে।ও যদি কোর্টে জজ হিসেবেও বসে থাকে কিন্তু ঐ সময় যদি তুমি ওকে ফোন দেও তাহলে ও সব ছেড়েছুড়ে চলে আসবে।’
সারিকা কথাগুলো একটু একটু শুনতে পেল এরপর বলল,
-‘আপনি জিবরানকে কি বলছেন?’
শুভ্র জোরপূর্বক হাসার চেষ্টা করে বলল,
-‘না বললাম ও একটা ভালো ছেলে।’
-‘যাইহোক যা বলছিলাম জিবরানের সাথে কি ঋর আউটিং এ সবসময় যাওয়া যায় ও হচ্ছে একটা ছেলে আর আমি একটা মেয়ে।মানুষ দেখলে অনেক কিছুই ভাবতে পারে তাই আর কি কারো সঙ্গে ঘুরতে যাই না।’
-‘আচ্ছা একটা কথা বলি?’
-‘কি?’
-‘ভালোবাসি তোমাকে।’
-‘আপনি আবার এসব বলছেন?’
-‘আচ্ছা আমি যদি মরে যাই তাহলে কি হবে?তাহলে কি আমাকে তুমি মনে করবে একবারও সারা দিনে,সারা মাসে কিংবা সারা বছরে?’
সারিকা কিছু বলতে পারলো না।হঠাৎ একটা বোট এসে ভুলবশত তাদের বোটকে ধাক্কা মারে।টাল সামলাতে না পেরে শুভ্র পড়ে যায় বোট থেকে জলে।সারিকা চিৎকার দিয়ে বলল,
-‘শুভ্রওওওও।’

সাথে থেকো প্রিয় পর্ব ৩৭

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.