সাথে থেকো প্রিয় - Golpo Bazar

সাথে থেকো প্রিয় পর্ব ৩৭ || ভালোবাসার কিছু গল্প

সাথে থেকো প্রিয়

সাথে থেকো প্রিয় পর্ব ৩৭
লেখক:রিয়ান আহমেদ

শুভ্র ডুবে যাচ্ছে বোধহয় সে সাঁতার জানে না।সারিকা আর কিছু না ভেবে লিফ দেয় ঝিলের পানিতে।ইতিমধ্যে অনেকেই বিষয়টা খেয়াল করেছে সবাই বোট নিয়ে ওদের কাছে।কিছু লোক সাহায্যের জন্য এগিয়ে আসে।শুভ্রকে সারিকা ধরতে পারলেও ঠিক ওঠাতে পারছে না সারিকার মনে হলো শুভ্রর পা কিছু একটার সাথে আটকে গেছে।সারিকা বড় একটা শ্বাস নিয়ে ভেতরে ডব দিল কিছু জলজ লতাপাতার শুভ্রর পাকে আঁকড়ে ধরেছে।সারিকার সেগুলো খুলতে গিয়ে দম ফুরিয়ে আসছে সে আর শ্বাস আটকে রাখতে পারছে না।একপর্যায়ে লতাপাতাগুলো শুভ্রর পা থেকে ছাড়িয়ে নিতে পারলেও সারিকা আর উঠে আসতে পারে না দম ছেড়ে দেয়।ভাগ্যবশত কয়েকজন লোক ঠিক সময়ে ওদের পানি থেকে তুলে আনে।সারিকা কিছু মিনিট পর চোখ খুলে উঠে বসে বড় বড় নিঃশ্বাস নিতে শুরু করে এরপর শুভ্রর দিকে তাকায়।শুভ্র চোখ মেলছে না সবাই বেশ চিন্তিত।সারিকা শুভ্রর গালে চাপড় মেরে ডাকতে থাকে,
-‘শুভ্র এই শুভ্র উঠুন।শুভ্র আপনি কি আমার কথা শুনতে পাচ্ছেন।’
শুভ্রর কোনো সারা শব্দ নেই।সারিকা শুভ্রর শ্বাস চলছে কি না দেখে নেয় এরপর শুভ্রর নার্ভস চেক করে।সারিকা শুভ্রর পেট চেপে পানি বের করে কিন্তু শুভ্রর এখনো কোনো সারা শব্দ নেই।সারিকা এবার হাউমাউ করে কান্না করে দেয় তার বুকটা ফেটে যাচ্ছে।একজন লোক বলে,
-‘ওনাকে মাউথ টু মাউথ অক্সিজেন দিতে হবে।’

সারিকা কথাটা শোনার পর দ্বিতীয়বার ভাবে না।সাথে সাথে শুভ্রর গালে হাত রাখে।সারিকা মাউথ টু মাউথ অক্সিজেন দেয় কিছুক্ষণ আশেপাশের সকলে এই দৃশ্য অবাক চোখে দেখতে থাকে।শুভ্র এখনো চোখ খুলছে না। এম্বুলেন্স অন দ্যা ওয়ে আছে জনবসতি থেকে জায়গাটা দূরে হওয়ায় এম্বুলেন্স দেরী করছে ।সারিকা শুভ্রর মুখের দিকে পলকহীনভাবে তাকিয়ে থাকে।এই লোকটা কি সত্যিই ওকে ছেড়ে চলে যাচ্ছে?সারিকা আজে জীবনে প্রথম প্রিয় মানুষটার কপালে কপাল ঠেকিয়ে কান্না করে বলে,
-‘আপনার কিচ্ছু হবে না।আপনাকে আমার জন্য বাঁচতে হবে।আমার ভালোবাসা উপভোগ করার জন্য বাঁচতে হবে।আপনি আমার সাথে এমন করতে পারেন না।আপনি জিজ্ঞেস করেছিলেন না আমি আপনাকে ভালোবাসতে পারবো কিনা,,আজ বলছি আমি আপনাকে ভালোবাসি অনেক বেশি আপনার চেয়ে বেশি কিনা জানিনা তবে অনেক বেশি ভালোবাসি।শুভ্র আপনি আমার সাথে থাকবেন না প্রিয় মানুষ হয়ে?প্লিজ শুভ্র কথা বলুন।আচ্ছা আমার সাথে ঝগড়া করবেন না।’

আরও গল্প পড়তে আমাদের গুপ এ জয়েন হউন

সারিকার কান্না আর ভালোবাসার আবেগে আপ্লুত কখন কথাগুলো সবার চোখে জল এনে দিল।সবাই দোয়া করছে সারিকা যেন নিজের ভালোবাসাকে ফিরে পায়।সারিকা শুভ্রর হাত ধরে বসে কান্না করছিল তখনই শুভ্রর হাত নড়ে উঠলো।সারিকা শুভ্রর দিকে তাকিয়ে দেখলো শুভ্র ধীরে ধীরে চোখ খুলছে।সারিকা এবার খুশিতে কান্না করে দিল।শুভ্র উঠে বসে ধীরে ধীরে।শুভ্রর জ্ঞান ফিরতে দেখে সকলে খুশি সবচেয়ে বেশি খুশি হচ্ছে শুভ্রর প্রেয়সী সারিকা।সারিকা নিজের খুশি কন্ট্রোল করতে না পেরে শুভ্রকে জড়িয়ে ধরে কেঁদে দিয়ে বলল,
-‘আমি জানতাম আপনার কিছুই হবে না।’
শুভ্র কাশছে আর মুখ দিয়ে পানি বের করছে সে কথা বলবে কি।সারিকা শুভ্রকে ছেড়ে দেয়।কিছুক্ষণ পর শুভ্র কিছুটা স্বাভাবিক হতেই সারিকা তার গালে হাত রেখে স্নিগ্ধ গলায় বলল,
-‘আপনি এখন ভালো ফিল করছেন তো?’

শুভ্র চমকে যায় এর আগে তো কখনো এতটা সুন্দর গলায় সারিকা তার সাথে কথা বলে নি।শুভ্র কি একটু অসুস্থ হয়ে আছে তাই সারিকার এমন ব্যবহার?সারিকার চোখ নাক অসম্ভব লাল হয়ে আছে যেন মেয়েটা অনেকটা সময় যাবত কান্না করেছে।হঠাৎ ভীড়ের মাঝে একজন বলে উঠে,
-‘ভাই আপনার ওয়াইফ আপনার জন্য এতক্ষণ কি কান্নাটাই না করেছেন তা কি আপনি জানেন?আপনার ওয়াইফ আপনাকে অনেক বেশি ভালোবাসে।’
শুভ্র কথাটা শুনে অবাক হয়ে সারিকার দিকে তাকায়।সে ভেবেছিল লোকটার এমন কথায় সারিকা চোটে যাবে কিন্তু এ কী?সারিকা রাগছে না সে তো লজ্জা পাচ্ছে।লজ্জা পেয়ে নিচের দিকে তাকিয়ে মিটমিট করে হাসছে।শুভ্রর মনে হচ্ছে সে অচেতন থাকা অবস্থায় বেশ বড় কিছু হয়েছে যা সে কিছুটা ধারণা করতে পারছে।শুভ্র একটু হেসে সারিকার দিকে তাকিয়ে ফিসফিস করে বলল,

-‘প্রেমে পড়েছো না কি?’
সারিকা মাথা নাড়িয়ে বলল,
-‘উঁহুম প্রেমের সাগরে না ভালোবাসার সাগরে পড়েছি।এই সাগরে একটা নৌকা নিয়ে আমরা সারাজীবন ভাসবো আপনাকে সাঁতারটা শিখিয়ে দেব।’
-‘তাই?’
শুভ্র হেসে বলল।সারিকা উত্তর দিল না সে আজ বড্ড বেশি লজ্জাবোধ করছে শুভ্রর নিকটে অবস্থান করে।সারিকার হৃদয় কতটা জোরে লাফাচ্ছে তা সারিকার জানা তবে মনে হচ্ছে হৃদপিন্ড নামক মাংসপিন্ডটা বোধহয় নিজেকে ঢোল ভাবতে শুরু করেছে তাই হয়তো ‘ডুরুম ডুরুম’ করছে অনবরত।
সারিকা গাড়ির সামনে আসতেই ঝটকা খেল।তাদের কাছে তো গাড়ি ছিল গাড়ি দিয়েও তো শুভ্রকে হসপিটালে নেওয়া যেত।কিন্তু পরক্ষণেই বুঝতে পারলো বিপদে মানুষ হুসজ্ঞান সব হারিয়ে বসে।তাছাড়া গাড়ি নিয়েও বিশেষ লাভ হতো না কারণ শুভ্রর ঐ মুহূর্তে প্রাথমিক চিকিৎসার প্রয়োজন ছিল এই গাড়ি দিয়ে হসপিটালে যেতে যেতে হয়তো শুভ্রর প্রাণটাই আর থাকতো না।দুজনে গাড়িতে উঠে তাদের গন্তব্যে রওনা হলো।দুজনের উজ্জ্বল দুটি চোখ ঝিলের দিকে।এই ঝিল থেকে তাদের দুজনের ভালোবাসা শুরু হলো।

অন্তির ঘুম পাচ্ছে সে গতকাল রাতে খুব ভালো ঘুম ঘুমাতে পারে নি তাই এয়ারপোর্টের মতো জায়গায় সে ঝিমাচ্ছে।আসলে তারও দোষ নেই তাদের ফ্লাইট সকাল সাতটায় হওয়ার কারণে রাত তিনটা বাজে বাসা থেকে বের হতে হয়েছে তাই সন্ধ্যার পরে এক ঘন্টা ঘুমাতে পেরেছে।
আজ তাদের ফ্লাইট সিঙ্গাপুরে যাওয়ার।প্রথমবার প্লেনে উঠে নিজের দেশে বাইরে যাওয়ার সময় সকলের মাঝে আলাদা উত্তেজনা কাজ করে।কেউ খুশি হয় আবার কেউ কষ্ট পায়,,, কিন্তু অন্তির এসব কিছুই হচ্ছে না।অন্তি খেয়াল করেছে আজকাল কোনো যে কিছুতেই সে বিশেষ কোনো অনুভূতি প্রকাশ করতে পারে না।তাহলে কি সে অনুভূতি শূন্য হয়ে যাচ্ছে?প্রশ্নটা মাথায় আসতেই তার ঘুমটা কয়েক সেকেন্ডের জন্য চলে যায়।কিন্তু এই প্রশ্নের উত্তর ভাবতে বসতেই আবার ঘুমটা অন্তির চোখকে টেনে বন্ধ করে দিতে চায়।অন্তি এবার নড়েচড়ে বসে আর বিভিন্ন অদ্ভুত প্রশ্ন ভাবতে শুরু করে কিন্তু সেগুলোর উত্তর খোঁজার চেষ্টা করে না।তার ধারণা উত্তর খোঁজার চেষ্টা করলেই ঘুম মশাই তার চোখে ভর করবে।অন্তির হঠাৎ এয়ারপোর্টে চারিদিকে চোখ বুলাতে ইচ্ছে হয়।বাহ্ জায়গাটা বেশ সুন্দর!এখানে একটু হাঁটাহাটি করলে মন্দ হয় না।অন্তি উঠে দাঁড়ায় কিন্তু সামনে আর এগোতে পারে না।অভিনব তার ব্যগ পেছন থেকে ধরে ফেলে আর ফোনে স্ক্রল করতে করতে বলে,

সাথে থেকো প্রিয় পর্ব ৩৬

-‘কোথায় যাওয়া হচ্ছে?’
অন্তি মুখ ত্যাড়া করে জবাবা দেয়,
-‘যেখানে ইচ্ছা সেখানে আপনার জেনে কাজ নেই।’
-‘আছে অবশ্যই আছে।তুমি যদি এই ইন্টারন্যাশনাল এয়ারপোর্টে হারিয়ে যাও তবে আমি তোমাকে ফেলেই এখান থেকে চলে যাব।’
-‘যান আমি কি বলেছি আপনাকে আমার সাথে নিতে।’
অভিনব অন্তির ব্যাগ টেনে নিজের পাশে বসে একহাত অন্তির কাঁধের উপর রেখে বলে,

-‘বেশি কথা না বলে চুপ করে এখানে বসে থাকো।’
অন্তি চুপ করে বসে রইলো।অভিনব ওর কাঁধে এমনভাবে হাত রেখে দাঁড়িয়ে আছে যেন ও অভিনবর বন্ধু।অন্তির মনে হচ্ছে অভিনবর হাতের ওজনই বিশ কেজি।
কিছুক্ষণ পর,,,,
দুজনে ফ্লাইটে বসে আছে।অন্তি জানে প্রতি বছর প্লেন ক্রাশে বহু মানুষ নিজেদের প্রাণ হারায় তাই না চাইতেও সে ভয় পাচ্ছে।

সাথে থেকো প্রিয় পর্ব ৩৮

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.