সাথে থেকো প্রিয় - Golpo Bazar

সাথে থেকো প্রিয় পর্ব ৩৮ || ভালোবাসার গল্প পড়তে চাই

সাথে থেকো প্রিয়

সাথে থেকো প্রিয় পর্ব ৩৮
লেখক:রিয়ান আহমেদ

অন্তির ইচ্ছে করছে অভিনবর হাত ধরতে কিন্তু একটা বাধা তাকে ধরতে দিচ্ছে না।তাছাড়া অভিনব তার জীবনে স্বল্প সময়ের মানুষ এই কথাটা যত দ্রুত সে এবং তার মস্তিষ্ক মেনে নিতে পারবে ততটাই ভালো বলে অন্তি মনে করে।অন্তি চোখ বন্ধ করে সূরা এবং দোয়া পড়তে থাকে।হঠাৎ একটা উষ্ণ স্পর্শ তার হাত আঁকড়ে ধরে।
অন্তি চোখ খোলার সাহস পায় না কারণ প্লেন ট্যাক অফ করছে।সে জানে এটা অভিনব ছাড়া আর কারো হাত না।কিন্তু অভিনব যেহেতু নিজে থেকে ধরেছে তাই এই মুহুর্তে না ছাড়াটাই উত্তম।অভিনব হাসে অন্তির চোখ বন্ধ করে বিড়বিড় করা দেখে।
অভিনব নিজেও দোয়া পড়ে নেয়।কিছুক্ষণের মাঝেই প্লেন কয়েক হাজার ফুট উপরে উঠে যায়।অভিনব অন্তিকে বলল,
–‘টেক অফ শেষ চোখ খুলতে পারো।’
অন্তি বড় একটা নিঃশ্বাস নিয়ে চোখ জোড়া খুলে অভিনবর দিকে একবার তাকায় এর বাইরে তাকায়।অভিনবর উইন্ডো সিট তারা দুজনে বিজনেস ক্লাসে বসেছে।অন্তি বাইরে তাকিয়ে আকাশ দেখছে।সকাল মাত্র হয়েছে তাই আকাশটা বেশ সুন্দর দেখাচ্ছে।অন্তি খুশি হয়ে যায় এতো কাছে থেকে বড় বড় ভেসে চলা মেঘগুলোকে দেখে।সে উত্তেজনায় একপ্রকার অভিনবর উপর দিয়েই উইন্ডোর কিছুটা কাছে চলে যায় আর হেসে বলে,
-‘ওয়াও কি সুন্দর দেখাচ্ছে আকাশটা এই মেঘগুলোকে দেখতে একেবারে হাওয়াই মিঠাইয়ের মতো মনে হচ্ছে।
I am amused by this scenery’
অভিনব বলল,

-‘তুমি এখানে বসবে?’
অন্তির খেয়াল হলো সে অভিনবর উপরে উঠে গেছে প্রায় তাই সে সরে গেল।লজ্জা পাওয়ার ভঙ্গিতে বলল,
-‘আমি দুঃখিত আসলে আমি আকাশ দেখে একটু খুশি হয়ে গিয়েছিলাম।’
অভিনব বুঝতে পারলো না অন্তি ওর সঙ্গে এমন ফর্মালিটিস দেখাচ্ছে কেন।আগে তো কখনো এমনটা হয়নি আর বেশ কিছুদিন যাবত অন্তি এমনটাই করছে আগের মতো পায়ে পা দিয়ে ঝগড়া করে না অদ্ভুত অদ্ভুত কথা বলে না।এককথায় অনেকটাই চুপচাপ থাকে সবসময়।অভিনব আবার বলল,
-‘অন্তি তুমি চাইলে আমার সিটে বসতে পারো।’
অন্তি কিছুক্ষণ চুপ থাকলো।সে দ্বিধাদ্বন্দ্বে ভুগছে হ্যা বলবে না কি না বলবে।অবশেষে অন্তি বলল,
-‘ওকে।’
দুজনে সিট অদলবদল করে বসে।

আরও গল্প পড়তে আমাদের গুপ এ জয়েন হউন

অন্তি আর অভিনব Singapore Changi Airport এ এই মুহুর্তে অবস্থান করছে।ওদের ইমিগ্রেশন শেষ হতেই ওরা লাগেজ নিয়ে বেরিয়ে আসে এয়ারপোর্ট থেকে।অনেকেই দাঁড়িয়ে আছে কাউকে না কাউকে রিসিভ করার জন্য এদের মাঝে একজন একটা হার্ডবোর্ডে Waiting for Abhinobo Khan Bijoy লিখে দাঁড়িয়ে আছে।অভিনব লোকটাকে দেখে অন্তির হাত ধরে এগিয়ে যায়।লোকটার দিকে তাকিয়ে সে বলে,
-‘ইনাদ কেমন আছো?’
লোকটার নাম ইনাদ সে হেসে বলল,
-‘জ্বী স্যার ভালো।ম্যাম আসলাম ওয়ালাইকুম।’
অন্তি বলল,
-‘ওয়ালাইকুম আসসালাম।’
ইনাদ দুজনের লাগেজ নিয়ে এগিয়ে যায় সামনের দিকে।একটা কালো কনভারটিয়াবল BMW এর মধ্যে লাগেজ রেখে সে অভিনবর দিকে একটা চাবি এগিয়ে দিয়ে বলল,
-‘স্যার আপনার বাড়ির সবকিছু ঠিকঠাক করে দেওয়া হয়েছে।আপনাদের জন্য দুজন সার্ভেন্ট রাখা হয়েছে।যদি কোনো সমস্যা হয় তাহলে একটা কল দিবেন শুধু আর বান্দা হাজির।’
-‘ঠিকাছে আগামীকাল তাহলে অফিসে দেখা হচ্ছে।’
-‘জ্বী অবশ্যই।’

দুজনে বাড়িতে এসে নিজেদের ঘরে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে লম্বা ঘুম দিল।অন্তির কান ব্যাথা হয়ে গেছে প্লেনের অদ্ভুত সেই শব্দের কারণে।এখন কানের ব্যাথা মাথার ব্যাথার আকার নিয়েছে তাই ঘুমটা তার বড্ড প্রয়োজন।সার্ভেন্ট খাবার দিয়ে চলে যায় কিন্তু সেই খাবার খাওয়ার ইচ্ছা আর অন্তির থাকে না।
অভিনব অন্তিকে দুই একবার ডাকলে অন্তি বলে সে খাবে না তাকে ঘুমাতে হবে।
অভিনবর হঠাৎ মনে পড়ে এই ঘরে এমন কিছু জিনিস আছে যেগুলো অন্তির না দেখাটাই ভালো।অভিনব প্রায় তিন চার বছর এখানে থেকেছে তাই তার ব্যক্তিগত অনেক কিছু এখানে থাকাটা স্বাভাবিক।
অভিনব একটা ড্রয়ার থেকে কিছু ছবি আর একটা ডায়েরি বের করে।মারিহার চলে যাওয়ার পর ও এই ছবিগুলো যত্ন করে নিজের কাছে রেখে দিয়েছিল আর এই ডায়েরিতে মারিহার সাথে দেখা হওয়া থেকে শুরু করে মারিহার সাথে শেষবার দেখা হওয়া পর্যন্ত সব লেখা আছে।যদিও অন্তিকে সে এসব আগেই বলে দিয়েছে কিন্তু ভালোবাসার মানুষের সাথে তার প্রাক্তনের ছবি দেখাটা কারো জন্য সহ্যের মধ্যে না।
অভিনব সেদিনের পর ভেবেছিল মারিহার সব স্মৃতি শেষ করে দেবে।কিন্তু পারেনি হয়তো তখনও তার মনের কোথাও না কোথাও মারিহা ছিল।কিন্তু এখন তার এসব করতে কষ্ট হবে না।কষ্ট!কষ্ট তো দূরের কথা এখন মারিহার প্রতি তার রাগ,ঘৃণা কোনোটাই আর নেই।তার ইচ্ছে করছে মারিহাকে ধন্যবাদ দিতে।
কারণ সেদিন যদি মারিহা তাকে না ছাড়তো তাহলে নিজের জীবনের সবচেয়ে শ্রেষ্ঠ এবং সুন্দর উপহারটা হয়তো পেত না।আর সেই সবচেয়ে সুন্দর উপহারটা হচ্ছে অন্তি।
অভিনব বাড়ির পেছনের ইয়ার্ডে গিয়ে ডায়েরি আর ছবিগুলো জ্বালিয়ে দেয় আগুন দিয়ে।এই আগুন শুধু এই কাগজগুলোকেই জ্বালাচ্ছে না এর সাথে অভিনবর জীবনের অন্ধকার অতীতের স্মৃতিগুলোকেও জ্বালিয়ে দিচ্ছে।

অন্তি সকালে ঘুম থেকে উঠে অভিনবকে ঘরের কোথাও দেখতে পায় না।ওয়াশরুমেও নেই গেল কোথায় তাহলে?অন্তি পুরো বাড়িতে খুঁজল কিন্তু অভিনবর সন্ধান পেল না। নিচে যেতেই একজন মহিলা সার্ভেন্ট অন্তির হাতে একটা নোট দিয়ে বলল,
-‘ফর ইউ ম্যাম।’
অন্তি নোটটা খুলে দেখলো গোটা গোটা অক্ষরে বাংলায় চারটি বাক্য লেখা।অন্তি হাতের লেখা দেখতেই তার কপাল কুঁচকে যায় কারণ এই ব্যক্তির হাতের ডাক্তারদের মতো বুঝতে হলে পাঁচবার পড়তে হবে।নোটটিতে লেখা আছে,
-‘মিসেস অন্তিকা আপনার স্বামী এই মুহুর্তে নিজের কাজে আছে।আপনি খাবার খেয়ে মাথা ব্যাথা এখনো থাকলে আমার বেডসাইড টেবিলের দুই নম্বর ড্রয়ার থেকে একটা মেডিসিন খেয়ে নেবেন।আর দুপুরে লাঞ্চটা কষ্ট করে একা একা করে নেবেন আমি লাঞ্চেও আপনার সঙ্গে থাকতে পারছি না।এরপর বিকাল চারটায় সার্ভেন্ট আপনাকে একটা বিশেষ নোট দিবে সেটা দয়া করে পড়বেন।-অভি’
অন্তি বুঝতে পারলো না অভিনব আবার কিসের নোট রেখেছে ওর জন্য।তবে ওর মনটা খারাপ হলো এটা ভেবে যে আজ সারাদিন অভিনবর সাথে ওর দেখা হবে না।ইচ্ছে করছে ছুটে গিয়ে অভিনবকে একবার দেখতে।কিন্তু সেটা সম্ভব নয়।

সারাদিন অন্তির বসে,হেঁটে,খেয়ে, টিভি দেখে কেঁটে গেল।সে দুইবার সার্ভেন্টের কাছে গিয়েছিল সে কিছুই বুঝতে পারছিল না অন্তির কথার কারণ মহিলাটা মালেশিয়ান আর ইংলিশ ভাষাও সে ভালো বুঝে না।সে শুধু ,’সরি ম্যাম,থ্যাংক ইউ ম্যাম,ফর ইউ ম্যাম।’এরকম টুকটাক ইংলিশ বলতে পারে।
ঠিক বিকাল চারটায় অন্তির হাতে সার্ভেন্ট একটা নোট দিল।কিন্তু নোটটা একলা এলো না নোটটার সাথে দুইটা বড় শপিং ব্যাগ এলো।অন্তি নোটটা খুলতেই এবার দেখলো সবার প্রথমে লাভ শেপ দিয়ে লেখা শুরু।সেখানে লেখা,
-‘❤মিসেস অভিনব
আজ একটা জরুরি ইভেন্ট আছে।আপনি এবং আপনার ওয়ার্ল্ড ওয়াইড হ্যান্ডসাম হাজব্যান্ড আমন্ত্রিত।আপনাকে দেয়া ব্যাগটিতে থাকা জড় বস্তুগুলোকে পরিধান করে সেগুলোর সৌন্দর্য বৃদ্ধি করে দিন এবং বিকাল সাড়ে পাঁচটায় বাড়ির নিচে এসে দাঁড়ান।এরপর আপনাকে একটি গাড়ি নিতে আসবে সেটাতে উঠে নিজের গন্তব্যে চলে আসুন।
ইতি
মিস্টার অভিনব”

অন্তি হেসে দিল নোটটা পড়ে।এতো সুন্দর কথা কিভাবে বলে একজন মানুষ?আজ অভিনবর সাথে দেখা হলে সে অবশ্যই জিজ্ঞেস করবে এতো সুন্দর কথা কিভাবে বলতে এবং লিখতে শিখেছে।
অন্তি ব্যাগগুলো খুলে একটা বড় বক্সে লং ব্ল্যাক কালারের গাউন আর একটা জুয়েলারি বক্সে কিছু ডায়মন্ড এর অর্নামেন্টস আবিষ্কার করে।গাউনটার ঘের অনেক বেশি তবে সামলানো একটু কঠিন হলেও অসম্ভব কিছু নয়।
অন্তি মনে মনে বলল,
-‘সে আমাকে এসব পড়ে কোন অনুষ্ঠানে যেতে বলছে?,,,হয়তো কোনো কম্পানির থেকে থ্রো করছে।তবে অভি তো আমাকে ফোন করতেও পারতো এভাবে বারবার নোট দিয়ে কথা বলার মানে কি?যাইহোক দেরি হয়ে যাচ্ছে পড়ে নেই।সাজতে হবে নাকি?হালকা পাতলা সাজলেই চলবে।’
অন্তি তৈরি হয়ে নিল।আয়নায় নিজেকে দেখে সে বিস্মিত।ব্ল্যাক সোয়ানের মতো মনে হচ্ছে তার নিজেকে।গাউনটা ফুল স্লিভের তবে হাতের ব্রেসলেট সাথে থাকায় অন্তি সেটাও পড়েছে।কালো গাউনে কালো পাথরগুলো লাইটের আলোয় আকাশের তারার মতো জ্বলে উঠছে ক্ষণে ক্ষণে।যথাসময়ে নিচে গিয়ে সে দাঁড়াতেই একটি গাড়ি আসলো সেও উঠে পড়লো।

গাড়িটি এসে থামে সমুদ্রের পাড়ে।অন্তি অবাক হয়ে ভাবে এখানে আবার কোন অনুষ্ঠান হবে?ড্রাইভার তাকে ভুল স্থানে নিয়ে এলো না তো? অন্তি গাড়ি থেকে নামতেই ড্রাইভার তাকে একটা নোট দেয়।অন্তি নোটটা নেয়।সেখানে লেখা,
-‘এংগ্রিবার্ড
তোমার সামনে যেই ইয়টটা আছে তাতে অতি সাবধানে উঠে এসো।তোমার জন্য যা অপেক্ষা করছে তা গ্রহণ করতে প্রস্তুত হও।’
অন্তি থমকে যায়।কি অপেক্ষা করছে ওর জন্য?আচ্ছা অভিনব ওকে পানিতে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিবে না তো?ওর তো ওয়াটার ফোবিয়া আছে।
অন্তি গাউনটা ধরে ধীরে ধীরে ইয়টে উঠে। ফুলের আর মোমের রাস্তা ধরে ইউটের উপরে উঠে সে।একজন সুঠাম দেহের অধিকারী পুরুষ দাঁড়িয়ে আছে কালো কোর্ট পড়ে পেছনে ঘুরে।অন্তি চোখটা একটু বড় করে ওষ্ঠাধর প্রসারিত করে অস্ফুট স্বরে ডাকে,
-‘অভি,,এসব কি?’
অভিনব নিজের হৃদয়হরণ করা হাসি দিয়ে অন্তির দিকে ঘুরে।অন্তি বড় সড় ক্রাশ খেয়ে বুকে হাত দিতে গিয়েও দেয় না।অভিনব ঘুরতেই আকাশে আতসবাজির মেলা শুরু হয়।অভিনব এগিয়ে আসে অন্তির চোখে চোখ রেখে এক হাঁটু গেড়ে বসে একটা কালো রিং বক্স বের করে অন্তির দিকে একটা আংটি ধরে বলল,
-‘will you love me my dear mrs angrybird?’
অন্তির মুখ অটোমেটিক হা হয়ে গেছে।

অন্তি স্তব্ধ হয়ে গেছে সবকিছু দেখে।আতসবাজির মেলা শেষ হতেই ফানুসের মেলা শুরু হয়েছে।আকাশে আগুনের শিখা নিয়ে উড়ে চলেছে আকাশে।এই দৃশ্য ভোলার মতো নয়।অভিনব তাকিয়ে আছে অন্তির দিকে।অন্তি কথা কি বলবে তা বুঝতে পারছে না তার চোখ ছানাবড়া হয়ে আছে।এটা কি বাস্তবতা নাকি স্বপ্ন?অভিনব অন্তিকে উত্তরের জন্য তাড়া দেয় না।এভাবে বসে থাকতে কষ্ট হচ্ছে তার কিন্তু সে এই কষ্ট করতে রাজি।তার প্রিয়তমা তো কম কষ্টের মধ্যে দিয়ে যায় নি তাহলে তার একটু কষ্ট ভোগ করতে ক্ষতি কি?অন্তির চোখ ঝাপসা হয় সে চোখের পলক ফেলে সাথে সাথেই চোখের জলেরা গাল বেয়ে গড়িয়ে পড়ে।অন্তি ধরা গলায় বলে,
-‘এসব কি সত্যিই ঘটছে নাকি শুধুমাত্র আমার স্বপ্ন?যদি স্বপ্ন হয় তবে এটা অতি সুন্দর একটা স্বপ্ন যেখান থেকে আমি বের হতে চাই না।সারা জীবন যদি আমি এখানে আটকে থাকি তাহলেও আমি সুখী।’
অভিনব মৃদ্যু হেসে বলল,

-‘আপনি স্বপ্ন দেখছেন না মিসেস অভিনব।আপনার স্বামী সত্যিই বিয়ের ছয়মাস পর আপনার নিকট প্রেম নিবেদন করছে।আপনি এই অধম মানুষটার প্রেমের বার্তাটা যদি শুনে থাকেন তবে সাড়া দিন।আপনার উত্তরের অপেক্ষা যে আমাকে বেপরোয়া করে তুলছে।অবশ্য বেপরোয়া তো আমি অনেক আগেই হয়ে গিয়েছিলাম আপনাকে ভালোবেসে।’
অন্তি কান্না করে দেয়।এই কান্নাটা তার জন্য অত্যাবশ্যকীয় হয়ে পড়েছে।এতো আকুলতা ভরা প্রেম নিবেদন কেউ কিভাবে ফিরিয়ে দিবে?অন্তি কান্নাজড়িত কন্ঠে বলে উঠে,
-‘আপনি আমাকে সত্যিই নিজের স্ত্রী হিসেবে ভালোবাসেন?আপনি আমাকে নিজের জীবন সঙ্গিনী করতে চাইছেন এই কথাটা কি সত্যিই আপনি বলছেন?’

-‘হ্যা বলছি।আমি তোমাকে ভালোবেসেছ ,ভালোবাসি, ভালোবাসবো।যদি জিজ্ঞেস করো কেন ভালোবাসি তাহলে আমার উত্তর হবে,,জানি না,,জানি কেন ভালোবাসি।ভালোবাসার কারণটা ব্যাখ্যা করা গেলে সেটা ভালোবাসা নয় নিছক ভাললাগায় পরিণত হয়।আমাদের দেখা হওয়ার হয়তো একটা কারণ ছিল কিন্তু আমার তোমাকে ভালোবাসার কোনো কারণ নেই।আমি শুধু এতটুকু জানি আমার বৈধ স্ত্রীকে আমি ভালোবেসে মৃত্যুর আগ পর্যন্ত ভালোবেসে যেতে চাই।সে আমাকে অনুমতি না দিলেও আমি আমার জীবনে তাকেই ভালোবেসে যাবো।আর যদি অনুমতি দেয় তাহলে দুজনের ভালোবাসা দিয়ে নতুন একটি ভালোবাসাময় রাজ্য গড়ে তুলবো যার প্রতিটি কোণে থাকবে তার আর আমার প্রেমের অস্তিত্ব।’
অন্তি এবার খুশিতে হাসে আবার কাঁদে সে বুঝতে পারছি না নিজের ভেতরের অনুভূতির বহিঃপ্রকাশ অশ্রুরূপে করবে না কি হাসির রূপে।অন্তি মুখে একহাত দিয়ে নিজের হাত এগিয়ে দেয় অভিনবর দিকে আর বলে,

-‘আপনাকে আর কষ্ট করে এভাবে বসে থাকতে হবে না।আমার ওয়ার্ল্ডওয়াইড হ্যান্ডসাম হাজব্যান্ড,,আমি আপনাকে ভালোবাসি তাই আমাকে ভালোবেসে ভালোবাসার রাজ্য গড়ে তোলার অনুমতি দিচ্ছি। I love you my dear white fox ‘
অভিনব দ্রুত আংটিটা অন্তির বাম হাতের অনামিকা আঙ্গুলে পড়িয়ে দেয়।অভিনব দাঁড়িয়ে যায় অন্তির একহাত তার হাতে।সে সেই হাত ধরে হ্যাঁচকা টান দিয়ে অন্তিকে নিজের কাছে নিয়ে এসে কোমরে হাত রাখে।অন্তি অভিনবর বুকে নিজের দুইহাত আড়াআড়িভাবে রাখে লজ্জায় সে অভিনবর চোখে চোখ রাখতে পারছে না।অভিনব তার চিবুকে হাত দিয়ে মুখ উপরে তুলে বাঁকা হাসি দিয়ে বলল,
-‘এংগ্রিবার্ড তোমাকে লজ্জাতে আরো সুন্দর লাগছে। তবে তোমাকে তো রেগে গালগুলো লাল টমেটো বানালেই আসল এংগ্রিবার্ড মনে হয়।’
অন্তি একটু রেগে তাকায় অভিনব তার গালে হাত দিয়ে বলল,
-‘ওয়াও আই ওয়ান্ট টু বাইট ইওর চিকস্।’
-‘একদম না।’

অভিনব অন্তির দুই গালে ফটাফট দুটো চুমু খেয়ে বসে।অন্তি হা হয়ে যায় এই কান্ড আর বলে,
-‘কন্ট্রোল ইওরসেল্ফ অভি এটা একটা ইয়ট।’
-‘ইয়াহ বাট এটা আমাদের।আমাদের ডিস্টার্ব করার জন্য আজ এখানে কেউ নেই মাই Black Swan।মিউজিক প্লিজ।’
সঙ্গে সঙ্গে বেজে উঠে একটি ইংরেজি সফ্ট মিউজিক।অভিনব অন্তির একটা হাত নিজের কাঁধে রেখে কানের কাছে গিয়ে ফিসফিস করে বলল,
-‘ফিল দ্যা মিউজিক এন্ড ইওর লাভ।’
অন্তি কানের কাছের এই ফিসফিস শব্দে একটু কেপে উঠে।অভিনব মিউজিক সঙ্গে ওর সঙ্গে কাপল ডান্স করছে।অন্তি নিজ থেকে কোনো মুভমেন্ট করছে না অভিনব যেভাবে ওকে ধরে আছে তাতে ও নড়ার শক্তি হারিয়ে ফেলেছে।শরীরে আলাদা একটা শিহরণ বয়ে যাচ্ছে তার।অভিনব আবারও অন্তির কানের কাছে যায়।এবার তার ঠোঁট জোড়া অন্তির কানকে ছুঁয়ে দেয়।অন্তি অভিনবর কোর্ট খামচে ধরে একটা ঢোঁক গিলে।অভিনব হাসে এরপর কানে একটা গভীর চুমু খেয়ে বলে,
-‘সাথে থেকো প্রিয়।’
অভিনব এবার সোজা হয়ে দাঁড়ায় অন্তির চোখে চোখ রাখে দুই গালে হাত রাখে।অন্তি কিছু বলতে চাইছে তাই হয়তো তার ঠোঁট কাঁপছে।কিন্তু সেই ঠোঁট জোড়ার ফাঁক থেকে সেই ভয়ংকর মিষ্টি আওয়াজের কোনো শব্দ বেরিয়ে আসছে না।

তবে এই কেঁপে ওঠা ঠোঁটগুলো অভিনবকে বেশ টানছে।অভিনব আর নিজেকে আটকায় না।সম্পূর্ণ সজ্ঞানে সেই ঠোঁট জোড়ার ভাঁজে নিজেকে ডুবিয়ে দেয়।অন্তি কিছুক্ষণ স্থির হয়ে বোঝার চেষ্টা করলো তার সাথে কি ঘটেছে।সে আজ নিজেকে এই অসভ্য ছেলেটার এই অসভ্য অনুভূতি থেকে দূর করতে চায় না।নিজের ভেতরের অসভ্য প্রেমিক সত্তাটাকে যদি অভিনব বের করে আনতে পারে তবে অন্তি কেন এই কাজ থেকে বিরত থাকবে।অন্তি অভিনবর চুল আঁকড়ে ধরে পাল্লা দিয়ে কিস করতে থাকে অভিনবকে।
কিছুক্ষণ পর দুজন দুজনের ঠোঁট ছেড়ে দাঁড়ালেও একে অপরকে ছেড়ে দাঁড়ায় না।দুজনেই হাপাচ্ছে যেন কয়েকশো মাইল পথ হেঁটেছে তারা।অভিনব বলল,
-‘এটা কি আমাদের হানিমুন?’
-‘আপনার কি মনে হয়?’
-‘দেখো নিউলি ম্যারিড কাপলদের জন্য সবকটা দিন হানিমুন।মে আই?’
অন্তি মাথা নিচু করে হ্যা বোধক মাথা নাড়ায়।অভিনব অন্তিকে কোলে তুলে নিয়ে বলে,
-‘এর আগে তোমাকি কোলে নিয়ে মনে হয়েছিল একটা তুলার বস্তা কোলে নিয়েছি তবে আজ আর তা মনে হচ্ছে না।’
-‘কেন?আমার ওজন বেড়ে গেছে নাকি?’
-‘উঁহু এই জামাটা তোমার থেকে বেশি ভারি।তোমার আসল ওজনটা এই গাউন খুললে বোঝা যাবে।’

অন্তির মুখ লজ্জায় লাল হয়ে যায়।লোকটা এখনই ওকে কতো ভয়ানক কথা বলছে।না জানি আগামী দিনগুলোতে আরো কতো ভয়ংকর কথা বলবে।অন্তি অভিনবর বুকে জোরে কিল মেরে হেসে বলল,
-‘নির্লজ্জ আপনি।’
-‘এই নির্লজ্জ লোকটার বউ তুমি।’
অভিনব অন্তিকে নিয়ে ইয়টের ভেতরের রুমের দিকে পা বাড়ায়।আজ তারা ভালোবাসার নতুন এক অধ্যায়ের সূচনা ঘটাতে চলেছে।রাতের গভীরতার সাথে সাথে সাথে তারা একে অপরের আরো গভীরে মিশে যায়।সমুদ্রের মাঝে থাকা ইয়টের ভেতরের তরুণ তরুণী ভালোবাসার সাগরে ডুব দেয়।

সারিকা আর শুভ্র পঞ্চগড় এসে পৌছেছে পাঁচ ঘন্টা হয়েছে।দুজনেই পাহাড়ের উপরে শুভ্রর বন্ধুর ফার্ম হাউজে অবস্থান করছে।শুভ্রর এই বন্ধুর নাম সাদ সে বিবাহিত স্ত্রী সমেদ এখানে কিছুদিনের জন্য বেড়াতে এসেছে শুভ্রর আসার খবর শুনে।সাধারণত সে শহরের দিকে থাকে নিজের একটা বাড়ির ফ্লাটে।
সবাই সন্ধ্যায় বসে আড্ডা দিচ্ছে।সারিকার সাদের ওয়াইফ তৃণাকে ততটা পছন্দ হয়নি।মেয়েটা কেমন যেন অহংকার করে থাকে।তবুও সারিকা এসব নিয়ে মাথা ঘামায় না তারা কাজ করতে এসেছে কাজ শেষ করে নিজেদের আসল অবস্থানে ফিরে যাবে।
সবাই আটটার মধ্যে খাওয়া দাওয়া শেষ করে নিজেদের ঘরে যাওয়ার জন্য পা বাড়ায়।সারিকা আর শুভ্রর ঘর পাশাপাশি সারিকার।সারিকা শুভ্রর পাশে পাশে হাঁটতে হাঁটতে বলল,
-‘শুভ্র আমরা কি কোনো হোটেল বা মোর্টেলে শিফ্ট হতে পারি না?’
-‘কেন?’
-‘আ,,আমার এখানে অস্বস্তি ফিল হচ্ছে।আসলে অন্য কারো বাসায় থাকাটা আমার আন ইজি ফিল হওয়ার কারণ।’
শুভ্র দাঁড়ায় সারিকার দিকে তাকিয়ে সারিকার দুই কাঁধে হাত রেখে আশ্বস্ত করে বলল,

-‘তোমার যদি সমস্যা মনে হয় এখানে থাকতে তবে আমি যত দ্রুত সম্ভব আমাদের জন্য অন্য একটি জায়গার ব্যবস্থা করবো।তুমি চিন্তা করো না।তাছাড়া আমি প্রথমে হোটেলেই রুম বুক করতে চেয়েছিলাম কিন্তু সাদ আমার আসার খবর শুনে তার ফার্ম হাউজে থাকার জন্য এতো ফোর্স করলো যে আমি না করতে পারলাম না।’
-‘ওহ্।’
শুভ্র মুচকি হেসে বলল,
-‘এবার একটু হাসো।’
-‘ওকে।’
সারিকা মুচকি হাসলো।শুভ্র বলল,
-‘দ্যাটস লাইক মাই গার্ল।এবার রুমে গিয়ে ঘুমিয়ে পড়ো।’
দুজনের মাঝে আর কোনো কথা হলো না।দুজনে দুজনের রুমে গিয়ে ঘুমিয়ে পড়লো।
সারিকার লাল শাড়ি পড়ে একটা পাহাড়ে দাঁড়িয়ে আছে তখনই পেছন থেকে কেউ ওকে ডাক দেয়।সারিকা পেছনে ঘুরে কাউকে দেখে না।আবার পাহাড়ের কোন ঘেঁষে দাঁড়ায় হঠাৎ ওকে কেউ পেছন থেকে ধাক্কা দেয়।সারিকা পড়ে যেতে নিয়েও পড়ে না একটা গাছ ধরে আবারও সোজা হয়ে দাঁড়ায়।সারিকা পাশ ঘুরে তাকিয়ে অবাক হয় তৃণা তার দিকে তাকিয়ে অহেতুক হাসছে।সারিকা কিছু বলতে যাবে তার আগেই তৃণা আবার ওকে ধাক্কা দেয় সারিকা চিৎকার দেয় সাহায্যের জন্য আর পাহাড় থেকে পড়ে যায়।পড়ে যাওয়ার সময় দেখে তৃণা ওকে বলছে,’বিদায়।’
সারিকা উঠে বসে ঘুম থেকে।সে ঘামছে অনেক বেশি ঘামছে।সতার হৃদয় ভয়ে লাফাচ্ছে এখনো সেই দৃশ্যটা মনে করে।এতো ভয়ংকর স্বপ্ন সে বিগত কয়েক বছরে কখনো দেখেনি।সারিকার পানির তৃষ্ণা পায়।টেবিলের দিকে তাকিয়ে দেখে জগে পানি নেই।কিন্তু পানি খাওয়াটা তার জন্য জরুরি।সারিকা জগ নিয়ে উঠে দাঁড়ায় ডাইনিং রুমে গিয়ে পানি আনার জন্য।সারিকা ডাইনিং রুমের কাছে যায় তখনই দেখে কিচেনের বাতি জ্বালানো।তৃণার গলার শব্দ শোনা যাচ্ছে।তৃণা কাউকে রাগী গলায় বলল,
-‘তুমি নিজের উড বিকে এখানে নিয়ে আসার সাহস কিভাবে করলে?আমি কি ঐ মেয়েটার থেকে কোনো অংশে কম ছিলাম।তোমার পেছনে জাপানে থাকাকালীন আমি তিন বছর ঘুরেছি আর তুমি আমাকে বারংবার রিজেক্ট করেছো।এখন ঐ বড়লোক বাবার মেয়ের সাথে প্রেম করছো।বুঝি না ভেবেছো সবটাই টাকার খেলা।’
শুভ্রর গলার শব্দ শোনা যায়।শুভ্র রেগে বলল,
-‘তুমি কি ভাবো আমার টাকার কমতি আছে?সারিকা আমার প্রথম ভালোলাগা ছিল আমার কিশোর বয়সে আর এখন সে আমার প্রথম এবং শেষ ভালোবাসা।ওর নখের যোগ্যও তুমি না।দেখেছো শুধুমাত্র কটা টাকার মালিক হয়ে তোমার মাঝে কি অহংকার আর ঐ মেয়েটা নিজের একটা কম্পানি থাকা সত্তেও সব বিলাসিতা রেখে নিজের প্যাশনের দিকে ছুটছে।তার ভেতরে নিজের অর্থ কিংবা রূপের বিন্দুমাত্র অহংকার নেই।’

সারিকা বুঝতে পারছে না সে দাঁড়িয়ে থাকবে না কি চলে যাবে।শুভ্র আর তৃণার মাঝে এখনো তর্কবিতর্ক শোনা যাচ্ছ।সারিকা আর কিছু না ভেবে নিজের ঘরের দিকে পা বাড়াল এখানে আর দাঁড়িয়ে থাকতে ইচ্ছা করেছ না ওর।সারিকা রুমে গিয়ে দরজা লাগিয়ে বসে পড়ে বিছানার উপরে।কিছুক্ষণ পর কানে দরজা লাগানোর শব্দ আসে।শুভ্র হয়তো নিজের ঘরে এসেছে।সারিকর কাছে এখন তৃণার এই পর্যন্ত ওর সঙ্গে অদ্ভুত ব্যবহার করার তাৎপর্যটা একেবারে কাঁচের মতো স্বচ্ছ।
আজ স্বপ্নের মাধ্যমে আল্লাহ্ হয়তো ওকে সাবধান করে দিয়েছে।তৃণার সারিকার প্রতি যে মনোভাব তাতে এই স্বপ্ন সত্যি হতে বেশি সময় লাগবে না।সারিকা বিড়বিড় করে বলল,

-‘নাহ্ এই বাড়িতে আর থাকা চলবে না।ধুরর! প্রেমটা এখনো শুরুই হলো না ঠিকমতো তার আগেই ভিলেনের আবির্ভাব ঘটেছে।শুভ্রকে তো আমি দেখে নেব(রেগে) ও কি আমাকে নিজের এই পাগল ভক্তর কথা আগে বলতে পারতো না?ওর আলুর ভর্তা বানিয়ে তারপর আমার শান্তি হবে।ছেলে শত্রুর চেয়ে মেয়ে শত্রু বেশি ভয়ানক।মেয়েরা নিজেদের মাসুম চেহারার জাদু দিয়ে অনেক কালো কাজ করতে পারে।কথায় আছে না,,,মেয়েরা যেমন গড়তে পারে তেমন ভাঙ্গতেও পারে।এই তৃণা যদি আমাদের সাথে উল্টাপাল্টা কিছু করে তবে আমি একে গুলি করে উড়িয়ে দেব।’
সারিকা এসব আকাশ পাতাল ভাবতে ভাবতে ঘুমিয়ে পড়লো।
পরেরদিন সারিকা আর শুভ্র তাড়াহুড়ো করে বেরিয়ে গেল সাদের বাসা থেকে।কারণ হিসেবে তারা বলল,
-‘এখান থেকে আমাদেরকে কাজের জায়গাটা একটু দূরে হয়ে যায় তাই আর কি আমরা হোটেলে থাকব।’
শুভ্র আর সারিকা পাহাড় থেকে নেমে রোডে এসে ড্রাইভারকে গাড়ি আনার জন্য ফোন দেয়।
সারিকা ভ্রু কুঁচকে ঠোঁট কামড়ে মাটির দিকে তাকিয়ে আছে।শুভ্র বলল,
-‘আমরা কোন হোটেলে যাচ্ছি?’
-‘আমি এখনো কোনো হোটেল বা রিসোর্ট বুক করি নি।’
শুভ্র মাথায় আহাত দিয়ে বলল,
-‘সর্বনাশ তুমি হোটেল না বুক করেই এভাবে আমাকে কেন বললে সাদের বাসা ছাড়তে?
সারিকা হাতের ব্যাগটা গাছের উপর রেখে শার্টের হাতা উঠাতে উঠাতে দাঁতে দাঁত চেপে বলল,
-‘সর্বনাশ তো আমি আপনার করবো।’

অন্তি দুপুরের তীব্র রোদের থেকে বাঁচার জন্য মুখের উপর হাত দিয়ে ঢেকে রেখে দাঁড়িয়ে আছে শপিংমলের বাইরে দাঁড়িয়ে আছে।অভিনব ওকে দাঁড় করিয়ে রেখে পার্কিং লট থেকে গাড়ি আনতে গেছে।অন্তি অনুভব করছে হিজাবের ভেতরে তার গলা ইতিমধ্যে ঘেমে গেছে।গতকাল অভিনব তাকে কম্পানির ইভেন্ট এর ব্যাপারে মিথ্যা বলেছিল তবে আজ সত্যিই একটা ইভেন্ট আছে আর সেখানে ওকেও যেতে হবে অভিনবর সাথে।তাই অভিনব ধরে বেঁধে এখানে শপিং করতে ওকে নিয়ে এসেছে।অন্তি বুঝতে পারছে না ইভেন্টে সে নাহয় একটা জামা পড়বে তাহলে এতোগুলো জামা কেনার কি দরকার ছিল।হঠাৎ অন্তির চোখ যায় তার থেকে ঠিক দুই ফুট দূরে দাঁড়িয়ে থাকা একটি মেয়ের দিকে।মেয়েটার চুলগুলো সোনালি কোলে একটি বাচ্চা ছয় বা সাত মাসের।মেয়েটা কালো চশমা পড়ে আছে আর ফোনে মালেশিয়ান ভাষায় কারো সঙ্গে তীব্র ঝগড়ায় লিপ্ত।অন্তি শুধু ধারণা করলো যে এটা মালেশিয়ান ভাষা কারণ এখানকার বেশিরভাগ মানুষ মালাই(Malay),ইংরেজি অথবা ম্যান্ডারিয়ান (চীনাদের ভাষা) এগুলোতেই কথা বলে।মেয়েটা বলছে,

-‘Sekiranya anda tidak datang ke sini sekarang, saya akan berpisah dengan anda।(তুমি যদি এই মুহুর্তে এখানে না আসো তবে আমি আমি তোমার সাথে ব্রেকাপ করবো)
অন্তি বুঝলো না মেয়েটার কথা শুধু ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে রইলো।কিছুক্ষণ বাদে অভিনব এলো গাড়ি নিয়ে।অভিনব নেমে অন্তির দিকে তাকিয়ে হেসে বলল,
-‘সরি লেট করার জন্য।তুমি ব্যাগগুলি আমাকে দেও আর গাড়িতে গিয়ে বসো।’
অন্তি এখনো মেয়েটার দিকে তাকিয়ে আছে।সে বলল,
-‘আচ্ছা অভি ঐ মেয়েটা কি বলছে?’
অভিনব হাসতে হাসতে অন্তির দৃষ্টি অনুসরণ করে বলল,
-‘কার কথা বলছো?’
কিন্তু মেয়েটার দিকে তাকাতেই অভিনবর হাসি চলে গেশ।সে ফ্যাকাশে মুখে অন্তির দিকে তাকিয়ে বলল,
-‘সে যা বলছে তা শোনাটা জরুরি না তোমার জন্য চলো।’
অভিনব অন্তির হাত ধরে টেনে গাড়িতে বসাতে যাবে তখনই অন্তি হাত ছাড়িয়ে নিয়ে দাঁতে দাঁত চেপে বলল,
-‘অভি হচ্ছেটা কি?পাবলিক প্লেসে এরকম করবেন না প্লিজ সবাই দেখছে।’

অভিনব এবার শান্ত চোখে তাকিয়ে বলল,
-‘ওকে করবো না এবার গাড়িতে উঠো।’
অন্তি বড় বড় পা ফেলে গাড়িতে গিয়ে বসে আর গাড়ির দরজা ঠাস করে লাগিয়ে দেয় অনেকটা রেগে থাকার কারণেই গাড়ির প্রতি তার এমন ক্ষোভ।অভিনব দীর্ঘশ্বাস ফেলে যেই গাড়িতে বসতে যাবে তখনই পেছন থেকে কেউ ওকে ডেকে উঠে স্পষ্ট বাংলায়।
-‘অভি তুমি কি আমাকে চিনতে পারো নি?’
অভিনব পেছনে ঘুরে।সেই সোনালী চুলের মেয়েটি আর কেউ নয় মারিহা।অভিনব অপরিচিতর মতো বলে,
-‘সরি হু আর ইউ?’
মারিহা চোখের চশমা খুলে অভিনবর দিকে তাকিয়ে হেসে বলল,
-‘অভি ইটস্ মারিহা ইওর এক্স।তুমি আমাকে ভুলে গেছো রিয়েলি?’
অভিনব মারিহার নীল চোখে তাকায়।সে অন্তিকে সত্যিকারের ভালোবাসতে পেরেছে তাই হয়তো আজ এই নীল চোখে তাকিয়ে নিজের মনে মারিহার প্রতি কোনো অনুভূতির আবিষ্কার করতে পারছে না।ভালোবাসা তো দূরের কথা আজ এর প্রতি ঘৃণাও আসছে না।অভিনব উপলব্ধি করলো সে সত্যিই পুরনো সবকিছু পেছনে ফেলে সত্যিকারের ভালোবাসার মানুষকে নিয়ে নতুন জীবন শুরু করতে পেরেছে।তাই মারিহা নামক ব্যক্তির সাথে থাকাকালীন সময়ের কোনো স্মৃতিই সঠিক মনে করতে পারছে না।মনের গভীরে থাকা কোনো অনুভূতি এখন মারিহার প্রতি তার আসছে না।ভালোবাসা আর ঘৃণা এই দুটো অনুভূতির অস্তিত্ব মনের গভীরেই তো থাকে।

অভিনবর শুধুমাত্র বিরক্তি আসছে মারিহার প্রতি খুবই সাধারণ একটা বিরক্তি যেটা একজন অপরিচিত ব্যক্তির সাথে কথা বলার সময় সকলেই বোধ করে।অভিনব ভ্রু কুঁচকে বলল,
-‘ওহ তুমি সরি আমি তোমাকে ঠিক চিনতে পারি নি।আমাদের কথা বলার কোনো কারণ আমি দেখছি না,বাই।’
অভিনব যেতে চাইলে মারিহা প্রশ্ন ছুঁড়ে দেয় ওর দিকে,
-‘বিয়ে করেছো?ওটা তোমার ওয়াইফ?’
-‘ইয়াহ সি ইজ মাই সুইট হার্ট ওয়াইফ।তোমার বিয়ে হয়েছে?এটা তোমার বেবি?যদিও আমার জানার ইচ্ছে নেই তুমি আমার বিষয়ে প্রশ্ন করলে তাই আমি তোমাকে প্রশ্ন করলাম।’
মারিহা কথাটা শুনে মাথা নিচু করে ফেলল এরপর কিছুটা লজ্জিত ভঙ্গিতে বলল,

-‘হ্যা এটা আমার আর আমার বয়ফ্রেন্ডের বেবি।আমরা লিভ ইন করছি।’
-‘ওহ গুড বাই।’
অভিনব আর কিছু না বলে চলে গেল।মারিহা চোখের জল ফেলল অভিনবর যাওয়ার দিকে তাকিয়ে।আজ অভিনবর মতো একজন মানুষের স্ত্রী সে হতে পারতো।অভিনবর সম্মানের পাত্রী হওয়ার সুযোগটা তার কাছেও ছিল কিন্তু সে সেটা পায়ে ঠেলে দিয়ে নিজের কপাল নিজে খেয়েছে।কিছুক্ষণের মাঝে অভিনব চলে গেল।মারিহার বয়ফ্রেন্ড এন্ড্রে এলো তার নিউ গার্লেফ্রেন্ড এর সাথে।এন্ড্রে কার থেকে নেমে মারিহার থেকে নিজের ছেলেকে কেড়ে নিয়ে নিজের নতুন প্রেমিকার কাঁধে হাত রেখে বলল,
-‘Apa yang anda akan putus dengan saya, saya berbuka dengan anda(তুমি আমার সাথে কি ব্রেকাপ করবে আমিই তোমার সাথে ব্রেকাপ করছি)’
মারিহা অনেক বিনতি করলো তার সন্তানকে ফিরিয়ে দেওয়ার জন্য কিন্তু এন্ড্রে শুনলো না।সে হুমকি দিয়ে গেল বাচ্চাকে কেড়ে নেওয়ার চেষ্টা করলে সে নিজের ক্ষমতা দিয়ে মারিহাকে অনেক বাজে পরিস্থিতিতে ফেলবে।মারিহা ছেলের যাওয়ার দিকে অশ্রু ভেজা চোখে তাকিয়ে থাকে ছেলে এবং প্রেমিকের যাওয়ার দিকে।যত যাইহোক ও তো একজন মা।মারিহার আজ নিজের বাবা মায়ের কথা মনে পড়ছে।ওনারা মারিহার জন্য না জানি কত কষ্ট করছেন।নিজের সন্তান হারালে কেমন লাগে তা আজ সে নিজেও অনুভব করতে পারছে।

অভিনব গাড়িতে বসে ব্লুটুথ কানে দিল আর ড্রাইভ করতে থাকলো।অন্তি মুখ ভার করে বসে আছে কারণ সে তখন অভিনবর সেই আচরণে বেশ রেগে গেছে।অভিনব ফোনে সারিকাকে বলল,
-‘হ্যা সারিকা অন্তিকে আমি নিজের ভালোবাসার কথা বলে দিয়েছি।’
অন্তি অভিনবর দিকে চোখ বড় বড় করে তাকাল।অভিনব অন্তির দিকে তাকিয়ে একটু হেসে বলল,
-‘ভালোবাসার কথা বলার পর সেও আমাকে ভালোবাসে বলে স্বীকার করেছে।,,,এরপর কি হয়েছে সেটাও শুনতে চাস?’
অন্তি মুখ হাত দিয়ে এমনভাবে তাকায় যেন চোখ কোটর থেকে বেরিয়ে আসবে।অভিনব কিছু বলতে যাবে তার আগেই অন্তি ওর মুখ চেপে ধরে।অভিনব গাড়িটা কোনোমতে একটা সাইডে দাঁড় করিয়ে দেয় কারণ অন্তি ওর প্রায় উপরে এসে পড়েছিল যার কারণে একটা দুর্ঘটনা ঘটতে ঘটতে ঘটেনি।অন্তি রেগে চেঁচিয়ে বলল,

-‘এসব কি বলছেন আপনি আপুকে?লজ্জা শরম সব কি খেয়ে বসে আছেন নাকি?’
অন্তি অভিনবর মুখ এখনো চেপে ধরে রেখেছে অভিনব তাই ওকে হাত মুখ থেকে সরানোর জন্য ইশারা করলো।অন্তি সরালো হাত কিন্তু এখনো সে অনেকটা ঝুঁকে রাগী দৃষ্টি নিক্ষেপ করে তাকিয়ে আছে অভিনবর পানে।
অভিনব নিজের মোবাইল হাতে নিয়ে সারিকার ফোন কল কেঁটে দিয়ে বলল,
-‘এভাবে রেগে আছো কেন?আমি কি এমন কথা বলেছি?আচ্ছা এখন একটু স্নিগ্ধ দৃষ্টিতে তো তাকাবে আমার দিকে আমার অবস্থা এমনিতেই বেহাল আর তুমি এভাবে তাকিয়ে থাকলে হয়তো মাঝরাস্তায় কিস করে বসবো এর বেশি কিছুও হতে পারে।এমনিতে মনে রেখো এটা সিঙ্গাপুরের রাস্তা এখানে এসব নর্মাল তাই মনে রেখো আমি মজা করছি না।’
অন্তি দমে যায় অভিনবর কথায়।সে নিজের সিটে গিয়ে সুন্দরভাবে বসে।অভিনব বাঁকা হেসে বলল,
-‘কি ভয় পেয়ে গেলে নাকি?’
অন্তি ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে বলল,
-‘একদম না।আপনাকে ভয় পাওয়ার কোনো কারণ নেই।চলুন এবার বাসার রাস্তায় যাই।’
অভিনব ড্রাইভ করায় মনযোগ দিয়ে বলল,
-‘তুমি জানতে চাইলে না আমি সেই মেয়েটার সঙ্গে কেন এবং কি কথা বলছিলাম?’
-‘আমি জানি তো মেয়েটা বোধহয় আপনার এক্স তাই এতো কথা বললেন।’
অন্তি কথাটা সিরিয়াসলি বলে নি মজার ছলে বলেছে রেগে থাকার কারণে।কিন্তু অভিনব যখন ওকে এর হ্যা বোধক উত্তর দিল তখন ও একেবারে থতমত খেয়ে যাওয়ার মতো।
-‘হ্যা তুমি ঠিক ধরেছো সে আমার প্রাক্তন।নামটা নিশ্চয়ই বলতে হবে না!আমাদের মাঝে বেসিক কোনো কথা না জাস্ট ও আমাকে তোমার সম্পর্কে জিজ্ঞেস করেছে আর আমি বলেছি এটা আমার ওয়াইফ।’
অন্তি কিছু বলল না।ওর মনটা হঠাৎ করে খারাপ হয়ে গেল।কে হলো?তা ওর জানা নেই।অভিনব তো তার কাছে ব্যাপারটা লুকিয়ে রাখতে চায়নি সরাসরি বলে দিয়েছে তাহলে কষ্ট পাওয়ার কারণ কি?অন্তি নিশ্চিত অন্য কোনো লোক অভিনবর জায়গায় থাকলে প্রাক্তনের সঙ্গে দেখা হওয়ার ব্যাপারটা লুকিয়ে রাখতো।

সাথে থেকো প্রিয় পর্ব ৩৭

অন্তির মারিহার প্রতি জেলাস হওয়ার কোনো কারণ নেই।অভিনব একান্তই এখন ওর ভালোবাসার মানুষ।অন্তি মনে মনে বলল,
-‘ঐ মেয়েটার জন্য আমি কেন আপসেট হবো?অভি আমাকে ভালোবাসে আর ঐ মেয়েটা তার অতীত ছিল।,,,মারিহা টারিহার এখন হয়তো কোনো চিন্তা করবো না আমি ও মরতে যাক আমার কি?’
অন্তি হেসে অভিনবর দিকে তাকিয়ে বলল,
-‘আইসক্রিম খাব।’
-‘ওকে আমি আইসক্রিম পার্লারে কার থামাচ্ছি।’

সাথে থেকো প্রিয় পর্ব ৩৯

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.