সাথে থেকো প্রিয় পর্ব ৩৯
লেখক:রিয়ান আহমেদ
শুভ্র পিঠ ঘষতে ঘষতে সারিকার দিকে তাকিয়ে দাঁতে দাঁত চেপে দাঁড়িয়ে আছে।সারিকা গাড়ি আসতেই সেটাতে দ্রুত চেপে বসেছে শুভ্রকে ডাকছে না সে।শুভ্র নিজেই উঠে বসে ।সারিকা শুভ্রর থেকে কিছুটা দুরত্ব বজায় রেখে বসে আড়চোখে তাকায় শুভ্রর দিকে। একটু আগেই সে শুভ্রর পিঠে দুটো কিল মেরেছে।যেন তেন কিল নয় এমন ভাবে মেরেছে যে শুভ্র না পারছে সইতে আর না পারছে বলতে।বেচারা বলবেও কিভাবে ড্রাইভার চলে এসেছিল তখনই। তাই একের পর এক ঢোক গিলেই নিজের রাগটাকে উবে ফেলার চেষ্টা করছে।দুজনেই গাড়িতে উঠে বসে ড্রাইভারকে বলে একটা ভালো হোটেল বা কোটেজে নিয়ে যাওয়ার ব্যবস্থা করতে।
সারিকা এখানকার কাজ শেষ এখন হচ্ছে সারিকার কাজ শুধু বাকি।দুজনে সিদ্ধান্ত নিল বাস নিয়ে তেঁতুলিয়া যাবে।সেখানে গিয়ে একটা হোটেলে উঠবে এরপর কাঞ্চনজঙ্ঘা দেখতে যাবে।
সারিকার সিট শুভ্রর পেছনে আর শুভ্র সামনে বসেছে অন্য একজনের সাথে।সারিকার পাশে কে সারিকা এখনো জানে না।যে হওয়ার হবে এতো ভেবে লাভ নেই।সারিকা বাইরের দিকে চোখ রাখে কিছুক্ষণের মাঝেই বাস ছাড়বে শুধু সব প্যাসেঞ্জার আসার অপেক্ষা।সারিকার মনটা ভালো লাগছে না একটুও শুভ্র আজ দুইদিন ধরে ওর সাথে আগের মতো কথাবার্তা বলে না।সারিকা মনে মনে বলল,
-‘ও কি আমার উপরে একটু বেশিই রেগে আছে?,, তেঁতুলিয়া পৌছে সরি বলে দেব।বেচারা বোধহয় বেশিই ব্যাথা পেয়েছিল,,কিন্তু আমার কাছেও তো তার তৃণার ব্যাপারটা লুকানো উচিত হয়নি।শুভ্রর উচিত ছিল আমাকে আগেই তৃণা যে ওনার পাগলাটে ভক্ত এই বিষয়ে সতর্ক করে দেওয়া।’
সারিকার ভাবনার মাঝেই একটা অনাকাঙিক্ষত কন্ঠ তার ভাবনায় ছেদ ঘটায়।কেউ একজন খুশিতে উপচে পড়া কন্ঠে বলল,
-‘হেই সারিকা তুমি এখানে কিভাবে?’
আরও গল্প পড়তে আমাদের গুপ এ জয়েন হউন
সারিকা চমকে পাশে তাকায় কারণ এমন একটা স্থানে তার পরিচিত কেউ থাকতে পারে সেটা তার জানা ছিল না।মাথা ঘুরিয়ে নিজের পাশের সিটে তাকাতেই জিবরানের হাসি হাসি মুখটা চোখে পড়ে।সারিকা চোখ বড় বড় করে হেসে বলল,
-‘আরে জিবরান তুমি এখানে?’
হঠাৎ কেউ একজন লাফিয়ে উঠে পিছনে তাকায়।ব্যক্তিটা আর কেউ নয় শুভ্র।শুভ্র এতোটা সময় চোখ বন্ধ করে ছিল তার পাশের মেয়েটা এক নাগাড়ে ফোনে বকবক করছিল যা শুভ্রকে মাথা ব্যাথা দিচ্ছিল।কিন্তু সারিকার মিষ্টি কন্ঠে ‘জিবরান’ নামটা শুনতেই শুভ্রর সব মাথা ব্যাথা দৌড়ে পালিয়ে গেল।শুভ্র ঠোঁটের কোণে একটা অদ্ভুত হাসি ঝুলিয়ে বলল,
-‘হ্যালো মিস্টার জিবরান।’
জিবরানের গলা কাঠ হয়ে গেল শুভ্রর আওয়াজ শুনে।সে শুভ্রর দিকে একবার তাকিয়ে ছোট্ট করে বলল,
-‘হ্যালো মিস্টার শুভ্র।’
জিবরান সারিকার দিকে তাকিয়ে মুখ পানসে করে বলল,
-‘উনি এখানে কি করছেন?’
সারিকা কিছু বলতে চায় কিন্তু শুভ্র বলতে দেয় না।সারিকার বলতে চাওয়া কথাটা সে নিজেই বলে এর সাথে নিজের মনে সাজিয়ে রাখা কিছু কথাও বলে,
-‘আমরা একটা কাজে এসেছি।আপনার আসার অপেক্ষায় ছিলাম আসলে।,,আমি আর সারিকা একসাথে সিট পাইনি তাই অপেক্ষা করছিলাম সারিকার পাশের সিটের মালিক আসলেই সিট বদলে নেব।’
জিবরান কাট কাট গলায় বলল,
-‘কেন?যেই সিটে বসে আছেন সেটাতে বসে থাকলে কি কোনো সমস্যা হবে?’
শুভ্র গম্ভীর ভাবে মাথা নাড়িয়ে বলল,
-‘অবশ্যই সমস্যা হবে আসলে আমাদের জরুরি একটা কাজ ছিল দুজন একসাথে না বসলে কাজটা আসলে করা যাচ্ছে না।’
সারিকা হা হয়ে তাকিয়ে থাকে শুভ্রর দিকে।কিসের কাজ?ওর জানা মতে শুভ্রর কোনো কাজ তো এই মুহুর্তে বাকি নেই।
জিবরান আর কিছু বলতে পারে না সারিকার দিকে তাকিয়ে একটা শুকনো হাসি দিয়ে শুভ্রর সঙ্গে সিট অদলবদল করে নেয়।জিবরান ঢোক গিলে পকেট থেকে একটা রুমাল বের করে কপালের ঘাম মুছে আগের কথা মনে করে।
সারিকার সাথে রেস্টুরেন্টে যেদিন লাঞ্চ করেছিল সেদিন রাতের ঘটনা।জিবরান নাইট ক্লাব থেকে বের হয়ে নিজের গাড়ির দরজায় চাবি লাগিয়ে যেই দরজা খুলতে যাবে তখনই এক জোড়া হাত ওর গলা চেপে ধরে।লোকটা ভীতু না তাই ল্যামপোস্টের আলোতে নিয়ে দাঁড় করায় ওকে।জিবরান সেদিন শুভ্রর লাল চোখ মুখ দেখে প্রথম তো ভেবেছিল শুভ্রকে কোনো জ্বীনে ধরেছে না কি।শুভ্র জিবরানের গলায় একটা ধারালো ছুরি ধরে অদ্ভুত একটা হাসি দেয়।এই হাসির অর্থ হয়তো যার উপরে ব্যক্তিটার রাগ একমাত্র সেই ধরতে পারবে।জিবরানের উপরে শুভ্রর রাগ ছিল তাই সে ধরে ফেলেছে হাসির অর্থ।শুভ্র রাগে কাঁপতে কাঁপতে বলল,
-‘ তুই সারিকার সাথে আজকের পর কোনোদিন একান্ত সময় কাটানোর কথা চিন্তাও যদি করিস তবে তোর গলায় আমি এখন ছুরিটা শুধু ধরে তখন একেবারে চালিয়ে দেব।কাঁটা মুরগির মতো ছটফট করতে না চাইলে আমার ভালোবাসার মানুষ থেকে দুরত্ব বজায় রেখে চলবি।,,এন্ড এন্ড এই কথাগুলো যেন তোর আর আমার মাঝেই শুধু থাকে সারিকা যদি এসব জানে তবে আমি তোকে জিন্দা কবর দেব।’
কথাগুলো বলে শুভ্র জিবরানের দিকে তাকাতেই দেখে বেচারা ইতিমধ্যেই ‘হ্যা ঠিকাছে,ঠিকাছে’ করছে।শুভ্র চলে যেতে নেয় সেখান থেকে এরপর আবার ফিরে আসে আর জিবরান বাম হাত ধরে।
জিবরানকে কিছু ভাবার সুযোগ না দিয়ে হাতের তালুতে ছুরি দিয়ে আঘাত করে।সঙ্গে সঙ্গে চামড়া ফেটে রক্ত বের হতে শুরু করে জিবরানের হাত থেকে।জিবরান ব্যাথা হাত চেপে ধরে কুঁকড়ে উঠে।শুভ্র চলে যেতে যেতে বলে,
-‘এই আঘাতটা দিলাম যেন আমার সতর্ক বার্তাটা অহেতুক মনে না হয়।শুভ্র শুধু বলেই না করেও দেখাতে পারে এটাই তার জলজ্যান্ত প্রমাণ।’
জিবরান বাস্তবে ফিরে আসে।বাস চলতে শুরু করেছে এর মধ্যেই।জিবরানের মনে সারিকার জন্য ভালো লাগা যতটুকু ছিল তা শুভ্রর কথায় সেদিন ভয়ে কবর দিয়ে ফেলেছে সে।তাছাড়া সারিকা জিবরানকে কখনো দুই টাকার দাম দিবে না এটাও জিবরান জানে।জিবরান হচ্ছে অনেকটাই ধনীর দুলালদের মতো যাদের সারিকা পছন্দ করে না।এদের বন্ধু বানানো গেলেও জীবনসঙ্গী বানানোটা অসম্ভব প্রায়।
শুভ্র চোখ বন্ধ করে শুয়ে আছে সিটে হেলান দিয়ে।সারিকা শুভ্রর কাঁধে ধাক্কা দিয়ে আস্তে করে বলল,
-‘আপনি আমার দিকে তাকান আমার কথা শুনুন।’
শুভ্র সাথে সাথে তাকায়। বাসের প্রতি সিটের সঙ্গে পর্দা আছে শুভ্র পর্দা ঠিক করে দিয়ে বলল,
-‘বলো কি বলবে?’
-‘কিসের কাজের কথা বলছিলেন আপনি?’
-‘নতুন নতুন প্রেম হলে প্রেম করাটাই কপোত কপোতিদের একমাত্র কাজ হয়।আমরাও এখন প্রেম করবো।তুমি আবার আমাকে খারাপ লোক ভেবো না যে বিবাহের আগে প্রেমিকার সুযোগ নিতে চায় আমি তো শুধু তোমার হাতের আঙ্গুলের ভাঁজে নিজের আঙ্গুল রাখবো তোমার মাথাটা নিজের কাঁধে রাখবো।’
শুভ্র কথাটা বলতেই সারিকা হেসে দেয়।শুভ্রর নিজের থেকে কিছু করতে হয় না সারিকাই ওর কাঁধে মাথা রাখে।সারিকা হেসে বলল,
-‘আপনি এতো ভালোবাসেন কেন?’
-‘জানি না।তুমি এতো ভালোবাসো কেন আমাকে?’
-‘কারণ আপনি আমাকে ভালোবাসেন।’
-‘আমি যদি তোমাকে ভালো না বাসতাম তবে কি তুমি আমায় কখনো ভালোবাসতে না?’
-,’,,,,উত্তরটা আমার কাছে এই মুহুর্তে নেই।পরে একদিন ভেবে বলবো।আচ্ছা আপনার কাছে ভালোবাসা মানে কি?’
-‘আমার কাছে ভালোবাসা মানে আমার মা-বাবা,বোন, পিটুশ,দুলাভাই,তুমি।তোমরা আমার জীবনে ভালোবাসার আরেক নাম।ভালোবাসাটা একটা পবিত্র বন্ধন তাই একে অপবিত্র করলে এর সৌন্দর্য নষ্ট হয়ে যায়।আমি চাই আমাদের বিয়েটা যত দ্রুত সম্ভব সম্পন্ন করতে যেন কেউ আমাদের সম্পর্কের দিকে আঙ্গুল না তুলতে পারে,,,এমনিতেও তোমার থেকে দূরে থাকাটা আমার জন্য অনেক কষ্টদায়ক।’
-‘আমিও চাই।’
সারিকা কথাটা কিছুটা লজ্জা পেয়ে বলল।শুভ্র দুষ্টু হাসি দিয়ে বলল,
-‘কি চাও?’
-‘জানি না।অসভ্য লোক শুধু শুধু লজ্জা দেন আমাকে।’
-‘আমি অসভ্য?আমার চেয়ে সভ্য ব্যক্তি আর কে আছে বলো তো।একজন সুন্দরী রমণীর এতোটা কাছে থেকেও আমি কিছুই করছি না তবুও আমি অসভ্য?এই পৃথিবীতে ভালো মানুষের দাম নাই(হতাশ হয়ে)।বিয়ের পর বুঝিয়ে দেবো অসভ্য কাকে বলে?এবং কত প্রকার ও কী কী?’
শুভ্র কথাটা বলে হাসে।সারিকা বিমুগ্ধ হয়ে সেই অসাধারণ হাসি দেখে।
অন্তি অভিনবর হাতে হাত রেখে রেড কার্পেটে পা রাখে।দুজনকে অভ্যর্থনা জানাতে এগিয়ে আসে কিছু বিশিষ্ট ব্যক্তিগন।অভিনব অন্তিকে সবার সঙ্গে পরিচিত করায়।
অভিনব অন্তির হাত এমনভাবে ধরে আছে যেন অন্তি একটা বাচ্চা।অন্তিকে অরেন্জ জুস দিয়ে অভিনব বলল,
-‘আমার থেকে না জিজ্ঞেস করে কোনো পানীয় খাবে না ওকে?’
অন্তি ভ্রু কুঁচকে বলল,
-‘কেন?খেলে কি মহাভারত অশুদ্ধ হয়ে যাবে?’
-‘খাবে না মানে খাবে না কারণটা হচ্ছে এখানে এমন অনেক পানীয় আছে যেগুলো নেশা ধরায়।তুমি এগুলো কনজিউম করলে নিজের মস্তিষ্কের উপর নিজের নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে বসে থাকবে।’
-‘হুহ।ঠিকাছে ঠিকাছে আমি এসবে হাত লাগাচ্ছি না।’
-‘তুমি এখানেই দাঁড়াও আমি একটু ওদিকটা থেকে আসছি।’
-‘ওকে।
অভিনব চলে যেতেই অন্তি আশেপাশে ঘুরে দেখলো।ভালো লাগছে না ওর এখানে সব ভিনদেশি মানুষ।সে বড় হলরুমের সাইডে একটা বারান্দা দেখতে পায়।বারান্দাটায় গেলে কেমন হয়?বাইরের দৃশ্যটাও উপভোগ করা যাবে।কথাগুলো ভাবতে ভাবতেই অন্তি সেদিকে পা বাড়াতে যেই যাবে তখনই অভিনব এসে দাঁড়ায় ওর সামনে।অন্তি ঠোঁট উল্টে বিরক্তি নিয়ে যেই কিছু বলতে যাবে তার আগেই অভিনব ওর হাত ধরে টেনে ডান্স ফ্লোরে নিয়ে।সব কাপলরা দাঁড়িয়ে আছে।অভিনব মুচকি হেসে বলল,
-‘কাপল ডান্স হবে এংগ্রিবার্ড আর ইউ রেডি।’
অন্তি মিনমিনে গলায় বলল,
-‘আবার ডান্স! আমি পারি না তো।’
-‘আমি কি করতে আছি।’
মিউজিক শুরু হয় সবাই নিজের সঙ্গীর চোখে চোখ রেখে নাচতে থাকে।
Need Your Love”
(with Calvin Harris)
I need your love
I need your time
When everything’s wrong
You make it right
I feel so high
I come alive
I need to be free with you tonight
I need your love
I need your love
I take a deep breath every time I pass your door
I know you’re there but I can’t see you anymore
And that’s the reason you’re in the dark
I’ve been a stranger ever since we fell apart
And I feel so helpless here
Watch my eyes are filled with fear
Tell me do you feel the same
Hold me in your arms again
I need your love
I need your time
When everything’s wrong
You make it right
I feel so high
I come alive
I need to be free with you tonight
I need your love
I need your love(বাকিটুকু নিজেরা শুনে নিন।)
অন্তি অভিনবর চোখে নিজেকে হারিয়ে ফেলেছে।সে চায় না নিজেকে খুঁজে পেতে।অভিনব নিজের অর্ধাঙ্গিনীর চোখের সাগরে ডুবেছিল প্রেমে পড়ার শুরুতেই।তখন তো তাদের বৈবাহিক জীবনে ভালোবাসার অস্তিত্বই ছিল না।তাদের প্রেম,ভালোবাসা এসবের শুরু তো এই খয়েরি চোখে চাহুনি থেকেই।অসাধারণ সুন্দর এই চোখ তার সাথে এই চোখের মালিকিনটিও অতি অসাধারণ সুন্দর।
অভিনব অন্তিকে দাঁড় করিয়ে রেখে নিজের ক্লাইন্টদের সাথে কথা বলছে।অন্তির বোরিং লাগছে ওর এসবের আগা মাথা কিছুই বোধগম্য হচ্ছে না।অন্তি এমনভাবে জায়গাটা থেকে সরে যায় যে অভিনব ওর অনুপস্থিতি টের পর্যন্ত পায় না।
অন্তি সেই বারান্দাটায় যায়।তার মনের কিউরিসিটিটা এখানে না আসলে আদৌ যে কখনো শেষ হতো না এটা সে বেশ ভালো ভাবে বুঝতে পেরেছে।কি একি!এখানে আগের থেকেই একজন ব্লন্ড হেয়ার ওমেন উপস্থিত।অন্তি পেছন থেকেই মেয়েটিকে কয়েক পলক দেখে।মেয়েটির সোনালী চুল এবং সে একটি ওয়েস্টার্ন ড্রেস পড়ে আছে যা ভীষণ ছোট।তবে চোখে পড়ার মতো ব্যাপার হচ্ছে মেয়েটা স্মোক করছে।অন্তি অতশত ভাবে না কারণ আজকাল মেয়েদের স্মোক করাটা রেয়ার কোনো ব্যাপার না।অন্তি নিজের মতো ব্যালকনির একটি সাইডে গিয়ে দাঁড়ায়।হঠাৎ অন্তির মনে মেয়েটির চেহারাটা এক নজর দেখার ইচ্ছে জাগে।অন্তি ইচ্ছে দমিয়ে রাখে না মেয়েটার চেহারার দিকে তাকাতেই ওর টনক নড়ে।অন্তি চোখ বড় বড় করে সেদিক থেকে চোখ ফিরিয়ে নিচের দিকে তাকায় আর বিড়বিড় করে বলে,
-‘মারিহা!ব্যাপার কি?এই মেয়ে আমরা যেখানে যাই সেখানেই পৌছে যায়।’
অন্তি আবার মারিহার দিকে তাকাতেই মারিহার সঙ্গে চোখাচোখি হয়।মারিহা ওর দিকে একদৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে।অন্তি ভাবছে,’এই মেয়ে কি আমাকে চিনে?’কথাগুলো ভাবতে ভাবতেই মারিহা ওর দিকে এগিয়ে এসে থমথমে মুখে বলল,
-‘অভিনবর ওয়াইফ তুমি তাই না?’
অন্তি থতমত খেয়ে যায় কথাটা শুনে।তবুও নিজেকে সামলে নিয়ে মুচকি হেসে বলল,
-‘আমি অন্তিকা রাহমান এটা আমার পরিচয় ।’
মারিহা বুঝতে যে এই মেয়ের আত্মসম্মানবোধ বেশি।মারিহা কিছুক্ষণ চুপ থেকে বলল,
-‘তুমি আমাকে চেনো বলেই আমার মনে হচ্ছে।কারণ অচেনা মানুষের সাথে কথা বলার সময় সবার মাঝে যেই জড়তা কাজ করে সেটা তোমার মাঝে নেই।’
অন্তি মুখে হাসি রেখেই উত্তর দিল,
-‘জ্বী চিনি খুব ভালো করে চিনি।’
মারিহার মুখ শুকনো হয়ে গেল কারণ সে বুঝতে পারছে অন্তি তাকে কতটা চিনে বলেই কনফিডেন্স সহকারে কথাটা বলল।মারিহা জিজ্ঞেস করলো,
-‘তোমাদের বিয়ে হয়েছে কতদিন?লাভ ম্যারেজ না এরেন্জ ম্যারেজ?’
অন্তি বুঝতে পারছে না মেয়েটা এমন প্রশ্ন কেন করছে?আবার পরের প্রশ্নের জবাবটা ঠিক কি দিলে ভালো হবেও সেটাও বুঝতে পারছে না সে।আর যাইহোক তাদের বিয়ে লাভ ম্যারেজ বা এরেন্জ ম্যারেজ কোনটাই না।অন্তি কিছুক্ষণ চুপ থেকে প্রশ্নের উত্তরগুলো দেয়,
-‘৬ মাস যাবত আমাদের বিয়ে হয়েছে এবং এরেন্জ ম্যারেজ হলেও আমাদের মাঝে ভালোবাসার কমতি নেই।’
-‘ওহ্,,,,অনেক ভালোবাসতো ও আমাকে।’
অন্তি মনে কষ্ট নিল না কথাটা শুনে কারণ সামনের ব্যক্তিটার উদ্দেশ্য তাহলে সফল হয়ে যাবে।অন্তি নরম গলায় এতক্ষণ কথা বললেও এবার শক্ত কন্ঠে বলল,
-‘হ্যা অনেক ভালোবাসতো আপনাকে আর আপনি সেটার প্রতিদান ধোঁকার মাধ্যমে দিয়েছেন।আপনাকে ভালোবাসতো সেটা অনেক পুরনো একটা অতীত কিন্তু সে এখন আমার আর আমিই তার বর্তমান এবং ভবিষ্যত।’
মারিহা হাতের সিগারেট ফেলে দেয় সে এখন নিজের অপমানের প্রতিবাদে কিছু বলবে।মারিহা তাচ্ছিল্য করে বলল,
-‘আমি ওকে না ছাড়লে তুমি ওকে কখনোই পেতে না।আমি থাকলে ও আর যাইহোক তোমাকে কখনো বিয়ে করতো না।এই যে এতো ধন সম্পদ এসবের কারণেই তো অভিকে বিয়ে করেছো জানি না ভেবেছো।’
অন্তি কথাটায় থম মেরে যায় কি বলবে সে?প্রথম কথাগুলো সত্যিই তো শেষের কথাগুলো মিথ্যা হলেও।মারিহা চলে যেতে নিবে তখনই অভিনবর আগমন ঘটে।অন্তির চোখ থেকে একফোঁটা জল গড়িয়ে পড়ে।অভিনব একজনকে ফোন দিয়ে বলে,
-‘পুরো হল খালি করাও।’
ফোন পকেটে রেখে অন্তির দিকে এগিয়ে এসে চোখের জল মুছে দিয়ে আদুরে আওয়াজে বলল,
-‘হেই ডোন্ট ক্রাই।ওর মতো একটা ক্যারেক্টারলেস এর কথার জন্য তোমার চোখে জল মানায় না।’
অন্তি ফুঁপিয়ে কেঁদে দেয় কোনো উত্তর দেয় না।মারিহা অভিনবকে উদ্দেশ্য করে রেগে বলে,
-‘তোমার সাহস কি করে হয় আমাকে এসব বলার?’
কথাটা বলতে না বলতেই একজন নারী গার্ড অভিনব ইশারা করতেই মারিহাকে থাপ্পড় মেরে সেখান থেকে নিয়ে হলে যায়।
মারিহাকে একটা চেয়ারে হাত পা লক করে রাখা হয়েছে।সামনেই বসে আছে অভিনব অন্তিকে বাসায় দিয়ে এখানে এসেছে সে।অভিনব একটা নাম্বারে ফোন দিয়ে স্পিকারে মারিহার সামনে রেখে বলল,
-‘নেও তোমার ভাইয়ের সাথে কথা বলো।তোমার ভাই তো ভাবছে তুমি মরে গেছো আর তোমার খুনি আমি।তাই আজ কথা বলে তার কাছে প্রমাণ দেও যে তুমি বেঁচে আছো।’
মারিহা কাঁদতে কাঁদতে বলল,
-‘নো নো আমি পারবো না।আমি বলতে পারবো না।’
-‘বেশি নো নো করলে পৃথিবীর জীবিতদের তালিকা থেকে তোমার নাম নট করে দেবো।কিছুক্ষণ আগের ইলেক্ট্রিক শকটা নিশ্চয়ই মনে আছ এরপরেরটা আরো জোরদার হবে।,,,ঐ যে তোমার ভাই ফোন রিসিভ করেছে।’
ফোনের ওপাশ থেকে মাহির বলে উঠলো,
-‘হ্যালো,,,,অভিনব তুই আমাকে ফোন দিয়েছিস কোন সাহসে?’
মারিহা ডুকরে কেঁদে উঠে এরপর বলে,
-‘ভাইয়া আমি মারিহা বলছি তোমার বোন।তোমারা আমাকে মাফ করে দিও আমার কৃতকর্মের জন্য।’
সাথে থেকো প্রিয় পর্ব ৩৮
মাহির আশ্চর্য হয়ে যায় নিজের বোনের কন্ঠ এতোগুলো বছর পর শুনে।মারিহা নিজের সব কাহিনী ভাইয়ের কাছে স্বীকার করে আর বলে,
-‘ভাইয়া আব্বাকে এসব বলিস না।আমি এখানে ভালো আছি আমার বয়ফ্রেন্ড আর সন্তান নিয়ে রাখছি।’
মাহিরকে আর কিছু বলতে না দিয়ে ফোন কেঁটে দেয় অভিনব এরপর মারিহাকে ছেড়ে দিতে বলে।
অভিনবর মনে হচ্ছে আজ তার বুক থেকে অনেক বড় একটা পাথর নেমে গেছে।একজন ব্যক্তিই হোক তাকে আর খুনী বলে ডাকবে না।
অভিনবর ফোনে একটা আসতেই সে সেটা রিসিভ করে আর ফোনের অপরপাশ থাকে যা শুনে তাতে তার মস্তিষ্ক একেবারে হ্যাঙ্গ হয়ে যায়।