সাথে থেকো প্রিয় - Golpo Bazar

সাথে থেকো প্রিয় পর্ব ৪ || nill cafer valobasha

সাথে থেকো প্রিয়

সাথে থেকো প্রিয় পর্ব ৪
লেখক:রিয়ান আহমেদ

-‘আপনি কি আমাকে কখনো ভালবাসতে পারবেন?’
অভিনব এমন প্রশ্নের জন্য প্রস্তুত ছিল না।অভিনব অন্তির হাত পায়ের বাধন খুলে দিয়ে উঠে দাঁড়াল।অন্তি উত্তরের আশায় অভিনবর মুখ পানে তাকিয়ে আছে।অভিনব দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বলল,

-‘আমি ভালোবাসায় বিশ্বাস করি না আমি বন্ধুত্বে বিশ্বাস করি।এই পৃথিবীতে বন্ধুত্বের চেয়ে বড় কোন সম্পর্ক নেই একজন বন্ধুকে তুমি চাইলেই এমন অনেক ধরনের কথা বলতে পারবে যা তুমি তোমার অতি নিকটতম ব্যক্তিদেরও বলতে পারো না। বন্ধুত্বের সম্পর্কের কোন সীমাবদ্ধতা নেই।আমি তোমার বন্ধু হয়ে তোমার পাশে থাকতে চাই।তুমি যতদিন পর্যন্ত না নিজের পায়ে না দাঁড়াচ্ছো ততদিন অব্দি স্বামী হিসেবে তোমার দায়িত্ব নিতে চাই।যদি কখনো তোমার মনে অন্য কারোর প্রতি ভালোবাসা সৃষ্টি হয় তখন আমি তোমাকে নিজের সাথে বেঁধে রাখবো না।কিন্তু বন্ধু হিসেবে সারাজীবন তোমার সাথে থাকার চেষ্টা করবো।’
-‘ আমি আপনার বন্ধু হিসেবে নয় প্রিয় মানুষ হিসেবে সাথে থাকতে চেয়েছিলাম। আমি পেচিয়ে কথা বলব না সত্য কথা যখন আপনি আমাকে বলেছিলেন “সাথে থেকো প্রিয়” তখন মনের অজান্তেই আপনার জন্য ভালোলাগা সৃষ্টি হয়েছিল কিন্তু পরক্ষণেই যখন জানতে পারলাম আপনি শুধুমাত্র একটা হুইলের কারণে আমাকে বিয়ে করেছেন তখন আমার মনে হয়েছিল মানুষের জীবনে টাকাটা কি এতটাই জরুরী যে সেটা রক্ষা করতে মানুষ কারো জীবন নিয়ে খেলতেও পিছপা হয় না?কিন্তু পরে আবার আমার মনে পড়লো এই পৃথিবীটাই তো টাকার উপর চলে।(তাচ্ছিল্যের হাসি দিয়ে) আমাদের অনাথ আশ্রমের সব বাচ্চারাই কিন্তু অনাথ নয় এদের মধ্যে অনেকেরই মা বাবা পরিবার পরিজন সবাই আছে তবুও ওদের জায়গা অনাথ আশ্রমে কেন হয়েছে জানেন টাকার জন্য,,,, ওদের মা বাবা ওদের ভরণ-পোষণের দায়িত্ব নিতে পারেনি তাই ওদের অনাথ আশ্রমের দরজায় অথবা ডাস্টবিনে ফেলে চলে গেছে যেখানে মা-বাবা নিজের নাড়িছেঁড়া ধন কে ফেলে চলে যাওয়ার সময় ভাবে না,,,,একটা ছোট্ট শিশু কিভাবে থাকবে, কোথায় থাকবে তা নিয়ে ভাবে না সেখানে আপনি তো আমার জন্য একজন অপরিচিত ব্যক্তি আর আমি আপনার জন্য একজন অপরিচিত মেয়ে আপনি কেন আমার কথা ভাবতে যাবেন। তবুও আপনি এতক্ষণ আমাকে যা বললেন তা শুনে ভালো লাগলো আপনার কাছে ভালোবাসার মূল্য না থাকতে পারে কিন্তু আপনার কাছে বন্ধুত্বের কতটা মূল্য আছে তা আপনার কথা ধারা বোঝা যায় তবে আমি আপনার সাথে থাকতে পারবো না আমার নিজেকে নিজের কাছে ছোট মনে হবে শুধুমাত্র টাকার জন্য আপনার উপর আমি নির্ভরশীল হয়ে থাকবো এমনটা আমি কখনো চাইনা আমার নিজেকে নিজের কাছে গোল্ড ডিগার মনে হবে যে শুধুমাত্র টাকার জন্য একজন মানুষ থাকে।’

আরও গল্প পড়তে আমাদের গুপ এ জয়েন হউন

অভিনব অন্তির চোখের দিকে তাকায়। মেয়েটার চোখে জল টলমল করছে কিন্তু সে সেই জল চোখ থেকে পড়তে দিচ্ছে না। জীবনে টাকা সত্যিই জরুরী আর এর মূল্য সম্পর্কে বর্তমান পৃথিবীর সবাই অবগত। কোনটি নিজের কপাল চেপে ধরে মাথা নিচু করে অভিনব দিকে না তাকিয়ে বলল,
-‘ আমি একটু একা থাকতে চাই আই নিড সাম স্পেস।’
অভিনব চলে যেতে নেয় কিন্তু অন্তির কথা শুনে আবার দাঁড়িয়ে যায়,
-‘ আপনি ভালোবাসায় কেন বিশ্বাস করেন না?’
অভিনব পিছন ফিরে রহস্যময় হাসি দিয়ে বলল
-‘আমি বলেছিলাম না কিছু কথা সবাইকে বলা যায় না শুধুমাত্র বন্ধুদের বলা যায়? আমি আমার এই কথাটা আমার ভালো বন্ধুকেই বলবো।’

অন্তি অভিনব কথার মানে বুঝতে পারে না। অভিনব চলে যায় রুম থেকে।
অভিনব নিজের ঘরে বসে আছে সে ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখে বারোটা এক বাজে। আজ তার বয়স সাতাশ বছর পূর্ণ হলো। অভিনব ফোন নিয়ে সারিকা কে কল লাগায় সারিকা কল রিসিভ করে না হয়তো সারাদিন ক্লাজ করে ক্লান্ত হয়ে ফ্লাটে গিয়ে ঘুমাচ্ছে। অভিনব একটা সিগারেট ধরায় সিগারেট খেলে মাথা ব্যথা কমবে।অভিনব সিগারেটের শেষ নিঃশ্বাসটা নিতেই বারান্দা থেকে কিছু একটার শব্দ শুনতে পায়। অভিনব সিগারেট বারান্দার দিকে যায় বারান্দায় গিয়ে এমন দৃশ্য দেখবে তা সে কখনোই ভাবেনি অন্তি রুমের পর্দা দিয়ে দড়ির মতো বানিয়ে বারান্দার থেকে নেমে যাওয়ার চেষ্টা করছে। অভিনবর বাড়ির বারান্দার সামনের দিকটায় ছাউনির মতো করে ঢালু ভাবে দেওয়া যেখান দিয়ে বেয়ে বেয়ে বাড়ির দেয়ালের দিকে অন্তি যাচ্ছে।কারণ দেয়াল পাড় করতে পারলেই অন্তি নিজের ভাষ্যমতে ‘আজাদ’ মানে স্বাধীন হয়ে যাবে। অভিনব নিজের হাত মুষ্টিবদ্ধ করে নেয় দাঁতে দাঁত চেপে বললো,

-‘ এই মেয়ে আমাকে শান্তি দেবেনা এভাবে কেউ বারান্দা দিয়ে নামে আল্লাহ এই মেয়েকে কি সুবুদ্ধি দাও।’
অভিনব চোখ বড় বড় করে ওর দিকে তাকিয়ে বলল,
-‘কি করছো কি থাম কোন একটা দুর্ঘটনা ঘটে যাবে ওয়েট আমি এখুনি আসছি তুমি থামো প্লিজ।’
অন্তি অভিনবর কথায় পাত্তা না দিয়ে বলল,
-‘ আমি কিছুতেই থামবো না আমি থামলে আপনি আমাকে ধরে নিয়ে যাবেন আবার বন্দি করে রাখবেন আমি এখান থেকে যেকোন মতে পালিয়েই ছাড়বো।’
কথাটা বলতে বলতে অসাবধানতাবশত অন্তি পিছলে পড়ে যায় অভিনব চিৎকার করে বলল,
-‘অন্তিইইইইইইইই।’
-‘আআআআআআআ।’

অন্তি গার্ডেনের পুলে গিয়ে পড়ে।অভিনব দৌড়ে যেতে যেতে অন্তি অনেক পানি খেয়ে ফেলেছে।অভিনব গিয়ে পুলে ঝাঁপ দিয়ে অন্তিকে তুলে আনে।
অভিনবর চোখে ভোরের আলো পড়তেই অভিনব সোফা থেকে আড়মোড়া ভেঙ্গে উঠে বসে।কাল রাতে অন্তিকে হসপিটালে আনা হয়েছে কারণ পেট থেকে পানি বের করার পরেও অন্তির জ্ঞান ফেরানো যাচ্ছিল তাই অন্তিকে হসপিটালে ভর্তি কর হয়েছে ডাক্তার বলেছে অন্তির ওয়াটার ফোবিয়া আছে যার অন্তি পানিতে ঐভাবে পড়ে গিয়ে অতিরিক্ত ভয় পেয়ে জ্ঞান হারিয়েছে।অভিনব সারা রাত কেবিনের সোফায়ই বসে ছিল বসে থাকতে থাকতে এক পর্যায়ে সে ঘুমিয়ে পড়েছে। অভিনব নিজের পাশে তাকাতেই ভুত দেখার মত চমকে যায়,

-‘ তুই এখানে ?’
-‘হ্যা আমি এখানে।’
-‘হ্যাপি বার্থ ডে টু ইউ।’
-‘হ্যাপি বার্থ ডে টু ইউ।’
-‘ড্যাড তোকে ফোন করেছিল?’
-‘হুম মম তোকে ফোন করেছিল?’
-‘হুম করেছিল। ‘
-‘ওনারা কাল আসছেন।’
-‘আসলেও কি না আসলেও কি,,,,,মেয়েটা দেখতে খুব মিষ্টি।’
-‘তাতে আমার কি?’
-‘তোর বউ।’
-‘প্লিজ আমার ভাল্লাগছে না এসব।তুই তো জানিস,,,।’
-‘মেয়েটা লাইফে অনেক সাফার করেছে তুই আর ওকে কষ্ট পেতে দিস না।’
-‘তুই ওর সম্পর্কে সব জানিস?’
-‘ইটস নট আ বিগ ডিল ফর মি।’

সাথে থেকো প্রিয় পর্ব ৩

-‘আমি ওকে ভালোবাসতে না পারলেও ওর বন্ধু হয়ে পাশে থাকার চেষ্টা করবো।’
-‘ও কি চায় তা তুই জানিস?একজন মেয়ে বিয়ের দিনেই যখন জানতে পারে তাকে সম্পত্তি রক্ষা করতে তার স্বামী বিয়ে করেছে তখন তার ভেতরের বয়ে চলা ঝড়টা শুধুমাত্র সেই অনুভব করতে পারে।আমি জানি তুই পরিস্থিতির স্বীকার হয়ে এমনটা করেছিস। কিন্তু পরোক্ষভাবে তুই ওর এই মূহুর্তে এই অবস্থার জন্য দায়ী।তাই প্লিজ যা হয়েছে তা ভুলে জীবনকে একটা সুযোগ দে।অভি আমি তোর ভালোর জন্য কথাগুলো বলছি।’
অভিনব চুপ করে থাকে সারিকা তাকে যা বলছে তা ষোল আনা সত্ত হলেও সে পারবে না।

সাথে থেকো প্রিয় পর্ব ৫

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.