সাথে থেকো প্রিয় - Golpo Bazar

সাথে থেকো প্রিয় পর্ব ৪০ || হৃদয়স্পর্শী ভালোবাসার গল্প

সাথে থেকো প্রিয়

সাথে থেকো প্রিয় পর্ব ৪০
লেখক:রিয়ান আহমেদ

অভিনবকে হন্তদন্ত হয়ে ঘরে প্রবেশ করতে দেখে অন্তি অবাক হয়।এর আগে মানুষটাকে এতোটা উত্তেজিত সে দেখেনি।অভিনব কোনোমতে একহাতে ফোন ধরে আরেক হাতে আলমারি থেকে কাগজপত্র বের করে কথা বলছে।কথা শেষ করে সে অন্তির দিকে তাকিয়ে বলল,
-‘অন্তি আমরা আজ ভোরের ফ্লাইটে বাংলাদেশে ব্যাক করবো।’
অন্তি অবাক হয়ে বলল,
-‘আপনি ঠিকমতো নিঃশ্বাস নিয়ে নিন।দাঁড়ান আমি আপনার জন্য পানি আনছি আপনার চেহারা লাল হয়ে গেছে।’
অভিনব জোরে জোরে নিঃশ্বাস নিচ্ছে তার চোখ লাল হয়ে আছে।অন্তি পানি এনে ওকে চেয়ারে বসিয়ে দেয় ওকে।অভিনবর দিকে পানির গ্লাস এগিয়ে দেয় কিন্তু শরীরের কম্পনের কারণে অভিনব ধরতে পারে না।অন্তি নিজেই ওকে পানি পান করতে সাহায্য করে।অভিনব কোনোমতে পানি পান করে কেঁদে ফেলে আর বলে,
-‘অন্তি,,,ড্যা,,ড।’
অভিনবর চোখের জল দেখে অন্তির বুকটা ধক করে উঠে।এর আগে অভিনব একবার ওর সামনে কেঁদেছিল আর সেই কান্নার কারণটা ছিল অনেক বড় কিছু হারানোর ব্যাথা।ড্যাড! অর্ণবের কিছু হয়নি তো?অন্তির ভেতরটা আঁতকে উঠে।
অভিনব কাঁদতে কাঁদতে বলল,
-‘আজ আমাকে ডাক্তার সাদি ফোন করে জানালো ড্যাড নাকি কয়েকমাস যাবত অসুস্থ।ওনার কিডনিতে টিউমার ধরা পড়েছে এতোদিন ওষুধ ধারা নিয়ন্ত্রণ করা গেলেও বর্তমানে আর সম্ভব হচ্ছে না।বিগত একমাস যাবত সে অপারেশনের জন্য চিন্তাভাবনা করছেন।ড্যাড একমাস আগে নিজের কেবিন থেকে বের হওয়ার সময় ব্যাথার কারণে নাকি অজ্ঞান পর্যন্ত হয়ে গিয়েছিলেন কিন্তু আমাকে এই ব্যাপারে কিছুই কেউ জানায়নি।,,,আমিই বা কেমন ছেলে যে নিজের বাবার স্বাস্থ্যের খবর রাখে না।আমি সত্যিই ছেলে হিসেবে ব্যর্থ।ড্যাড নিজের অপারেশনের জন্যই নিজে সিঙ্গাপুর না এসে আমাকে পাঠিয়েছেন,,আমাকে একটিবার বললেন পর্যন্ত না যে উনি এতো বড় একটা রোগে ভুগছেন।আমি আর সারিকা ওনাদের যোগ্য সন্তান হতে পারি নি।যদি যোগ্য সন্তান হতাম তবে আমাদের এই বিষয়ে একটিবার অন্তত জানাবার প্রয়োজনবোধ করতেন।আজ ডাক্তার সাদি আমাকে ফোন দিয়ে যখন এই বিষয়ে বললেন তখন মনে হচ্ছিল আমার দুনিয়া উল্টে যাচ্ছে।জাস্ট দুইদিন বাদে ড্যাডের অপারেশন আর আমি তার থেকে হাজার হাজার কিলোমিটার দূরে আরামে বসে আছি।,,ড্যাডের অপারেশনে লাইফ রিস্ক আছে যদি আজ আমি এই বিষয়ে না জানতাম তবে,,,নাহ্ আমি আর ভাবতে পারছি না।’
অভিনব কান্নায় ভেঙ্গে পড়ে মাথার চুল দুই হাত দিয়ে ধরে মাথা নিচু করে কাঁদে।অন্তি নিজেও কেঁদে দিয়েছে।কিন্তু এই মুহুর্তে অভিনবকে সাহস জোগানো বেশি জরুরি।অন্তি অভিনবর পাশে বসে অভিনবর পেছন দিয়ে পিঠে হাত দিয়ে কাঁধে মাথা রেখে জড়িয়ে ধরে।
অন্তি আশ্বাসের সুরে কিছু বলতে চায় কিন্তু তার গলায়ও কথা আটকে আসে।অর্ণবকে সেও নিজের বাবা হিসেবে মানে।অর্ণব যতই বলুক সে অন্তিকে ছেলের বউ হিসেবে মানে না আসলে কথাটা সে মন থেকে বলে না।অন্তি ব্যাপারটা প্রথম ফিল করেছিল যেদিন অর্ণব ওর বানানো পুডিং ওর সামনে রিজেক্ট করে দিলেও পরে লুকিয়ে লুকিয়ে খেয়েছে আর হেসে প্রশংসা করে নিজে নিজেই বলে,’বাহ্ আমার ছেলের বউ তো ভালো রান্না করতে পারে।’
অন্তি কথাগুলো মনে করে চোখের জল না চাইতেও ছেড়ে দেয়।অন্তি কাঁপা কাঁপা গলায় বলল,
-‘অভি,,আপনি এভাবে ভেঙ্গে পড়বেন না।বাবার কিছু হবে না উনি খুব তাড়াতাড়ি সুস্থ হয়ে উঠবেন।আপনি প্লিজ আর কান্না করবেন না।’
অভিনব কিছু বলতে পারে না।জীবনে এই প্রথম সে ফিল করতে পারছে বাবার প্রতি তার ভালোবাসাটা কতোটা গভীর।ছোটবেলা থেকে বাবাকে ও একজন কঠিন মানুষ হিসেবে জানে।কিন্তু এতটা কঠিন!এতটা কঠিন হওয়ার তো কোনো প্রয়োজন নেই যতটা কঠিন হলে নিজের কাছের মানুষদের নিজের অসুস্থতা সম্পর্কে জানাতে চায় না মানুষ।

অভিনব আর অন্তি হসপিটালের দিকে দৌড়ে এগিয়ে যাচ্ছে।তাদের মনে হচ্ছে এই পথটা আজ শেষ হবার নয়।খারাপ সময়গুলোতে প্রতিটা সেকেন্ড মানুষের কাছে একদিন সমান মনে হয়।রুম নাম্বার ৭০৯ এর সামনে যেতেই তারা দেখে রুমের দরজা খোলা।অন্তি এগিয়ে যায় অভিনব ধীর পায়ে মাথা নিচু করে সেই রুমে প্রবেশ করে।
অর্ণব সার্জারির জন্য তৈরি হচ্ছিল।সামনেই তার স্ত্রী এবং কন্যা কান্না করে চলেছে।তাদের শান্তনা দেয়ার ব্যর্থ চেষ্টা করছে শুভ্র।ডাক্তার সাদির সঙ্গে কথা বলছিলেন অর্ণব তখনই পেছন থেকে কেউ করুণ কন্ঠে ডেকে উঠে,
-‘ড্যাড,,,,।’
অর্ণব চমকায় এতো বছর পর ছেলের কন্ঠে এমনভাবে ড্যাড ডাকটা শুনে।অর্ণব পেছন ঘুরে তাকায়।অভিনব আর অন্তিকে ক্লান্ত দেখাচ্ছে।দীর্ঘ সময় প্লেন যাত্রা করে তারা সিঙ্গাপুরের থেকে বাংলাদেশে এসেছে সেই যাত্রাই তাদের ক্লান্তির কারণ।সুহানা কেঁদে অভিনবকে অভিযোগের সুরে বলল,

-‘দেখ তোর বাবা কতটা নিষ্ঠুর নিজের অসুস্থতা সম্পর্কে আমাদের জানাতে তার কত সমস্যা।’
অর্ণব বিরক্ত হয়ে সাদির দিকে তাকিয়ে বলল,
-‘সাদি তোমার ধারা এমন কাজ আমি আশা করিনি।তুমি সবাইকে বলে দিয়েছো।ওরা সবাই এখন আমাকে নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়বে।'(বিরক্ত হয়ে)
সাদি হেসে বললেন,
-‘এই কথাটা অভিনব আর সারিকার আসার আগে আপনি আমাকে কয়েকবার বলেছেন।,,,আপনার মতো মানুষ আমি আজ অব্দি দেখিনি যেখানেই সবাই অপারেশনের আগে নিজের পরিবার পরিজনকে দেখতে চায় তাদের সাথে কথা বলতে চায়।সেখানেই আপনি এতো বড় একটা অপারেশনে আর আপনি চান আপনার পরিবার না জানুক!সরি বাট আমি আপনাকে বলেছিলাম ব্যাপারটা বেশি সিরিয়াস হলে আপনার পরিবারকে জানাতে আমি বাধ্য হবো।যদি আপনার কিছু হয়ে যায় তবে এই মানুষগুলোকে আমি কি জবাব দেব।আর অপারেশনের আগে একজন গার্ডিয়ানের সাইন থাকতে হয় পেপারে সেটাও আপনি নিজে দিতে চাইছিলেন।তাই বাধ্য হয়ে আমি আপনার স্ত্রী সন্তানদের এই বিষয়ে জানিয়েছি।’

আরও গল্প পড়তে আমাদের গুপ এ জয়েন হউন

অন্তি এর মাঝে বলে উঠলো,
-‘একদম ঠিক করেছেন স্যার।কত বড় সাহস আমাদের কিছুই মনে করে না,,আমরা ওনার জীবনে কোনো ম্যাটার করি না মনে হয়।’
অর্ণব অন্তির দিকে আজ বিরক্তি নিয়ে তাকায় না।সে অন্তির দিকে তাকিয়ে হেসে বলল,
-‘এদিকে এসো মা।’
অন্তি অবাক হলো এতো মিষ্টি সুরে ওর শশুড় মসাই কথা বলছে ব্যাপারটা যেন ওর ভাবনাতীত।অন্তি এগিয়ে যায় এরপর অভিনবর পাশে দাঁড়ায়।
অর্ণব বলল,
-‘সুহানা চুরিগুলো দেও।’
সুহানা নিজের ব্যাগ থেকে একজোড়া চুরি বের করে অর্ণবের হাতে দিল।অর্ণব অন্তিকে বলল,
-‘মা আমি তোমার সঙ্গে হয়তো পূর্বে খারাপ ব্যবহার করেছি কিন্তু তোমার সম্পর্কে জানার পর আমার মন থেকে তোমার বিষয়ের ভুল ধারণাগুলো একটা একটা করে সরে গেছে।তবুও নিজের কঠোর ব্যবহার থেকে ফিরে আসতে পারিনি তবে বিশ্বাস করো তোমাকে আমি নিজের আরেকটা মেয়ে বলেই মনে করি।আজ চুরিগুলো দিয়ে আমি তোমাকে খান বাড়ির পুত্রবধূর মর্যাদা দিতে চাই এদিকে এসো।’
অন্তি কেঁদে দেয়।অভিনব ওর চোখের জল মুছে দিয়ে হাত ধরে এগিয়ে যায় অর্ণবের কাছে।

অর্ণব অন্তির হাতে চুরে জোড়া পড়িয়ে দিয়ে বলল,
-‘আল্লাহর কাছে দোয়া করি তোমাদের সংসার যেন সুখের হয়।আমার যদি কিছু হয়ে যায় তাহলে আমার এই ছেলেটাকে একটু শাসন করো।এই ব্যাটাও আমার মতো স্মোক করে একে এসব করতে মানা করবে বুঝলে।’
অন্তি ফুঁপিয়ে কেঁদে দিয়ে ঠোঁট উল্টে বলে,
-‘বাবা আপনি এভাবে কেন বলছেন?আল্লাহর রহমতে আপনার কিছু হবে না।এখনো তো আপনাকে আমাদের আরো অনেক শাসন করতে হবে এরপর আমাদের ছেলেমেয়েদেরকেও শাসন করতে হবে।’
অর্ণব হা হা করে হেসে দেয়।এবার সে শুভ্র আর সারিকার দিকে তাকিয়ে বলে,

-‘শুভ্র সারিকা আমার পাশে এসে দাঁড়াও।’
দুজনেই অর্ণবের কথামতো পাশে এসে দাঁড়ালো।সারিকা অর্ণবের ডান হাত আঁকড়ে ধরে কাঁদছে।অর্ণব মেয়ের মাথায় হাত বুলিয়ে বলল,
-‘আমার স্ট্রং মেয়েটা আজ এতো কাঁদলে তার বাবার যে কষ্ট হবে।,,শোন মা আমাদের জীবনে অনেক মানুষ আসে যাদের প্রথমে পছন্দ না করলেও ধীরে ধীরে তাদের সঙ্গে একটা অটুট সম্পর্ক গড়ে উঠে আমাদের।শুভ্র তোমাকে অনেক ভালোবাসে।তোমাদের দুজনের দ্বিতীয়বার দেখা আমি আর শুভ্রর পরিবার করালেও।তোমাদের মধ্যকার ভালোবাসাটা তোমাদের দুজনের চেষ্টায় গড়ে উঠেছে।’
সারিকা আর শুভ্র অবাক হয়ে অর্ণবের দিকে তাকায়।অর্ণব আবার বলে,
-‘তোমরা একে অপরের ভাগ্যে ছিলে তাই একে অপরের হয়েছো।আমি বেঁচে থাকলে তোমাদের দুজনের বিয়ে আগামী মাসের প্রথম শুক্রবারে অনুষ্ঠিত হবে আর এই বিষয়ে শুভ্রর মা বাবার সাথে আমার আর সুহানার কথা হয়ে গেছে।,,শুভ্র আমার মেয়ে আমার কাছে জীবনে নিজে থেকে শুধু একটা জিনিস চেয়েছিল আর সেটা হলো তার নিজস্ব স্বাধীনতা।আমি কখনোই তার ব্যক্তিগত স্বাধীনতা ক্ষুন্ন করিনি আর সেও আমার বিশ্বাস রেখেছে।অন্যান্য বড়লোক বাবার মেয়েদের মতো বিগড়ে যায় নি বরং সমাজে নিজস্ব অবস্থান তৈরি করতে সক্ষম হয়েছে।আমি চাই আমার মেয়ের জন্য এমন একজনকে যে আমার মতো সবসময় ভালোবাসবে আর তার নিজস্ব স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ করবে না।আশা করি ভালোবাসার সাথে সাথে আমার মেয়েটাকে তার প্রাপ্য সম্মান সবসময় দেবে।আমার মেয়েকে আমার অনুপস্থিতিতে রক্ষা করবে।’

শুভ্র আত্মবিশ্বাসের সাথে বলল,
-‘আমি মৃত্যুর পর্যন্ত আমার ভালোবাসার মানুষকে রক্ষা করার চেষ্টা করবো এবং তাকে তার প্রাপ্য সম্মান দেব।’
অর্ণবের চোখ থেকঃ দুই ফোঁটা জল গড়িয়ে পলো।হয়তো একমাত্র মেয়ের বিয়ে দেখতে পারবে না ভেবে তার এই মুহুর্তে কান্না পাচ্ছে।
-‘সুহানা এদিকে এসো।’
সুহানা অর্ণবকে জড়িয়ে ধরে কেঁদে দেয়।অর্ণব বলল,
-‘ভালোবাসি তোমাকে সুহানা।ত্রিশটা বছর আমরা একসাথে কাটিয়েছি।দেখতে দেখতে ত্রিশ বছর কবে কেঁটে গেল তা আমরা বুঝতেই পারলাম না।আমি চলে গেলে হয়তো তোমার অনেক কষ্ট হবে কিন্তু আমাদের ভালোবাসার দিনগুলো মনে করলে দেখো তোমার কষ্ট অনেকটাই লাঘব হবে।আজ যদি আমাদের শেষ সাক্ষাতের হয় তাহলে তোমার অপেক্ষায় থাকবো আমি ওপারে।আবার আমাদের দেখা হবে সেখানে।’
সুহানা কেঁদে অর্ণবের বুক ভাসিয়ে দিয়ে বলল,
-‘তুমি এভাবে বলছো কেন?তোমার কিছুই হবে না।আল্লাহ্ তোমাকে সুস্থ অবস্থায় আবার আমাদের কাছে ফিরিয়ে দেবে।তোমার সুস্থ হওয়ার পর আমরা দুজনে হজ্জ পালন করবো।’
-‘তোমার বুড়ো তোমার কাছে ফিরে আসার সর্বোচ্চ চেষ্টা করবে।বাকিটা আল্লাহর ইচ্ছা।’
-‘তোমাকে এই বুড়ির কাছে ফিরতেই হবে।আমরা দুজন মিলে আমাদের নাতি নাতনিদের বড় করবো।’

সুহানা অর্ণবকে ছেড়ে দাঁড়ায়।অর্ণব সবার দিকে তাকিয়ে বলল,
-‘অভিনব আর সারিকা ছাড়া সবাই রুমের বাইরে চলে যাও।’
সবাই তাই করলো।রুমে শুধু রয়ে গেল অভিনব আর সারিকা।দুজনে অর্ণবের পাশে বসলো।অর্ণব নিজের বালিশের পাশে থেকে সেই ট্রফিটা বের করে যেটা অভিনব প্রথম ডিভেট করে পেয়েছিল আর একটা ফটোগ্রাফ।এটা সারিকা মাত্র সাত বছর বয়সে ক্যামেরা হাতে পাওয়ার পর তুলেছিল প্রথম ছবি এটা তার।অর্ণব দুটো জিনিস দুজনের দিকে এগিয়ে দিয়ে বলল,

-‘এগুলো শুধু তোমাদের একার প্রাপ্তি না এগলো আমারও প্রাপ্তি এগুলো আমার জন্য অনেক বড় কিছু ম্যাটার করে।অভি মানুষের সঙ্গে ইন্টার্যাক্ট করতে পারতো না তবুও তর্কবিতর্ক করে সেদিন এই ট্রফিটা জয় করেছিল।সারিকার হাতে সেসময় ক্যামেরা ধরাটাই ছিল মুশকিল তবুও সে প্রথমবারেই এই চমৎকার ছবিটা তুলেছিল।এগুলো আমি যতবার দেখি ততবার মনে হয় আমি গর্বিত।,,,তোমরা দুজন যেদিন পৃথিবীতে এসেছিলে সেদিন আমার উচ্ছ্বাস দেখে পুরো হসপিটালের লোকজন হাসছিল।দুজন সন্তানের বাবা হওয়ার পর আমার মনে হয়েছিল এরাই আমার প্রকৃত সুখের ঠিকানা।কিন্তু সময় যত বাড়তে লাগলো ততই আমাদের মাঝে দুরত্ব বাড়তে শুরু করলো।তোমরা অসুস্থ হলে আমরা তোমাদের কাছে থাকতে পারতাম না।একবার সারিকা সিঁড়ি দিয়ে পড়ে গিয়ে হাত ভেঙ্গে ফেলেছিল আমরা সময়মতো প্লেনের টিকেট না পাওয়ায় তিনদিন পর বাসায় পৌছেছিলাম।তোমার আর সারিকার চোখের অভিমানটা সেদিন আমার বুকে বড্ড ব্যাথা দিচ্ছিল।আরক বারের ঘটনা অভি টাইফয়েড এ ভুগে হসপিটালের বিছানায় আর অন্যদিকে আমরা দুজন দেশে ফেরার তাড়া দিচ্ছি।দেশে এসে এবারেও সেই অভিমান ভরা চোখ।এমন আরো অনেক ঘটনা আছে যখন তোমাদের আমাদেরকে প্রয়োজন ছিল কিন্তু আমরা ছিলাম না।,,সত্যিই সেই সময়ের কথা ভাবলে নিজেকে অনেক বড় অপরাধী মনে হয়।আমি অসুস্থ হওয়ার পর শুধু মনে হতো আমি যেহেতু তোমাদের কেয়ার নিতে পারি নি ঠিকমতো তোমাদেরও আমার কেয়ার নেয়ার দরকার নেই।তাই আমি চেয়েছিলাম তোমাদের না জানিয়ে অপারেশনটা করাতে।এটা আমার করা অপরাধের শাস্তিস্বরূপ বলতে পারো।’

সাথে থেকো প্রিয় পর্ব ৩৯

অভিনব বলল,
-‘ড্যাড তোমরা আমাদের সময় দেওনি বলে আমাদের তোমাদের প্রতি অভিমান ছিল সেটা সত্য কিন্তু এর মানে এই না এতো বড় একটা বিষয় তুমি আমাদের কাছে লুকিয়ে রাখবে।আমরা তোমাদের ভালোবাসি হয়তো প্রকাশ করি না কিন্তু বাসি।’
সারিকা বলল,
-‘হয়তো তুমি আর মম আমাদের সাথে সবসময় থাকতে না আমরা জানি আমরা তোমাদের হৃদয়ে সবসময় ছিলাম।’
অর্ণব হেসে দুই ছেলে মেয়ের মাথায় স্নেহের পরশ বুলিয়ে দিয়ে তাদের জরিয়ে ধরে বললেন,
–‘ড্যাড লাভ বোথ অফ ইউ।’
সারিকা আর অভিনব একসাথে বলল,
-‘উই লাভ ইউ ঠু।’

অর্ণব তিন ঘন্টা যাবত অপারেশন থিয়েটারে।সবাই বাইরে চরম উৎকন্ঠা নিয়ে তার অপেক্ষা করছে।সুহানা,সারিকা আর অন্তি হসপিটালের নামাজ ঘরে নামাজ পড়ছে আর অর্ণবের জীবন ভিক্ষা চাইছে।অভিনব আর শুভ্র ব্লাড মেডিসিন এসবের জন্য ছুটোছুটি করছে একটু পরপর।হঠাৎ অভিনব নিজের সামনে এমন একজনকে দেখে যাকে দেখার জন্য সে এই মুহুর্তে প্রস্তুত ছিল না।

সাথে থেকো প্রিয় পর্ব ৪১

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.