সাথে থেকো প্রিয় পর্ব ৪১
লেখক:রিয়ান আহমেদ
দুর্জয় অভিনবর দিকে বাঁকা হাসি নিয়ে তাকিয়ে আছে।অভিনব ঘাড় কাত করে ভ্রু কুঁচকে বলল,
-‘তোর এখানে কি কাজ?’
দুর্জয় হেসে হসপিটালের চারিদিকে তাকাতে তাকাতে বলল,
-‘কেন এই হসপিটালে কি তোর নাম লেখা যে এখানে আমি প্রবেশ করতে পারবো না।’
-‘চাইলে কিনে নিতে আমার সময় লাগবে না।’
-‘ওহহো আমি তো ভুলেই গিয়েছিলাম আপনি একজন বিরাট বড় ব্যবসায়ী মিস্টার অভিনব খান বিজয়।তা জনগণ কি এটা জানে যে আপনি শুধুমাত্র একজন ব্যবসায়ী নন তার আড়ালে আপনি একজন রবিন হুড or ব্ল্যাক শ্যাডো গ্যাঙ্গের একজন উচ্চপদস্থ সদস্য।’
কথাটা বলে দুর্জয় একটা বিটকেলে হাসি দেয়।দুর্জয়ের হাসি দেখে অভিনবর গা জ্বলে যাচ্ছে।অভিনব বলল,
–‘তুই এখানে কেন এসেছিস স্বাস্থ্য সমস্যা হলে পশু হাসপাতালে যা।তোর জন্য সেটার চেয়ে পারফেক্ট জায়গা আর কি হতে পারে।আফ্টারল ইউ আর এনিমাল।’
দুর্জয় চোখে মুখে রাগ ফুটে উঠে কথাটা শুনে।অভিনব চলে যাবে তার আগেই দুর্জয় বলল,
-‘কোনো বুদ্ধিমান ব্যক্তি বলেছিল বন্ধুদের কাছে রাখতে এবং শত্রুদের আরো বেশি কাছে রাখতে।আমি শত্রু হিসেবে নিজের দায়িত্ব পালন করতে এসেছি।’
অভিনব চোয়াল শক্ত করে বলল,
-‘কেমন দায়িত্ব?’
-‘তোর কাঁটা ঘা এ নুনের ছিটে দিতে।,,,এখন তোর বাবার কাছে তুই আছিস যদি তোর লিডার আগুনের তোকে প্রয়োজন হয় তাহলে তুই কাকে চুজ করবি আগুনকে না কি নিজের বাবাকে।মনে রাখিস আমার বাবা দীপ্ত আসার অপেক্ষায় আছি আমি।একবার সে আসলেই আগুনকে সরিয়ে আমার বাবা হবে মাফিয়া।’
অভিনব শান্ত গলায় কিছু কথা বলে চলে গেল,
-‘পাগলেরা নিজেদের দুনিয়ায় মত্ত থাকে তাদের সম্পর্ক বাস্তব পৃথিবী থেকে অনেক আলাদা হয়।এতে তাদের দোষ নেই কারণ তাদের মস্তিষ্ক তো আর পাঁচটা সাধারণ মানুষের মতো নয়।আশা কি বলেছি তা তুই বেশ ভালো মতোই বুঝতে পেরেছিস।’
দুর্জয় রাগে ফুঁসছে আর অভিনবর যাওয়ার দিকে তাকিয়ে আছে।শুধু বন্দুকটা তার হাতে থাকলে অভিনবকে এই মুহুর্তে শ্যুট করে দিতো।ঠান্ডা মাথায় অপমান করাটা অভিনব বেশ ভালোই জানে।
আরও গল্প পড়তে আমাদের গুপ এ জয়েন হউন
অভিনব আবার অপারেশন থিয়েটারের সামনে গিয়ে দাঁড়ায়।সারিকা,সুহানা,অন্তি,শুভ্র এবং শুভ্রর পরিবার সবাই উপস্থিত।অভিনব গিয়ে অন্তির পাশে বসে।লাল বাতিটা বন্ধ হতেই দুইজন ডাক্তার বেরিয়ে আসে।হাসিমুখে উত্তর দেয়,
-‘আল্লাহর রহমতে অপারেশন সাক্সেসফুল।রোগী সুস্থ আছে একদিন আইসিউতে রাখতে হবে।’
সবাই খুশি হয়ে আল্লাহর কাছে শুকরিয়া আদায় করে।অর্ণবকে বের করা হয় এরপর একনজর সবাই দেখে তারপর আইসিউতে শিফ্ট করা হয়।
অভিনব মনে মনে বলে,
-‘আল্লাহ্ ড্যাডের সুস্থতার জন্য তোমার কাছে লাখ লাখ শুকরিয়া।আজ থেকে আর কখনো আমি ড্যাডের অযত্ন হতে দেবো না ছায়ার মতো তার পাশে থাকবো।’
সবার চোখে খুশির অশ্রু।অর্ণব অপারেশনের পূর্বে যেভাবে কথা বলেছিল সবাই ভেবেছিল অর্ণবের না জানি কি হয়ে যায়।মানুষ মৃত্যুর পূর্বে নিজের যত হিসাব নিকাশ আছে তা সম্পর্কের হোক কিংবা অর্থের সেটার জটিলতা খুলে দেয়।অর্ণব নিজের কাছের মানুষদের নিজের মনের কথা সব খুলে বলেছিল যেন মৃত্যুর পর তার কোনো আফসোস না থাকে এই বিষয়ে।জন্ম এবং মৃত্যু দুটোই আল্লাহর হাতে।তাঁর চাওয়ার আগে আমাদের মতো সাধারণ মানুষের সব কথাই অর্থহীন।
অন্তি আর অভিনব বাসায় এসেছে চেন্জ করার জন্য।অন্তি চেন্জ করে বের হয়ে চুপচাপ স্টাডি রুমে বসে থাকে।অভিনব ওয়াশরুম থেকে বের হয়ে বলল,
-‘চলো খাওয়া দাওয়া করবে প্রায় একদিন হয়ে গেছে তুমি কিছুই খাওনি।’
-‘আপনার বাবা আপনাকে কতো ভালোবাসে তাই না?শুধু প্রকাশ করে না।প্রকাশ করা অনুভূতির চেয়ে অপ্রকাশিত অনুভূতিগুলো বেশি মূল্যবান হয়।আমার বাবা আমাকে কেন ভালোবাসলো না।সে থাকলে আমার জীবনটা এমন হতো না।আপনার হয়তো আমাকে বাধ্য হয়ে করতে হতো না।একটা কথা বলুন মারিহা আপনাকে ছেড়ে না গেলে আপনি কি কোনোদিন আমাকে বিয়ে করতেন?সেটা যতই নিজের সম্পত্তি রক্ষা করতেই হোক না কেন?’
অভিনব ভাবেনি অন্তি এমন কথা এই সময় বলবে।অভিনব একটা ছোট্ট নিঃশ্বাস ছেড়ে বলতে শুরু করে,
-‘আমরা কেউই জানি না আমাদের ভবিষ্যত কি তবুও আমরা সিদ্ধান্ত নেই।মারিহাকে ভালোবাসার আগে আমি জানতাম না আমাদের ভালোবাসার পরিণতি সুখকর হবে না কি দুঃখের।শুধু জানতাম মেয়েটাকে ভালোবাসতে হবে।ও আমার ভালোবাসার মূল্য না দিয়ে সাত বছর আগে আমাকে ছেড়ে চলে গেছে।এরপর তুমি আমার জীবনে এলে।না আমি তোমাকে ভালোবাসতাম আর না তুমি আমাকে।কিন্তু সময় চক্রের ঘুর্ণনের সাথে সাথে আমাদের মনে একে অপরের জন্য অনুভূতির জন্ম হয়েছে।সবার ভালোবাসার শুরু হয় ভালো লাগা দিয়ে আর আমাদেরটা শুরু হয় ঝগড়া,খারাপ লাগা দিয়ে।আর আজ আমরা একে অপরকে ভালোবেসে সারাজীবন সাথে থাকার সিদ্ধান্তে আবদ্ধ হয়েছি।এই সবটাই ছিল উপর থেকে ফিক্স করে দেওয়া।আল্লাহ্ আমার জন্য বেস্ট ভালোবাসা রেখে দিয়েছিল যা তুমি হয়ে আমার জীবনে এসেছে।আমি নিজেকে লাকি মনে করি মারিহার আমাকে ছেড়ে যাওয়া নিয়ে কারণ ওর মতো বেইমান চলে যাওয়াতে আমি আমার এংগ্রিবার্ড, আমার অন্তিকে পেয়েছি।’
অন্তি কেঁদে দিয়ে বলে,
-‘আমি জানি না আমার এতো কান্না কেন পাচ্ছে।আপনার সব কথা শুনেই আমার কাঁদতে ইচ্ছে করে আজকাল।’
অন্তির এমন বাচ্চা বাচ্চা কথা শুনে অভিনব হেসে দিয়ে চেয়ারে বসে থাকা প্রিয়তমাকে জড়িয়ে ধরে দাঁড়িয়ে থাকা অবস্থায়।অন্তি অভিনবর হাত ধরে বলে,
-‘আপানার শরীরের ঘ্রাণে আমার আমার আপনাকে কামড় দিতে ইচ্ছে করছে।’
–‘কামড় দিলে আমিও তোমাকে দেব আগের কামড়ের দাগ তো এখনো আছে মনে হয়।’
অন্তি চুপ করে বসে থাকে এরপর অভিনব নিজেই নীরবতা কাটিয়ে বলে,
-‘আচ্ছা অন্তি তোমার বাবা যদি তোমার কাছে হঠাৎ ফিরে আসে আর নিজের হারিয়ে যাওয়ার কারণ বলে তোমার কাছে ক্ষমা চায় তাহলে কি তুমি ক্ষমা করবে না?,,কারণটা যথোপযুক্ত সে নিজ স্বার্থে এমনটা করে নি সে হয়তো অসহায় ছিল।’
অন্তি কিছুক্ষণ চুপ থেকে চোখ মুছে বলে,
-‘জানি না তবে যদি তার হারিয়ে যাওয়ার কারণটা সত্যিই অনেক বড় হয় তখনও আমি হয়তো তাকে মুখে ক্ষমা করলেও মন থেকে ক্ষমা করতে পারবো না।কারণ আমার মা মারা গেছে আল তখনও সে অনুপস্থিত ছিল আমি অনাথ আশ্রমে দুঃখ কষ্ট নিয়ে বড় হয়েছি তখনও সে ছিল না।’
অভিনব কিছুক্ষণ চুপ থেকে বলল,
-‘তোমার বাবাকে কখনো দেখেছো?’
-‘নাহ্ তবে নানুর কাছে শুনেছি ওনার চেহারা না কি আমার মতোই অনেকটা।’
অভিনব মনে মনে বলল,
-‘তোমার বাবাকে তুমি দেখেছো খুব কাছ থেকে দেখেছো।সত্যিই তোমাদের দুজনের চেহারায় অনেক মিল আছে।আমি তোমাদের দুজনের দেখা করাবো খব শীঘ্রই শুধু এখন এটা জানার অপেক্ষা সিক্রেট এজেন্ট থেকে আগুন স্যার কিভাবে ব্ল্যাক শ্যাডো গ্যাঙ্গের মেম্বার হলো?আর এতোগুলো বছর সে কেন নিজের স্ত্রী পরিবার পরিজনের কথা ভুলে একা একা থেকেছে?সম্পূর্ণ সত্যটা উদ্ঘাটন করেই তোমাদের বাবা মেয়েকে একে অপরের সামনা সামনি আনবো।’
অর্ণব এখন অনেকটাই সুস্থ তাকে বাসায় আনা হয়েছে আজ দশ দিন পর হসপিটাল থেকে।ফুল বেড রেস্টে থাকতে বলা হয়েছে এক মাস।অর্ণব অন্তি আর সারিকার কান্ড কারখানা দেখে হাসবে না কাঁদবে বুঝতে পারছে না।একটু পর পর ফল,জুস এছাড়া কোনো না কোনো খাবার নিয়ে হাজির হচ্ছে এরা।অর্ণব বেচারা এদের কিভাবে বোঝাবে সে রাক্ষস না যে এতো খাবার খাবে?সুহানা হেসে বলল,
-‘এভাবে এরা তোমার যত্ন করতে থাকলে আমি একটু স্বস্তির নিঃশ্বাস নিতে পারবো।যাইহোক খাবার ঠিকমতো খাও আমি একটু ঘুমাই।’
অর্ণব করুন গলায় বলল,
-‘প্লিজ এদের বলো আমার ইচ্ছে হলে আমি নিজেই খাওয়ার কথা বলবো আর খাবার না আনতে।’
সুহানা হাসতে হাসতে মাটিতে গড়াগড়ি খাবে কথাটা শুনে এমন একটা অবস্থা।সারিকা আর অন্তি রুমে ঢুকে এই হাসি দেখে বোকার মতো তাকিয়ে থাকে।
অন্তি বিছানার উপর ধপ করে শুয়ে পড়ে অভিনবকে আঙ্গুলের ইশারা করে বলে,
-‘টেরিকে খাবার দিয়ে দিন আমি একটু ক্লান্ত।’
অভিনব ভ্রু কুঁচকে দুই হাত আড়াআড়ি নিজের বুকে রেখে বলে,
-‘তুমি আমাকে অর্ডার দিচ্ছো এতো বড় সাহস!’
অন্তি গর্জে উঠে বলল,
-‘এসাইনমেন্ট করে কম্পিউটারের সামনে বসে বসে আমার কোমর ধরে গেছে।আমার বাজে অভ্যাস তো আপনি জানেনই আমি নিজে সাফার করলে অন্যকে সাফার করতে বাধ্য করি।তাই বলছি যা বলছি তা করুন না হলে আজকের এবং আগামী সাতদিনের রাত ঐ সোফায় ঘুমিয়ে কাটানোর জন্য প্রস্তুত হয়ে যান।’
সাথে থেকো প্রিয় পর্ব ৪০
অভিনব শুকনো ঢোক গিলে সোফায় ঘুমাবে সে?নাহ্ এর চেয়ে ভালো তার সুইট কিউট বউ যে এই মুহুর্তে তাকে একটা অর্ডার দিয়েছ সে সেটাই পালন করবে।
অভিনব কাজটা করে বিছানায় অন্তি পাশে শুয়ে পড়ে অন্তির দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে কপালে ভালোবাসার স্পর্শ দিয়ে বলল,
-‘ঘুমাও।’
-‘আচ্ছা একটা কথা বলার ছিল।’
-‘হুম বলো।’
-‘মাহির স্যার আপনার সঙ্গে কথা বলতে চান।আমাকে অনেক রিকোয়েস্ট করেছেন।’
অভিনব চুপ করে থাকে জবাব দেয় না সে।মাহির সেদিন সত্যি জানার পর ওর সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেছে কিন্তু অভিনব করতে চায় না।একটা কথা আছে,’বন্ধু রূপের শত্রুরা সাধারণ শত্রুর চেয়ে বেশি ভয়ানক।’
মাহির তাদের মধ্যেই একজন ছিল।অভিনব ছয় বছর আগে হাজারবার বলেছিল সে নির্দোষ কিন্তু মাহির বিশ্বাস করে নি আর আজ নিজের বোনের কথায় সব বিশ্বাস করে ক্ষমা চাইতে এসেছে।