সাথে থেকো প্রিয় - Golpo Bazar

সাথে থেকো প্রিয় পর্ব ৪২ || হঠাৎ বিয়ে ভালোবাসার গল্প

সাথে থেকো প্রিয়

সাথে থেকো প্রিয় পর্ব ৪২
লেখক:রিয়ান আহমেদ

অভিনব অফিসে চুপচাপ বসে বসে মিটমিট হাসছে আর ভাবছে,
-‘ওকে আমি অনেক মিস করছি।,,আচ্ছা ও কি আমাকে মিস করছে?উফফ আমি বোধহয় পাগল প্রেমিক হয়ে যাচ্ছি নিজের স্ত্রীর।’
কেবিনে কেউ প্রবেশ করার জন্য টোকা দেয়।অভিনব এতক্ষণ কাজ বাদ দিয়ে স্ত্রীর ভাবনায় ব্যস্ত ছিল।কিন্তু ব্যাপারটা যদি কেউ দেখে তবে কি ভাববে?অফিসে বস চেয়ারে আরাম করে বসে আছে আর মিটমিট করে হাসছে?নাহ্ ব্যাপারটা অতি লজ্জাজনক।অভিনব চেয়ারে সোজা হয়ে বসে একটা ফাইল হাতে নিয়ে গম্ভীর ভঙ্গিতে দেখতে থাকে।এরপর ব্যস্ত চোখে সামনে তাকাতেই সে চোখ বড় বড় করে ফেলে আর বলে,
-‘তুমি এখানে?আমি বিশ্বাস করতে পারছি না।’
বিধান ভ্রূ কুঁচকে ভাবলো,

-‘স্যার কি বলছেন এসব?আমার এখানে থাকাটা তার জন্য অস্বাভাবিক?’
এইবার আসি অভিনবর দিকে।অভিনব আসলে বিধানের জায়গায় অন্তিকে কল্পনা করছে।অভিনব মুগ্ধ হয়ে মনে মনে বলল,
-‘ওয়াও আজ তোমাকে কি সুন্দর লাগছে।তুমি সকালে আমার বলে দেওয়া শাড়িটা পড়েছো।আমি সত্যিই বিশ্বাস করতে পারছি না তুমি এখানে এসে আমাকে এভাবে সারপ্রাইজ করবে।’
অভিনব চেয়ার ছেড়ে উঠে দাঁড়িয়ে মন কাড়া হাসি দিয়ে স্টাইল মেরে বিধানের দিকে এগিয়ে যায়।বিধান চোখ বড় বড় করে বলল,
-‘আপনি উঠে আসছেন কেন?আপনার কিছু প্রয়োজন হলে আমাকে বলুন আমি এনে দিচ্ছি।’
অভিনব হেসে বলল,
-‘আমার তো তোমাকে প্রয়োজন।’
বিধান চোখ বড় বড় করে ফেলল,
-‘আ,,,আমাকে?আপনার মাথা ঠিক আছে তো?’
অভিনব বিধানের একেবারে কাছে এসে পড়েছে।সে বিধানের গলায় হাত রাখতেই বিধান চেঁচিয়ে উঠে বলল,
-‘স্যারররররর আপনি কি বলছেন এসব আপনি কি গেয়।’
তখনই গেট খুলে অন্তি বিধান আর অভিনবকে এমনভাবে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে চিৎকার শুরু করে,

আরও গল্প পড়তে আমাদের গুপ এ জয়েন হউন

-‘আআআআআআ।’
অভিনবর হুস ফিরে চোখের পলক ফেলে সে দেখে যাকে সে অন্তি ভেবে ধরে আছে সে আসলে তার সেক্রেটারি বিধান যে শাড়ি নয় বরং কালো স্যুট পড়ে আছে।অভিনব ছিটকে দূরে সরে যায় আর চোখ বড় বড় করে অন্তির দিকে একবার তো একবার বিধানের দিকে তাকিয়ে বলে,
-‘আ,,আমি আসলে?বিধান দেখো আমি তোমাকে তুমি ভেবে ধরি নি আসলে,,আমি,, অন্তি দেখো তুমি যা ভাবছো আমি তা করি নি।’
বিধান বলল,
-‘স্যার আপনার হয়তো বিশ্রামের প্রয়োজন,, ম্যাম আপনার সাথে দেখা করে ভালো লাগলো আসছি।,,,ওহ্ যেই কাজে এসেছিলাম সেটাই তো ভুলে গেছি।’
বিধান একটা কার্ড অন্তির হাতে দিয়ে বলল,
-‘ম্যাম আমার বিয়ে আগামী শুক্রবারে আমার বিয়ে।আপনারা পুরো পরিবার সমেদ আসবেন আশা করছি।স্যারকেই কার্ডটা দিতে এসেছিলাম কিন্তু আপনার সঙ্গে যেহেতু দেখা হয়ে গেল স্যার একটু অদ্ভুত আচরণ করছে তাই আপনাকেই দিলাম।’
অন্তি স্বস্তির নিঃশ্বাস ছেড়ে বলল,

-‘ওহ তোমার বিয়ে হচ্ছে?’
-‘জ্বী আমি আপনাকে সেটাই তো এতক্ষণ বললাম।’
অন্তি অভিনবর দিকে সরু চোখে তাকিয়ে বিধানের দিকে তাকিয়ে মিষ্টি হেসে বলল,
-‘বাহ্ ভালো তা লাভ ম্যারেজ নাকি এরেন্জ ম্যারেজ?’
বিধান লজ্জা পাওয়ার ভঙ্গিতে বলল,
-‘জ্বী লাভ ম্যারেজ তবে আমরা পরিবারের সম্মতিতেই বিয়ে করছি।এতোদিন ওর ইন্টার্নি শেষ হওয়ার অপেক্ষা করছিলাম।’
অন্তি দুই ভ্রূ নাচিয়ে মজা করে বলল,
-‘ওহো বিধান মশাই তো ডাক্তার বিয়ে করছেন।সে কি আপনার মনের চিকিৎসা করে না কি সারাদিন?’
বিধান মুচকি হেসে উত্তর না দিয়ে বিদায় জানে স্থান ত্যাগ করলো।অন্তি এবার ডোর লক করে কোমরে হাত দিয়ে অভিনবর দিকে তাকিয়ে রাগী গলায় বলল,

-‘ছিঃ ছিঃ আপনি অফিসের ছেলে এম্প্লই এর সঙ্গে এরকম বিহেভ করেন?আমার জানা মতে তো আপনি মেয়ে পছন্দ করতেন তাহলে আপনার কি এমন হলো যে আপনি ছেলেদের প্রতি আকৃষ্ট হতে শুরু করেছেন?’
অন্তি সোফায় বসে নিজের কপাল চাপড়াতে চাপড়াতে কান্না কান্না ভাব নিয়ে বলল,
-‘অন্য লোকের ঘরে মেয়ে সতীন আনে আর এই লোক আমার জন্য ছেলে সতীনের ব্যবস্থা করছে।এই দুঃখ আমি কাকে বলি?,,আজ উনি একটা নির্দোষ ছেলের ইজ্জত লুটতে চেয়েছেন।আল্লাহ্ আমি কি করবো তুমি বলে দেও।’
অভিনব ভড়কে গিয়ে অন্তির কাছে যেতে যেতে বলল,
-‘তুমি আমাকে ভুল বুঝছো আমি বিধান তুমি ভাবছিলাম।তুমি ভেবে আমি ওর কাছে গিয়েছিলাম বিশ্বাস করো আমি পৃথিবীর একজন নারীকেই নিজের মন এবং দেহর অর্ধেক দিয়েছি সে হলো অন্তিকা রাহমান অন্তি।’
অন্তি কথাটা শুনে একেবারেই কান্না থামিয়ে দেয় আর অভিনবর দিকে তাকিয়ে নাক টানতে টানতে বলে,
-‘দিনে দুপুরে আপনি আমাকে কল্পনা করছেন পরপুরুষের মধ্যে!আপনি কি কিছু খেয়েছেন নাকি?’

-‘না আমি কিছু খাইনি।’
অন্তি এবার চিন্তিত হয়ে এগিয়ে এসে অভিনবর মাথায় গালে হাত দিয়ে চেক করতে করতে বলল,
-‘আপনি কি তাহলে অসুস্থ?হ্যা আল্লাহ্ আজ যদি সেক্রেটারি বিধানের জায়গায় কোনো মেয়ে হতো তাহলে তো আমাদের ডিভোর্স হয়ে যেত এতক্ষণে,,এটা তো সিরিয়াস সমস্যা আমাদের মানসিক রোগের ডাক্তারের কাছে যেতে হবে।’
অভিনব অন্তির হাত খপ করে ধরে অন্তিকে একেবারে নিজের কাছে নিয়ে আসে।
অন্তি ছুটতে চাইলে অভিনব তার কোমর পেঁচিয়ে ধরে হেসে বলল,
-‘এই মুহূর্তে আমার সবচেয়ে জরুরি ওষুধ হচ্ছো তুমি মাই ডিয়ার এংগ্রিবার্ড।’
অন্তি কাঁপা কাঁপা গলায় বলল,
-‘ছা,,ছাড়ুন কেউ এসে পড়লে কি ভাববে?’
-‘তুমি নিজেই দরজা লক করে দিয়েছো কেউ আসবে না।আর আসলেও কি বলবে?আমি হলাম বস আমাকে কিছু বললে একেকটাকে ফায়ার করে দেব।’
অন্তি দরজা লক করার জন্য এবার আফসোস করতে থাকে।অভি ঘোর লাগা গলায় বলল,
-‘তোমাকে কালো শাড়িতে অসাধারণ লাগে।মাশাল্লাহ্ আমি সত্যিই পারলে এই চকলেটাকে এখন খেয়ে ফেলতাম।কিন্তু আফসোস বৌটাকে খেয়ে ফেললে পরে নিজেরই কান্না করতে হবে।তবে একটা বাইট তো দেওয়াই যায়।ইউ নো লাভ বাইট।’
অন্তি রেগে বলল,

-‘আপনি এমন ওয়াইল্ড আচরণ কেন করছেন?বৌকে কেউ এভাবে বলে?’
-‘তো কিভাবে বলে?’
অন্তি গলা খাকাড়ি দিয়ে বলল
-‘এই ধরুন বলবেন,,তোমার চোখ যেন প্রেমের সাগর আমি এই সাগরে ডুব দিতে চাই,,বা বলবেন,,,তোমার কেশের মিষ্টি গন্ধ আমাকে উন্মাদ করে দিচ্ছে।এভাবে বউয়ের প্রশংসা করতে হয় বুঝলেন।’
-‘ওয়াও,,,কিন্তু আমি নিজের মতো করে বলবো।’
-‘বলুন।’
-‘তোমার চকলেটি চোখের সাগর থেকে আমি চকলেট পান করতে চাই।,,তোমার কেশের মিষ্টি ঘ্রান সারাদিন ভড়ে নিতে চাই কারণ সেটার ঘ্রাণটাও অনেক চকলেটি।’
অন্তি মুখ কুঁচকে বলল,
-‘সবকিছুতেই চকলেট!,,যাইহোক এখন চলুন খাবার খেয়ে নেবেন খাবার ঠান্ডা হয়ে যাচ্ছে।এরপর আর খেতে ভালো লাগবে না।’
-‘তুমি আমাকে আদর করে যেটা খাওয়াবে সেটাই আমার ভালো লাগবে।’
অন্তি খাবার টেবিলে সাজাতে সাজাতে বলল,

-‘তাহলে আজ রাতে আপনার জন্য সাধারণ খাবার রান্না হবে না।আপনাকে ঝাড়ুল বারি খাওয়াবো আমার এই নরম হাতে।যেন ভবিষ্যতে অন্য কোনো ছেলে মেয়ে কাউকে আমি ভেবে তার কাছে না যেতে পারেন।’
অভিনব ঢোক গিলে জোরপূর্বক হেসে বলল,
-‘আর কোনোদিন এই ভুল হবে না।তবুও তোমার এই নাদান স্বামীকে অভুক্ত রেখো না।’
-‘ওকে রাখছি না।তবে মনে রাখবেন আর যেন এই ভুল না হয়।,,,কি সাংঘাতিক ব্যাপার বিধান নিশ্চিত ভেবেছে আপনার জেন্ডারে সমস্যা আছে।’
অভিনব কিছু বলল না।কারণ সে বুঝতে পারছে অন্তি তার লেগ পুল করছে।

সারিকা আর শুভ্র একটা পুরাতন ভাঙ্গাচুরা হসপিটালের সামনে নিজেদের প্রোডাকশন টিম নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে।সারিকা ক্যামেরা দিয়ে চারপাশ দেখে হেসে বলল,
-‘পারফেক্ট স্পট এরচেয়ে বেশি ভালো ভুতুরে জায়গা আর হতেই পারে না।’
শুভ্র মুখ ভেংচে বলল,
-‘হুহহ ভালো আবার ভুতুরে জায়গা!ভুত টুত বলতে কিছুই হয় না।এসব মানুষকে ভয় দেখানোর জন্য কাল্পনিকভাবে মানুষ নিজেই তৈরি করেছে।’
-‘কিন্তু আশেপাশের মানুষ অভিযোগ করেছে এখানে ভুত আছে।তারা এই রাস্তা দিয়ে যাওয়ার সময় ভুত নাকি তাদের জিনিসপত্র কেড়ে নেয়।তাই আজ আমরা সেই ভুতের রহস্য সমাধান করবো।আর তুমি কেন এসেছো?’
-‘আমি ভাইস প্রেসিডেন্ট আমি যেখানে ইচ্ছা সেখানে যাব এতে তোমার কি?আর আমার ফিয়ন্সের খেয়াল রাখা আমার দায়িত্ব।’
-‘আপনার দায়িত্ব আপনার কফির কাপটা ঠিকমতো ধরা।আপনার হাত তো কাঁপছে যার কারণে কাপ থেকে কফি অর্ধেক পড়ে গেছে।’
শুভ্র তাকিয়ে দেখে আসলে তাই ঘটেছে।সারিকা শুভ্রর কাছে গিয় মিটমিট করে হেসে ফিসফিস করে বলে,
-‘শুভ্র তুমি এখনো সেই স্কুলের মতো ভুত ভয় পাও তাই না?সেই ভয়েই তোমার হাত কাঁপছে।’

শুভ্র সাহসী মানুষের মতো বুক ফুলিয়ে বলল,
-‘একদম না।আমি ভুত টুত না কখনো ভয় পেয়েছি আর না কখনো পাবো।হুহ ,,আর এটা তো আমার পছন্দ হয়নি তাই আমি ফেলে দিচ্ছিলাম।’
সারিকা এখনো হাসছে এরপর বলে,
-‘ওকে ওকে মানলাম আর সবাই চলো ভিতরে।’
সবাই এগিয়ে গেলেও শুভ্র দাড়িয়ে আছে সে নিজে ভেতরে ভেতরে ভীষণ ভয় পাচ্ছে।এই হসপিটালটা তাকে তার স্কুলের পাশের রাস্তার ভূতের বাড়ির কথা মনে করিয়ে দিচ্ছে।শুভ্র কপালে ঘাম রুমাল দিয়ে মুছে নিজেকে নিজে বলল,
-‘শুভ্র তুই সাধারণ একটা অবাস্তবিক বস্তুর প্রতি ভয় পোষণ করছিস।এগিয়ে যা আল্লাহর নাম নিয়ে কিছুই হবে না।’
সারিকা আর শুভ্র একসাথে হাঁটছে।হঠাৎ কারো হাসির শব্দ আসতে শুরু করে।শুভ্র ভয় পেয়ে সারিকার হাত ধরে টেনে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে বলল,

-‘চলো এখান থেকে।ভূত তোমার ক্যামেরার সামনে মডেল হয়ে দাঁড়ানোর জন্য বসে নেই।একবার আমাদের পেলে ঘাড় মটকে রক্ত পান করবে।’
সারিকা ইশারায় চুপ করতে বলে বলল,
-‘হুসস কথা বলবেন না হাসির শব্দ যেখান থেকে আসছে সেখানে চলুন।’
-‘কিন্তু,,,।’
-‘কোনো কিন্তু না আমার পেছনে আসুন।’
সারিকা এগিয়ে যেতে যেতে শুভ্রকে বলল,
-‘এই হসপিটালের একটা মর্মান্তিক কাহিনী আছে শুনবেন?’
-‘না শুনালেই খুশি হবো।’
সারিকা নেগেটিভ উত্তর পেয়েও ভূতের গল্প বলার মতো করে নিজের কাহিনী চালিয়ে যায়।
-‘এই হসপিটালে আগে একটা ডাক্তার ছিল যে একটা বৈদ্যুতিক শক খেয়ে পাগল হয়ে যায়।এরপর সে সব রোগীকে বৈদ্যুতিক শক দিতে থাকে।কিছু রোগী এই কারণে মারা।তারপর সরকার এই বিষয়ে জানতে পেরে হসপিটাল বন্ধ করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়।কিন্তু সেই পাগল ডাক্তার রেগে গিয়ে হসপিটালে আগুন লাগিয়ে দেয় এরপর সে সহ অনেক রোগী মারা যায়।’
শুভ্রর শরীর কাঁটা দিয়ে উঠে এমন ভয়ানক পরিবেশে ভয়ানক গল্প শুনে।সে সারিকার হাত ধরে ছোট বাচ্চাদের মতো হাঁটতে থাকে।

দুজনে একটা রুমের সামনে গিয়ে পৌছালো।রুমের দরজা খুলে যা দেখলো তাতে দুজনেই হতবাক।একটা মেয়ে কয়েকমাস বয়সের শিশুকে নিয়ে একটা মাদুর পেতে বসে আছে।তাদের অবস্থা কতটা করুণ তা জীর্ণ সীর্ণ জামাকাপড় বলে দিচ্ছে।সারিকাকে দেখে মেয়েটা নিজের বাচ্চাকে নিয়ে কিছুটা দূরে সরে যায়।পারলে হয়তো সে দেয়ালের সাথে মিশে যেত।মেয়েটা ভয় পেয়ে বলল,
-‘আমার বোনকে আমি কারো কাছে দেব না।চলে যাও তোমরা এখান থেকে।’
তখনই একটা কুকুর দৌড়ে আসে মেয়েটার সামনে দাঁড়িয়ে ঘেউ ঘেউ করতে থাকে।সারিকা ধীরে ধীরে কুকুরটাকে শান্ত করে মেয়েটাকে বলে,
-‘তুমি কে?এখানে কি করছো তোমার ভয় করছে না এখানে?’
মেয়েটা উন্মাদের মতো হাসতে শুরু করে আর বলে,
-‘আমি চিনি।ভয় তো আমি মানুষকে পাই।যেদিন আমার বোনটা হওয়ার পর আমার মা মারা যায় তার ঠিক পরেরদিন আমার বাবা আমাদের উপরে অত্যাচার শুরু করে সৎ মাকে নিয়ে।বাধ্য আমার দুই মাসের বোনটাকে নিয়ে আমি বাড়ি থেকে পালিয়ে যাই।সেদিন অন্ধকারে রাস্তায় ঘুরতে ঘুরতে যখন কয়েকটা চিলের চোখ আমার দিকে পড়ে তখন আমি তাদের থেকে পালিয়ে এই বাড়িতে এসে লুকাই।এই বাড়ির জীর্ণশীর্ণ আমার কাছে আমার বাবার বাড়ি থেকে বেশি ভালো মনে হয়েছে।আমি নিজেকে মানুষের থেকে লুকাতেই এখানে থাকি।’
শুভ্র বলল,

-‘তুমিই কি তাহলে মানুষকে ভূতের ভয় দেখিয়ে তাদের খাবার চুরি করো।’
-‘হ্যা আমার এই কুকুর সঙ্গী আমাকে এই কাজে সাহায্য করে।আর ভূত হা হা আসল শয়তান তো মানুষ নিজেই,,তাদের কারণেই পৃথিবীতে খারাপ কাজের বৃদ্ধি পেয়েছে।এবার আপনারা এখান থেকে চলে যান আমার বোন ঘুম থেকে জেগে মানুষ দেখতে পছন্দ করে না।’
শুভ্র আর সারিকা কোলের বাচ্চাটাকে দেখে দ্রুত তার দিকে এগিয়ে যায় আর বলে,
-‘এই বাচ্চাটার শরীর তো কেমন সাদা হয়ে গেছে সে অসুস্থ।’
মেয়েটা বলল,
-‘একদম ছুবে না আমার বোনকে।’
শুভ্র আর সারিকা বুঝতে পারে মেয়েটা মেন্টালি আনস্টেপল।

সাথে থেকো প্রিয় পর্ব ৪১

শুভ্র আর সারিকা বাচ্চাটাকে আর মেয়েটাকে হসপিটালে পাঠিয়ে দিয়েছে আর পুলিশকে এই বিষয়ে ইনফর্ম করে দিয়েছে।দুজনে রাস্তায় একসাথে হাত ধরে হাঁটছে এটা শুভ্রর ইচ্ছে।সারিকাও আর মানা করে নি।
সারিকা হাঁটতে হাঁটতে বলল,
-‘শুভ্র আপনি আমাকে নিয়ে কি কোথাও যাওয়ার স্বপ্ন দেখেছেন কখনো?’
-‘হুম আমি তোমাকে নিয়ে কাশ্মীর যেতে চাই।বিয়ের পর আমরা হানিমুনে যাব।’
-‘আমি আপনাকে একটা জরুরি কথা বলতে চাই।’
শুভ্র অতি আগ্রহ নিয়ে বলল,
-‘কি?’
-‘আমি ফুচকা খেতে চাই।’

-‘এই তোমার জরুরি কথা তাহলে চলো আজ তোমাকে তোমার শাশুড়ি আর ননদের হাতের ফুচকা খাওয়াবো এমনিতেও আমার বোন হাফসা অনেকদিন যাবত তোমাকে দেখতে চাইছে।’
-‘ওকে চলুন।’
সারিকা শুভ্রর বাড়িতে গিয়ে সবার সাথে অনেক আনন্দ করলো।প্রথমবার হবু শশুড় বাড়িতে গিয়েছিল তাই সবাইকে কিছু না কিছু উপহার দিতে ভুলেনি।

সাথে থেকো প্রিয় পর্ব ৪৩

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.