সাথে থেকো প্রিয় - Golpo Bazar

সাথে থেকো প্রিয় পর্ব ৪৩ || ভালোবাসার স্পর্শ গল্প

সাথে থেকো প্রিয়

সাথে থেকো প্রিয় পর্ব ৪৩
লেখক:রিয়ান আহমেদ

অভিনব আর অনন্ত গাড়িতে বসে কোথাও যাচ্ছে।অভিনব এখন অনন্তকে সম্মান করার সাথে সাথে ভয়ও পায় কারণ তার এংগ্রিবার্ড এর বাবা এই লোক মানে তার শশুড়।অনন্ত হতাশ গলায় বলল,
-‘তুমি এখনো আমার স্ত্রী আর মেয়ের খোঁজ বের করতে পারো নি।কেমন পাওয়ারফুল মানুষ তুমি!’
অভিনব মনে মনে বলে,
-‘আপনার মেয়ের খোঁজ আবার না পেয়েছি?আপনি মেয়েই তো সেই ব্যক্তি যে রাত দিন আমাকে থ্রেট দেয়।তার সাথে আমার প্রতিদিন দেখাও হয়, অতি মিষ্টি প্রেমালাপ ও হয় ,আর,, ভালোবাসাটাও হয়।যাইহোক আপনি শশুড় মানুষ আপনাকে এসব তো আর বলবো না।’
অভিনব নিচু গলায় বলল,

-‘জ্বী স্যার আমি চেষ্টা করছি।আসলে এতোগুলো বছর আগের এম্প্লই এর ইনফরমেশন কোনো কম্পানি রাখে না।হামিম শিকদার ঐ কম্পানি ছেড়েছে প্রায় ষোল বছর তাই তার বর্তমান ঠিকানাটা পাওয়া মুশকিল।’
অনন্ত বাইরের দিকে তাকিয়ে দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বলল,
-‘না জানি কেমন আছে আমার মেয়ে?আমার ওয়াইফ হয়তো আমাকে আমাকে ঘৃণা করতে শুরু করেছে।আমার মেয়ে,,,সে হয়তো জানে না তার বাবা তার খোঁজে আছে।’
অভিনবর কষ্ট লাগছে অনন্তর জন্য কিন্তু সে চাইলেই সবকিছু ঠিক করতে পারবে না। যতক্ষণ পর্যন্ত না অনন্তর মেন্টাল স্টেট স্বাভাবিক হচ্ছে কিংবা অন্তি অনন্তকে মেনে নেওয়ার জন্য প্রস্তুত হচ্ছে ততক্ষণ পর্যন্ত সবটাই গোপন রাখতে হবে।চারদিন আগের কথা অনন্ত নিজের স্ত্রীকে নিয়ে একটা বাজে স্বপ্ন দেখে ঘুম থেকে উঠার পর তার নোস ব্লিডিং শুরু হয়।এরপর কিছুক্ষণের মাঝেই অনন্ত জ্ঞান হারায়।ডাক্তার মারুফ বলেছেন,’সাধারণ ভয়ানক স্বপ্ন তার মস্তিষ্ক কিভাবে আঘাত করছে দেখলে?যদি সে নিজের স্ত্রীর মৃত্যুর বাস্তবতা জানতে পারে আর তার কাছে আপন বলতে কেউ না থাকে তখন কি হবে সেটা ভাবতে পারছো?’
অভিনব ভাবতে পেরেছিল।একটা কঠোর সত্য অনন্তর মৃত্যুর জন্য দায়ী হবে।

আরও গল্প পড়তে আমাদের গুপ এ জয়েন হউন

অভিনবর মোবাইল কল আসে।সে সেটা পিক করে গাড়ির সামনে মোবাইলটা দাঁড় করিয়ে দেয়।অভিনব বলল,
-‘পরে কথা বলবো একটু ব্যস্ত আছি।’
অন্তি খুশি হয়ে বলল,
-‘আপনার ব্যস্ততা নিজের কাছে রাখুন আমার কাছে একটা জরুরি প্রশ্ন আছে আপনার জন্য সেটা বলুন।নাহলে বাড়িতে আজ আপনার জায়গা হবে না।’
অনন্ত মুখ লুকিয়ে হাসলো।তার হাসিটা অভিনবর চোখ এড়ালো না অভিনব লজ্জা পেয়ে মনে মনে ভাবলো,
-‘আজ কেন যে ব্লুটুথ অফিসে ফেলে এলাম?এই মেয়ে শশুড়ের সামনে লজ্জা দিয়ে আমার বিনাশ করবে।’
অভিনব একটু রাগী গলায় বলল,
-‘অন্তি আমি বললাম তো আমি ব্যস্ত আছি রাখছি।’
অভিনব কল কাঁটার আগেই ফোনের ওপাশ থেকে একটা ভয়ংকর রাগী রাক্ষসী কন্ঠ ভেসে এলো।কিন্তু এটা তো আদৌ কোনো রাক্ষসীর কন্ঠ না এটা অন্তির কন্ঠ।আচ্ছা রেগে গেলে কি মেয়েদের কন্ঠ রাক্ষসীর মতো লাগে?প্রশ্নটার উত্তর খুঁজতে পারে না অভিনব তখনই অন্তি বলে উঠে,
-‘খবরদার ফোন রেখেছেন তো।আজকে আপনার জন্য ভয়ানক কিছু অপেক্ষা করবে। ,,,আজ আপনার মামার বাড়ির লোকজন আসছে মামনি(অন্তি এখন সুহানাকে মামনি বলে) আমাকে অনেকগুলো শাড়ি দিয়েছে বুঝতে পারছি না কোনটা পড়বো আপনি বলুন।’
অভিনব হার মেনে যায় আর তর্ক করার সাহস পায় না।

-‘বলো কেমন শাড়ি?’
-‘হুম একটা হচ্ছে সবুজ আর লালের মধ্যে অনেক সুন্দর এবং লাইট কাজ করা।’
-‘কোনো নীল শাড়ি আছে?’
-‘হুম আছে অনেক সুন্দর আমার ফেভরিট কিন্তু,,,,।’
-‘কোনো কিন্তু না সেটাই পড়বে রাখছি।’
অভিনব বিনা বাক্য ব্যয়ে ফোন কেঁটে দিল।অনন্ত হেসে বলল,
–‘তোমার স্ত্রীকে ভয় পাও নাকি?’
অভিনব শুকনো হাসি দিল।মুখে কিছু না বললেও মনে মনে বলল,
-‘হ্যা আপনার মেয়ে আপনার মতো।’
হঠাৎ গাড়ির সামনে কিছু একটা এসে ধাক্কা লাগলো।কোনো লোক হয়তো চারপাশে বন জঙ্গলের মতো এখানে মানুষ কিভাবে আসে?অভিনব ভাবলো লোকটা আহত হয়েছে তাই সে অনন্তকে গাড়িতে বসে থাকতে বলে বের হলো।বের হয়ে লোকটার কাছে যেতেই দেখলো এটা আসলে কোনো মানুষ না একটা পুতুল ছিল যেটা তাদের গাড়ির সামনে রাখা হয়েছিল।অভিনব পেছন ঘুরার আগেই কেউ তার মাথায় জোরে আঘাত করে।অভিনবর শরীর একটু শক্তি বাকি ছিল সে পেছন ঘুরে তাকাতেই দুর্জয়ের শয়তানি হাসি দেখতে পায়।অভিনবর মুখ দিয়ে শুধু একটা শব্দই বের হয়,
-‘স্কাউন্ড্রেল!’
অভিনব আর কিছু বলতে পারার আগেই মাটিতে লুটিয়ে পড়ে।

অনন্তকে হাত পা বেঁধে একটা রুমে রাখা হয়েছে।অনন্ত এখনো অজ্ঞান সে জানে না কি হতে যাচ্ছে তার সাথে।দুর্জয় চেয়ারে বসে বসে হাসছে আর বলছে,
-‘ডিয়ার আগুন আংকেল ইউর লাইফলাইন উইল বি ওভার রিয়েলি ভেরি।আম জাস্ট ওয়েটিং ফর মাই ড্যাড।’
অনন্ত একটু নড়েচড়ে উঠতেই দুর্জয় বলল,
-‘ওহ জেগে গেছেন?বাহ্ এখন আপনার সঙ্গে একটু গল্প করা যাবে কি বলেন?’
অনন্তর মাথা ঝিম ধরে আছে ক্লোরোফর্ম এর কারণে।সে ঝাপসা ঝাপসা চোখে সামনে তাকিয়ে বোঝার চেষ্টা কে বসে আছে তার সামনে।
অনন্ত নিচু গলায় প্রশ্ন করলো,
-‘তুমি আমাকে এখানে কেন এনেছো?’
-‘আপনার মার্ডার করতে এনেছি কিন্তু তার আগে কিছু ফর্মালিটিস আছে সেগুলো পূরণ করতে হবে।’

অনন্ত অবাক হয়ে ভাবলো তার সামনে বসা ছেলেটা তাকে কেন খুন করতে চাইবে।দৃষ্টিশক্তি পরিষ্কার হতেই ছেলেটার চেহারা তার কাছে স্পষ্ট হলো।অভিনব তাকে এই ছেলের সম্পর্কে বলেছিল ছবিও দেখেছিল এই ছেলের সম্পর্কে একটা সংক্ষিপ্ত ব্যাখ্যা যা তাকে দেয়া হয়ে তা হলো,’নাম দুর্জয় আলম।বয়স ২৭ বছর।রেড জাইন্ট গ্রুপ যেটা ব্ল্যাক শ্যাডো গ্যাঙ্গের শত্রু তা এই ছেলে নিজের বাবার অবর্তমানে লিড করছে।রেড জাইন্ট গ্রুপের একমাত্র উদ্দেশ্য ব্ল্যাক শ্যাডো গ্যাঙ্গকে ধ্বংস করা কারণ এই গ্রুপটা তাদের কালো ব্যবসায় এর মাঝে বাঁধা হয়ে দাঁড়াচ্ছে।’
অনন্ত ঠান্ডা মাথায় ভাবছে এখান থেকে সে বের হবে কি করে?অভিনবকে মাথায় আঘাত করার পর উনি গাড়ি থেকে বের হতেই ওনাকে অজ্ঞান করে ফেলা হয় তাই এই জায়গাটা কোথায় তা ওনার জানা নেই।
অনন্ত ঠান্ডা গলায় বলল,
-‘আমাকে খুন করতে চাওয়ার কারণ?’
-‘কারণটা তো তুমিই বেশ ভালো করে জানো।যাইহোক তোমার সাথে কথা বলতে ভালো লাগছে না যাচ্ছি।’
দুর্জয় যাওয়ার আগে নিজের লোকদের বলল,
-‘এই ব্যাটার উপরে নজর রাখিস না হলে দেখা যাবে চোখের পলক ফেলতেই পাখি খাঁচা ভেঙ্গে পালিয়েছে।’

অভিনব চোখ খোলার পর নিজেকে একই জায়গায় পায়।হাত দিয়ে মাথা চেপে ধরে সে উঠে বসে কোনোমতে।গাড়ির সঙ্গে ঠেস দিয়ে বসে।চারপাশ অন্ধকার হয়ে গেছে মানে রাত হয়েছে অনেকটা সময়।অভিনব কোনোমতে দাঁড়িয়ে গাড়ির সামনে যায়।যা ভেবেছিল তাই হয়েছে এদের আসল উদ্দেশ্য ছিল অনন্তকে কিডন্যাপ করা।সিটের উপরে একটা কাগজ পায় সে।দ্রুত কাগজটা হাতে নিয়ে দেখে সেখানে একটা নাম্বার দেয়া আর নিচে লেখা,
-‘আগুনকে উদ্ধার করতে এই নাম্বারে কল কর।’
অভিনব কল করে ওপাশ থেকে কিছু বলার আগেই অভিনব বলল,
-‘তুই আমার সঙ্গে গেম খেলছিস?কিন্তু ভুলে
যাস না এই গেমে জয় বিজয়েরই হবে।’
ওপাশ থেকে গম্ভীর কন্ঠে কেউ বলল,
-‘হ্যা খেলছি।কিন্তু বিজয়ের তাজটা তোর মাথায় এবার যাবে না এবার আমি অনন্তকালের জন্য সেই তাজের মালিক হব।আমি দীপ্ত বলছি যে এবার থেকে গেমের পুরোটা কন্ট্রোল অক্টোবর করবে।’
অভিনব অবাক হয়ে বলল,

-‘দীপ্ত!’
-‘হ্যা দীপ্ত।আমি ফিরে এসেছি নিজের সিংহাসন দখল করতে।’
অভিনব তাচ্ছিল্য করে বলল,
-‘তোর সিংহাসন!রিয়েলি?একজন রাজা কখনো’ই কারো ভয়ে পালিয়ে বেড়ায় না।তুই গত দেড় বছর যাবত আমার থেকে বাঁচার জন্য নিজের দেশ ছেড়ে পালিয়েছিলি।কুকুরের মুখ থেকে খাবার কেড়ে নিলে সে শুধু ঘেউ ঘেউ করতে পারে।তুই আর তোর ছেলেও সেই কুকুর।’
দীপ্ত রেগে বলল,
-‘আমি কুকুর না কুকুর তো ঐ আগুন।বিশ বছর আগে যদি ঐ এক্সিডেন্টে আমার বাবার সঙ্গে ওর দেখা না হতো তাহলে আজ ব্ল্যাক শ্যাডো গ্যাঙ্গের উপর আমার আধিপত্য থাকতো।স্মৃতিশক্তি হারিয়ে যাওয়া একটা পাগলকে আমরা সাহায্য করেছিলাম।আর সে কি করলো?লিডারশিপ পাওয়ার কথা ছিল আমার কিন্তু আমার বাবা ওকে লিডার বানিয়ে দিল।কিন্তু আজ আমার কাছে নিজের অধিকার কেড়ে নেওয়ার ক্ষমতা আর সুযোগ সবটাই আছে।তুই চাইলেও এবার আর অনন্তকে বাঁচাতে পারবি না।’
অভিনব কথাগুলো মন দিয়ে শুনলো।তার মনে জেগে ওঠা এতদিনের প্রশ্নের অনেকগুলোই সে পেয়ে গেছে আজ।অভিনব বলল,

-‘এটা কোনো রাজার বংশধরের সিংহাসন না এটা ন্যায়বিচারকের সিংহাসন।তোর বাবা তোকে এর অধিকার দেয় নি কারণ তোর ভেতরে সেই গুন ছিল না।তোর ভেতরে কোনো ভালো গুন আদৌ কখনো ছিল বলে আমার মনে হয় না।’
-‘তুই আমার সঙ্গে এভাবে কথা বলার সাহস কোত্থেকে পেলি?ভুলে যাস না আমি চাইলেই তোকে আর তোর পরিবারকে ধ্বংস করে দিতে পারি।’
-‘আমার পরিবারের কারো গায়ে একটা টোকা দেওয়া তো দূরে থাক তাদের ছায়ার কাছে গেলেও তোকে শেষ করে দিতে আমার দ্বিধাবোধ হবে না।আর বললাম না কুকুর শুধু ঘেউ ঘেউই করতে পারে কিন্তু আমি হলাম সিংহ শিকার যত ধুর্ত হোক না কেন আমার হাত থেকে বাঁচতে পারবে না।’
-‘দেখা যাবে কে কুকুর আর কে সিংহ।রাখছি।’

অভিনব জানে না কিভাবে অনন্তকে বাঁচাবে কিন্তু এটা জানে তাকে যা করার তা খুব দ্রুত করতে হবে।দেড় বছর আগে অনন্তর কোমায় যাওয়ার আগে যা ঘটেছিল তা এখনো অভিনবর স্পষ্ট মনে আছে।
অনন্তর বিশ্বষ্ট লোক মকবুলের মেয়ের বিয়ে ছিল সেদিন।অনন্ত কোনো পাবলিক ফাংশন এটেন্ড করতো না কিন্তু মকবুলের অনেক রিকোয়েস্টেরষপর সে যেতে বাধ্য হয় তবে ছদ্মবেশে অভিনবকে নিয়ে।আশেপাশে তাদের অনেক লোকও ছিল ছদ্মবেশে।অভিনব আর অনন্ত সেজেছিল শশুড় আর মেয়ে জামাই।
(সেদিন বোধহয় অভিনব নিজেও জানতো না ভবিষ্যতে এই লোকের সঙ্গে তার সম্পর্কটি এমনই হবে।)
যাইহোক খাওয়া দাওয়ার মাঝেই হঠাৎ চেঁচামেচি শুরু হয়ে যায়।কোত্থেকে একটা স্মোক বম্ব কেউ ফেলে দেয় চারদিকে ধোঁয়া কেউ কাউকে দেখতে পাচ্ছিল না তখনই গুলির শব্দ হয়।অভিনব চমকে গিয়ে চিৎকার করে বলল,

-‘গুলির শব্দ!স্যার স্যার কোথায়?’
ধোঁয়া সরে যাওয়ার পরেও অনন্তকে কেউ দেখে না।সবাই চারদিকে অনন্তকে খুঁজতে খুঁজতে বাড়ির পেছনের বাগানটায় পেয়ে।অনন্তকে বুকে গুলি করা হয়েছিল আর সে পড়ে গিয়ে একটা পাথরের সঙ্গে আঘাত পেয়েছে মাথায়।অভিনব দ্রুত অনন্তর কাছে গিয়ে নাকের কাছে হাত দিয়ে দেখে নিঃশ্বাস চলছে কি না।নিঃশ্বাস চলছিল না কিন্তু হাত ধরতেই দেখে পার্লস চলছে।অভিনব বুকে হাত দিয়ে একটু চাপ দিতেই অনন্ত নিঃশ্বাস ছাড়ে।
এরপর অনন্তকে হসপিটালে নেওয়া হলে ডাক্তার তিন দিন লাইফ সাপোর্টে রেখে বলে দেয় যে অনন্ত ভেজিটেটিব স্টেট এ আছে।সে জাগবে এই ঘুম থেকে কিন্তু কবে তা কেউ জানে না।

ঐ পুরো ঘটনাটা ঘটিয়েছিল দীপ্ত আলম।নিজেকে বাঁচাতে সে দেশ ছাড়ে কারণ তার কাছে অভিনব যেই ইনফরমেশন পৌছে দিয়েছিল তা শুনে তার পালিয়ে যাওয়াটা স্বাভাবিক।কারণ অভিনব গুজব ছড়িয়েছিল যে,’আগুন বেঁচে আছে।আর দীপ্তকে সে খুঁজছে।এখন হবে চোর পুলিশের খেলা।হয় আগুন দীপ্তকে বন্দী করবে না হয় দীপ্ত আগুনকে বন্দী করবে।মজার ব্যাপার হলো আগুন দীপ্তকে খুঁজে বের করবে মিস্টার ইন্ডিয়া হয়ে তার খোঁজ কখনোই কেউ পাবে না।’ব্যস এই খবর শুনেই দীপ্ত লেজ গুটিয়ে পালিয়েছে আর নিজের ছেলেকে আদেশ দিয়েছে,’আগুনকে খুঁজে বের করেই আমার সঙ্গে যোগাযোগ করবে।’
অভিনব অতীত থেকে বেরিয়ে আসে।কোনোমতে বাড়ি পৌছায় সে তবে সামনের দরজা দিয়ে রাজার মতো আজ প্রবেশ করা যাবে না।নিজের বাড়িতেই চোরের মতো পেছনের দরজা দিয়ে প্রবেশ করলো সে।কোনোমতে সবার চোখের আড়াল হয়ে নিজের ঘরে যেতেই দেখলো অন্তি সেখানে নেই।
অভিনব বিড়বিড় করে বলল,

-‘অদ্ভুত আজ ও রুমে নেই কেন?সবসময় তো রুমেই থাকে।’
অভিনবর মাথায় ব্যান্ডেজ লাগানো।এটা কারো কাছ থেকেই লুকানো সম্ভব নয়।কিন্তু অভিনব লুকিয়ে রাখার চেষ্টা করবে।
মানুষ জানে মিথ্যা লুকিয়ে রাখা বেশিক্ষণের জন্য সম্ভব নয় তবুও মানুষ সেটা লুকিয়ে রাখার সর্বোচ্চ চেষ্টা করে।চেষ্টা করতে দোষ কি তাই না?
অন্তি চিন্তিত মুখ নিয়ে রুমে প্রবেশ করে আর বিড়বিড় করে বলে,
-‘উনি এতক্ষণ হয়ে গেল এখনো আসছেন না কেন?কখনো তো এতটা দেরি করেন না।ভালো তো আজ ওনার মামার বাড়ির লোকজনের আসাটা ক্যান্সেল হয়ে গেছে নাহলে আমি কি বলতাম সবাইকে?মামনি বাবাও হসপিটালে গেছে সারিকা আপুও বাসায় নেই।ওনারা থাকলে আরো টেনশন করতেন।’
অভিনব বলল,

সাথে থেকো প্রিয় পর্ব ৪২

-‘আর টেনশন করতে হবে না আমি এসে পড়েছি।’
অন্তি থতমত খেয়ে আশেপাশে তাকিয়ে দেখে অভিনব সোফায় বসে আছে দুই হাতের উপর থুতনি রেখে।
অন্তি দৌড়ে কাছে গিয়ে ওর মাথায় হাত দিয়ে বলল,
-‘আপনার এই অবস্থা কিভাবে হলো?আপনি এতক্ষণ কোথায় ছিলেন?’
অভিনব সব বলল যে কিভাবে এসব হয়েছে।
অন্তি মুখে হাত দিয়ে কান্না করে বলল,
-‘আপনি এসব ছেড়ে দেন।আজ যদি আপনার কিছু হয়ে যেত তাহলে তো আমার নিজের বলতে কেউ থাকতো না।’
অভিনব অন্তির দিকে শান্ত দৃষ্টি রেখে অন্তির দুই গালে হাত রেখে বলল,
-‘অন্তি আজ আমি তোমাকে এমন একটা সত্যি বলবো যেটা শুনে তুমি ভীষণ খুশি হবে আবার কষ্টও পাবে।মিস্টার আগুন তোমার বাবা।’
অন্তি কি রিয়েকশন দিবে বুঝতে পারছে না।অভিনব আগুনে স্মৃতিশক্তি হারানো থেকে শুরু করে এই পর্যন্ত সবটাই বলল।অন্তি হাউমাউ করে কান্না করে বলল,

-‘আ,,আমার বাবা আমার এতো কাছে ছিল কিন্তু আমি তাকে বাবা বলে ডাকতে পর্যন্ত পারলাম না একবার তাকে ছুঁয়ে দেখতে পারলাম না সত্যিই আমার মতো অভাগী এই পৃথিবীতে আর কেউ নেই।’

সাথে থেকো প্রিয় শেষ পর্ব

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.