সাথে থেকো প্রিয় পর্ব ৫
লেখক:রিয়ান আহমেদ
-‘আমি কোথায়? আমি কি স্বর্গে আছি? যাক ভালো হয়েছে শয়তান লোকটা থেকে বেঁচে গেছি কিন্তু,,,, আমি তো মরে গেছি যাইহোক মরে গিয়ে বেঁচে গেছি।’
-‘ সরি টু সে কিন্তু তুমি এখনো বেঁচে আছো আর তোমাকে এই শয়তান লোকটার সাথে থাকতে হবে।’
দাঁতে দাঁত চেপে বললো অভিনব।অন্তি অভিনব কথা শুনে চমকে গেল তার মানে সে এখনো পটল তুলে নি।অন্তি চোখ বন্ধ করে এতক্ষণ কথাগুলো বিড়বিড় করছিল হসপিটালের কেবিনের তীব্র আলোর চোখ খুলতে কষ্ট হচ্ছিল ওর। অনেকটা সময় অচেতন থাকার কারণে এমনটা হচ্ছে। অন্তির চোখ খুলতে সমস্যা হচ্ছে দেখে অভিনব কেবিনের সব লাইট বন্ধ করে দিয়ে জানালার পর্দা সরিয়ে দেয়। অভিনব অন্তির পাশে টুল টেনে বসে।অন্তি অভিনব কে দেখে ভয়ে জড়োসড়ো হয়ে আছে কারণ সে অভিনবর কাছ থেকে পালানোর চেষ্টা করেছে এখন যদি অভিনব তাকে শাস্তি দেয় এই ভয়ে।
-‘ একদম ঠিক ভাবছো তুমি আমি তোমাকে শাস্তি দেবো। কিন্তু তার আগে তোমার হাতের ট্রিটমেন্ট করা হবে ডক্টর এক্সরে করে গেছেন তিন দিন পর তোমার হাতের অপারেশন।’
-‘ কিহহ আপনি আমার হাতের অপারেশন করাচ্ছেন! আপনি কি আমাকে একটা বার জিজ্ঞেস করার প্রয়োজন বোধ করলেন না? আপনি কোন অধিকারে আমার লাইফে ইন্টারফেয়ার করছেন? আপনি না আগে বলেছিলেন আপনি কখনো আমার লাইফে ইন্টারফেয়ার করবেন না আর আমিও আপনার লাইফে ইন্টারফেয়ার করব না কোথায় গেল সে সব কথা?’
-‘সেই কথাগুলো এখন পুরনো হয়ে গেছে। তুমি যদি পালানোর চেষ্টা না করতে তাহলে তোমার সাথে এমন জোরজবরদস্তি করার আমার কোন প্রয়োজনই ছিল না। আমি তোমার গার্ডিয়ান এখন থেকে তোমার লাইফের যেকোনো সিদ্ধান্ত নেওয়ার অধিকার আমার আছে অন্তত ততদিন পর্যন্ত যতদিন না তুমি নিজে কিছু একটা করছ।’
আরও গল্প পড়তে আমাদের গুপ এ জয়েন হউন
-‘ওহ গার্ডিয়ান লাইক সিরিয়াসলি?হুইচ কাইন্ড অফ গার্ডিয়ান ইউ আর?’
-‘আরে ভাই বিয়ে হয়ে গেছে তো কি বিয়েটা আপনিও মানেন না আমিও মানি না।তাই আমরা দুজন দুজনের রাস্তায় চলে যাই এতেই দুজনের ভালো হবে।আপনি কেন এমন পাগলামি করছেন প্লিজ আমাকে যেতে দেন আমি নিজের কোনো একটা ব্যবস্থা করে নেব আপনার দয়া আমার চাই না শুনতে পাচ্ছেন না ? আপনার কানে বোধহয় কোন সমস্যা আছে।’
-‘দেখো জেদী আমি না জেদী তুমি।এটা তোমার কাধের আর হাতের জন্য একটা ছোট্ট অপারেশন এরপর আগামী দুই মাস ট্রিটমেন্ট চলবে এন্ড তুমি পুরোপুরি সুস্থ হয়ে যাবে।’
-‘ আমি জেদী? আপনি জেদী।আঠার মতো আমার সঙ্গে লেগে আছেন।’
-‘কিহহ এতবড় কথা তোমাকে আমি তুলে আছাড় মারবো।'(চিৎকার করে)
-‘ আমি আপনাকে কেটে বুড়িগঙ্গা নদীর পানিতে ভাসিয়ে দেবো।’
এভাবেই কথায় কথায় দুজনের মধ্যেই ঝগড়া শুরু হয়ে যায়। পাশের রুম থেকে নার্স এসে অভিনব আর আন্টিকে ধমক দিয়ে বলল,
-‘ আপনারা কী শুরু করেছেন হসপিটাল এর মধ্যে এভাবে চেঁচামেচি করা যে ঠিকানা জানেন না আপনার প্লিজ চুপ করুন।’
অভিনব উল্টো নার্সকে ধমক দিয়ে বলল,
-‘ আপনার সাহস কি করে হয় আমাকে এসব বলার আপনি জানেন আমি কে আপনার এই হসপিটাল আমি দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে কিনে ফেলতে পারব?’
নার্স একজন মধ্য বয়স্ক মহিলা।সে অভিনবকে বললেন,
-‘হ্যা শুনি কে তুমি?’
অভিনব কি কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে অন্তি নিজেই আগবাড়িয়ে বলতে শুরু করলো,
-‘ আপনি জানেন না ইনি কে! ইনি হচ্ছেন দি অন এন্ড অনলি অভিনব খান বিজয় যে হচ্ছেন একজন অহংকারী অভদ্র লোক যার বড়দের সঙ্গে কথা বলার ভদ্রতাটুকু পর্যন্ত নেই।’
অভিনব আরো কিছু বলতে যাবে তখনই সারিকার গলার শব্দ শুনতে পায়।
-‘মিস আম সরি আসলে ওদের মধ্যে মনোমালিন্য চলছে তাই এবারের মতো ক্ষমা করবেন।’
নার্স শুরু চোখে অভিনবর দিকে তাকিয়ে বললেন
-‘ আর না করলেই নয়।’ এরপর তিনি চলে গেলেন।
অন্তি অভিনবর দিকে একবার তো আরেকবার দরজার কাছে দাঁড়িয়ে থাকা সারিকাকে দেখছে আর ভাবছে মেয়েটি কে।সারিকা অভিনবর দিকে কফির কাপ এগিয়ে দিয়ে অন্তির দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে বলল,
-‘আমি সারিকা নাইস টু মিট ইউ।’
-‘জ্বী আমারও ভালো লাগলো আমি অন্তি।’
অভিনব সারিকার দিকে চোখ গরম করে তাকিয়ে বলল,
-‘তুই ওনার কাছে সরি কেন বললি?’
-‘কারণ সরি বললে কেউ ছোট হয় না।এটা যত তাড়াতাড়ি তোর মগজে ঢুকবে তত জলদি লাইফে সুখের কারণ খুঁজে পাবি।আমি এখন যাচ্ছি আমার আজ একটা মিটিং আছে।’
সারিকা দুজনকে বায় বলে চলে যায়।অন্তি মনে মনে বলল,
-‘এই সুন্দর মেয়েটা কি ওনার লাভার নাকি?হলেও আমার কি,,, কিন্তু তুই করে বলছিল মানে হয়তো তাঁরা ফ্রেন্ড।অন্তি চুপ থাক এই লোকের সম্পর্কে এতো ভাবনা চিন্তার কোনো প্রয়োজন নেই।’
অন্তির ভাবনার রেশ কাটে অভিনবর ডাকে।অভিনব অন্তির দিকে তাকিয়ে বাকা হেসে বলল,
-‘আবার পালানোর চেষ্টা করবে ভাবছো কিন্তু আমি তোমাকে আর সেই সুযোগ ভুলেও দেবো না।এমনিতে রাগ করলে তোমার নাকটা কিন্তু অনেক লাল হয়ে যায়।’
অভিনব অন্তির নাকে হাত দিতেই অভিনব এক ঝটকায় ওর হাতটা সরিয়ে দেয়।অভিনব হাত ধরে বলল,
-‘আউচ তুমি এমন এংগ্রি বার্ড হয়ে থাকো কেন সবসময় বি চিল,,এমনিতে আজকে থেকে তোমার নাম এংগ্রি বার্ড।’
-‘খবরদার আমাকে এসব নামে ডাকবেন না।’
-‘আমি তো ডাকবো দেখি তুমি কি করো।’
-‘আমি,,আমি আপনার নাম দিলাম অভিনব পদ্ধতি।’
অভিনব চটে গিয়ে বলল,
-‘এটা কেমন ফালতু নাম আমি তোমাকে এতো সুন্দর একটা নাম দিলাম আর তুমি আমাকে এই বাজে নাম দিলে।’
অন্তি আর কিছু না বলে চুপ করে রইলো।অন্তিকে খাবার দিয়ে যাওয়া হলো।অন্তি কিছু না বলে চুপচাপ খেয়ে মুখ মুছে নিল।
-‘আপনি আমার মুখে পানি মারলেন কেন?ওহ মাই গড আমার দামি স্যুট!’
-‘ওহ আই এম রিয়েলি নট সরি(কোমরে হাত রেখে) আপনি কোন সাহসে লিফ্টে আমার কোমর ছুয়েছিলেন।আপনার চেহারায় ভালো মানুষের মেকাপ লেগে আছে পানিটা তাই মারলাম যেনো এই মেকাপ ধুয়ে গিয়ে আপনার আসল রূপটা সবার সামনে আসে।’
কথাগুলো বলে সারিকা হেঁটে চলে যাচ্ছিল তখনই শুভ্র ওকে হুট করে টান দিয়ে নিজের কাছে আনে।হুট করে টান দেওয়াতে শুভ্রর বুকে এসে পড়ে সারিকা।সারিকা নিজের হাত ছাড়িয়ে নেয়ার চেষ্টা করতে করতে বলল,
-‘আস্ত বেয়াদব লোক তো আপনি সবার সামনে একটা মেয়ের হাত ধরে টানাটানি করতে আপনার লজ্জা করে না?ছাড়ুন আমার হাত।চেহারা টম ক্রুজের মতো আর কাহিনী বদমাইশদের মতো।’
শুভ্র রাগী গলায় বলল,
-‘এই মেয়ে চুপ করে দাঁড়াও।আমাকে এত কিছু বলার আগে আমার কথাটা শুনবে তো।তোমার কোমরে হাত দেওয়ার ইন্টেনশন আমার একদমই ছিল না।লিফ্ট হঠাৎ নড়বড়ে হয়ে ওঠায় আমি পড়ে যাওয়ার সময় ভুলবশত তোমার কোমর ধরে ফেলেছি।’
সারিকা অনেকক্ষণ কৈ মাছের মতো মোচড়ানোর পর নিজেকে ছাড়াতে সক্ষম হয়।সারিকা শুভ্রর থেকে তিন মিটার দূরে এক প্রকার ছিটকে সরে যায়।শুভ্র সারিকার দিকে এগোনোর চেষ্টা করতেই সারিকা হাত দেখিয়ে বলল,
-‘একদম আমার কাছে আসবেন না।আপনি কত বড় লুচু লোক যে কি না লিফ্ট না ধরে একটা মেয়েকে মানে একটা মেয়ের কোমরকে ধরে নিজেকে পড়ে যাওয়ার থেকে সামলান।’
শুভ্র বিরক্ত হয় বলল,
-‘আরে আপনি তো আমার কথা বুঝতেই চাইছেন না।ধুরর আপনার সাথে কথা বলার চেয়ে ভালো কোনো গাছের সঙ্গে কথা বলি যত্তসব।’
শুভ্র সেখান থেকে বিড়বিড় করতে করতে চলে।শুভ্রর মনে হচ্ছে আজ তাঁর জীবনের সবচেয়ে বাজে দিন।সকাল সকাল তাঁর বাবা-মা বিয়ের একটা বড়সড় রচনা বর্ননা করেছে যেনো সে বিয়ে করে।নাস্তার টেবিলে বসে না চাইতেও খেতে খেতে তাদের অযথা পেচাল সহ্য করেছে শুভ্র।বিয়ের ভূমিকা,উপকারিতা,অপকারিতা, প্রয়োজনীয়তা প্রায় সব নিয়েই আলোচনা করা হয়েছে শুভ্রর পরিবারে।এরপর যখন বাড়ি থেকে বের হলো তখন পাশের বাসার দুষ্টু ছেলেটা ওর উপরে রঙ ছুঁড়ে মেরে দাঁত কেলিয়ে চলে যায়। এরপর অগত্যায় আবার তৈরি হয়ে গাড়ি নিয়ে রাস্তায় বের হতেই টায়ার পাঞ্চার এরপর সিএনজিতে চড়েই অফিসে আসতে হয় কারণ নতুন ভাইস প্রেসিডেন্ট যদি প্রথমদিন দেরী করে আসে তবে কিভাবে চলবে।এরপর সারিকার সঙ্গে হওয়া ঝগড়া সব মিলিয়ে এটা শুভ্রর জন্য সবচেয়ে বাজে দিন।
শুভ্র চলে যেতেই সারিকা সবার দিকে তাকিয়ে দেখে সবাই তাঁকেই চোখ গোল গোল করে দেখছে।সারিকা ভ্রূ যুগল কুঁচকে বুঝার চেষ্টা করে কি হয়েছে।তানি আর মনি সারিকার কাছে এসে চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে আছে।সারিকা বিরক্ত হয়ে বলল,
সাথে থেকো প্রিয় পর্ব ৪
-‘হোয়াট?এভাবে তাকিয়ে আছো কেন তোমরা?’
-‘মিস সারিকা আপনি নতুন ভাইস প্রেসিডেন্টের সঙ্গে এত বাজে ব্যবহার কিভাবে করতে পারেন।’
-‘ঐ লোকটাই ভাইস প্রেসিডেন্ট শুভ্র শাহেদ জামান?’
-‘জ্বী।’
-‘উনি আমার সঙ্গে অসভ্যতামী করেছেন তাই আমিও ওনার সঙ্গে অসভ্যতামী করেছি হিসাব বরাবর।’
-‘চেয়ারম্যান স্যার জানলে তো,,,,আমি আপনার জন্য ভীষণ ভয় পাচ্ছি।’
তখনই চেয়ারম্যান স্যারের পিএস ঝর্না এসে সারিকাকে ডাকে।তানি বলল,
-‘মিস সারিকা আপনার চাকরি তো গেছে।’
-‘গেলে যাবে।পুরোনো না গেলে নতুন কি করে পাবো।’
সারিকা পিএসের সঙ্গে চলে যায়।