সাথে থেকো প্রিয় - Golpo Bazar

সাথে থেকো প্রিয় পর্ব ৮ || sathe theko priyo

সাথে থেকো প্রিয়

সাথে থেকো প্রিয় পর্ব ৮
লেখক:রিয়ান আহমেদ

সারিকা একটা ঐ কালো মুখোশ পড়া লোকের সাথে দাঁড়িয়ে আছে।লোকটা সারিকার হাতে অতি গোপনে কিছু একটা দেয় আর সারিকা লোকটার হাতে একটা খাম ধরিয়ে দেয় এরপর দুজন আর এক মুহূর্তের জন্য না দাঁড়িয়ে ভীড়ের মাঝে হারিয়ে যায়।
পুরোটা ঘটনা একজন ব্যক্তি দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে লক্ষ করেছে কারণ গুলিস্তানের এই জনবহুল রাস্তাটায় এই একজন ব্যক্তি ছাড়া আর কারো সময় নেই সারিকাকে গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করার মতো।ব্যক্তিটা আর কেউ নয় শুভ্র।

শুভ্র এই রাস্তা দিয়েই পিটুশকে নিয়ে হেঁটে যাচ্ছিল।পিটুশ হঠাৎ দাঁড়িয়ে বলল তাঁর কোকাকোলা পান করতে ইচ্ছে করছে শুভ্র পিটুশকে কোকাকোলা কিনে দিয়ে পেছনে ঘুরতেই রাস্তার ঐ পাড়ে সারিকাকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে।এরপর অনিচ্ছায় হোক আর ইচ্ছায় হোক সে পুরোটা ঘটনা দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দেখে নেয়।পিটুশ শুভ্রর হাত টেনে বলল,
-‘মামু চলো তো আর কতক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকবে?আমরা পার্কে যাব না।’
-‘হুম চল।’
শুভ্র পিটুশের হাত ধরে ফুটপাতে হাঁটতে শুরু করে।পিটুশ হাঁটতে হাঁটতে প্রশ্ন করে,
-‘মামু আমরা তো গাড়ি করেও যেতে পারতাম আমার হাঁটতে ভালো লাগছে না।’

আরও গল্প পড়তে আমাদের গুপ এ জয়েন হউন

-‘এতটুকু পথ যদি হাঁটতে না পারো এই বয়সে তাহলে তোমার পা থাকার তো কোনো মানেই হয় না।তোমার বয়স এখন সাত কিংবা আট,,আমি এই বয়সে হেঁটে হেঁটে অথবা সাইকেলে করেই কাছের পথগুলোতে আসা যাওয়া করতাম।’
-‘এটা কি এতটুকু পথ না কি তোমাদের বাসা থেকে হেঁটে যেতে ত্রিশ মিনিট সময় লাগে।’
-‘ত্রিশ মিনিট তো অনেক অল্প সময়।তুমি জানো আগেকার দিনের মানুষ এক দেশ থেকে আরেক দেশে ট্রাভেল করতো পায়ে হেঁটে,গরুর গাড়িতে চড়ে,নৌকার মাধ্যমে।’
-‘কিহ প্লেন,কার,ট্রেন এসব ছিল না তখন?'(অবাক হয়ে)
-‘উঁহু ছিল না।আর এখনকার সময়ে তো মানুষ যত পারে বায়ু দূষণ করে গাড়ি ধোঁয়ার মাধ্যমে।তবে আমি যখন জাপানে ছিলাম তখন দেখতাম প্রায় বেশিরভাগ মানুষেরা পায়ে হেঁটে অথবা সাইকেলে করে চলাচল করে।আর দূরের পথ হলে তাঁরা বুলেট ট্রেনে যাতায়াত করে।এমন না যে ওদের গাড়ি কেনার সামর্থ্য নেই অথবা গাড়ি নেই।আসলে ওরা সাধারণত উইকেন্ড এ গাড়ি ব্যবহার করে পরিবারের লোকজনের সঙ্গে ঘুরতে বের হয়।,,,জাপানিরা নিজেদের স্বাস্থ্য নিয়ে বেশ সচেতন আর তাঁরা এর ফলাফলও পাচ্ছে।জাপানিদের গড় আয়ু পৃথিবীর অন্যান্য দেশের মানুষের থেকে তুলনামূলক বেশি।’

পিটুশ বিজ্ঞদের মতো নিজের মামার কথা শুনছে।শুভ্র পিটুশকে অনেক কিছু বললেও তার মাথায় এখনো কিছুক্ষণ পূর্বের ঘটনাটাই ঘুরপাক খাচ্ছে।শুভ্রর মনে অনেকগুলো প্রশ্ন যেমনঃ লোকটা কে ছিল?সারিকা লোকটাকে ঐ খামে কি দিল আর লোকটাই বা সারিকাকে কি দিল?সারিকা কিছুক্ষণ পরপর কালো চশমার মাঝ দিয়ে এমনভাবে আশেপাশে কেন তাকাচ্ছিল?লোকটার সঙ্গে দেখা করার সময় সারিকাকে কেন এতটা উত্তেজিত দেখাচ্ছিল?
এসব প্রশ্ন মাথায় ঘুরপাক খেতে খেতে একসময় দুজনেই পার্কে এসে পৌছায়।পিটুশের সঙ্গে ব্যাডমিন্টন খেলতে খেলতে এক পর্যায়ে কথাগুলো মাথায় ঘুরপাক খাওয়া বন্ধ করে দিয়ে স্থীর হয়ে যায়।

অভিনব নিজের কোর্ট বদলে একটা লেদারের জ্যাকেট পড়ে নেয় আর বাইকের হ্যালমেট নিয়ে অফিসের সকলের দৃষ্টির আড়ালে বেরিয়ে পড়ে।হাওয়ার গতিতে বাইকে চড়ে অভিনব রাস্তা দিয়ে যাচ্ছে।একটা ঘন জঙ্গলের মাঝে অভিনবর বাইক হারিয়ে যায়।
ভাঙ্গা একটা বাড়ির ভেতরে অভিনব প্রবেশ করে।বাড়িটা সকলের দৃষ্টিতে ভুতুড়ে বাড়ি হিসেবেই পরিচিত।অভিনব বাড়ির স্টোর রুমে গিয়ে আলমারির দরজা খুলতেই শিফ্টের দরজা দেখা যায়।অভিনব শিফ্টের বাটন প্রেস করে ফিঙ্গার প্রিন্ট দেয়,চোখের রেটিনা ম্যাচ করা হয়,পাসওয়ার্ড দেয়।এরপর লিফ্টের দরজা খুলে।অভিনব লিফ্টের ভেতরে প্রবেশ করে আন্ডারগ্রাউন্ড এ যায়।’Black shadow Gang’ নামটা উজ্জ্বল আলোয় ফুটে উঠছে।অভিনব ভেতরে প্রবেশ করতেই সকলে মাথা নিচু করে এক হাঁটুগেড়ে বসে পড়ে।সকলেই কালো লেদারের জ্যাকেট,কালো গুগল গ্লাসেস আর কালো ক্যাপ পড়ে আছে।অভিনব সবার সামনে গিয়ে দাঁড়ায়।সকলকে উদ্দেশ্য করে সজোরে বলল,

-‘স্ট্যান্ড আপ।’
সকলে সোজা হয়ে দাঁড়ায়।অভিনব বাঁকা হাসি দিয়ে বলল,
-‘তোমাদের মাঝে একজন এমন আছে যে আমাদের ইনফরমেশন লিক করছে শত্রুদের কাছে।বলো কে সে?’
সবার মাঝে পূর্বের ন্যায় নীরবতা।অভিনব হেসে বলল,
-‘গুড ভেরি গুড।আমার কাছে সামনাসামনি থাকা শত্রুদের থেকে বেশি পছন্দ পেছনে থাকা শত্রু।কারণ ওদের সঙ্গে খেলতে বেশি মজা লাগে।’
অভিনব সকলের সামনে দিয়ে ধীরে ধীরে হেঁটে যায়।সবাই স্বাভাবিক ভাবে দাঁড়িয়ে আছে।এদের সকলকেই মাইন্ড কন্ট্রোল করার ট্রেনিং দেওয়া কঠিন হতে কঠিনতম পরিস্থিতিতেও এরা নিজেদের শান্ত রাখতে সক্ষম।এমনকি লাই ডিটেক্টরকেও এরা ধোঁকা দিতে পারবে।অভিনব সবার সামনে থেকে হেঁটে বুঝতে পারলো এদের মধ্যে কেউই সে নয়।হয়তো লোকটাকে আগেই সরিয়ে ফেলা হয়েছে।অভিনব আবার সামনে গিয়ে দাঁড়িয়ে বলল,

-‘স্যারের অবস্থার আগের থেকে কিছুটা উন্নতি হয়েছে।তাঁর একটা আঙ্গুল মুভ করেছে বলে ডক্টর জানিয়েছেন।স্যারকে খুঁজে বের করার জন্য শত্রুরা আমাদের মাঝে ছড়িয়ে পড়ছে সো বি কেয়্যারফুল।’
সবাই এক সঙ্গে বলল,
-‘ওকে স্যার।’
বিধান অভিনবর মোবাইলে কল করে বলল,
-‘স্যার ম্যাম আবার পালানোর চেষ্টা করেছেন?’
অভিনব দাঁতে দাঁত চেপে বলল,
-‘এই মেয়ে আমাকে শান্তি দেবে না অপরাশনের চৌদ্দ দিনের মাথায় আবারো।’
-‘জ্বী স্যার কিছু বললেন?’
-‘কিভাবে পালানোর চেষ্টা করেছে?’
বিধান কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে বলল,
-‘স্যার আমার গাড়ির পেছনের ডিকিতে বসে।আম গাড়িতে উঠেই বুঝতে পেরেছিলাম তাই গাড়ি চালু না দিয়ে বসে ছিলাম অনেকক্ষণ কিন্তু উনি বের হননি আর এখনো উনি সেখানেই।’
-‘তুমি বের হতে বলো নি ভালো করেছো ওর একটু পানিশমেন্টের প্রয়োজন আছে।’
-‘স্যার বের হতে বলবো?’
-‘নাহ্ তাঁর দরকার নেই আমি আসছি আমিই এসে ওকে এর করবো তুমি আমার একটা গাড়ি নিয়ে চলে যাও অফিসে।’
-‘স্যার তাঁর দরকার নেই আমি সিএনজি নিয়ে নেব রাখছি।’

অন্তি এক ঘন্টা যাবত গাড়ির পেছনের ডিকিতে শুয়ে আছে কিন্তু গাড়ি নড়ছে চড়ছে না।অন্তি বিরক্ত হয়ে বলল,
-‘কি অবস্থা ঐ পিএস বিধান ফাইল নিয়ে গাড়িতে আসছে না কেন আমি বের হবো তো।আর হাতের এই পাউচটা বড্ড বেশি যন্ত্রণা দিচ্ছে।,,মনে হচ্ছে এখানে অক্সিজেনের অভাব হুমম রিলেক্স ধীরে ধীরে নিঃশ্বাস নিতে হবে না হলে তিন ঘন্টার জায়গায় দুই ঘন্টাও টিকতে পারবো না।’
হঠাৎ আলো এসে অন্তির চোখে পড়লো আর একটা ছায়া বলল,
-‘অন্তিকা খান আপনাকে আর দুইঘণ্টা এখানে টিকে থাকার লড়াই করতে হবে না বেরিয়ে আসুন।’
অন্তি চোখ বড় বড় করে ঢোক গিলল।সামনে দাঁড়িয়ে থাকা ব্যক্তিটা এই মুহুর্তে ওর জন্য আজরাইলে চেয়ে কোনো অংশে কম না।অভিনব অন্তির দিকে হাত বাড়িয়ে দিয়ে বলল,
-‘আমার হাতটা ধরে দয়া করে বেরিয়ে আসুন মিসেস খান।’
অন্তি মেকি হাসি দিয়ে বেরিয়ে এসে কিছু বলতে যাবে তাঁর আগেই অভিনব বলল,

-‘হাইড এন্ড সিক খেলছিলে বুঝি?’
অন্তি নকল হাসি দিয়ে বলল,
-‘আরে হ্যা আপনি কি করে জানলেন?ধুরর আমি আপনার কারণে গেমটাই হেরে গেলাম।’
অভিনব একটু করুণ সুরে বলল,
-‘ইসস আমার জন্য হেরে গেলে তাই না?তা কে তোমার সাথে খেলছিল শুনি তাঁকে একটু দেখি।’
অন্তি কি বলবে ভেবে পাচ্ছে না কে তাঁর সঙ্গে খেলছিল।অন্তি নিজের মেকি হাসি বজায় রেখে বলল,
-‘আরে সে আছে না,,,,,আরে ঐযে,,,,আসলে,,,।’
অভিনব রেগে চিৎকার করে বলল,
-‘শেট আপ!’
অন্তি চিৎকার শুনে কেঁপে উঠলো ভয়ে অভিনব।
অভিনব রাগে গজগজ করতে করতে বলল,

সাথে থেকো প্রিয় পর্ব ৭

-‘একের পর এক মিথ্যা কথা বলেই চলেছো।কোন আক্কেলে তুমি এই গাড়ির ডিকিতে লুকিয়ে ছিলে?তোমার কি জীবনের ভয় নেই?তোমার হাতের অপারেশনের সেলাইটা সবে শুকাতে শুরু করেছে এই অবস্থায় তুমি,,,,।তাছাড়া এখানে থেকে তো তুমি মরেও যেতে পারো সেটা নিয়েও চিন্তা হয় নি?’
-‘আমি তিন ঘন্টা আরামসে এখানে থাকতে পারবো।'(কনফিডেন্স নিয়ে)
-‘ওহ তাঁর মানে আগেও এসব করেছো।’
-‘তা নয় তো কি?এর আগে আমি আমার বন্ধুকে দেখতে আমিন আঙ্কেলের গাড়িতে করে এভাবে হসপিটালে গিয়েছিলাম।’
-‘ওহ তাহলে পালানোর অভ্যাস তো অনেক পুরানো।'(বিড়বিড় করে)
-‘কিছু বললেন?'(কান পেতে)
অভিনব অন্তির ডান হাত চেপে ধরে বাড়ির দিকে যেতে যেতে বলল,
-‘বললাম আজ তোমাকে কাঁচা মরিচ দিয়ে ভাত খাওয়াবো এরপর আরো কঠিন শাস্তি দেব।’

অন্তির বাম হাতে আর্ম পাউচ থাকায় অন্তি অভিনবর থেকে হাতও ছাড়াতে পারছে না।অন্তি চিৎকার করে বলল,
-‘নাহ্হ এটা হতে পারে না।’

সাথে থেকো প্রিয় পর্ব ৯

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.