সাথে থেকো প্রিয় - Golpo Bazar

সাথে থেকো প্রিয় পর্ব ৯ || wattpad golpo

সাথে থেকো প্রিয়

সাথে থেকো প্রিয় পর্ব ৯
লেখক:রিয়ান আহমেদ

অন্তি আর অভিনব সামনা সামনি বারান্দার চেয়ারে বসে আছে।অন্তি বার বার চোখ ঘুরিয়ে এদিক সেদিক তাকাচ্ছে কিন্তু অভিনবর অন্তির মুখের দিকে তীক্ষ্ম দৃষ্টি নিক্ষেপ করে চলেছে।অভিনব অন্তির দিকে তাকিয়ে বুঝতে পারছে মেয়েটা তাঁর চোখের পলক ফেলার অপেক্ষা করছে যেনো আপাদত পালাতে পারে।অভিনব দাঁড়িয়ে গিয়ে অন্তির চেয়ারের দুই পাশে হাত রেখে রাগী চোখে তাকিয়ে রইলো কিছুক্ষণ।অন্তি ভয়ে ভয়ে তাকিয়ে আছে।পরিস্থিতিটা একদম একটা চোর যখন চুরি পরে পুলিশের কাছে ধরা পড়ে ঠিক তেমন।

অভিনবর চোখের কার্নিশ লাল হয়ে আছে।অন্তি বুঝতে পারছে না এত রাগের কারণ কি? ও পালিয়ে গেলে অভিনবর কি আসে যায়?অন্তি অভিনবর ভালোবাসার মানুষ নয় যে কাছে রেখে আদর করবে আবার ঘৃণার পাত্রীও নয় যাঁকে কাছে রেখে শাস্তি দেবে।ছেলেটা আসলে চাইছেটা কি?অন্তি শুকনো ঢোঁক গিলে।
অভিনব জিভ দিয়ে ঠোঁট ভিজিয়ে অন্তির দিকে কিছুটা ঝুঁকে বলল,
-‘পালানোর এত শখ কেন তোমার?আমি কি তোমাকে মারছি?কোনো ধরনের কষ্টে রেখেছি?তাহলে পালাতে চাইছো কেন?’
অন্তি কিছুটা সাহস জুগিয়ে বলল,

আরও গল্প পড়তে আমাদের গুপ এ জয়েন হউন

-‘একই প্রশ্ন আমি আপনাকে করছি?আপনি কেন আমাকে যেতে দিচ্ছেন না?আমাকে কেন এখানে রেখে দিয়েছেন জবাব দেন।’
-‘পাল্টা প্রশ্ন আমি পছন্দ করি না।যা তোমাকে জিজ্ঞেস করছি তাঁর উত্তর দেও।,,,,নিজের হাজব্যান্ডের বাসায় থাকতে তোমার কি সমস্যা?না কি এমন কেউ আছে যাকে আমার চেয়ে বেশি ভরসা করো?’
অন্তি নাক ছিটকে বলল,
-‘ছিঃ কি বলছেন এসব?আমি আপনাকে এতদিন অহংকারী,স্বার্থপর এবং শেয়ালের মতো চালাক লোক মনে করতাম।এখন দেখছি আপনার মানসিকতাও বিকৃত।অন্তি এই পৃথিবীতে কাউকে বিশ্বাস করে না।আর আপনাকে তো বিশ্বাসের ব’ও করি না বুঝলেন।
আর আপনি মিন করছেন আমার বয়ফ্রেন্ড আছে ছিঃ সত্যি ভীষণ বাজে একজন লোক।’
অভিনব হেসে বলল,

-‘গুড কাউকে বিশ্বাস না করাই ভালো।বিশ্বাস করে মানুষ সবসময় ঠকে বুঝলে।তবে এতক্ষণ যা ভেবে এতগুলো কথা বললে তা শুনে আমার মনে হচ্ছে তোমার মাথার তাঁর কয়েকটা ছেঁড়া বুঝলে এংগ্রিবার্ড।আমি বলেছি কাউকে বিশ্বাসের কথা আর তুমি ধরে নিলে আমি তোমার ইমেজিনারি প্রেমিককে মিন করছি লাইক সিরিয়াসলি?দেখ বিশ্বাসযোগ্য ব্যক্তি শুধু প্রেমিক হবে এমন কোনো কথা নেই সে যে কেউই হতে পারে,,এমনিতে তোমার মাথায় তো এসব উল্টাপাল্টা কথাই ঘুরে।’
-‘আমার মাথা নিয়ে একদম কোনো উল্টাপাল্টা কথা বলবেন না একদম কেঁটে টুকরো টুকরো করে বুড়িগঙ্গায় ভাসিয়ে দেব।’
-‘ওহ হাত লাগিয়ে তো দেখাও।’
অন্তি বড় নিঃশ্বাস নিয়ে নিজেকে শান্ত করে রাগের মাথায় কথা বললে ব্যাপারটার সমাধান করা যাবে না।অন্তিকে চুপ হয়ে যেতে দেখে অভিনব শয়তানি হাসি দিয়ে বলল,

-‘কি দম ফুরিয়ে গেছে বুঝি?’
-‘দেখুন আমরা ঠান্ডা মাথায় বুঝদার ব্যক্তিদের মতো ব্যাপারটা সল্ভ করি কেমন?বাচ্চাদের মতো ঝগড়া করে কথা পেঁচিয়ে লাভ নাই।’
-‘হুম চলো বুঝদার ব্যক্তিদের মতো কথা বলি।’
অভিনব গিয়ে আবার অন্তির সামনাসামনি বসলো।অন্তি ঠিকঠাক হয়ে বসলো,
-‘ওকে চলুন কথা শুরু করি।আপনি কেন আমাকে নিজের সঙ্গে রেখেছেন?আপনার ‘দায়িত্ব পালন’ কথাটায় আমার একদম বিশ্বাস হচ্ছে না।,,দেখুন আমি কমার্সের স্টুডেন্ট আর আপনিও একজন ব্যবসায়ী তাই প্রফিট ছাড়া যে আমরা কোনো কাজ করি না আমি জানি তাই বলুন কাহিনী কি?’

অভিনব একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বলল,
-‘তুমি আমার কথা কেন বিশ্বাস করতে চাইছো না আমি সত্যিই তোমার প্রতি নিজের দায়িত্ব পালন করছি।’
অন্তি সন্দেহের দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে।অভিনব ভড়কে গিয়ে বলল,
-‘এভাবে তাকাচ্ছো কেন?,,,আচ্ছা আমার একটা কথা তো তোমাকে বলাই হয় নি আগামী চার বছরের মধ্যে তুমি আমাকে ডিভোর্স দিতে পারবে না আর আমিও তোমাকে ডিভোর্স দিতে পারবো না।’
অন্তি চোখ বড় বড় করে বলল,
-‘মানে?আপনি আমাকে ট্রেপে ফেলছেন তাই না?’
-‘একদম না।’
অভিনব উঠে চলে গেল আবার কিছুক্ষণের মাঝে ফিরে এলো পেপার্স নিয়ে।অভিনব অন্তির দিকে কাগজটা এগিয়ে দিতেই অন্তির চোখ কপালে,

-‘এই ব্যাপারে আমি আগে কেন জানতাম না আমাকে কেন এসব সম্পর্কে বলা হয় নি?’
-‘আমিও জানতাম না আজ সকালেই উকিল আঙ্কেল দিয়ে গেছে।আম সরি বাট এখন থেকে আগামী চার বছর তোমাকে আমার সাথেই থাকতে হবে।’
ব্যাপারটাতে অন্তি ঠিক কি রিয়েক্ট করবে বুঝতে পারছে না অভিনবর সঙ্গে আরো চারটা বছর কাটানো ওর পক্ষে সম্ভব নয়।অভিনবর প্রতি নিজের কোনো অধিকারবোধ,ভালোবাসা তৈরি হওয়া থেকে বিরত থাকার জন্যই অন্তি যত তাড়াতাড়ি সম্ভব অভিনবর থেকে দূরে চলে যেতে চাইছে।অন্তি মাথায় হাত দিয়ে বসে আছে।

-‘আমি যদি এরপরও আপনাকে চার বছরের আগে ছাড়তে চাই তবে?’
-‘দেখো বললে তুমি হয়তো বিশ্বাস করবে না কিন্তু সত্যি যা তাই বলবো তুমি দশ বছরের জন্য জেলে যাবে।’
-‘হোয়াট?এমন ফালতু উইল এ আমার নানা কি করে সাইন করলো?আমি সত্যিই বিশ্বাস করতে পারছি না এসব বাস্তবে ঘটছে আমার মনে হচ্ছে এটা আমার দুঃস্বপ্ন।,,আচ্ছা আমার নানা আর আপনার দাদা এমন একটা উইল পেপার বানাল কি কারণে?’
অভিনব ঠোঁট উল্টে বলল,
-‘আই ডোন্ট নো।’
-‘আর যদি আপনি আমাকে ছাড়তে চান তবে?’

-‘আমার শেয়ারের সব প্রপার্টি আমার হাতছাড়া হবে আর আমিও তোমার মতো দশ বছরের কারাদণ্ড ভোগ করবো।’
অন্তির মনে হচ্ছে কেউ একজন ঠিক কথাই বলেছিল,
-‘অভাগা যদিকে তাকায় সেদিকে সাগর শুকিয়ে যায়।’
অভিনবর হঠাৎ মনে হচ্ছে সে খুশি ভেতর থেকে ভীষণ খুশি।খুশিটা কি অন্তির মতো একজন মানুষকে চার বছরের জন্য বন্ধু হিসেবে পাওয়ার কারণে অনুভব হচ্ছে।অভিনব অন্তির কাঁধে হাত রাখতেই অন্তি কেঁপে উঠে অভিনবর দিকে তাকালো।অন্তির এই চোখ জোড়ায় ক্লান্তিরা ভীড় জমিয়েছে।এই ক্লান্তি এক দিনের নয় এই ক্লান্তি হচ্ছে বছরের পর বছরের।জীবনের প্রতি ক্লান্ত সে আজ তাঁর ইচ্ছে করছে নিজেকে এই পৃথিবীর বুক থেকে চিরতরে নিখোঁজ করে দিতে।যদি সে এই পৃথিবীতে না থাকতো তাহলে তাঁর সঙ্গে এসব ঘটতে পারতো কি? উত্তর হচ্ছে না।
অন্তির মনে হচ্ছে তাঁর জীবনটা কখনোই তাঁর নিজের ছিল না সবসময় অন্যের জন্য সে ভেবে গেছে আর অন্যের জন্য নিজের ক্ষতি করে গেছে।সেদিন যদি অনাথ আশ্রমের কথা না ভেবে অন্তি একান্ত নিজের কথা ভাবতো তবে কি সে এই উইল নামক জেলে বন্দি হতো?হয়তো না।ক্লাস নাইন থেকে সে টিউশনি করে আসছে চার বছর। টিউশনি করে ও বৃত্তির টাকা থেকে প্রয়োজনের বাইরে একটা টাকাও সে নিজের জন্য খরচ করে নি সব আশ্রমের বাচ্চাদের জন্য ব্যয় করেছে।কখনোই অন্তির এসবের জন্য আফসোস হয় নি বরং সে খুশি হয়েছে ভেতর থেকে।কিন্তু আজ আফসোস হচ্ছে অন্তির মনে হচ্ছে আজ যদি সে কিছু টাকা জমিয়ে রাখতো হয়তো নিজের অপারেশন আর ট্রিটমেন্ট নিজেই করাতে পারতো।না সেদিন বিয়ের আসরে বসতে হতো আর না অভিনব নামক ব্যক্তিটা তাঁর জীবনে আসতো।

অন্তি চোখের কোণে জমে থাকা পানিগুলো পড়তে দেয় না। অনেক ভেবেছে সে মানুষের জন্য আজ থেকে সে শুধু নিজের জন্য ভাববে।অভিনব অন্তিকে দশ মিনিট যাবত লক্ষ করছে।মেয়েটা মাথা নিচু করে বসে আছে কিছু বলছে না।অভিনব অন্তিকে ডাক দিয়ে বলল,
-‘অন্তি আর ইউ ওকে?’
অন্তি দুম করে পেছনে ঘুরে অভিনবর দিকে তাকিয়ে রইলো কিছুক্ষণ এরপর একটা মুচকি হাসি দিয়ে বলল,
-‘আম ওকে,প্লিজ ডোন্ট ওরি এবাউট মি।’
অভিনব অবাক হয়ে গেল অন্তির এমন স্বাভাবিক আচরণে।এতকিছু জানার পর অন্তির হাঙ্গামা করে বাড়ি মাথায় তুলে ফেলার কথা কিন্তু সে স্বাভাবিক।অন্তি অভিনবর অদ্ভুত রিয়েকশন দেখে হেসে বলল,
-‘আপনি এমন অদ্ভুতভাবে তাকিয়ে আছেন কেন?আমার পেছনে কি ঠাকুমার ঝুলির শাতচুন্নি দাঁড়িয়ে আছে না কি?’
-‘না,,মা,,মানে তোমার এমন স্বাভাবিক আচরণ আমাকে কনফিউশনে ফেলে দিচ্ছে।’

-‘কনফিউজ হওয়ার দরকার নেই।দেখুন আপনি নিজের স্বার্থে আমাকে বিয়ে করেছেন এখন আমারও উচিত নিজের স্বার্থটা বুঝে নেওয়া তাই না?’
অভিনব ভ্রূ কুঁচকে বলল,
-‘মানে?’
-‘মানে আমরা দুজন আগামী চার বছর বর বউ খেলব সকলের সামনে বুঝলেন।আর বাস্তবে শুধুমাত্র ভালো বন্ধু হব।এই চার বছরে আমি আমার পড়াশুনা শেষ করবো আর আপনি যেটা ইচ্ছা সেটা করবেন।দেখুন আমি যত দ্রুত সম্ভব চাকরি পাওয়ার চেষ্টা করবো।আর আপনি ততদিন পর্যন্ত আমার উপরে যত টাকা খরচ করবেন তা আমি আপনাকে যত দ্রুত সম্ভব ফিরিয়ে ফিরিয়ে দেয়ার যথাসাধ্য চেষ্টা।মানে আমার উপর যেই টাকাটা আপনি খরচ করবেন সেটা আমি ঋণ হিসেবে গ্রহণ করবো।’
অভিনব বুঝতে পারছে না হঠাৎ করে অন্তি এমন অদ্ভুত আচরণ কেন করছে?অভিনব জোরপূর্বক হেসে বলল,
-‘ওকে।’

অন্তি আর অভিনব দুজন দুজনের সাথে হাত মিলালো।দুজনের মনে দুই ধরণের কথা।অভিনব মনে মনে বলছে,
-‘এই মেয়ের হলোটা কি?হঠাৎ এমন অদ্ভুত আচরণ?’
অন্তি মনে মনে শয়তানি হাসি দিয়ে বলল,
-‘সাদা শেয়াল আমাকে নিয়ে এখন থেকে প্রতি মুহূর্তে ভাবতে বাধ্য হবে।তোমার মুখে হাসি থাকলেও তোমার ভেতরের চিন্তা সম্পর্কে আমি ঠিক ধারণা করতে পারছি।’
দুইজন একে অপরের দিকে তাকিয়ে সম্পূর্ণ ভিন্ন চিন্তায় ব্যস্ত।

সাথে থেকো প্রিয় পর্ব ৮

সারিকা জলদি জলদি হাঁটছে।এখন তাঁকে যেকোনো মূল্যে অফিসের কিচেনে পৌছাতে হবে।
সারিকা এক নাগাড়ে হেঁটে চলেছে কোনো দিকে তাকানোর সময় তাঁর নেই।সারি কিচেনে একটা হট মিল্ক শেক অর্ডার করলো অনেক চিনি দিয়ে।সারিকা মিল্ক শেকটা হাতে নিয়ে প্রশান্তির হাসি দিতেই হঠাৎ একটা বল এসে সেটা তাঁর জামায় ফেলে দেয়।সারিকার পিঙ্ক গাউনে মিল্ক শেক পড়ে যাওয়ার দুঃখ নেই দুঃখ হচ্ছে একান্তই মিল্ক শেকটা পড়ে যাওয়ার।সারিকা অসহায় দৃষ্টিতে সেটার দিকে তাকিয়ে থাকে এরপর কপালে হাত দিয়ে ধপাস করে মাটিতে পড়ে যায়।
পিটুশ চোখ বড়বড় করে সারিকা দিকে তাকিয়ে আছে।পিটুশের বলের আঘাতে সারিকা যদি এভাবে পড়ে গিয়ে থাকে তাহলে এটা তো ভয়ংকর ব্যাপার।পিটুশ পেছন ফিরে দৌড় দিতে যাবে তাঁর আগেই শুভ্র পিটুশকে ধরে ফেলে বলে,

-‘পিটুশ মহারাজ কোথায় পালানো হচ্ছে,,,,,।’
কথাটা বলতেই শুভ্রর চোখ পেছনে মেঝেতে পড়ে থাকা সারিকার দিকে যায়।কিচেনে তেমন কেউ নেই শুধু দুজন ওয়েটার ছাড়া।তাঁদের দেখে মনে হচ্ছে তাঁরাও অজ্ঞান হবে কিছুক্ষণের মাঝে।শুভ্র দৌড়ে সারিকার কাছে গেল।সারিকা মাথে নিজের কাঁধে রেখে সারিকার গালে হালকা থাপ্পড় মেরে ডাকে।কিন্তু সারিকা চোখ খুলে না।ওয়েটার পানি এনে দিলে শুভ্র পানি ছিটিয়ে দেয় সারিকার চোখে।সারিকা আধো আধো চোখ খুলে অনেক আস্তে করে বলল,

সাথে থেকো প্রিয় পর্ব ১০

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.