সাথে থেকো প্রিয় শেষ পর্ব
লেখক:রিয়ান আহমেদ
অন্তির চোখজোড়া সারা রাত কান্নার কারণে লাল হয়ে ফুলে আছে।অভিনব শান্তনা দেওয়ার চেষ্টা করেছে কিন্তু লাভ হয়নি।অভিনব ভোরবেলায় আবার চলে গেছে বাসা থেকে।
অন্তি ফজরের নামাজের মোনাজাতে আল্লাহর কাছে শুধু একটা দোয়াই করেছে তার বাবা এবং স্বামী যেন সহি সালামতে তার কাছে ফিরে আসে।
অন্তি বারান্দায় বসে হাটুতে মুখ গুঁজে নিজের বাবার কথা ভাবছে।মানুষটার সঙ্গে ওর দুইবার দেখা হয়েছিল প্রথমবার অনন্ত তার জন্য ছিল অপরিচিত ব্যক্তি আর দ্বিতীয়বার ছিল অভিনবর বস।বাবা হয়ে কি লোকটা ওর সামনে কখনো আসবে?সে নিজের মাথায় হাত চেপে ধরে কেঁদে উঠে আর নিজে নিজেই প্রলাপ করতে থাকে,
-‘আমি কি নিজের বাবাকে আবার পেয়েও হারাবো?আমার কপালটা এতো খারাপ কেন?আমি কি দোষ করেছিলাম যে উপরওয়ালা আমার ভাগ্যে বাবা মায়ের ভালোবাসা নামক জিনিসটা লিখলেন না।আমি একটা বার বাবাকে জড়িয়ে ধরতে চাই।আল্লাহ তুমি আমার সঙ্গে আজ অব্দি যা যা করেছো সব মেনে নিয়েছি।আমি মেনে নিয়েছিলাম আমার বাবা বলতে কেউ নেই কিন্তু আজ এতো বছর পর যখন জানতে পারলাম আমার বাবা আছে আর সে আমাকে আর আমার মাকে সীমাহীন ভালোবাসে তখন আমি কি করে নিজেকে সেই ভালোবাসার লোভ থেকে সামলাবো বলো তো।আমার বাবাকে এতোটা বছর আমি ঘৃণা করে এসেছিলাম শুধু এটা ভেবে যে সে একজন পলাতক যে আমার মাকে ফেলে পালিয়েছে।কিন্তু সেসব তো পুরোপুরিই ভুল ছিল বাবা কখনো নিজের আসল নামটাই মনে করতে পারেন নি সেখানে নিজের পরিবারের কথা মনে পড়া তো তার জন্য অসম্ভব ছিল।,,,যা হয়েছে হয়েছে কিন্তু এখন আমি আমার বাবাকে চাই সুস্থ অবস্থায়।সত্যি বলছি উনিশ বছরের না পাওয়া ভালোবাসার একটা অংশও যদি আমি বাবার কাছে পাই তাহলে আমি নিজেকে পৃথিবীর সবচেয়ে সুখী সন্তান ভাববো।’
আরও গল্প পড়তে আমাদের গুপ এ জয়েন হউন
সুহানা অভিনবদের রুমে ঢুকে দেখে অন্তি বারান্দায় বসে কান্না করছে।সুহানা অবাক হয় মেয়েটাকে এভাবে সে কখনোই কাঁদতে দেখে নি।সুহানা অভিনবকে কাল রাতে দেখে নি বলে অন্তির কাছে জিজ্ঞেস করতে এসেছিল অভিনব এসেছিল কি না।সুহানা অন্তির কাছে গিয়ে কাঁধে হাত রেখে নরম মমতাময়ী কন্ঠে বলল,
-‘অন্তি?মা তুই এভাবে কাঁদছিস কেন?কি হয়েছে তোর?’
অন্তি কোনো কথা না বলে সুহানাকে জাপ্টে জড়িয়ে ধরে কম্পন ভরা কন্ঠে শুধু বলে,
-‘বা,,বা।’
সুহানা বলল,
-‘তোর বাবা তো ঠিক আছে।ডাক্তার বলেছেন উনি এখন অনেকটাই সুস্থ শুধু অপারেশনের ঘাটা শুকিয়ে গেলেই আগের মতো সবাইকে কথায় কথায় ঝাড়ি মারবেন।’
অন্তি কিছু বলে না শুধু মাতৃ স্নেহ পেয়ে কান্নার গতি কিছুটা কমিয়ে দেয়।সে সুহানার কোলে চুপ করে মাথা রাখে। মায়েদের শরীর থেকে একটা আলাদা ঘ্রাণ আসে সন্তান যত দুঃখ কিংবা বিপদে থাকুক না কেন এই একজন মানুষের নিকটস্থ হয়ে কিছু মুহূর্তের জন্য তা ভুলে যায়।সুহানা নিজের কোলে মাথা রেখে শুয়ে থাকা মেয়েটার চুলে বিলি কেটে দিতে দিতে নানা ধরনের কথা বলতে থাকেন।অন্তির মস্তিষ্ক তার নিজের কাছে শূন্য শূন্য লাগছে।গলাটাও কেমন ঝলছে।
অভিনব দুর্জয়ের সবগুলো বাড়ি,কারখানা,আর সিক্রেট ব্যাস তন্ন তন্ন করে খুঁজে চলেছে কিন্তু কোথাও দুর্জয় কিংবা দীপ্ত কারো কোনো সন্ধান পায় নি।অভিনব গাড়ির দরজায় লাথি মারলো তখনই তার ফোনে কল এলো দূর্জয়ের বাবা দীপ্তর।অভিনব জানে নাম্বারটা প্রাইভেট তাই ট্রেক করার চেষ্টা করে কোনো লাভ হবে না।অভিনব রিসিভ করলো দীপ্ত খিটখিটিয়ে হেসে বলল,
-‘তো এখন বল কে গেমটা জিতবে?তুই সারাজীবন খুজলেও কোথাও তোর বসের সন্ধান পাবি না।’
-‘সেটা আমি দেখে নেব।’
-‘দেখ তোকে আমি সময় দিচ্ছি চব্বিশ ঘন্টা।আসলে হয়েছে কি বলতো আমার একটা রাশিয়ান মডেল গার্লফ্রেন্ড আছে ওকে ছেড়ে যেতে পারছি না এই মুহূর্তে।আর দূর্জয়কেও বলতে পারছি না অনন্তকে দুনিয়া থেকে সরানোর কথা।কারণ আমৃর শত্রুকে আমি নিজের হাতে শেষ করতে চাই উনিশ বছরের প্রতিশোধের আগুন ওর রক্ত রঞ্জিত দেহ দেখেই নিভবে।এখন বাজে,,দুপুর বারোটা আগামীকাল দুপুর বারোটায় এসব যেখানে শুরু হয়েছিল সেখানেই শেষ হবে।পারলে আটকে দেখা।’
-‘তোর ছেলে তো same তোর মতোই হয়েছে নারী দেহ ছাড়া তোদের দিন শুরুও হয় না শেষও হয় না।তোর এই I accept your challenge’
অভিনব ফোন কেটে দেয়।নিজের লোকদের নিয়ে চিরুনি তল্লাসি শুরু করে সব জায়গায়।দুর্জয়ের বিশজন লোককে এই পর্যন্ত আটক করা হয়েছে কিন্তু এরা কেউই মুখ খুলছে না।
বিকাল হয়ে গেছে কোনো ক্লু এখনো পাওয়া যায় নি।হঠাৎই অভিনবর অনন্তর একটা কথা মনে পড়ে,’যেখানে দেখিবে ছাই উড়াইয়া দেখিবে তাই পাইলেও পাইতে পারো অমূল্য রতন।’অনন্ত এই বিখ্যাত প্রবাদটা প্রায় সময় বিভিন্ন কাজের জটিলতা সমাধানের সময় বলতো।
অভিনব ভাবতে থাকে কিছু একটা হয়তো সে মিস করছে।কিন্তু সেটা কি?অভিনব নিজের লোকদের দিকে তাকিয়ে হঠাৎ চিৎকার দিয়ে বলল,
-‘পেয়ে গেছি।’
সবাই অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলো,’কি পেয়েছেন স্যার?’
-‘যেখান থেকে এসবের শুরু হয়েছিল সেখানেই এসবের শেষ হবে।দীপ্ত এটাই বলেছিল।এখন আমাদেরকে এসবের শুরুটা কোথায় হয়েছিল সেটা জানতে হবে।’
জাবেদ নামের একজন বলল,
-‘কিন্তু স্যার কিভাবে বের করবো?আর এই শুরুটা কিসের?’
-‘অনন্ত স্যারের এক্সিডেন্ট এসবের শুরু করেছিল।,,দীপ্ত নিজেকে অনেক চালাক মনে করলেও আসলে সে চালাক না পৃথিবীর সবচেয়ে বড় বোকা শত্রু।নাহলে কথায় কথায় সে রেগে গিয়ে আমার কাছে নিজের সব রহস্য ফাঁস করে দিয়েছে।,,অনন্ত স্যার এক্সিডেন্ট হয় ওদের গাড়ির সামনে আর তার পরেই দীপ্ত আলমের জীবনে তার আগমন ঘটে।দীপ্তর মতে তার বাবা তাকে তার পাওনা থেকে বঞ্চিত করেছে আর অনন্তকে ব্ল্যাক শ্যাডো গ্যাঙ্গের লিডার বানিয়েছে।তাই সে এসবের প্রতিশোধ নিতেই উঠে পড়ে লেগেছে।এখন আমাদের সেই এক্সিডেন্ট স্পট খুঁজে বের করতে হবে।’
-‘স্যার এমটাও তো হতে পারে ও অন্য কোথাও অনন্ত স্যারকে লুকিয়ে রেখেছে।’
-‘উঁহু ওর সাথে আমার বহু বছরের শত্রুতা ওর শিরার শিরার খবর আমি জানি।,,অনন্ত স্যার আমাকে বলেছিলেন ওনার কোথায় এক্সিডেন্ট হয়েছিল।,,,’
অভিনব নিজের লোকদের নিয়ে সব প্ল্যান করলো।
-‘ড্যাড তুমি কখন আসবে?আমি আর অপেক্ষা করতে পারছি না এই ব্যাটাকে মারার জন্য।’
ফোনের ওপাশ থেকে দীপ্ত বলল,
-‘মাই বয় ক্যাম ডাউন।আমাদের কাছে এখনো অনেক সময় আছে।আমি একটা কাজে আছি এই মুহুর্তে কাজটা শেষ হতে দেরী হবে একটু ততক্ষণ অব্দি সব ম্যানেজ করে নেও।’
দুর্জয় দীপ্তর সঙ্গে ভিডিও কলে কথা বলছিল।সে খেয়াল করলো তার বাবার গলায় লিপস্টিকের দাগ লেগে আছে।তার বোঝা হয়ে গেল কি জরুরি কাজ করছে তার বাবা।দুর্জয় এসব নিয়ে কেয়ার করে না কারণ সেও তার বাবার মতো।দুর্জয়ের মা বাবার ডিভোর্সের পর মা অন্য একজনকে বিয়ে করে বিদেশ চলে গেছেন এরপর আর কখনো নিজের আট বছরের ছেলের খোঁজ নেন নি আর দুর্জয়ের বাবা বিয়ে না করলেও হাজার হাজার মেয়ের সঙ্গে এই পর্যন্ত থেকেছেন।
দীপ্ত একটা শয়তানি হাসি দিয়ে বলল,
-‘আগুনের চেহারাটা একটু দেখা তো শালার চেহারাটা দেখতে ইচ্ছে করছে।’
দুর্জয় অনন্তর পাশের রুমেই ছিল।সে উঠে অনন্তর রুমে যায় অনন্ত চুপ করে বসে আছে একদম শান্তভাবে চেয়ারে বসে আছে।দুর্জয় বলল,
-‘এই নেও ড্যাড দেখো তোমার প্রানের শত্রুকে।’
অনন্তর সামনে মোবাইল ধরতেই ভিডিও কলে থাকা দীপ্ত বলল,
-‘কিরে কেমন লাগছে বন্দি খাঁচায় থাকতে।’
অনন্ত ভিডিও কলে থাকা মানুষটাকে দেখতেই তার শরীরের রক্ত গরম হয়ে যায়।বিশ বছর আগেয সেই এক্সিডেন্টের আগের মুহূর্তে এই লোকটাই তো তাকে গুলি করেছিল হাতে।এটাই তো সে যার বিরুদ্ধে অনন্ত হিউমান ট্রাফিকিং এর প্রুভ একত্রিত করতে গিয়ে আজ সে পরিবার হারিয়ে শূন্য হাতে বসে আছে।অনন্তর মুখ দিয়ে বেরিয়ে আসে,
-‘দীপ্ত আলম!’
-‘হ্যা আমি।আমি ছাড়া আর কে সাহস রাখে তোকে বন্দি করার।,,তোর আর আমার শত্রুতার ইতিহাস আজ থেকে দশ বছর আগে শুরু হয় নি সেই বিশ বছর আগে শুরু হয়েছিল কিন্তু এটা তুই নিজেও জানিস না কারণ তোর স্মৃতিশক্তি হারিয়ে গেছে।সেদিন আমার বিরুদ্ধে প্রুভ একত্রিত করার চেষ্টা না করলে না তোর হাতে গুলি লাগতো আর না তুই এক্সিডেন্ট হয়ে স্মৃতি হারাতি।,,,কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে আমার মহান হৃদয়ধারী বাবার গাড়ির সামনে পড়ে আর মরলিও না।আমার বাবা তোকে হসপিটালে ভর্তি করলো আমি তখনও তোকে মেরে দেব ভাবছিলাম কিন্তু বাবার কারণে পারছিলাম না।পরে তোর জ্ঞান ফেরার পর জানতে পারলাম তুই স্মৃতি ভুলে গেছিস তাই তোকে মারার প্লেন ড্রপ করলাম।বাবা তোর পরিবারের বিষয়ে আমাকে খোঁজ নিতে বললে আমি বলি আমি তোর বিষয়ে কোনো নিখোঁজ হওয়ার করেছে এমন কাউকে পাই নি।কারণ খোঁজ করলেই তোর সিক্রেট এজেন্টরা তোকে নিয়ে যেতো আর তোর প্রপার ট্রিটমেন্ট করে আমার কাছে পৌছে যেত আর আমি গ্রেপ্তার হতাম।সেই সময় পর্যন্ত তুই একমাত্র ব্যক্তি ছিলি যে আমার ফেস দেখেছিল আর আমার কাজ সম্পর্কে জানতো। তাই আমি সিচুয়েশনের সুযোগ নিলাম।তোকে আমার বাবা নিজের গ্যাঙ্গে সামিল করে নিল।
কিন্তু ধীরে ধীরে আমার বাবার প্রিয় পাত্র হয়ে উঠলি তুই যদিও এতে আমার কোনো যায় আসতো না।কিন্তু যখন আমার বাবা তোকে লিডার ঘোষিত করলো আর আমাকে গ্যাঙ্গ থেকে বের করে দিল তখন আমি হয়ে গেলাম তোর প্রকৃত শত্রু।,,,আজ তোকে আমি এসব কেন বলছি জানিস?,,কারণ মৃত্যুর আগে তোর নিজের আসল সত্যটা জানা প্রয়োজন ছিল।’
অনন্তর নিজের গত বিশ বছরের স্মৃতি ধীরে ধীরে মনে পড়তে থাকে।এই লোকটা এতদিন যাবত ওর সাথে ঘটে যাওয়া সবকিছুর জন্য দায়ী।অনন্ত চিৎকার করে রক্তচক্ষু নিয়ে দীপ্তর দিকে ফোনের মধ্যে তাকালো আর বলল,
-‘আমি অনন্ত রাহমান বলছি তুই আমার সামনে যেদিন আসবি সেদিন তোর জীবনের শেষ দিন হবে।’
-‘আমি তোর শেষ দিনেই তোর কাছে আসবো মানে আগামীকাল।আর তুই দেখছি নিজের আসল নাম জানিস(হেসে)স্মৃতি ফিরে এসেছে তাহলে।আগামীকাল তোকে সেখানেই শেষ করবো যেখানে সবটা শুরু হয়েছিল মানে ঐ ফ্যাক্টরিতে।যেখানে তুই আর আমি একে অপরের সামনে এসেছিলাম প্রথমবার।’
অনন্ত বলল,
-‘সিংহ জঙ্গলে থাকুক আর খাঁচায় সিংহ সিংহই থাকে।আর এই সিংহ কাল তোকে শেষ করবে।’
-‘তুই আর তোর চ্যালা অভিনব দেখি একে অপরকে সিংহ মনে করিস আর একই টাইপের কথা বলিস।’
-‘তোর বাবা জোবান আলম তোকে কেন লিডার বানায় নি জানিস?’
-‘কারণ তার কাছে আমার চেয়ে বেশি জরুরি আর প্রিয় ছিলিস তুই।’
-‘নাহ্ সে তোকে ভালোবাসতো অনেক বেশি তাই সে চায় নি লিডার হওয়ার পর তোর কোনো ক্ষতি হোক।একজন লিডারকে হাজারটা গুলির আঘাত সহ্য করে নিজের দলের সদস্যদের বাঁচাতে হয় যেটা তোকে করতে দিতে চায় নি বড় স্যার।কিন্তু সে যদি নিজের ছেলের আসল রূপ আর আসল উদ্দেশ্য সম্পর্কে মৃত্যুর আগে জানতো তাহলে হয়তো তোর বুকে হাজারটা গুলির আঘাত দিয়ে তোকে হত্যা করতো।তুই বড় স্যারের সব গুণের মধ্যে একটা গুণের মালিক হলেও আজ তোর এই অধঃপতন হতো না।’
দীপ্ত ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে বলল,
-‘তোর নীতি কথা তোর কাছেই রাখ যত্তসব।’
দীপ্ত কল কেটে দেয়।দুর্জয় অনন্তর দিকে ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে বলল,
-‘ও তাহলে তোমার আসল নাম অনন্ত।বাহ্ তোমাদের শত্রুতার কাহিনী তো যেকোনো থ্রিলার মুভিকেও হার মানাবে।’
দুর্জয় আর কিছু না বলে চলে গেল।
-‘সারিকা তুমি আমাকে কি বলতে এখানে নিয়ে এসেছো?মানুষ ভাববে কি এভাবে টেনে নিয়ে এলে।’
-‘শুভ্র তোমার উচিত আমার সম্পর্কে সবকিছু প্রথমেই জেনে নেওয়া।আমি আসলে এমন কেউ যার সম্পর্কে তুমি কল্পনাও করতে পারবে না।’
-‘হ্যা,,,তা তুমি কে বলো।কোনো রূপকথার রাজ্যের পরী?সমস্যা নেই পরী বিয়ে করা তেমন আনকমন কিছু না আর তুমি আমার কাছে সবসময় পরীই ছিলে।’
-‘শুভ্র আমি মজা করছি না আম সিরিয়াস।’
-‘ওকে হাই সিরিয়াস।’
-‘শুভ্র!(রেগে)’
-‘ওকে বলো।’
সারিকা নিজের ব্ল্যাক শ্যাডো গ্যাঙ্গের সঙ্গে যুক্ত থাকার ব্যাপারে বলল।শুভ্র মন দিয়ে সব কথা শুনে বলল,
-‘ওকে,,,তাহলে এই কারণেই তুমি ছদ্মবেশে এদিক সেদিক ঘুরে বেড়াও।’
শুভ্রর স্বাভাবিক রিয়েকশন সারিকার হজম হলো না।কোনো মানুষ নিজের প্রেমিকার এতো বড় একটা রহস্য শুনে এতো সাধারণ রিয়েকশন দিতে পারে না।সারিকা শুভ্রকে বলল ,
-‘তোমার এই বিষয়ে আর কিছু বলার নেই?’
-‘উহু নেই।দেখো তুমি কোনো খারাপ কাজ করছো না মানুষের সাহায্য করছো এতে ক্ষতি কি আছে।তোমার কারণে কতো মেয়ে নিজের পরিবার হারা হয় নি তাদের জীবন বেঁচে গেছে কতো মানুষ ড্রাগসের মতো ভয়ংকর নেশার শিকার হয়নি।তবে হ্যা একটা বিষয় কি বলো তো আমি তোমার এই কথাটা তোমার মুখে শুনে খুশি হলাম অন্য কেউ বললে আমার মনে হতো তুমি আমাকে বিশ্বাস করতে পারো না।’
শুভ্র মুচকি সারিকার কপালে একটা চুমু দিয়ে অফিসে ঢুকে পড়ে।এতক্ষণ তারা অফিসের সিড়িতে দাঁড়িয়ে কথা বলছিল কারণ লিফ্ট থাকার কারণে এদিকে কারো তেমন একটা আশা যাওয়া হয় না।সারিকা হেসে বলল,
-‘তোমার মতো মানুষকে লাইফ পার্টনার বানানোর সিদ্ধান্ত নিয়ে কোনো ভুল করি নি।’
অভিনব বাসায় ফোন করে বলে দিয়েছে সে দুদিনের জন্য আউট অফ টাউন যাচ্ছে তাই কেউ যেন তাকে নিয়ে টেনশন না করে।কেউ হয়তো টেনশন করছে না এই কথা শুনে কিন্তু অভিনবর এংগ্রিবার্ডের অবস্থা টেনশন করে করে নাজেহাল।অন্তি অভিনবকে ফোন দিয়ে বলল,
-‘অভি আমি আপনার সঙ্গে যাব বাবাকে উদ্ধার করতে।’
অভিনব রাগ এবং ভয় নিয়ে বলল,
-‘অন্তি তুমি পাগল হয়েছো?তুমি এখানে এসে কি করবে?তোমার কোনো ক্ষতি হলে আমি নিজেকে নিজে কখনো মাফ করতে পারবো না।’
-‘আমি আপনার আর বাবার ক্ষতি হলে নিজেকে বাঁচিয়ে রাখতে পারবো না।প্লিজ অভি আমার এই রিকোয়েস্টটা রাখুন।আমি আপনার পাশে থেকে আপনার সাহায্য করতে চাই।’
-‘না অন্তি তোমার রিকোয়েস্ট রাখতে পারছি না।’
অভিনব আর একটা শব্দ না বলে ফোন কেটে দেয়।অন্তি আবার কল করতেই সুইচড অফ পায়।
দুপুর বারোটা বাজতে আর মাত্র বিশ মিনিট বাকি।দুর্জয়,দীপ্ত আর দীপ্তর লোকজন সবাই উপস্থিত।অনন্তকে আনা হয়েছে ওদের সামনে।দুর্জয় ঘড়ির দিকে তাকিয়ে বলল,
-‘ড্যাড আমরা তো সব রেডি করে ফেলেছি তাহলে শ্যুট করতে আর দেরী কিসের।ভালো কাজে দেরী করতে নেই।এখনই ওনাকে উড়িয়ে দেই চলে।’
দীপ্ত সিগারেট জ্বালাতে জ্বালাতে বলল,
-‘এতো তাড়া কিসের মাই সন।ঠিক দুপুর বারোটায় ওর খেল খতম করবো।’
অনন্ত বলল,
-‘সাহস থাকলে আমার হাত পায়ের বাঁধন খুলে দেখা।’
-‘সাহস আছে কিন্তু তোকে ভরসা নেই।হাত পা খুলে দিলে আবার আমাদের উপরেই তুই হামলার চেষ্টা করবি তখন বাধ্য হয়ে বারোটার আগেই তোকে খুন করতে হবে।’
-‘ড্যাড তুমি একে বারোটায় কেন খুন করতে চাইছো?’
-‘কারণ আমি অভিনবকে চ্যালেঞ্জ দিয়েছি। ও বারোটার মধ্যে এখানে এসে অনন্তকে বাঁচাতে না পারলে অনন্তর শেষ এখানেই হবে।সবকিছুর শুরু যেখানে হয়েছিল শেষটাও সেখানেই হবে।’
দুর্জয় রেগে গেল।তার বাবা মস্ত বড় ভুল করে ফেলেছে এই কথাগুলোর আসল মানে হয়তো অভিনব এতক্ষণে বের করে ফেলেছে।তাই রেগে গাড়ির দরজা ভেঙ্গে ফেলে ঘুষি দিয়ে আর বলে,
-‘তুমি এটা কি করেছো ড্যাড? এই ফ্যাক্টরি খুঁজে বের করতে সময় নেবে না অভি,,,,।’
দুর্জয়ের আর একটা শব্দ উচ্চারণ করার আগেই হঠাৎ গুলির শব্দ হলো।স্টিলের দরজায় গুলির বিকট শব্দ সবার কানে ঝন ঝন করা শব্দ পৌছে দেয়।
ফ্যাক্টরির গেট খুলে অভিনব সহ আরো পঞ্চাশ জন প্রবেশ করে।সবাই একই রকম পোশাক পড়ে আছে।কালো লেদারের জ্যাকেট,কালো বুটস,গুগল গ্লাসেস,কালো ক্যাপ।
দুর্জয় নিজের বাবার দিকে তাকিয়ে বলল,
-‘ইউ ব্লাডি ইডিয়ট ম্যান তোমার জন্য এখন সব ভেস্তে যাবে।শুধুমাত্র তোমার বোকামির জন্য।’
দীপ্ত বলল,
-‘জাস্ট শ্যাট আপ।বয়েস ট্যাক দেম টু দ্যা গান পয়েন্ট।’
রেড জাইন্ট গ্রুপের সবাই অভিনবদের দিকে গান পয়েন্ট না করে দুর্জয় আর দীপ্তর দিকে গান পয়েন্ট করলো।অভিনব বাঁকা হাসি দিয়ে বলল,
-‘তুই আমার দলের দুজনকে কিনতে পারলে আমি তোর দলের ত্রিশ জনকে কিনতে পারবো না।আমি এদেরকে টাকা দিয়ে কিনে নিয়েছি আর এরাও তোর সাথে বেইমানি করছে।’
দীপ্ত চেঁচিয়ে বলল,
–‘তুই ওদের কিনে নিলেও অনন্তকে বাঁচাতে পারবি না।আমি ওকে দেওয়া সকালের পানির মধ্যে স্লো পয়েজন মিশিয়ে দিয়েছিলাম যেন তুই আসলেও ওকে বাঁচাতে না পারিস।এতক্ষণে সেটার ইফেক্ট শুরু হওয়ার কথা।’
দীপ্ত অনন্তর দিকে তাকাতেই দেখলো অনন্ত দিব্যি সুস্থ স্বাভাবিক মানুষের মতো বসে আছে আর হাসছে।দীপ্ত বুঝতে পারলো না এই হাসির কারণ কি?অনন্ত বলল,
-‘তুই বলিস নি বলে যে আমিও বুঝবো না এটা কোথাও লেখা আছে।তোর স্লো পয়েজন আমার শরীরে যায় নি।শত্রুর বাড়ির এক গ্লাস পানিও বিষাক্ত হয় তাই এই ভুল আমি কি করে করি?
দুর্জয় হেসে বলল,
-‘ভালোই গেম দিলি অভিনব।’
-‘জানি তোকে বলতে হবে না।’
অনন্তর হাত পায়ের বাঁধন খুলে দিতেই অনন্ত দীপ্তর কাছে গিয়ে দাঁড়ায়।দীপ্তর মাথায় বন্দুক ঠেকিয়ে বলে,
-‘তোর করা সব পাপ তোর ছেলে জানে কিন্তু তোয একটা পাপ সম্পর্কে সে হয়তো জানে না। তোর স্ত্রী দিয়ার খুন তুই ডিভোর্স হওয়ার পরেরদিন করে দিয়েছিলি কারণ সে তোর সব কালো ব্যবসা সম্পর্কে জেনে গিয়েছিল আর খুনের পর সবাই জানলো যে মেয়েটা অন্য একজনকে বিয়ে করে বিদেশ পাড়ি দিয়েছে।’
দুর্জয় অবাক হয়ে তার বাবার দিকে তাকালো।দুর্জয়ের চোখ টলমল করছে।তার বাবা জঘন্য মানুষ!কিন্তু তার মাকে মারলো কেন?ছোটবেলা থেকে সে জেনে এসেছিল তার মা আছে কিন্তু অনেক দূরে অন্য কারো মা হয়ে অন্য কারো স্ত্রী হয়ে আর আজ জানতে পারলো তার মা বেঁচে নেই।দীপ্ত ভয় পেয়ে অনন্তকে বলল,
-‘তুই কিভাবে জানলি এসব?’
-‘তুই সাত বছর আগে একটি ক্লাবে নেশা করে বসেছিলি তখন আমার সঙ্গে তোর সেখানে দেখা হয়।তুই তর্কাতর্কির এক পর্যায়ে এই সব আমাকে বলে দিলে।সেদিন তোকে চাইলেই খুন করতে পারতাম কিন্তু আমি বড় স্যারকে কথা দিয়েছিলাম তোর গায়ে কখনো আঘাত করবো না তুই যতই আমার ক্ষতি করিস।সত্যি বলতে ওনার কারণেই তুই আজও নিঃশ্বাস নিচ্ছিস।’
অনন্ত কথাটা বলতে না বলতেই।দুর্জয় তার হাত থেকে বন্দুক কেড়ে নিয়ে রেগে বলল,
-‘আপনি প্রমিস করেছেন কিন্তু আমি করি নি।এই ব্যক্তিকে আমি আজ এই মুহুর্তে শেষ করে দেব।’
কয়েক মিলি সেকেন্ডের মধ্যে শর্ট গানটা থেকে একটা গুলি বের হয়ে দীপ্তর বুকের বা পাশে প্রবেশ করে এরপর একটা বুকের ডান পাশে আর একটা কপালের মাঝে।দীপ্ত মাটিতে লুটিয়ে পড়ে।চারপাশে রক্ত ধারা বইতে শুরু করে।লাল রক্তে রজ্ঞিত নিথর মৃত দেহটির দিকে সকলের চোখ।এই লোকটার মৃত্যুর সঙ্গে সঙ্গে অনেক অনেক মানুষের বিধ্বস্ত জীবনে একটু প্রশান্তি বয়ে যাচ্ছে।কারণ আজ তাদের জীবনটাকে বিধ্বস্ত করে তোলার পেছনে যে দায়ী সে আর নেই।
দুর্জয়কে পুলিশ মিডিয়ার সামনে নিয়ে আসে।দুর্জয় সবার সামনে নিজের বাবার মৃত্যুর দায়ভার নিজের কাঁধে নেয় এরপর তাকে নিয়ে জেলের দিকে রওনা দেওয়া হয়।
অভিনব অনন্তকে নিজের বাসায় নিয়ে এসেছে।সবাই উৎসুক এই ব্যক্তির পরিচয় জানার জন্য।
অভিনব দৌড়ে অন্তির রুমে গেল।অন্তি বারান্দায় বসে বসে সাঁঝের বেলায় কান্না করছে।অভিনব অন্তিকে পেছন জড়িয়ে ধরতেই অন্তি কনুই দিয়ে অভিনবর বুকে আঘাত করে বলে,
-‘স্পর্শ করবেন না আপনি একজন অনেক অনেক খারাপ লোক।সারাটাদিন ফোন করেছি একবার ধরার প্রয়োজবোধ করেন নি।’
-‘সরি বলবো না।,,তোমার বাবা এসেছে নিচে।’
অন্তি আর কোনো কথা না বলে ওরনাটা মাথায় দিয়ে দৌড় দেয়।অভিনব অবাক সেই কান্ড দেখে।
-‘স্যার আপনার মেয়ে আমার স্ত্রী অন্তি।’
অভিনব মাথা নিচু করে কথাটা বলে আর পেছন থেকে অন্তিকে সামনে এনে অনন্তর সামনে দাঁড় করায়।অনন্ত অভিনবর দিকে তাকিয়ে খুশি হয়ে বলল,
-‘তুমি সত্যি বলছো।এটা আমার মেয়ে কি ওর নাম?ওর জন্মদিন কবে?’
-‘স্যার ভুলে গেলেন ওর নাম অন্তি।’
অনন্ত নিজের মেয়েকে পিতৃস্নেহে বুকে জড়িয়ে নেয়।অন্তিও নিজের বাবাকে জড়িয়ে ধরে।দুজনেই সুখের কান্না করে।সবাই ঘটনা বোঝার চেষ্টা করেছে কিন্তু তাদের মাথায় কিছু ঢুকছে না।কারণ সবার জানা মতে অন্তির আপন মানুষ বলতে শুধু শশুড়বাড়ির এই চারজন ব্যক্তি তাহলে আজ হঠাৎ বাবা কোত্থেকে এলো।
অন্তির বাবা মা তো অনেকদিন আগেই মারা গেছে।কিন্তু এই লোকের চেহারা আর অন্তির চেহারা তো হুবুহু এক রকম যেন এরা সত্যিই বাবা মেয়ে।
অনন্ত এবার মেয়েকে ছেড়ে দিয়ে বলল,
-‘মা আমাকে একবার আমাকে বাবা বলে ডাক।’
অন্তি অশ্রুশিক্ত চোখে তাকিয়ে কোমল হাসি দিয়ে বলল,
-‘বা,,বা,,আই মিস ইউ বাবা।’
-‘আই মিস ইউ ঠু।,,তোর মা কোথায়?’
অন্তি চুপ হয়ে যায়। অভিনবর দিকে তাকাতেই অভিনবকে চুপ দেখে অনন্ত আবার বলল,
-‘আনিকা কোথায়?ও আমার উপর রাগ করে আছে তাই না?মা চল তোর মায়ের রাগ ভাঙ্গাতে হবে।’
অন্তি কাঁদো কাঁদো গলায় বলল,
-‘মা,,আর এই পৃথিবীতে নেই।’
অনন্ত স্তব্ধ হয়ে তাকিয়ে থাকে।অভিনব বলে কিভাবে আনিকার মৃত্যু হয়েছে।অনন্ত কিছু বলে না হঠাৎ অজ্ঞান হয়ে পড়ে যায়।
সবাই হসপিটালে বসে আছে। অনন্তকে কেবিনের একটি বেডে শুইয়ে দেওয়া হয়েছে আল্লাহর রহমতে তেমন কোনো ক্ষতি হয় নি শুধু শক হওয়ার কারণে এমনটা হয়েছে।
অভিনব নিজের পরিবারের সবাইকে অনন্তর এতদিন গায়েব থাকার রহস্যটা বলেছে।সবাই শুনে বেশ মর্মাহত হয়েছে।অর্ণব আর সুহানা অভিনবর উপর রেগে আছে।সন্তানদের জীবনের এতো বড় সত্য তাড়া জানতো না এতদিন সেটা সত্যিই কষ্টদায়ক।অভিনব আজ তাদের সামনে ব্ল্যাক শ্যাডো গ্যাঙ্গের সদস্য হওয়ার সত্যিটা প্রকাশ করেছে।সুহানা অভিনব আর সারিকার গালে চড় দিয়েছে এতো ঝুঁকিপূর্ণ কাজে যুক্ত থাকার জন্য।অর্ণব কিছু বলছে না তবে তার মুখ লাল হয়ে আছে।
অনন্তর জ্ঞান ফিরে।সে অনেক্ষণ মেয়ের হাত ধরে বসে বসে কাঁদে।সবাই বাবা মেয়েকে একান্তভাবে কথা বলার জন্য কেবিন ছাড়ে।অন্তি বাবাকে শান্তনা দেয় আর কথা দেয় সে সারাজীবন নিজের বাবার সাথে থাকবে।অনন্তর কান্নাটা একদিন ব্যাপী ছিল।এরপর কান্না থামালেও সে হঠাৎ হঠাৎ কেঁদে উঠেছে।
অনন্তকে অভিনব নিজের বাড়িতে নিতে চাইলে অনন্ত বলে,’আমি নিজের বাড়িতে যেতে চাই।সেখানে আমার স্ত্রীর স্মৃতি আছে।যতদিন বেঁচে আছি সেখানেই থাকবো।’
অনন্তর বাড়ি ঠিক করা হয়েছিল বেশ কিছুদিন আগেই তাই অভিনব আর জোর করতে পারে না তবে এ কদিনের মধ্যে সে অনন্তকে বাবা বলে সম্বোধন করতে শুরু করেছে।
অনন্তকে একা বাড়িতে পাঠানোর সাহস অন্তি পায় না কারণ এসব ঘটনার পর মানুষ ভয়ানক পদক্ষেপ নিয়ে থাকে যেমন আত্মহত্যা।তাই অন্তিও ডিসাইড করে বাবার সঙ্গেই সে কয়েকমাস নিজের বাড়িতে থাকবে।
অন্তি রাহমান ম্যানশটাকে নিজের মতো সাজিয়ে গুছিয়ে নিয়েছে।বাবার সম্পূর্ণ দেখাশোনা সে নিজেই করে এছাড়া তিনজন কাজের লোক রাখা হয়েছে।
অন্তি রাতে ঘুমিয়ে ছিল তখনই তার কেউ হঠাৎ তাকে জড়িয়ে ধরে।প্রথমে অন্তি ভাবে কে আর হবে অভিনবই হয়তো।কিন্তু তখনই তার মনে পড়ে এটা তো তার বাবার বাড়ি অভিনব এখানে কিভাবে আসবে।অন্তি চিৎকার জুড়ে দেয়,
-‘ভুত ,,ভুত বাবা বাঁচাও।’
অনন্ত দৌড়ে মেয়ের ঘরে এসে লাইট জ্বালিয়ে এদিক ওদিক তাকাতে তাকাতে উত্তেজিত হয়ে বলল,
-‘কি হয়েছে?কি হয়েছে?কোথায় ভুত?’
অন্তি উঠে বসে পাশে তাকাতেই চমকে একটু পেছনে সরে যায়।অনন্ত চোখ ছোট ছোট করে বলল,
-‘অভি তুমি এখানে?’
অভিনব বোকার মতো বাবা মেয়ের দিকে তাকাতে তাকাতে আমতা আমতা করে বলল,
-‘আসলে আমি এদিক দিয়ে যাচ্ছিলাম তাই চলে এলাম আর কি।’
অনন্ত বুঝতে পারলো ব্যাপারটা তাই গম্ভীর গলায় বলল,
-‘আচ্ছা ঠিকাছে এসেছো।খাওয়া দাওয়া করে চলে যাবে।’
অভিনব মুখ ফসকে বলে ফেলল,
-‘যাব কেন আমার বউ রেখে?’
অন্তি অভিনবর এমন নির্লজ্জ কথা শুনে মুখে হাত দিয়ে ওকে থামিয়ে দিয়ে বলল,
-‘নির্লজ্জ।’
অভিনব মুখ থেকে হাত সরিয়ে অনন্তকে কিছু বলতে যাবে তখন দেখলো অনন্ত নেই।মেয়ে আর জামাইকে স্পেস দেয়ার জন্য সে চলে গেছে।অভিনব দরজা লাগিয়ে এসে শার্ট খুলতে খুলতে অন্তির দিকে তাকিয়ে বাঁকা হাসি দিয়ে বলল,
-‘শশুড় আমাদের ব্যাপারটা বুঝতে পেরে স্পেস দিয়ে চলে গেছে।’
অন্তি ভ্রু কুঁচকে বলল,
-‘তো?’
-‘আই নিড ইউ।’
-‘আমি কি মানা করেছি।’
দুজনেই রাতের গভীরতার সঙ্গে একে অপরের মাঝে মত্ত হতে শুরু করলো।
আজ সারিকা আর শুভ্রর বিয়ে।সারিকা মাঝে তেমন কোনো বউ বউ ভাব নেই।যেখানে বউয়ের ভিডিও ক্যামেরাম্যান করে সেখানে সারিকা ক্যামেরাম্যানকে শিখিয়ে দিচ্ছে কিভাবে ভিডিও করতে হবে অন্যয ভিডিও করার মাধ্যমে।
শুভ্র বউয়ের এমন আচরণে হতাশ।মেয়েটা একটু লজ্জা নিয়ে সুন্দর করে স্টেজে বসে থাকতে পারে না।তবুও সে খুশি অবশেষে টম এন্ড জেরি বিয়ে করছে মানে তারা।সারিকা আজ পড়েছে একটা সাদা আর গোল্ডেন স্টোনের কাজের লেহেঙ্গা আর স্বর্নের এবং ডায়মন্ডের গহনা।শুভ্র সাদা শেরওয়ানী পড়েছে যেটার ব্রচ সোনা এবং হিরা দিয়ে তৈরি।
অভিনব আর অন্তি পড়েছে একইরকম কিন্তু কালো আর সাদা সব।এক কথায় এই দুই জোড়াকেই অসাধারণ লাগছে।
সারিকা আর শুভ্রর বিয়ে কবুল বলার মাধ্যমে সম্পন্ন হয়।সারিকা বিদায় আর পাঁচটা মেয়ের মতো হাউমাউ করে কান্না করে না প্রথম থেকেই।কিন্তু অর্ণব যখনই শুভ্রর হাতে সারিকার হাত দিয়ে বলে,’বাবা আমার মূল্যবান বস্তুটা আমি তোমার হাতে দিলাম এর অযত্ন করো না।’এই কথাটা বলার সাথে সাথে সারিকার কেন যেন কান্না পেয়ে গেল।সে মা বাবা,ভাই,ভাবি সবাইকে জড়িয়ে অনেক কান্না করলো।
অভিনব সারাদিনের ক্লান্তি শেষে বিছানায় গা এলিয়ে দেয়।তার মনটা ভালো নেই আজ।জন্ম থেকে যেই বোনটা সবসময় তার সাথেসছিল সে আজ পরের ঘরে চলে গেল।অন্তি হঠাৎ অভিনবর দিকে একটা প্রেগনেন্সি কিট এগিয়ে দেয়।অভিনব হা হয়ে যায়।সে উঠে বসে সেটা হাতে নিয়ে নেয় আর খুশিতে লাফিয়ে উঠে বলে,
-‘we are pregnant’
অন্তিও অভিনবর গলা জড়িয়ে ধরে বলল,
-‘ইয়েস।’
অভিনবর মনে হচ্ছে এই মুহুর্তের চেয়ে অসাধারণ মুহূর্ত আর কিছু হতে পারে না।সে অন্তির কপালে কপাল ঠেকিয়ে বলল,
-‘আমি এই খুশি কিভাবে প্রকাশ করবো বুঝতে পারছি না।’
-‘আমিও জানি না কিভাবে এই খুশিটা প্রকাশ করতে হয়।’
-‘আমি ভালোবাসি তোমায় এংগ্রিবার্ড।’
-‘আমিও আপনাকে ভালোবাসি সাদি শেয়াল।’
-‘সাথে থেকো প্রিয় এই নিঃশ্বাস যতদিন চলছে।’
-‘থাকবো।’
সারিকা আর শুভ্র প্লেনে বসে আছে।সারিকা বলল,
-‘বিয়ের রাতেই আমরা হানিমুন যাচ্ছি এটা কেমন কথা?'(মুখ ফুলিয়ে)
-‘বলেছিলাম কাশ্মীর যাব তাহলে যাবই।আজ যাই বা কাল যেতেই হবে।’
-‘কিন্তু আজ আমাদের বাসর রাত ছিল।’
শুভ্র শয়তানি হেসে দিয়ে সারিকার গাল চেপে ধরে ঠোঁটে চুমু খেয়ে দুষ্টু হাসি দিয়ে বলল,
-‘মিস ও সরি সরি মিসেস এরোগেন্ট তুমি চাইলে এখানেই করতে পারি।’
-‘আপনাকে আমি মার্ডার করে দেবো।'(রেগে)
-‘তাহলে তুমি বিধবা হবে।’
-‘বেয়াদব লোক একেবারে মুখ ভেঙ্গে দেবো।’
-‘এখনো কি ঝগড়া না করলে হয় না?’
-‘না হয় না কারণ কেউ একজন বলেছিল আমার সঙ্গে ঝগড়া না করলে তার দম বন্ধ হয়ে আসে।’
-‘হ্যা কারণ সে তোমাকে আর তোমার সাথে করা দুষ্টু মিষ্টি ঝগড়াকে অনেক বেশি ভালোবাসে।’
-‘আমিও এই ঝগড়ুটে জামাইকে ভালোবাসি।’
সারিকা শুভ্রর কাঁধে হেসে মাথা রাখে আর শুভ্র জড়িয়ে ধরে তার মিসেসকে।
সাথে থেকো প্রিয় পর্ব ৪৩
গল্পের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত যেই পাঠক পাঠিকারা গল্পটির সাথে ছিলেন তাদেরকে অসংখ্য ধন্যবাদ গল্পটাকে এতো এতো ভালোবাসা দেওয়ার জন্য।এই গল্পে আপনাদের আপনাদের পছন্দের চরিত্র কে ছিল এবং কেন ছিল তা অবশ্যই জানাবেন।সকলে আমার জন্য দোয়া করবেন,আল্লাহ্ হাফেজ
Sompurno golpo ta porechi agei but comment korte parchilam na janina maje maje i arokom problem hoy tobe jai hok main kotha golpo ta khub khub khub khub khub khub khub khub khub khub khub khub khub khub khub khub khub khub khub khub khub khub valo legeche khub khub khub khub khub khub khub khub khub sundor hoeache prottekta ta golpo khub khub khub sundor