শেষ পাতায় তুমি পর্ব - Golpo bazar

শেষ পাতায় তুমি পর্ব ৪২ || ফাবিহা নওশীন

শেষ পাতায় তুমি

শেষ পাতায় তুমি পর্ব ৪২
ফাবিহা নওশীন

মেহের লিফটের সামনে অনেকক্ষণ ধরে অপেক্ষা করে বিরক্তি নিয়ে সিড়ির দিকে পা বাড়াল। অফিসের তিনতলায় তূর্জের কেবিন। মেহের তূর্জের কেবিনের সামনে গিয়ে দাঁড়িয়ে গেল। মেহেরের ক্লান্ত লাগছে খুব।
মেহের দরজা খুলে ভেতরে উঁকি দিল। ভেতরে কাউকে দেখতে পাচ্ছে না। চেয়ার খালি। মেহের পুরো রুমে চোখ বুলাল। তূর্জ জানালা দিয়ে একমনে আকাশ দেখছে।

মেহের দরজায় টুকা দিল। তূর্জ জানালা থেকে চোখ সরিয়ে নিয়ে দরজার দিকে তাকাল। মেহেরকে দেখে এক প্রকার চমকে গিয়ে হন্তদন্ত হয়ে ওর সামনে গিয়ে বলল,
“মেহের! তুমি এখানে এই শরীর নিয়ে কেন এসেছো?”
মেহের মলিন হেসে বলল,
“অফিসে এসেছি বসতে দেবেন না?”
“হ্যাঁ, আরে আস। ভেতরে এসে বস।”
মেহের ভেতরে গিয়ে বসে টেবিলের উপর থেকে পানি খেয়ে গলা ভেজাল। ওর অস্থির লাগছে খুব। গলা শুকিয়ে গিয়েছিল।
তূর্জ কিছুক্ষণ মেহেরের উপর রাগ দেখাল এই অসুস্থ শরীর নিয়ে আসার জন্য।
মেহের সব কথা রেখে বলল,

আরও গল্প পড়তে আমাদের গুপ এ জয়েন হউন

“ভাইয়া ফায়াজ বকবে যদি জানে আমি বাড়ির বাইরে বের হয়েছি।”
“আমি তো সেটাই বলছি বের হয়েছো কেন? তোমাকে বকাই উচিত।”
“আপনি জানেন না আমি কেন এসেছি?”
তূর্জ মেহেরের কথা শুনে নিজের দৃষ্টি লুকাল।
কথা এড়ানোর জন্য বলল,
“তুমি বাড়িতে চলে যাও। ফায়াজ তোমাকে না দেখতে পেলে রাগারাগি করবে।”
“ভাইয়া, আপুকে ক্ষমা করা যায় না?” মেহের অতি শান্ত কন্ঠে বলে তূর্জের দিকে এক রাশ আশা নিয়ে তাকাল।
তূর্জ মেহেরের কথা শুনে দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বলল,
“তুমি পেরেছো? এতবড় অন্যায় কি ক্ষমা করা যায়?”
“ভাইয়া এটা ঠিক আমি সব সময় চাইতাম আপু সবাইকে সত্যিটা বলে দিক, সবাই অন্ধকারে না থাকুক কিন্তু এটা কখনো চাই নি আপুর সাথে আপনার সম্পর্ক নষ্ট হোক। হ্যা আপু অন্যায় করেছে তাই বলে আমি তার খারাপ চাইব না। আমি আপুকে মাফ করে দিয়েছি। ফায়াজকেও দিয়েছি। আপনিও প্লিজ…!”

তূর্জ মেহেরের কথা কেড়ে নিয়ে বলল,
“যতটা সহজ ভাবে বলছো বিষয়টা কি এতটা সহজ? আমি মাহিকে পাগলের মতো ভালোবেসেছি। ওর সব চাওয়া-পাওয়া পূরণ করেছি। আর আজ জানতে পারি আমার সাথে সম্পর্ক চলাকালীন অন্য আরেকজনের সঙ্গে…. সেটা রিয়েল অথবা ফেক হোক। আমি ভুলব কিভাবে? কি করে মনকে শান্তনা দেব? কি বুঝাবো?”
মেহের বুঝতে পারছে ব্যাপারটা তূর্জের জন্য কতটা কষ্টের।
তবুও বলল,”ভালোবাসার মানুষ শত ভুল করলেও তাকে মাফ করা যায়।”
“হয়তো যায়। কিন্তু আমি পারছি না।”
মেহের অনুনয়ের সুরে বলল,

“আপনাদের সম্পর্কের অবনতি আমি মেনে নিতে পারছি না। মনে হচ্ছে এর মূলে আমি রয়েছি। অনেক অপরাধী লাগছে নিজেকে। তূর্জ ভাইয়া প্লিজ সব ভুলে আগের মতো হয়ে যান৷ আপু অনেক কষ্ট পাচ্ছে। খাচ্ছে না, ঘুমাচ্ছে না। কান্নাকাটি করছে। আপু তো আপনাকে অনেক ভালোবাসে। ৬ বছরের প্রেমের পর বিয়ে। আপনাদের ভালোবাসাটা অনেক গভীর। মিশানের কথাটা ভাবুন। ওর জন্য হলেও আপুকে মাফ করুন।”
“মেহের, প্রথমত এতে তোমার কোন দোষ নেই তাই নিজেকে অপরাধী ভেব না। ঘটনাটা আমি মেনে নিতে পারছি না। আমি খুবই আপসেট। তাই আমার সময় প্রয়োজন। তুমি বাড়িতে যাও। মিশানের খেয়াল রেখো।”
মেহের উঠে দাঁড়িয়ে বলল,

“আপনি সময় নিন। কিন্তু দেখবেন অনাকাঙ্ক্ষিত কিছু যেন ঘটে না যায়।”
ফায়াজ বাড়িতে ফিরে মেহেরকে রুমে না পেয়ে ওর মায়ের কাছে জিজ্ঞেস করে জানতে পারল বাইরে গেছে। ফায়াজ বুঝতে পারল ও তূর্জের সাথে কথা বলতে গেছে। ফায়াজের রাগে মাথায় আগুন জ্বলছে। এত বড় সাহস! এই অবস্থায় একা একা চলে গেছে।
“আজ আসুক, আমি ওর ঠ্যাং ভেঙে দেব৷ ডানা গজিয়েছে এ বাড়িতে এসে। ডানা কেটে আগামীকালই বাড়িতে নিয়ে যাব। তারপর দেখব উড়ে কিভাবে।”
ফায়াজ মেহেরের জন্য অপেক্ষা করছে। কিন্তু মেহেরের আসার নাম নেই। ফোন করেও পাচ্ছে না। তাই নিজেই বের হয়ে গেল মেহেরকে আনার জন্য।
মেহের অনেক ক্লান্তি নিয়ে রুমে ঢুকল। ফায়াজ নেই দেখে স্বস্তির নিশ্বাস নিল।

মেহের বিছানায় গা এলিয়ে দিল। ভালো লাগছে না। মানসিক যন্ত্রণায় ভুগছে। মাহি আর তূর্জের শেষ পরিনতি কি হবে। মেহেরের পেটে কেমন ব্যথা হচ্ছে। মেহের উঠে বসে কামিজ তুলে পেট দেখছে। ওই সময় ফায়াজ রুমে ঢুকলে মেহের থতমত খেয়ে সাথে সাথে কামিজ নামিয়ে নিল।
ফায়াজ মেহেরের কাছে আসল। মেহের ফায়াজের দিকে আড়চোখে তাকাল।
ফায়াজ মেহেরের সামনে এসে শীতল কণ্ঠে বলল,
“তূর্জ ভাইয়ের সাথে দেখা করতে গিয়েছিলে?”
মেহের ফায়াজের কথা শুনে কনফিউজড। ফায়াজকে কে বলল। ফায়াজ তো বাড়িতে ছিল না।
মেহের ফায়াজের দিকে তাকাল। ফায়াজ চোখ মুখ শক্ত করে তাকিয়ে আছে। মেহের আমতা আমতা করে বলল,
“হ্যাঁ।”
ফায়াজ হুট করে মেহেরের পাশে বসে ওর দুবাহু ঝাঁকিয়ে রাগে গজগজ করতে করতে বলল,

“কেন গিয়েছিলে? কাকে বলে গিয়েছিলে? আমি নিষেধ করি নি? তোমার তো দেখছি খুব সাহস বেড়েছে৷ আমি না বলার পরেও আমাকে না বলেই একা একা ড্যাংড্যাং করতে করতে চলে গেলে?”
মেহের চুপ করে আছে। ভয়ে চুপসে গেছে।
“ফাজিল মেয়ে, কথা বলছো না কেন? এদিক সেদিক যখন যেতে পারো তাহলে বাড়িতেও যেতে পারবে। আগামীকাল আমরা বাড়ি ফিরে যাচ্ছি। রেডি থেকো।”
বাড়িতে যাওয়ার কথা শুনে মেহের চমকে গেল। তারপর বলল,
“বাড়ির এই অবস্থা। আর আমি চলে যাব? মাহি আপু আর তূর্জ… ”
ফায়াজ মেহেরকে ধমক দিয়ে বলল,

“আবার মাহি আর তূর্জ? তোমাকে কে বলেছে ওদের বিষয়ে নাক গলাতে? আরেকবার যদি ওদের নাম নিয়েছো তো তোমার মুখে তালা ঝুলিয়ে দেব। আগামীকাল বাড়িতে যাচ্ছি মাথায় ঢুকিয়ে নেও।”
“আপনার তো কিছু দায় দায়িত্ব আছে আমার পরিবারের প্রতি। আপনি এ-সব দায় এড়িয়ে যাবেন? কারো কথা ভাববেন না?”
মেহেরের কথাগুলো ফায়াজের রাগ আর বিরক্তি বাড়াচ্ছে। ফায়াজ কন্ঠে রাগের ঝাঝ বাড়িয়ে বলল,
“নো, কারো কথা ভাবার দরকার নেই। আমার কাছে ফার্স্ট প্রায়োরিটি তুমি আর তোমার সুস্থতা। অন্যের লাইফে দখল নেওয়ার বিন্দুমাত্র ইচ্ছে নেই। আর তুমিও চেষ্টা করো না।(মেহেরের গাল চেপে ধরে)”
মেহেরের গাল ছেড়ে দিয়ে বলল,
“মাথা খারাপ করে দিচ্ছে। আর ভালো লাগছে না আমার।”
মেহের কাঁদো কাঁদো হয়ে বলল,
“আমি কি করেছি?”
ফায়াজ আবার মেহেরের দিকে ঘুরে বলল,

“কি করেছো বুঝতে পারো নি? জামা তুলে পেট দেখছিলে কেন?”
মেহের ফায়াজের কথা শুনে দমে গেল। তারপর দৃষ্টি লুকিয়ে মিনমিন করে বলল,
“এমনি দেখছিলাম কতটা শুকিয়েছে।”
ফায়াজ মেহেরের দিকে সন্দেহ নিয়ে তাকিয়ে আছে।
মেহের তাই বলল,
“সত্যি বলছি। শুধু দেখছিলাম। আর কিছু না। আমি আর যাব না তূর্জ ভাইয়ার কাছে। আপনাকে না বলেও কোথাও যাব না। সত্যি বলছি।”( মুখ ইনোসেন্ট করে)
ফায়াজ এই মেয়েটার উপর রাগ করে থাকবে কিভাবে? এই ফেস দেখলে সবার মন নরম হয়ে যাবে।
ফায়াজ মেহেরের গালে হাত বুলিয়ে দিয়ে বলল,
” মেহের, তোমার জন্য আমার কতটা টেনশন হয় তুমি বুঝো না? তুমি সুস্থ থাকতে তাহলে আমি কিছুই বলতাম না। কয়েকদিন আগে তোমার অপারেশন হয়েছে। যদি এখন কোন সমস্যা হয়ে যায়। ডাক্তার বলেছে কেয়ারফুল থাকতে। তোমার হসপিটালে থাকতে ভালো লাগছিল না, অস্থির হয়ে পড়েছিলে তাই চলে এসেছি। কিন্তু ডাক্তার বারবার বলেছে কেয়ারফুল থাকতে। আর তুমি কি করছো?”

শেষ পাতায় তুমি পর্ব ৪১

মেহের ভাবছে ঠিকই তো। ডাক্তার বলেছে কেয়ারফুল থাকতে। আর এখন কেমন ব্যথা অনুভব হচ্ছে৷
“আর করব না। আমি এখন পুরোপুরি কেয়ারফুল থাকব।”
মেহেরের মা খুব আপসেট হয়ে আছে। মেহের তূর্জের সাথে কথা বলেও কিছু করতে পারল না। তাই মেহেরের বাবাকে বলল,
“মাহির জন্য টেনশন হচ্ছে?”
ওর বাবা বলল,
“শুধু কি মাহি? মেহেরের জন্যও টেনশন করা শুরু করে দেও।”
ওর মা বুঝতে না পেরে বলল,
“মেহের! কেন?”
ওর বাবা চেঁচিয়ে বলল,

“ওই ছেলে, তোমার মেয়েকে ক্ষোভের বশে বিয়ে করেছে। ও তোমার মেয়েকে ভালো রাখবে? মাহির অন্যায়, ভুল দেখছো আর ফায়াজ? ও কতবড় ধুরন্ধর ছেলে দেখেছো? আমি ওকে এই বাড়িতে সহ্য করতে পারছি না। আমি কোন ভরসায় ওর হাতে মেহেরকে তুলে দেব?”
মেহেরের মা বিষয়টা ভেবে দেখে নি। মেহেরের বাবার কথা ফেলে দেওয়ার মত না।

শেষ পাতায় তুমি পর্ব ৪৩

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.