শেষ পাতায় তুমি পর্ব - Golpo bazar

শেষ পাতায় তুমি পর্ব ৪৫ || sesh patai tumi golpo

শেষ পাতায় তুমি

শেষ পাতায় তুমি পর্ব ৪৫
ফাবিহা নওশীন

মেহের বালিশে হেলান দিয়ে আধশোয়া অবস্থায় ছিল। ফায়াজ ধীরে ধীরে ওর দিকে অগ্রসর হচ্ছে বিধায় বালিশের সাথে লেপ্টে যাচ্ছে। কিন্তু আর পেছনে যেতে পারছে না। তাই ফায়াজের দিকে অসহায় ফেস করে তাকাল। ফায়াজ বাকা হাসল।
ফায়াজ যখন নিজের উদ্দেশ্য হাসিল করতে তিন ইঞ্চি দূরে তখনই মেহেরের ফোন বেজে উঠল। মেহের ফোনের রিংটোন শুনে ছিটকে সরে গেল। ফায়াজ মেহেরের দিকে বিরক্তি নিয়ে ভ্রু কুচকে তাকাল।
মেহের আমতা আমতা করে বলল,
“ফোন বাজছে।”
ফায়াজ ভ্রু প্রসারিত করে বলল,
“তো?”
মেহের উল্টো করা ফোনের দিকে তাকিয়ে বলল,
“কলটা গুরুত্বপূর্ণ হতে পারে।”
ফায়াজ মুখ বাকিয়ে বলল,
“ইসস.. আসছে আমার আমেরিকার প্রেসিডেন্ট। তার কাছে গুরুত্বপূর্ণ কল এসেছে।”

মেহের নাক ফুলিয়ে ফোনটা হাতে নিয়ে স্কিনের দিকে চোখ রাখল। মাহির নামটা জ্বলজ্বল করছে। মেহের ফোনটা সামনে আনায় ফায়াজও দেখতে পেল।
ফায়াজ বিড়বিড় করে বলছে,
“এই মেয়ে আমার প্রেমের, রোমান্সের ভিলেন।”
ফায়াজ রুম থেকে বারান্দায় গেল। বাইরে ঘন কালো অন্ধকার। আকাশে দু’চারটে তারা দেখা যাচ্ছে। আশেপাশের বাড়িগুলোতে আলো নিভতে শুরু করেছে। ফায়াজ রেলিঙে দু’হাত ভর করে হেলে এই অন্ধকার পরিবেশটা উপভোগ করছে।
মেহের ফোন রিসিভ করে মাহিকে কিছুক্ষণ বকাবকি করল। মাহি চুপ করে মেহেরের সব বকা হজম করে নিল।
তারপর বলল,
“তুই এতটা শক্ত কবে, কিভাবে হয়েছিস?”
মেহের ওর প্রশ্ন শুনে ভ্যাবাচেকা খেয়ে গেল। মেহের ভাবতে শুরু করে দিল কি এমন শক্তের কাজ করেছে।
মাহি ওর উত্তর না পেয়ে আনমনে হাসল। তারপর বলল,
“বুঝিস নি তাই না?”
“না, আমি অপারেশন করে বিছানায় শুয়ে আছি আর তুমি বলছো শক্তের কথা?”

আরও গল্প পড়তে আমাদের গুপ এ জয়েন হউন

“আমি সে কথা বলি নি রে মেহের। আমি বলেছি তুই আমার চেয়েও ধৈর্য্যশীল। আমি এই কয়েকদিন তোর অবস্থাটা বুঝতে পেরেছি। তুই কিসের মধ্য দিয়ে গিয়েছিস সেটা তীব্রভাবে অনুভব করতে পেরেছি। আসলে দূর থেকে কারো কষ্ট দেখে শুধু আহারে বলা যায়। ততক্ষণ অনুভব করা যায় না যতক্ষণ না নিজের সাথে সে ঘটনাটা ঘটে। আমিও অনুভব করেছি সেই মর্মান্তিক যন্ত্রণা। কিন্তু তোর মতো শক্ত হতে পারি নি। তুই কত অবহেলা সহ্য করেছিস। কতদিন একা ছিলি। আর আমি অল্প কিছু সময়ের একাকিত্ব সহ্য করতে পারি নি। ভেঙে পড়েছিলাম। ভুল স্টেপ নিয়েছি। তুই কি করে এতদিন সব সহ্য করেছিস মেহের?”
মেহের মলিন হেসে বলল,
“আসলে আপু সবার অপমান, অবহেলা, ঘৃণা পেতে পেতে অভ্যস্ত হয়ে পড়েছিলাম। তাই এ-সব আমার কাছে স্বাভাবিক মনে হয়েছে। কষ্ট যে পাই নি তা নয়। বাড়ির কথা খুব মনে পড়ত। মনে পড়ত সে-সব দিনের কথা। তোমার সাথে কাটানো সময়গুলো। কিভাবে আমি তোমাকে নাকে দড়ি দিয়ে ঘোরাতাম। হি হি।”

মাহিও হেসে ফেলল। মেহের একটা কাজ ঠিক করে করত না। আসলে করতে চাইত না।
“আপু আমি নিজেই এই জীবন বেছে নিয়েছিলাম। আমি তো জানতাম আমি কখনো সুখী হব না। তবুও এই জীবন বেছে নিয়েছিলাম। কিন্তু পরবর্তীতে তোমার সাথে এ নিয়ে রাগ করেছিলাম। কারণ আমি একা হয়ে পড়েছিলাম আপু। সবাই আমাকে পর করে দিয়েছিল। যার জন্য বাড়ি ছেড়েছিলাম সে-ও ছেড়ে চলে গেল। ফায়াজের সাথে আমার তেমন ভালো মুহূর্ত ছিল না। তবুও সেপারেশনটা আমি মেনে নিতে পারি নি। তাই একা থাকতে থাকতে কেমন কঠিন হয়ে যাচ্ছিলাম।”
মাহি আর চায় না মেহের সে-সব ভেবে আবারও কষ্ট পাক তাই বলল,
“ও-সব বাদ দে। তাড়াতাড়ি সুস্থ হয়ে যা তো। তোর বিয়ে খাব।”
“বিয়ে কিভাবে খায় আপু?”
“উফফ.. বিয়ে পোলাও, মাংস দিয়ে খায়। হয়েছে?”
মেহের আর কিছু বলল না। মাহিও প্রশ্ন করছে না কিছু। চুপ করে আছে। দু’জনের মধ্যেই নীরবতা।

মাহি নীরবতা ভেঙে জিজ্ঞেস করল,
“তুই ফায়াজকে ভালোবাসিস তো?”
মেহের এ প্রশ্নের উত্তর দিতে সময় নিল না।
“হ্যাঁ বাসি। তাকে ভালো না বেসে থাকতে পারি নি। ভালোবাসি, প্রচন্ড ভালোবাসি।”
মাহি মেহেরের উত্তর পেয়ে গেছে। তারপর জিজ্ঞেস করল,
“আর ফায়াজ?”
“ফায়াজকে জিজ্ঞেস করেছিলাম। ফায়াজ কি বলেছে জানো? বলেছে জীবন নামের উপন্যাসের প্রতি পাতায় অসংখ্য মানুষের আগমন ঘটলেও #শেষ_পাতায়_তুমি আছো। সেখানে আছে সুন্দর সমাপ্তি। যা উনাকে প্রতিনিয়ত মোহিত করে রাখে।”
মাহি নিজেও দেখেছে এ ক’দিন ফায়াজ মেহেরের জন্য কি কি করেছে৷ আর এইসবের মধ্যে অগাধ ভালোবাসা ছিল। তবুও মেহেরের অনুভূতি জানতে চাইল।

মাহি আলতো হেসে বলল,
“ফায়াজ তোকে অনেক ভালোবাসে। তুই অনেক ভাগ্যবতী। অনেক ভালো থাকবি তুই।”
মেহের মুচকি হাসছে। মেহেরও জানে ফায়াজ ওকে খুব ভালোবাসে।
মেহেরের বাবা পরের দিন সকালে মেহেরের রুমে আসে। মেহেরকে কিছু জিজ্ঞেস করতে চাইছে। কিন্তু বলছে না। মেহের এক দৃষ্টিতে ওর বাবার দিকে চেয়ে আছে।
তারপর বলল,
“বাবা, যেটা জিজ্ঞেস করতে চাইছো সেটা জিজ্ঞেস করছো না কেন?”
মেহেরের বাবা মেহেরের দিকে কিছু সময়ের জন্য চেয়ে থেকে কোন ভনিতা না করেই বলল,
“তুই কি ফায়াজকে বিয়ে করতে চাস? ওর সাথে সারাজীবন থাকতে চাস? ভেবে বল। হটকারিতায় কোন সিদ্ধান্ত নিস না।”
মেহের স্ট্রেইট বলল,
“বাবা, এখানে ভাবার কিছু নেই। ফায়াজ আমার হাসব্যান্ড। ওর সাথে আমার বিয়ে হয়েছে। আর এছাড়া….(মেহের মাথা নিচু করে নিচুস্বরে বলল)
আমি ফায়াজকে ভালোবাসি।”

মেহেরের বাবা কিছু না বলে চুপ করে চলে গেলেন। যা বুঝার তিনি বুঝে ফেলেছেন। ক’দিন পর ফায়াজের বাবা আসে। ওদের বিয়ের কথা বলতে। ওদের বিয়ের দিনক্ষণ পাকা করে গেছে। মাসখানেক পর মেহের মোটামুটি সুস্থ হলে ফায়াজও বাড়িতে ফিরে যায়। মেহেরের বাবা বলেছে,
“ফায়াজ, আক্রোশের বশে মেহেরকে বিয়ে করেছে। মেহেরকে ভালো রাখবে কি না, নিজেকে শোধরে নিতে পারবে কি না তার প্রমাণ দিতে হবে। ফায়াজ যদিও এসবের তোয়াক্কা করে না। কিন্তু মেহেরের জন্য সব মেনে নিতে হচ্ছে। ফায়াজ এখন বাবার অফিসে যাচ্ছে। সব কিছু শিখছে।
মেহের নিজের ঘর গুছানোতে ব্যস্ত। টুকটাক কাজ শিখছে। ফায়াজ অগোছালো ঘর একদম পছন্দ করে না৷ ফায়াজ এ নিয়ে ওর সাথে অনেক রাগারাগি করত। সেসব মেহের ভুলে নি। তাই নিজের ঘর গুছানো শেখার চেষ্টা করছে।

তখনই ফোনটা বেজে উঠল।
ফাইজা ফোন করেছে। মেহের ফোন রিসিভ করল।
ফাইজা ফোন রিসিভ হওয়ার সাথে সাথে বলল,
“কংগ্রাচুলেশনস ভাবি।”
মেহের জবাবে বলল,
“ধন্যবাদ। তুমি আসবে তো বিয়েতে?”
ফাইজা মন খারাপ করে বলল,
“তা তো আসবই। ভাইয়ার বিয়ে আর আমি আসব না? তা কি হয়?”
মেহের ফাইজার কন্ঠে উচ্ছ্বাস না পেয়ে বলল,
“তাহলে তোমার কন্ঠে উচ্ছ্বাস নেই কেন? মন খারাপ করে কেন বলছো?”
ফাইজা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বলল,
“মমের জন্য। মম চায় ভাইয়ার বিয়েতে থাকতে। ছেলের বিয়েতে কোন মা না থাকতে চায়। কিন্তু পারছে না। তাই মন খারাপ। তুমি একটু ভাইয়ার সাথে কথা বলবে?”

মেহের ঢোক গিলছে। ফায়াজ এসব শুনে না রেগে যায়৷।
ফাইজা আবারও বলল,
“ভাবি একটু চেষ্টা করো না। প্লিজ ভাবি।”
ফাইজা অনুরোধের সুরে বারবার বলছে। মেহের ফাইজার এমন আকুতি ফেলতে না পেরে বলল,
“আমি চেষ্টা করব।”
ফায়াজ অফিস থেকে ফিরেছে। নিজের ঘরে টাই খুলতে খুলতে ঢুকছে। দরজা খুলে ভেতরে ঢুকতেই পকেটে ফোনটা ভাইব্রেট হতে লাগল। ফায়াজ পকেট থেকে ফোন বের করে মেহেরের নাম দেখলেই সকল ক্লান্তি যেন উবে গেল। ঠোঁটের কোনে হাসি ফুটল।
ফায়াজ ফোন রিসিভ করে কানে দিয়ে বলল,
“হ্যা বলো মেহেরজান।”
মেহের বিছানায় উপুর হয়ে শুয়ে ফোনে কথা বলছে। ফায়াজকে মিষ্টি করে জিজ্ঞেস করল,
“কি করেন?”

“অফিস থেকে ফিরলাম। আর তোমাকে মিস করি।” (কোট খুলতে খুলতে)
মেহের কাত হয়ে শুয়ে বলল,
“মিস করেন কেন?”
“কারণ এই মুহুর্তে তুমি থাকলে আমাকে এত কষ্ট করে কোট খুলতে হতো না। তুমি দৌড়ে এসে আমার শরীর থেকে কোট খুলে নিতে৷”
মেহের ভেংচি কেটে বলল,
“হুহ! আমারই লাগে আরেকজন। আর আমি আপনার কোট খুলতে যাব?”
ফায়াজ মেহেরের কথা শুনে বলল,
“তোমার জামা-কাপড় অন্য কেউ খুলে দেয়? কি বলো? এই সিক্রেট আমি আজ জানলাম।”
মেহের ফায়াজের কথা শুনে চোখ বড়বড় করে বলল,
“ছিহ! আমি তাই বলেছি? আপনি কখনো শুধরাবেন না। সব সময় আজেবাজে কথা।”
ফায়াজ হো হো করে হাসছে।
মেহের বলল,
“হাসি থামান। যেড়া বলছিলাম শুনেন।”
ফায়াজ হাসি থামিয়ে বলল,
“হ্যা বলো। আমি শুনছি।”

“আমার কথাটা শুনে প্লিজ রাগ করবেন না।”
ফায়াজ মেহেরের কথা শুনে ভ্রু কুচকাল। ওর মনে হচ্ছে মেহের নিশ্চয়ই এমন কিছু বলবে যে কারণে ফায়াজ রাগ করবে।
মেহের ফায়াজের সাড়াশব্দ না পেয়ে বলল,
“আজকে ফাইজার সাথে কথা হলো। বিয়ে নিয়ে খুব এক্সসাইটেড৷ কিন্তু ও ওর মায়ের জন্য আপসেট। আচ্ছা আমাদ বিয়েতে একদিনের জন্য মা আসতে পারে না?”
কথাটা বলে মেহের কান পেয়ে অপেক্ষা করছে ফায়াজের চিৎকার, রাগারাগি শোনার জন্য। ভয়ে ভয়ে কান পেতে আছে।
ফায়াজ শীতল কণ্ঠে বলল,
“ফাইজা বলেছে এসব?”
মেহের ফায়াজের শীতল কণ্ঠ শুনে অবাক হলো। তারপর দ্রুত ফায়াজের কথার উত্তর দিল,

“এই না, ফাইজা কিছু বলে নি। আমার মনে হল তাই বলেছি। ওর বলার হলে আপনাকেই বলত আর সেটা আরো আগে।”
“তাহলে তুমি পাকামো করছো? কেন করছো?”
মেহের ঢোক গিলে বলল,
“আসলে আমি চাইছিলাম আর দশটা মেয়ের মতো শাশুড়ির হাত ধরে শ্বশুরবাড়ি প্রবেশ করতে। নতুন জীবন শুরু করতে। উনি না থাকলে কিভাবে হবে? মেয়েরা তো শাশুড়ির ভরসায় শ্বশুর বাড়ি যায়। তার কাছ থেকেই সব শিখে। এখন শাশুড়ি যদি না থাকে তাহলে…
ফায়াজ কঠিন কন্ঠে বলল,
” তুমি কি ইনডাইরেক্টলি বিয়ে করবে না বলছো? করার দরকার নেই। করো না বিয়ে।”
ফায়াজ খট করে ফোন কেটে দিল। তারপর ফোনটা বিছানায় ছুড়ে মেরে বলল,
“তুমি বিয়ে করবে না তো তোমার ঘাড় করবে।”

মেহের ফোনের দিকে অসহায় ফেস করে চেয়ে বিড়বিড় করে বলল,
“আমি কখন বললাম বিয়ে করব না? অদ্ভুত। ফাইজাকে ফোন করি। বেচারির হার্ট ব্রেক হবে। কিন্তু কি করব? আমার কিছুই করার নেই। চেষ্টা করে লাভ হবে না। এ লোক মা’কে ক্ষমা না করার দিব্যি করেছে।”
ফাইজা ফোন করেছে। মেহের ফোন রিসিভ করল।
ফাইজা ফোন রিসিভ হওয়ার সাথে সাথে বলল,
“কংগ্রাচুলেশনস ভাবি।”
মেহের জবাবে বলল,
“ধন্যবাদ। তুমি আসবে তো বিয়েতে?”
ফাইজা মন খারাপ করে বলল,
“তা তো আসবই। ভাইয়ার বিয়ে আর আমি আসব না? তা কি হয়?”
মেহের ফাইজার কন্ঠে উচ্ছ্বাস না পেয়ে বলল,
“তাহলে তোমার কন্ঠে উচ্ছ্বাস নেই কেন? মন খারাপ করে কেন বলছো?”
ফাইজা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বলল,
“মমের জন্য। মম চায় ভাইয়ার বিয়েতে থাকতে। ছেলের বিয়েতে কোন মা না থাকতে চায়। কিন্তু পারছে না। তাই মন খারাপ। তুমি একটু ভাইয়ার সাথে কথা বলবে?”

মেহের ঢোক গিলছে। ফায়াজ এসব শুনে না রেগে যায়৷।
ফাইজা আবারও বলল,
“ভাবি একটু চেষ্টা করো না। প্লিজ ভাবি।”
ফাইজা অনুরোধের সুরে বারবার বলছে। মেহের ফাইজার এমন আকুতি ফেলতে না পেরে বলল,
“আমি চেষ্টা করব।”
ফায়াজ অফিস থেকে ফিরেছে। নিজের ঘরে টাই খুলতে খুলতে ঢুকছে। দরজা খুলে ভেতরে ঢুকতেই পকেটে ফোনটা ভাইব্রেট হতে লাগল। ফায়াজ পকেট থেকে ফোন বের করে মেহেরের নাম দেখলেই সকল ক্লান্তি যেন উবে গেল। ঠোঁটের কোনে হাসি ফুটল।
ফায়াজ ফোন রিসিভ করে কানে দিয়ে বলল,
“হ্যা বলো মেহেরজান।”
মেহের বিছানায় উপুর হয়ে শুয়ে ফোনে কথা বলছে। ফায়াজকে মিষ্টি করে জিজ্ঞেস করল,
“কি করেন?”
“অফিস থেকে ফিরলাম। আর তোমাকে মিস করি।” (কোট খুলতে খুলতে)
মেহের কাত হয়ে শুয়ে বলল,
“মিস করেন কেন?”

“কারণ এই মুহুর্তে তুমি থাকলে আমাকে এত কষ্ট করে কোট খুলতে হতো না। তুমি দৌড়ে এসে আমার শরীর থেকে কোট খুলে নিতে৷”
মেহের ভেংচি কেটে বলল,
“হুহ! আমারই লাগে আরেকজন। আর আমি আপনার কোট খুলতে যাব?”
ফায়াজ মেহেরের কথা শুনে বলল,
“তোমার জামা-কাপড় অন্য কেউ খুলে দেয়? কি বলো? এই সিক্রেট আমি আজ জানলাম।”
মেহের ফায়াজের কথা শুনে চোখ বড়বড় করে বলল,
“ছিহ! আমি তাই বলেছি? আপনি কখনো শুধরাবেন না। সব সময় আজেবাজে কথা।”
ফায়াজ হো হো করে হাসছে।
মেহের বলল,
“হাসি থামান। যেড়া বলছিলাম শুনেন।”
ফায়াজ হাসি থামিয়ে বলল,
“হ্যা বলো। আমি শুনছি।”
“আমার কথাটা শুনে প্লিজ রাগ করবেন না।”
ফায়াজ মেহেরের কথা শুনে ভ্রু কুচকাল। ওর মনে হচ্ছে মেহের নিশ্চয়ই এমন কিছু বলবে যে কারণে ফায়াজ রাগ করবে।
মেহের ফায়াজের সাড়াশব্দ না পেয়ে বলল,

“আজকে ফাইজার সাথে কথা হলো। বিয়ে নিয়ে খুব এক্সসাইটেড৷ কিন্তু ও ওর মায়ের জন্য আপসেট। আচ্ছা আমাদ বিয়েতে একদিনের জন্য মা আসতে পারে না?”
কথাটা বলে মেহের কান পেয়ে অপেক্ষা করছে ফায়াজের চিৎকার, রাগারাগি শোনার জন্য। ভয়ে ভয়ে কান পেতে আছে।
ফায়াজ শীতল কণ্ঠে বলল,
“ফাইজা বলেছে এসব?”
মেহের ফায়াজের শীতল কণ্ঠ শুনে অবাক হলো। তারপর দ্রুত ফায়াজের কথার উত্তর দিল,
“এই না, ফাইজা কিছু বলে নি। আমার মনে হল তাই বলেছি। ওর বলার হলে আপনাকেই বলত আর সেটা আরো আগে।”
“তাহলে তুমি পাকামো করছো? কেন করছো?”
মেহের ঢোক গিলে বলল,

শেষ পাতায় তুমি পর্ব ৪৪

“আসলে আমি চাইছিলাম আর দশটা মেয়ের মতো শাশুড়ির হাত ধরে শ্বশুরবাড়ি প্রবেশ করতে। নতুন জীবন শুরু করতে। উনি না থাকলে কিভাবে হবে? মেয়েরা তো শাশুড়ির ভরসায় শ্বশুর বাড়ি যায়। তার কাছ থেকেই সব শিখে। এখন শাশুড়ি যদি না থাকে তাহলে…
ফায়াজ কঠিন কন্ঠে বলল,
” তুমি কি ইনডাইরেক্টলি বিয়ে করবে না বলছো? করার দরকার নেই। করো না বিয়ে।”
ফায়াজ খট করে ফোন কেটে দিল। তারপর ফোনটা বিছানায় ছুড়ে মেরে বলল,

“তুমি বিয়ে করবে না তো তোমার ঘাড় করবে।”
মেহের ফোনের দিকে অসহায় ফেস করে চেয়ে বিড়বিড় করে বলল,
“আমি কখন বললাম বিয়ে করব না? অদ্ভুত। ফাইজাকে ফোন করি। বেচারি হার্ট ব্রেকিং হবে। কিন্তু কি করব? আমার কিছুই করার নেই। চেষ্টা করে লাভ হবে না। এ লোক মা’কে ক্ষমা না করার দিব্যি করেছে।”

শেষ পাতায় তুমি পর্ব ৪৬

1 thought on “শেষ পাতায় তুমি পর্ব ৪৫ || sesh patai tumi golpo

  1. Khub khub khub khub khub khub khub khub khub khub khub khub khub khub khub khub khub khub khub khub valo legeche next part ta taratari diean

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.