শেষ পাতায় তুমি পর্ব - Golpo bazar

শেষ পাতায় তুমি পর্ব ৪৭ || romantic sad love story

শেষ পাতায় তুমি

শেষ পাতায় তুমি পর্ব ৪৭
ফাবিহা নওশীন

ফাইজা লেহেঙ্গা দু’হাতে ধরে উঁচু করে বাড়ির ভেতরে এসে হা করে চেয়ে আছে। ফাইজা এক জায়গায় দাঁড়িয়ে বিস্ময়ভরা চোখে চারপাশ দেখছে।
ফায়াজ সিড়ি দিয়ে নামার সময় প্রাণপ্রিয় বোনকে দেখে হাসি মুখে এগিয়ে এল। ফাইজা মায়ের সাথে বাড়ি ছাড়ার পর এতবছরে এই প্রথম বাড়িতে এসেছে। স্মৃতির মনিকোঠায় এই বাড়ির স্মৃতিগুলো স্পষ্ট নয়। সব স্মৃতি যেন ধোয়াশায় পূর্ণ। গতবার যখন মেহেরের অসুস্থতার কথা শুনে মা’য়ের সাথে দেশে এসেছিল ফায়াজের ব্যবহারের জন্য অভিমানে বাড়িতে আসা হয় নি। মায়ের সাথে চলে গিয়েছিল। তবে অভিমানটা বেশী দিন পুষিয়ে রাখতে পারে নি। ফায়াজ ফোন করে দু’চারটে আদর মাখা কথা বলতেই মন গলে যায়।
ফায়াজ ওর পেছনে এসে বলল,

“কি রে এত দেরি করলি কেন?”
ফাইজা ভাইয়ের দিকে ঘুরে। ফায়াজের পরনে হলুদ রঙের পাঞ্জাবি।
“ভাইয়া বিডিতেও যে এত সুন্দর ডেকোরেশন হয়? আল্লাহ! কত সুন্দর লাগছে। বিডি যে এত এক্সপার্ট জানতাম না।”
পেছনে থেকে একজন সুদর্শন যুবক বলল,
“জি মেম। ইউ হেভ নো আইডিয়া এবাউট ইট। বিডির মানুষ কতটা সৃজনশীল সেটা আপনি জানেন না।”
ফাইজা চোখ ছোট ছোট করে ছেলেটার দিকে তাকিয়ে বলল,
“সেটা না জানলেও আপনি যে কতটা ছ্যাঁচড়া সেটা বুঝতে পারছি।”
ছেলেটি ফাইজার কথা শুনে লজ্জা পেয়ে ফায়াজের দিকে তাকাল।
ফায়াজ ফাইজার দিকে তাকিয়ে ইশারা করছে চুপ করতে।
ফাইজা উল্টো বিরক্তি নিয়ে বলল,
“ভাইয়া ছ্যাঁচড়া না তো কি? চেনা নেই,জানা নেই হুট করে আমাদের কথার মাঝে ঢুকে গেল? অদ্ভুৎ!”
ফায়াজ ফিসফিস করে বলল,
“ও বিডির টপ ওয়েডিং প্ল্যানারের একজন। তুষারের কাজিন রুহান। আমার পরিচিত। ও ওয়েডিং প্ল্যানারেরই একজন তাই এ কথা বলেছে। তুই এই ভাবে রিয়েক্ট করছিস কেন?”
ফাইজা সবটা শুনে জিভ কাটল। তারপর রুহানের দিকে লজ্জিত ভঙ্গিতে তাকাল।

আরও গল্প পড়তে আমাদের গুপ এ জয়েন হউন

লজ্জা মাখা মুখে বলল,
“আ’ম সরি। কিছু মনে করবেন না। আসলে আমি আপনাকে চিনি নি তাই….
রুহান সৌজন্যমূলক হাসি দিয়ে বলল,
” না না ঠিক আছে সমস্যা নেই। আমি আসছি।”
রুহান যেতেই ফাইজা ফায়াজের দিকে তাকিয়ে বলল,
“আগে বলবে না? ভদ্রলোক মনে হয় রাগ করল।”
ফায়াজ বলল,
“আরে না। আয় সবার সাথে মিট করবি।”
ফাইজা করুন সুরে বলল,
“সিড়ি বেয়ে উপরে যাওয়ার ক্ষমতা নেই। বাঙালির সাজার চেষ্টায় শার্ট প্যান্ট ছেড়ে লেহেঙ্গা পরে ফেসে গেছি। ভার বইতে পারছি না।”
ফায়াজ ফাইজাকে ভালো করে দেখে বলল,
“এত আটা ময়দা মেখেছিস বলেই এত লেট করেছিস। মনে হচ্ছে তোর বিয়ে। বলিস তো তোর জন্য একটা ছেলে দেখে আমার সাথে তোর বিয়েটাও সেরে ফেলি। তোর লেহেঙ্গা ধরার লোকও হবে।”
ফায়াজ ফাইজার ফেস রিয়েকশন দেখে মিটমিট করে হাসছে।
ফাইজা মুখ ভেংচি কেটে বলল,
“আমার বিয়ের বয়স হয় নি। তুমি করো বিয়ে।”
ফাইজার বাবা ফাইজাকে দেখে ডাকল।
“ফাইজা !”

ফাইজার বাবার কন্ঠস্বর শুনে মুখে এক চিলতে হাসি ফুটল। ঘাড় ঘুরিয়ে হাসি মুখে বাবার দিকে তাকাল৷ লেহেঙ্গা ছেড়েই বাবার দিকে দৌড় দিল।
“এই আস্তে আস্তে পড়ে যাবে মা।”
ফাইজা থেমে গেল। ওর বাবা কাছে এসে অশ্রুসিক্ত নয়নে মেয়ের দিকে তাকাল। এত বছর পর মেয়েকে নিজের বাড়িতে দেখছে। গতবার যখন প্রথম বারের মতো দেশে এসেছিল এত বছর পর তখন বাড়ির বাইরে দু’ঘন্টার জন্য দেখা হয়েছিল। তারপর তো হুট করেই চলে গেল৷
ফাইজা পাপা বলে জড়িয়ে ধরল। ওর বাবাও স্নেহময় পিতা হিসেবে আগলে নিল।

মেহেরের বিয়ের সাজগোছ কমপ্লিট। একটা রুমে বসে আছে। একটু পর পর আয়নায় নিজেকে দেখছে। মাহি মেহেরকে দেখতে এসে বলল,
“কি চোখ সরাতে পারছিস না? আহারে! আজ তো আমার বোনের বর বোনের থেকে চোখ সরাতেই পারবে না।”
মেহের লাজুক ভঙ্গিতে বলল,
“আপু তুমি যাও তো, মিশান কাঁদছে।”
মাহি ভেংচি কেটে বলল
“হু অমনিতেই মিশান কাঁদতে শুরু করে দিল।”

“কেমন আছেন আপা?”
মেহেরের মা নিজের ননদের সাথে কথা বলছিল। আত্মীয় স্বজনদের খেয়াল রাখছিলেন। কারো কথা শুনে সেদিকে দৃষ্টি দিল।
তারপর উচ্ছ্বাসিত কন্ঠে বলল,
“আরে আপা! আপনি এসেছেন? আপনাকে দেখে আমি যে কি খুশি হয়েছি বলে বুঝাতে পারব না।”
“না এসে কি আর পারি? ছেলের বিয়ে ছেলের কাছ থেকে দাওয়াত না পেয়ে আপনার কথায় বেহায়ার মতো চলে এলাম। আসলে ছেলের বিয়েতে থাকার লোভ সামলাতে পারি নি।”
“ভালো করেছেন খুব। আমার অনুরোধটা রেখেছেন। আসুন আপা।”
মেহেরের মা ওনাকে নিয়ে মেহেরের কাছে গেলেন। মেহের ফায়াজের মা’কে দেখে চমকে গেল। এখানে কিছুতেই ওনাকে আশা করে নি।
মেহের বুঝতে পারছে না ওনি কি করে এখানে এলেন? ফায়াজ কি জানে?
এসব ভাবনার মাঝেই ফায়াজের মা বলল,
“আমার ছেলের বউকে মাশাল্লাহ অনেক সুন্দর লাগছে।”
মেহের মুচকি হাসল। দুচোখ ভরে মেহেরকে দেখল। তার ছেলের বউ। তার সংসারের উত্তরসূরী।
“আপনি খেয়েছেন?”

“না, তোমাকে আর ফায়াজকে দেখতে এসেছি। তোমাকে তো দেখেছি ফায়াজকে দেখা হলেই চলে যাব।”
মেহের ওনার কথায় ক্লিয়ার বুঝতে পারল ফায়াজ বলে নি আসতে।
“আগে আপনি খেয়ে নিন। আপু ব্যবস্থা করো।”
মাহি বলল,
“জি আসুন আন্টি। আগে খেয়ে নিন। ও বাড়ি থেকে ওরা আসতে আরো সময় লাগবে।”
ফায়াজের মা ইতস্তত করছে। মেহেরের মা জোর করলেন।।
মেহের মা’কে পেছনে থেকে ডাকল। মেহের মায়ের সামনে গিয়ে বলল,
“মা, তুমি আসতে বলেছো?”
“হ্যাঁ। ওনার ছেলের বিয়েতে নিজেই থাকতে পারছে না। এ নিয়ে খুব মন খারাপ ছিল। তাই আমি আসতে বলেছি।”
“মা, সে ঠিক আছে কিন্তু ফায়াজকে তো জানো। যদি উনি দেখে কোন সিনক্রিয়েট করে? আমার তো ভয় লাগছে। বিয়ে বাড়ি,কত মানুষ। আল্লাহ! সেদিন ফায়াজ আমার উপর যে পরিমাণ রেগে গিয়েছিল। আজও যদি তাই করে?”

মেহেরের মা কটাক্ষ৷ দেখিয়ে বলল,
“আমার বাড়ি, আমার মেয়ের বিয়ে। আমার যাকে ইচ্ছা ইনভাইট করব। ফায়াজ কিছু বললে ওর মুখে ঠাস ঠাস করে লাগিয়ে দেব।”
মেহের মায়ের মুখে কঠিন কঠিন কথা শুনে চোখ বড়বড় করে তাকাল। ওর মা পাত্তা না দিয়ে চলে গেল।
বরপক্ষ এসে পড়েছে। মেয়েরা গেটের সামনে ফিতা বেঁধে বড়সড় ডিমান্ড করে বরপক্ষকে আটকে দাঁড়িয়ে আছে।
সামিরা ডোন্ট কেয়ার ভাব ধরে দাঁড়িয়ে আছে। কাচি দিয়ে কেচ কেচ শব্দ করছে।
আর বলছে,
“টাকা দিন নয়তো ভাগুন। মেয়ে আমরা বিয়ে দেব না।”
ফায়াজ তুষারের দিকে তাকাল। তুষার বলল,
“বললেই হলো ভাবিকে আজ আমরা নিয়েই যাব। এত টাকা দেব না।”
সামিরা কাচি দিয়ে কেচ শব্দ করে তুষারের দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টি দিয়ে বলল,
“টাকা বিনা যে আগাবে কেচ করে দেব।”
তুষার ভ্রু কুঁচকে বলল,
“তুমি এত হার্টলেট? বফের সাথে কেউ এমন করে?”
সামিরা ভেংচি কেটে বলল,

“বফ! কে বফ! এই মুহুর্তে তুমি ছেলেপক্ষ আর আমি কনেপক্ষ।”
ফায়াজ তুষারকে ফিসফিস করে বলল,
“আরে দিয়ে দে না। এমন শুরু করেছিস কেন? কটা টাকাই তো।”
তুষার জোরে বলল,
“ভাই প্রশ্ন টাকার না প্রেস্টিজের। ওদের এত টাকা দেব কেন? আমি কিছুতেই হার মানব না। তুই কি চাস আমরা হেরে যাই?”
ফায়াজ দাঁতে দাঁত চেপে বলল,
“টাকা দে নয়তো এখানে তোকে কেলাব। সবার সামনে মার খেতে না চাইলে দে।”
তুষার হতাশ হয়ে বলল,
“বুঝেছি আমার বন্ধু বিয়ে করার জন্য পাগল হয়ে গেছে৷ আমাদের আর কি করার।”

তুষার অসহায় ফেস করে টাকা দিয়ে দিল। সামিরা টাকা নিয়ে ভেংচি কাটল।
ফায়াজ বিয়ের আসরে বসেছে। ফাইজা আজ আর লেহেঙ্গা পরে নি। নিজের কম্ফোর্ট মতো ড্রেস পরে ঘুরে বেড়াচ্ছে।
দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে তুষারের সাথে কথা বলছে। আর সামিরা দূর থেকে দেখে ফুসফুস করছে।
সামিরা মেহেরের রুম থেকে বেড়িতেই তুষার এসে বলল,
“বেবি, তোমাকে আজ হেব্বি লাগছে।”
সামিরা ভ্রু কুঁচকে বলল,”তো!”
তুষার সামিরার কথা শুনে বিষম খেল। এই মুহুর্তে সামিরার খুশিতে আটখানা হয়ে যাওয়ার কথা। কিন্তু তা না করে পাত্তাই দিচ্ছে না। পাশ কাটিয়ে চলে যাচ্ছে।
“সামিরা, তুমি কি আমাকে এভয়েড করছো?”
সামিরা দাঁতে দাঁত চেপে বলল,
“লুইচ্চা এতক্ষণ কি করছিলে? ফাইজার উপর ফিদা হয়ে পড়ছিলে আর এখন আমার কাছে এসেছো? বিড়ালের মত সব জায়গায় ছুক ছুক করো?”
“ও আমার বন্ধুর বোন। মানে আমারও বোন। ছুক ছুক করব কেন?”
“শোন তোমার সাথে ব্রেকাপ। আজ ফায়াজ ভাই আর মেহের বিয়ে করছে আর তুমি অন্য মেয়েদের দেখছো? তোমার মতো ছেলের সাথে প্রেমই করে যাব। বিয়ে কবে হবে হা?”

শেষ পাতায় তুমি পর্ব ৪৬

“হবে৷ একটু সময় লাগবে।”(দাঁত কেলিয়ে)
“তুমি সারাজীবন সময় নেও। তোমাকে সারাজীবন সময় দিলাম। ব্রেকাপ তোমার সাথে।”
সামিরা হনহন করে চলে গেল। তুষার আপসোসের সুরে বলছে,
“হায় রে কপাল! বন্ধু আমার বিয়ে করে ফেলছে আর আমার ব্রেকাপ হচ্ছে। সামিরা দাঁড়াও।”
ফায়াজের মা এক কোনায় দাঁড়িয়ে ফায়াজকে দেখছে। ফায়াজের বাবা মেহেরের বাবার সাথে কথা বলছে হটাৎ চোখ গেল ফায়াজের মা’য়ের দিকে। এক মুহুর্তের জন্য তিনি স্তব্ধ হয়ে গেল।
মেহেরের ফোন বেজেই যাচ্ছে। ফায়াজ ফোন করছে কিন্তু মেহের ভয়ে ফোন রিসিভ করছে না।

শেষ পাতায় তুমি পর্ব ৪৮

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.