শেষ পাতায় তুমি পর্ব - Golpo bazar

শেষ পাতায় তুমি পর্ব ৪৯ || golper mohol

শেষ পাতায় তুমি

শেষ পাতায় তুমি পর্ব ৪৯
ফাবিহা নওশীন

বারান্দা দিয়ে রোদের আঁচ ঘরের ভেতর পড়েছে। ঘরের সবগুলো জানালা খোলা। ঘরে আলো না জ্বলা সত্ত্বেও পুরো ঘর বাইরের আলোয় আলোকিত হয়েছে। ফায়াজ আদো আদো চোখ খুলে হাত তুলে আড়মোড়া ভাঙল। তখনই মনে পড়ল মেহেরের কথা। পাশ ঘুরে বিছানা ফাঁকা দেখল। মেহের হয়তো অনেক আগেই উঠে গেছে। ফায়াজ উঠে বসে নিজের ফোনটা খুঁজছে। সেন্টার টেবিলের উপর পেয়েও গেল। হাত বাড়িয়ে ফোনটা নিয়ে অন করল। গতকাল রাতে অফ করে রেখেছিল। ফোন অন করতেই ফোনের স্কিনে ১১টা ১৯ সময়টা জ্বলজ্বল করছে।

সময় দেখে ফায়াজের মাথায় হাত। এত বেলা হয়ে গেছে। আজকে রিসিপশন। বাড়ি ভর্তি মেহমান, বন্ধুরা। উফফ বন্ধুরা নিশ্চয়ই এ নিয়ে মজা করবে। ফায়াজ হাতের ফোনটা রেখে দ্রুত
ফ্রেশ হতে গেল।
মেহের আর ফাইজা আত্মীয়দের সাথে গল্প করছে। এরা কেউই মেহের কিংবা ফাইজার পরিচিত নয়। মেহের এ বাড়ির নতুন বউ আর অপরদিকে ফাইজা এ বাড়ির মেয়ে হলেও এখানে না থাকার কারণে কাউকেই চিনে না। সে সৌভাগ্য ওর হয় নি। ছোট বেলায় বুঝ হবার আগেই মায়ের সাথে এ বাড়ি ছেড়েছে।
ফায়াজ নিচে নেমে মেহেরকে খুঁজছে। না পেয়ে ডাইনিং এর সামনে গিয়ে কফি চাইল। কফিতে চুমুক দিতেই মেহেরের দিকে চোখ পড়ল। মেহের আর ফাইজা একসাথে বসে রিলেটিভদের সাথে আড্ডা দিচ্ছে।

আরও গল্প পড়তে আমাদের গুপ এ জয়েন হউন

ফায়াজ হাতে কাপ রেখেই ওদের দিকে চেয়ে আছে। আর তখনই হুড়মুড় করে ওর বন্ধুরা এলো। ফায়াজ ওদের দেখেই অনুমান করছে এরা এখানে কি করতে এসেছে। ফায়াজ ওদের দেখেও না দেখার ভান করে কফিতে মনোযোগ দিল। ওদের পাত্তা দিলেই সমস্যা।
ওরা মজা করছে। ফায়াজ পাত্তা না দিয়ে বলল,
“রাতে বারবার কে ফোন করেছিলি?”
ওরা একে অপরের দিকে চাওয়াচাওয়ি করে বলল,
“জানি না। আমি করি নি।”
সবাই জানি না বলায় ফায়াজ ওদের দিকে ঘুরে বলল,
“তোদের মধ্যেই কেউ করেছিস। কিন্তু স্বীকার করছিস না। আর তোরা এভাবে দাঁড়িয়ে আছিস কেন? বেড়াতে এসেছিস? বসে বসে গিলার জন্য তোদের আসতে বলেছি? যা গিয়ে কাজ কর।”

ফায়াজ ওদের কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে টেবিলের উপর কাপ রেখে নিজের রুমের দিকে গেল।
ওরা ফায়াজের কথা শুনে ভ্যাবাচেকা খেয়ে গেল।
“৫ মিনিটের মধ্যে রুমে এসো।”
মেহের ফোনে ফায়াজের ম্যাসেজ দেখে ফাইজার দিকে চেয়ে বলল,
“আমি একটু আসছি।”
“কোথায় যাচ্ছো?”
“রুমে যাচ্ছি চলে আসব।”
“আরে না না… আসতে হবে না। তুমি রেস্ট নেও গিয়ে। বিকেলে মেকাপ আর্টিস্ট আসবে। তুমি আর রেস্ট করার টাইম পাবে না। আমিও এখন গিয়ে শাওয়ার নিয়ে রেস্ট করব।”
মেহের মুচকি হেসে বলল,
“আচ্ছা।”
তারপর সবার কাছ থেকে বিদায় নিল।

মেহের রুমের দরজার সামনে ৩মিনিট ধরে দাঁড়িয়ে আছে। ফায়াজের দেওয়া ৫মিনিট শেষ হয়ে ৭মিনিট চলছে। কিন্তু রুমে ঢুকতে পারছে না। কিছুক্ষণ ইতস্তত করে রুমের ভেতরে ঢুকল। বুক ঢিপঢিপ করছে। মনে হচ্ছে এই প্রথম এই রুমে ঢুকছে।
কিন্তু হায়! মেহের পুরো রুমে চোখ বুলিয়েও কাউকে পেল না। ফায়াজ ওকে রুমে আসতে বলে কোথায় গেল? বারান্দায় নয় তো? কিন্তু বারান্দার দরজা বন্ধ। তাহলে ওয়াশরুমে।
মেহের ওয়াশরুমের দিকে পা বাড়াবে তখনই হটাৎ শব্দ করে দরজা বন্ধ করার শব্দে চমকে উঠল। বুকে থু থু দিয়ে বলল,
“দরজা বন্ধ করলেন কেন?”
ফায়াজ বাকা হেসে উত্তর দিল,
“তোমাকে কিছু শেখাব তাই?”
মেহের কাঁপা কাঁপা গলায় বলল,
“শেখাবেন মানে? কি শেখাবেন?”

ফায়াজ আবারো আলতো হেসে মেহেরের দিকে এগুচ্ছে। মেহের ফায়াজের আগানো দেখে চিন্তায় পড়ে গেল এই মুহুর্তে কি করবে। মেহের ফায়াজের দ্রুত আগানো দেখে পিছিয়ে গেল। মেহের বারান্দার বন্ধ দরজার সামনে। কিন্তু দরজা খোলার স্কোপই পেল না। ফায়াজ ওকে দু’হাতে ঘিরে রেখেছে। মেহের ফায়াজের দিকে ঘুরল। ফায়াজ দু’হাত মেহেরের দু’পাশে রেখে দাঁড়িয়ে আছে। ফায়াজের উষ্ণ নিশ্বাস মুখের উপরে পড়ছে। ফায়াজ ইচ্ছে করে মেহেরের মুখের উপরে ফু দিল। মেহের চোখ বন্ধ করে নিল।
ফায়াজ মেহেরের কানের কাছে ফিসফিস করে বলল,
“আজকে আমি তোমাকে শেখাব কিভাবে আপনি না বলে তুমি বলা যায়।”
ফায়াজের কথা শুনে মেহের দ্রুত চোখ খোলে ফায়াজের দিকে তাকাল।
“জি জনাবা সেহি শুনা। তোমার মুখে আপনি শুনতে শুনতে তেতো হয়ে গেছি। কেমন পর পর ফিলিংস আসে। তাই তুমি আজ থেকে আমাকে তুমি বলবে।”

“তা হয় না-কি? আপনি বলতে বলতে অভ্যাস হয়ে গেছে। তুমি বলতে পারব না।”
ফায়াজ ডান হাতে নিজের গাল চুলকে বলল,
“আচ্ছা, পারবে না?”
মেহের মাথা নাড়িয়ে বলল,”না।”
ফায়াজ কয়েক সেকেন্ড মেহেরের দিকে তাকিয়ে থেকে ডান হাতে মেহেরের পেটের এক পাশ চেপে ধরল।
মেহের ব্যথায় চিৎকার করে বলল,
“ও মা গো।”
“কিসের মা? চিনকি চামেলি। বলো তুমি।” (পেটের পাশে আরো জোরে চাপ দিয়ে)
“বলছি বলছি।”
মেহের তুমি বলার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে। সে যেমন তেমন প্রস্তুতি নয়। মনে হচ্ছে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে ভাষণ দেবে৷ ফায়াজ অতি আগ্রহের সহীত মেহেরের দিকে চেয়ে আছে।
মেহের কয়েকবার ঢোক গিলে বলল,
“তুমি।”
তারপর চোখ বন্ধ করে ফেলল। হাত দিয়ে মুখ চেপে ধরল।
ফায়াজ ওর হাত সরানোর চেষ্টা করে বলল,
“চোখ বন্ধ করলে কেন? চোখ খোল। তোমার তুমি বলা আমি উপভোগ করতে পারি নি।”
“উহু। না।”

ফায়াজ মেহেরের হাত টেনে সরিয়ে বলল,
“ওকে ফাইন জানু।”
ফায়াজ মেহেরের ঠোঁটে ঠোঁট ডুবিয়ে দিল। মেহের ঘটনার আকস্মিকতায় হতভম্ব হয়ে চোখ খুলতে পারল না।
ফায়াজ মেহেরকে ছেড়ে দিয়ে ওর খোলা চুলে নাক ডুবাল। ও মেহেরের চুলের ঘ্রাণে মাতোয়ারা হচ্ছে৷
“ফায়াজ!”
“হু।”
“খাবে না?”
ফায়াজ চুলে মুখ রেখেই বলল,
“না, আমার ইচ্ছে করছে না।”
“কিন্তু আমার তো ভীষণ ক্ষুধা পেয়েছে।”
ফায়াজ মেহেরের কথা শুনে দ্রুত সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে বলল,
“তুমি এখনো খাও নি?”
মেহের ফায়াজের দিকে চেয়ে বলল,
“না।”
“তুমি কখন উঠেছো?”
“আটটার দিকে।”
“কি বলছো? ১২টা বাজে আর কেউ তোমাকে খেতে দেয় নি?”
মেহের স্নিগ্ধ হেসে বলল,
“দেবে না কেন? আমি নিজেই খাই নি। তোমার সাথে খাব তাই।”
ফায়াজ রাগী ফেস করে বলল,
“তাহলে আমাকে ডাকো নি কেন?”
মেহের মিষ্টি হেসে বলল,
“রাগ করছেন কেন? চলো এখন গিয়ে খাই।”

“আচ্ছা। এখন নাস্তা করে রেস্ট করবে। কারো সাথে গল্প করার প্রয়োজন নেই। রুমে এসে শুয়ে থাকবে নয়তো বসে থাকবে।”
“আচ্ছা।”
মেহের আর ফায়াজ নাস্তা করে নিল। মেহের খাওয়া শেষে বাড়িতে ফোন করে খোঁজ খবর নিয়ে কিছুক্ষণ রেস্ট করে নিল।
রিসিপশনের জন্য আজ ফাইজা ব্রাউন কালার গাউন পড়েছে। দূর থেকে রুহানকে দেখতে পেয়ে বলল,
“এক্সকিউজ মি!”
রুহান সামনের দিকে যাচ্ছিল। ফাইজার কথা শুনে দাঁড়িয়ে যায়। তারপর ভদ্রতা বজায় রেখে বলল,
“আমাকে বলছেন?”
“জি, আমি ফাইজা। ফায়াজের বোন। ওই যে হলুদের দিন আপনাকে কি সব বলেছিলাম। চিনতে পেরেছেন?”
রুহান আবারও স্নিগ্ধ হেসে বলল,
“জি চিনেছি। চিনব না কেন?”
ফাইজা কিছুক্ষণের জন্য থমকে গেল। এই ছেলে কথায় কথায় হাসে। তার হাসিটা মারাত্মক সুন্দর। স্বচ্ছ, মুগ্ধ করা হাসি। চাহুনিটাও অদ্ভুৎ।
ফাইজা রুহানের চাহুনি দেখে বলল,
“আসলে ও-ই দিনের জন্য আমি সত্যিই দুঃখীত। আমার মনে হচ্ছে আপনি ব্যাপারটা নিয়ে রেগে আছেন।”
রুহান আবারও হাসল।
“আরে না। রাগ করি নি।”
ফাইজার প্রচুর রাগ হচ্ছে। এত হাসার কি হলো। কথায় কথায় এত সুন্দর করে হাসতে হবে।

“আপনি এত হাসেন কেন? সব কথায় আপনাকে হাসতে হবে?”
রুহান ফাইজার কথা শুনে ভ্যাবাচেকা খেয়ে বলল,
“মানে? বুঝলাম না।”
“এই আপনি প্রতি কথায় হাসেন। এত হাসবেন না। আপনার হাসিটা মারাত্মক।”
ফাইজা কথাটা বলেও লজ্জা পেয়ে গেল। রুহান বুঝতে পেরে পরিস্থিতি অন্য দিকে নিয়ে গেল।
“আপনি ইতালি ফিরছেন কবে?”
“উমম। কিছু একটা ভেবেছি যদি আল্লাহ সহায় থাকেন, যদি সব ঠিক হয় তাহলে আমি আমার পরিবারের সাথেই থাকতে চাই। আর যদি না হয় তাহলে… ( মন খারাপ করে)
রুহান কিছুই বুঝতে পারল না। বুঝার কথাও না।
ওরা টুকটাক নিজেদের মধ্যে নিজেদের পছন্দ অপছন্দ নিয়ে কথা বলছে।
তুষার সামিরার সাথেই দাঁড়িয়ে আছে। আর সামিরাকে রেখে কোথাও যাবে না। আর ভুল বুঝার সুযোগ দেবে না। নয়তো দুদিন পর পর ব্রেকাপ সহ্য করতে পারে না।

মেহের রিসিপশনের জন্য তৈরি হয়ে গেছে। ফায়াজ বাইরে অপেক্ষা করছে। দু’জনকে এক সাথে যেতে হবে। মেহমানরা সবাই অপেক্ষা করছে। মেহের পার্পল কালার লেহেঙ্গা দু’হাতে ধরে হাই হিল পরে ধীরে ধীরে হাঁটছে। ভারী অলংকার, চুলে ছোট ছোট ফুল গুজা। ড্রেসের উপযোগী মেকাপ।
মেহেরকে দেখে ফায়াজ এগিয়ে এল। মেহের চোখ তুলে ফায়াজের দিকে তাকাল। ফায়াজকে দেখে ছোট খাটো হার্টবিট মিস হয়ে গেল। ব্ল্যাক স্যুটে ফায়াজকে ইনোসেন্ট, জেন্টেলম্যান লাগছে।
মেহের মুচকি হেসে বলল,
“তোমাকে অনেক কিউট লাগছে।”
“আরে আমার কথা রাখো। তোমাকে তো রাণীর মতো লাগছে। আমার রাণী। আমি তো চোখ ফেরাতে পারছি না।”
ফায়াজ মেহেরের কপালে ঠোঁট ছুয়ালো।
“আমার মেহেরজানের উপর কারো নজর যেন না লাগে।”
মেহের চোখের কাজল নিয়ে বাচ্চাদের মতো ফায়াজের কানের নিচে লাগিয়ে বলল,

শেষ পাতায় তুমি পর্ব ৪৮

“আজকে তোমার দিকে নজর পড়ার সম্ভাবনা আছে। আমার বরের উপর কারো নজর যেন না লাগে।”
ওরা রিসিপশনে যেতেই সবাই ঘিরে ধরল। ওদের সাথে সেল্ফি তুলতে তুলতে ক্লান্ত হয়ে পড়ল। অতঃপর নিজেদের ফটোগ্রাফী। বিভিন্ন এংগেলে হরেক রকম পিকচার নিতে নিতেও ক্লান্ত হয়ে পড়ছে।
মেহের বসে আছে। ওর বাড়ির সবাই এসে পড়েছে। সবার সাথে কথা বলছে। ফায়াজও ব্যস্ত। মেহের কথার ফাঁকে ফাঁকে ফায়াজকে দূর থেকে দেখছে। চোখ ফেরাতে পারছে না। যতই দেখছে তৃপ্তি মিটছে না।
মেহের মনে মনে বলছে,

“কে বলবে এই ছেলেটা গুন্ডামী করত। গুন্ডা থেকে জেন্টেলম্যান তৈরি হচ্ছে। আল্লাহ সহায় হোক। ও যেন প্রকৃত মানুষ তৈরি হয়।”

শেষ পাতায় তুমি পর্ব ৫০

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.