শেষ পাতায় তুমি পর্ব - Golpo bazar

শেষ পাতায় তুমি পর্ব ৫৪ || নওশীনের গল্পকথা

শেষ পাতায় তুমি

শেষ পাতায় তুমি পর্ব ৫৪
ফাবিহা নওশীন

ফায়াজ ভার্সিটিতে অলরেডি হাঙ্গামা শুরু করে দিয়েছে। ওর বন্ধুরা, দলের ছেলেরা, ভার্সিটির শিক্ষক-শিক্ষিকা সবাইকে এক জায়গায় করেছে। একটা ভার্সিটি থেকে একটা মানুষ কি করে উধাও হয়ে যায় সেটা নিয়ে চিল্লাচিল্লি করছে। ফায়াজ পুলিশকেও জানিয়েছে। পুলিশ ভার্সিটির পথে আছে। তারা প্রথমে ভার্সিটি থেকে তাদের কাজ শুরু করতে চায়।
তুষার ফায়াজকে অনেক চেষ্টার পর ঠান্ডা করেছে। জোর করে এক জায়গায় বসিয়ে রেখেছে। তুষার চাইছে সিসি ক্যামেরার ফুটেজ চেক করতে। অপারেটরকে ইনফর্ম করা হয়েছে।

মেহেরের মনে হচ্ছে ওয়াশরুমের পাশে যে তালা-বন্দ ঘরটা আছে ও সেখানেই আছে। মেহের দরজার সামনে গিয়ে কয়েকবার ধাক্কা মেরে ডাকাডাকি করেও সাড়া পেল না। তখনই মেহেরের মনে হলো এখন হয়তো ভার্সিটিতে কেউ নেই। জানালার দিকে তাকাল। বাইরে এখনো যথেষ্ট আলো আছে। তখনই মনে পড়ল ওর হাতে ঘড়ি আছে৷ মেহের দ্রুত হাতের দিকে তাকাল। ৫টা ৫৫ বাজে। এখনও সন্ধ্যা হতে ঢের বাকি। ৬টা ১০-১৫তে সন্ধ্যা হয়। মেহের আবারও দরজা ধাক্কা দিচ্ছে। কিন্তু কারো সাড়াশব্দ পাচ্ছে না।
সামিরা হাঁপাতে হাঁপাতে ভার্সিটিতে ঢুকেছে। ফায়াজ ওকে দেখে দাঁড়িয়ে গেল।

আরও গল্প পড়তে আমাদের গুপ এ জয়েন হউন

সামিরাকে শ্বাস ফেলার ফুরসত দিল না।
“সামিরা, তুমি মেহেরকে শেষ কখন দেখেছো?”
সামিরা হাঁপাতে হাঁপাতেই বলল,
“ক্লাস শেষে দুজন এক সাথে বের হয়েছি রুম থেকে। তারপর আমি তুষারের সাথে দেখা করার জন্য ক্যাম্পাসের দিকে যাই আর ও আমাকে বিদায় জানিয়ে চলে যায়। ব্যাস এটুকুই।”
ফায়াজ সামিরার কথায় কোন আশার আলো দেখতে পেল না। ধপ করে বসে পড়ল। কপালে হাত দিয়ে বিড়বিড় করে বলছে,
“মেহের, তুমি কোথায়?”
তুষার ফায়াজের পিঠে হাত রেখে বলল,
“চিন্তা করিস না পেয়ে যাব।”
ফায়াজের ফোন বেজে উঠল। ফাইজা কল করেছে। ফায়াজ দ্রুত কল রিসিভ করল যদি মেহের বাড়িতে যায় এই ভেবে।
“হ্যালো ফাইজা, মেহের বাড়িতে গিয়েছে?”
“না ভাইয়া। ভাবী আসে নি। ওর খোঁজ পেয়েছিস কি না সেটা জানার জন্য কল করেছি।”

ফায়াজ আবারও হতাশ হলো। দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বলল,
“বুঝতে পারছি না কোথায় চলে গেল? আমি কি করব, কোথায় যাব বুঝতে পারছি না। তুই একটু ওর বাড়িতে কল করে দেখ। আর মাহিকেও কল করিস। অনেক সময় পাড় হয়ে গেছে। লুকানোর কিছু নেই।”
“আচ্ছা, ভাইয়া আমি খোঁজ নিচ্ছি। যেভাবেই হোক খোঁজে বের করার চেষ্টা কর।” ফাইজা কল কেটে দিল। ওর মা’কে ইশারায় বলল পাওয়া যায় নি। তারপর আবার মেহেরের বাড়িতে ফোন করছে।
মেহের দরজায় হেলান দিয়ে বসে আছে। ধাক্কা দিতে দিতে হাত ব্যথা হয়ে গেছে। ডাকতে ডাকতে গলা শুকিয়ে গেছে। বড্ড পানি পিপাসা পেয়েছে। একটু পানি খেতে পারলে ভালো হতো।
মেহের ভাবছে,
“আমাকে এখানে কে রেখে গেল? কেন রেখে গেল? আর রেখেই বা কোথায় চলে গেল? আর ভার্সিটিতে আছি কি-না সেটাও শিওর না। কোথায় আছি কিছুই বুঝতে পারছি না।”

সন্ধ্যা হয়ে যাচ্ছে। ঘরটা অন্ধকার হয়ে যাচ্ছে। মেহেরের একটু একটু ভয় লাগছে। আগে অন্ধকারে প্রচুর ভয় পেত। এখন আগের মতো অত ভয় না পেলেও একটু ভয় তো পায়। মেহের পরক্ষনে ভাবছে,
“ফায়াজ! ও তো আমার জন্য অনেক টেনশন করছে। বাড়ির সবাই টেনশনে আছে। সারাদিনের ক্লান্তি শেষে ফায়াজ একটু শান্তি পাচ্ছে না। নিশ্চয়ই আমাকে পাগলের মতো খুঁজছে। ফায়াজ, তুমি কোথায়?”
ফায়াজ সবার সামনে শক্ত হয়ে থাকলেও ভেতরে ভেতরে ভেঙে চুরমার হয়ে যাচ্ছে। বেঁচে থাকার অবলম্বন হারিয়ে ফেলছে। মুমূর্ষু ব্যক্তির মতো ছটফট করছে। আর মনে মনে প্রতিজ্ঞা করছে মেহেরকে খোঁজে পেলে যদি জানতে পারে কেউ ওর দিকে হাত বাড়িয়েছে তবে তাকে ছাড়বে না।
ফায়াজ উঠে দাঁড়িয়ে বলল,

“আমি আর এখানে বসে বসে পুলিশের জন্য অপেক্ষা করতে রাজি না। আমি যাচ্ছি মেহেরকে খোঁজতে।”
ফায়াজ দু’পা আগানোর পর তুষার এসে বলল,
“মেহের, ভার্সিটির ভেতরেই আছে।”
ফায়াজ থমকে দাঁড়িয়ে গেল। তুষারের দিকে জিজ্ঞাসুক দৃষ্টিতে তাকাল।
“হ্যা ফায়াজ, মেহের ভার্সিটিতেই আছে। ওকে আজ ভার্সিটি থেকে বের হতে দেখা যায় নি। গেটের সিসি ক্যামেরা ফুটেজ চেক করা হয়েছে।”
ফায়াজ তুষারের কথা শুনে ভার্সিটির চারদিকে তাকাল। মেহের ওর আশেপাশেই আছে। এটা এতক্ষণ বুঝে নি কেন?
ফায়াজ এদিক সেদিক হেঁটে ভাঙা গলায় বলল,
“মেহের কোথায় তুমি?”
তুষার সবাইকে বলল,

“দলে ভাগ হয়ে যাও। ভার্সিটির প্রতিটি রুম, অডিটোরিয়াম, প্রতিটি কোনা, পুরো ক্যাম্পাস এমনি ওয়াশরুম সব তন্নতন্ন করে খুঁজতে থাকো।”
সবাই বিভিন্ন দলে ভাগ হয়ে কাজ শুরু করে দিল।
“ফায়াজ, চিন্তা করিস না। খুঁজে পাব। সবাই খুঁজছে তো।”
“আমিও যাচ্ছি। আমার ভয় হচ্ছে কোন বিপদ হয় নি তো?”
“ফায়াজ, কিছু হয় নি। সব ঠিক আছে। চল খুঁজি।”
এরিমধ্যে পুলিশ ফোর্স চলে এসেছে। উনারা পুরো ঘটনা শুনে অফিসার তল্লাশি করার অর্ডার দিল।
মেহের জানালার পাশ ঘেষে রাখা বেঞ্চগুলো সরানোর চেষ্টা করছে। এগুলো যেভাবে রাখা হয়েছে তাতে ওর মতো মেয়ের পক্ষে সরানো সম্ভব না।

মেহের তবুও চেষ্টা করছে। হাল ছাড়ছে না। এখানে থেকে নিচটা দেখতে পেলেই বুঝতে পারবে কোথায় আছে। অন্তত ভার্সিটি হলে বুঝতে পারবে।
একটা বেঞ্চ মেহেরের পায়ের উপর পড়ল। ব্যথায় কুকড়িয়ে উঠল। চোখ দিয়ে পানি পড়ছে। পা নড়াতে পারছে না। কোন ভাবে বেঞ্চটা সরিয়ে দেখল কেটে রক্ত বের হয়ে গেছে।

পুকুর পাড়ের কিনারা ঘেষে একটা ব্যাগ ভাসতে দেখা গেল। পুরো পুকুরে টলটলে পরিষ্কার পানি। মনে হচ্ছে ব্যাগটা সদ্য ফেলা হয়েছে। একজন পুলিশের চোখে পড়ল। ব্যাগটা একটা লাঠি জোগাড় করে তুলে আনে। ব্যাগের ভেতরে একটা খাতা, দুইটা কলম, পেন্সিল, স্কেল, টিস্যু, ছোট মানি পার্স আর কিছু হিজাবের পিন পেল। দ্রুত ভেজা খাতাটা বের করল। তারপর সবাইকে ডাকল।

ফায়াজকে দেখিয়ে বলল,
“এগুলো এখানে পাওয়া গেছে। দেখুন তো চিনেন কি না।”
ফায়াজ মেহেরের প্রতিটা জিনিস চিনে। এই ব্যাগ নিয়েই আজ মেহের ওর সাথে এসেছে।
ফায়াজ সময় না নিয়েই বলল,
“এগুলো মেহেরের।”
সামিরা আতংকিত কন্ঠে বলল,
“এগুলো এখানে কেন? মেহের পানিতে পড়ে যায় নি তো? ও তো সাঁতার কাটতে পারে না।”
সামিরার কথা শুনে ফায়াজের বুক ধুক করে উঠল। মেহের পানিতে পড়ে যেতে পারে সেটা এক মুহুর্তের জন্য মাথায় আসে নি। এখন ওর ও মনে হচ্ছে। ফায়াজ আতংকিত চোখে তুষারের দিকে তাকাল। তুষারের চোখেও ভয়, সংশয় স্পষ্ট। ফায়াজ সাহস হারিয়ে ফেলল। ধপ করে বসে পড়ল।
তারপর ঢোক গিলে বলল,

“না এটা হতে পারে না। মেহের অন্য কোথাও আছে। পানিতে পড়ে নি। ও তো বাচ্চা মেয়ে না। ও অন্য কোথাও আছে। ও জানে ওকে ছাড়া আমি কতটা অসহায়, কতটা নিঃস্ব।”
ফায়াজ চিৎকার শুরু করে দিল। কাঁদতে কাঁদতে পাগলামি শুরু করে দিল। ওকে সামলানো দায় হয়ে পড়েছে। কিছু মানুষ পানিতে নেমে পড়েছে।
দূরে মাগরিবের আজান ভেসে আসছে।
মেহের এতক্ষণের চেষ্টায় বেঞ্চ কিছুটা সরিয়ে জানালা অবধি আসতে সক্ষম হয়েছে। বেঞ্চ ধরে নিচের দিকে তাকাল। ওর চোখে মুখে খুশির ঝলক। হ্যাঁ এটা ওর ক্যাম্পাস। তিনতলা থেকে মাঠটা দেখতে পাচ্ছে। মেহের “কেউ আছো” বলে চিৎকার করছে কিন্তু তা প্রতিধ্বনি হয়ে ফিরে আসছে। মেহের জানালার কাচ খোলার চেষ্টা করছে কিন্তু পারছে না। দীর্ঘদিন আটকে থাকার কারণে জ্যাম হয়ে গেছে। খুলছে না।

মেহের নেমে এলো। তারপর চারদিকে কিছু খুঁজছে। বেঞ্চের পা রাখার ভাঙা কাঠটা টেনে খুলে কাচে জোরে আঘাত করল। কয়েকবার আঘাত করার পর ভাঙতে সমর্থ হয়। মেহের ফাকা জায়গা দিয়ে আবারও সাহায্যের জন্য চিৎকার করছে। ওর খুব ভয় করছে এমন সুনশান নীরবতা। এই কোনার রুমে কেউ আসে না আর না বিল্ডিংয়ের এই কোনায় কেউ আসে।
কিছুক্ষণ পরে আলো হাতে একজনকে দেখতে পেয়ে মেহেরের মনে আশার আলো জ্বলে উঠল। মেহের তাকে ডাকছে কিন্তু সে শুনতে পাচ্ছে না। মেহের জোরে ডাকতে পারছে না। সে শক্তি ওর নেই। কেমন নিস্তেজ হয়ে আসছে কন্ঠস্বর। সে মনে হচ্ছে কিছু একটা খোঁজছে। না পেয়ে চলে যাচ্ছে। মেহেরের চোখ বেয়ে পানি পড়ছে। চোখের সামনে এভাবে আশার তরী তীরে এসে ডুবে যাচ্ছে।

মেহের হটাৎ করে আবারো সাহসী হয়ে উঠল। নেমে পুরনো ইঁদুরে কাটা কাগজ এনে নিচে ছুড়ে মারে। বাতাসের বেগে অন্য দিকে চলে গেল। মেহের আবারো কাগজ তুলে তাতে ভাঙা কাচ রেখে ছুড়ে মারে।
উপর থেকে কিছু পড়ার শব্দে ছেলেটা চমকে উঠে। বলের মতো জড়ানো কাগজ দেখতে পায়। মেহের আবারো কাগজ তুলে নিচে ছুড়ে মারে। ছেলেটার মনে হচ্ছে উপর থেকে কেউ ফেলছে। উপরের দিকে তাকাল। কিন্তু অন্ধকারে তেমন কিছু দেখতে পাচ্ছে না। হাতের ফোনটা উপরের দিকে ধরল। সামান্য আলোতে কিছু বুঝতে পারছে না।
মেহের বুঝতে পারল ছেলেটা ওকে দেখতে পায় নি। তাই আবারও কাঠের টুকরো হাতে নিয়ে কাচে জোরে আঘাত করে। অনেকটা অংশ ভেঙে কিছুটা নিচে আর কিছুটা রুমে পড়ে। হুট করেই মেহেরের যেন অদম্য মনোবল চলে এলো। ওকে যেভাবেই হোক বুঝাতে হবে এখানে কেউ আছে।

ছেলেটা কাচের টুকরো ভাঙার শব্দে উপরে তাকায়। কাউকে দেখে নি তবে ওর মনে হচ্ছে কেউ আছে ওখানে আর কিছু বুঝাতে চাইছে।
ছেলেটা জোরে চিৎকার করে বলল,
“মেহের ভাবি, আপনি কি উপরে আছেন? সাড়া দিন।”
“আমি মেহের। সাহায্য করুন।”মেহেরের ক্ষীণস্বর কানে ভেসে এলো। কি বলল বুঝা যায় নি তবে কারো কন্ঠস্বর পাওয়া যাচ্ছে। ছেলেটার চিৎকার শুনে দুজন দৌড়ে এসে জিজ্ঞেস করল,
” কি হয়েছে? পেয়েছিস?”
ছেলেটা উচ্ছ্বাসিত কন্ঠে বলল,
“উপরে মেহের ভাবি আছেন৷ আমার তাই মনে হচ্ছে। কারণ কেউ জানালার কাচ ভেঙেছে। আর এই কাগজগুলো ফেলেছে। বারবার ফেলছে। আর একটা কন্ঠস্বর শুনেছি।”

ওর কথা শুনে হৈ-চৈ পড়ে গেল পুরো ক্যাম্পাসে। ফায়াজের কানেও পৌছালো। ফায়াজ কারো অপেক্ষা না করে দৌড়ে উপরে যাচ্ছে। মেহের সেখানেই নির্জীব শরীর নিয়ে বসে আছে। ওরা চলে গেল কোথায়? মেহের কিছুই বুঝতে পারছে না।
দরজায় লাথি মারছে কেউ। আর কিছুটা শোরগোল শোনা যাচ্ছে। মেহের চমকে ধীরে ধীরে উঠে দাঁড়াল। পায়ে ভর দিয়ে দাঁড়াতে পারছে না। অন্ধকার ঘর ওকে চেপে ধরেছে। কিছুই দেখতে পারছে না।
ফায়াজ চাবির জন্য অপেক্ষা করতে পারছে না তাই লাথি মারছে। সবাই মিলে অনেকক্ষণ চেষ্টার পর দরজা ভাঙতে পারে। ভেতরে ঘুটঘুটে অন্ধকার। ফায়াজ ফ্ল্যাশলাইট অন করে স্ফীত সুরে বলল,
“মেহের!”

শেষ পাতায় তুমি পর্ব ৫৩

এই “মেহের” শব্দটা মেহেরের কানে মধুর সুর হয়ে বাজছে। হৃদয়ে কম্পন শুরু করেছে। আলোড়িত হচ্ছে চারদিক৷ ঠোঁটের কোনে প্রাপ্তির হাসি ফুটে ওঠে। ফায়াজ মৃদু আলোতে মেহেরের মলিন মুখটা দেখে খুশিতে আত্মহারা হয়ে পড়ল। অনেক সাধনার পর কোন কিছু পেলে যেমন অনুভূতি হয় ঠিক তেমন অনুভূতি হচ্ছে। খুশির জোয়ারে ভাসছে। পেয়েছে তার মেহেরজানকে।

ফায়াজ দৌড়ে গিয়ে মেহেরকে জড়িয়ে ধরল। সেকেন্ডে সেকেন্ডে বাঁধন শক্ত হচ্ছে। যাতে আর ছেড়ে যেতে না পারে। মেহের কিছু বলতে পারছে বা। সে শক্তি ওর নেই। তবে অনুভব করছে। সুখানুভব। শরীরের সমস্ত ভার নিশ্চিন্তে ফায়াজের উপর ছেড়ে দিয়ে চোখ বন্ধ করল।

শেষ পাতায় তুমি পর্ব ৫৫

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.