সাথে থেকো প্রিয় পর্ব ৬
লেখক:রিয়ান আহমেদ
-‘স্যার আপনি আমাকে ডেকেছিলেন?’
উদয় জামান হাসিমুখে সারিকার দিকে তাকিয়ে বললেন,
-‘ইয়াহ,সারিকা মিট উইথ মাই নেফিউ শুভ্র শাহেদ জামান আজ কম্পানির ভাইস প্রেসিডেন্ট।এন্ড শুভ্র সি ইজ সারিকা বুসরা খান ডটার অফ,,,,।’
উদয় জামানকে কথাটা শেষ করার সুযোগ না দিয়ে সারিকা নিজেই বলল,
-‘I’m nothing more than a normal cameraman on the channel.Hello sir nice to meet you’
সারিকার কথা শুনে উদয় জামান হাসলেন কারণ উনি জানেন মেয়েটা কখনোই নিজের বাবা বা বংশের পরিচয় দিয়ে কারো সঙ্গে পরিচিত হতে চায় না।তাঁর কাছে তাঁর নিজের পরিচয়টাই সবচেয়ে বড়।শুভ্র জোরপূর্বক হাসলো আর বলল,
-‘Hello ‘
শুভ্র সারিকার দিকে তাকিয়ে ভ্রু কুঁচকে মনে মনে বলল,
-‘সাধারণ একটা ক্যামেরাম্যান তাও আমাদের চ্যানেলের সে কি না আমার সঙ্গে পায়ে পা দিয়ে ঝগড়া করতে আসে একে আমি দেখে নেব।,,,অ্যাহ দেমাগ কত মেয়ের আমার সঙ্গে এতকিছু করলো আর এর ভেতরে বিন্দুমাত্র অনুতপ্তবোধ নেই।এখন যদি আমি চাচ্চুকে বলি আমার সঙ্গে তুমি কি করেছো তবে তোমার চাকরি তো শেষ।,,,,নাহ থাক বেচারি হয়তো জানতো না আমি কে আর আর পার্সোনাল লাইফের ঝগড়া প্রফেশনাল লাইফে নিয়ে আসার কোনো মানেই হয় না।’
উদয় জামান সারিকাকে বললেন,
আরও গল্প পড়তে আমাদের গুপ এ জয়েন হউন
-‘সারিকা তুমি শুভ্রকে একটু অফিসটা ঘুরে দেখতে সাহায্য করো আসলে আমি এখন বের হচ্ছি তাই আমার পক্ষে কাজটা করা সম্ভব না।আর শুভ্রর পিএসও এখনো সিলেক্ট হয় নি তাই আমি তোমাকেই বলছি।’
-‘স্যার আমাকে একটা মন্ত্রীর ইন্টারভিউ এর জন্য তন্নীর সঙ্গে যেতে হবে তাই আমি পারছি না কাজটা করতে আমি অন্য কাউকে বলে দিচ্ছি।’
সারিকা চলে যেতে নিলে উদয় জামান দ্রুত বললেন,
-‘ওয়েট ওয়েট তোমার জায়গায় অন্য কেউ চলে যেতে পারবে না?’
-‘আই ডোন্ট নো স্যার।’
-‘তোমার পরে এই চ্যানেলের সবচেয়ে ভালো ক্যামেরাম্যান কে?আমার জানা মতে রাকিব তাই না?’
-‘জ্বী স্যার।’
-‘তাহলে ও যাবে তন্নীর সঙ্গে আর তুমি শুভ্রকে অফিস ট্যুরে গাইড করবে আমি আর কোনো কথা শুনতে চাই না।’
সারিকা অগত্যায় জোরপূর্বক হ্যা বলল।উদয় জামান দুজন বিদায় দিয়ে চলে গেলেন।
-‘মিস্টার শুভ্র শাহেদ জামান স্যার প্লিজ আসুন আমার সাথে।’
সারিকা হেঁটে চলে যাচ্ছিল কিন্তু আবার পেছনে ফিরে বলল,
-‘ভালো লাগলো এটা দেখে যে আপনি পার্সোনাল লাইফের সাথে প্রফেশনাল লাইফকে জড়াননি।’
-‘আমি কোনো বোকা নই যে বাচ্চাদের মতো তোমার থেকে অফিসে বসে প্রতিশোধ নেব।তবে আমি তোমাকে ছেড়ে দেব এমনটাও কিন্তু না।'(বাঁকা হেসে)
সারিকা ভ্রূ কুঁচকে ফেলল লোকটা কথার মানেটা সে বুঝতে পারছে এখন ভাবার ব্যাপার হলো অফিসের বাইরেই বা লোকটা ওকে কি শিক্ষা দিবে।কিন্তু সারিকা জীবনে টেনশন করতে পছন্দ করে না কারণ টেনশন করে লাভ কি যা হওয়ার হবেই।জীবনে টেনশন করে সময় ব্যয় করার চেয়ে ক্ষতিকর কাজ আর একটাও নেই তাঁর মতে।টেনশন জিনিসটাই তো বর্তমানে অধিকাংশ রোগের কারণ হার্ট অ্যাটাক,ব্রেইন স্ট্রোকের মতো যেসব কমন রোগে আজকাল মানুষ মারা যায় এগুলোর উতপত্তি তো টেনশন থেকে।
সারিকা সবকিছু দেখিয়ে দিচ্ছে শুভ্রকে।হঠাৎ শুভ্র দেখে একটা নীল জলে ভরা বালতি হয়তো ফ্লোর মোছার জন্য রাখা হয়েছে।শুভ্র মাথার শয়তানটা শুভ্রকে বুদ্ধি দিয়ে দেয় প্রতিশোধ নেওয়ার।শুভ্র একদম ভুলেই যায় যে সে নিজেকে নিজে বলেছিল অফিসে কোনো সিনক্রিয়েট করবে না।
শুভ্র সারিকার আগে গিয়ে বালতিটা ফেলে দেয়।সারিকা একজনের সঙ্গে কথা বলছিল তাই ব্যাপারটা খেয়াল করেনি।শুভ্র দূর থেকে বলল,
-‘মিস সারিকা আপনি কি বুড়ি না কি এত ধীরে ধীরে হাঁটলে তো আগামী একশো বছরেও এই অফিস ঘুরিয়ে দেখাতে পারবেন না।’
সারিকা শুভ্রর কথা শুনে শুভ্রর দিকে তাকায়।সারিকা সেই জলের ফ্লোরের উপর পা রাখার আগেই অন্য একজন মহিলা এসে সেখানে পা রাখে আর দুই কদম দিতেই একদম পিছলাতে পিছলাতে শুভ্রর কাছে চলে যায়।শুভ্র ঘটনার আকস্মিকতায় চোখ বড় করে হা করে তাকিয়ে থাকে।সে নড়তে পর্যন্ত ভুলে যায়।অবশেষে ফলস্বরূপ মহিলাটা শুভ্রর উপর গিয়ে পড়ে।মহিলাটা মোটা মানে একটু বেশিই মোটা তাই শুভ্রর অবস্থা একদম চ্যাপ্টা হয়ে যাওয়ার মতো হয়ে যায়।সবাই এটা দেখে হাসতে হাসতে শেষ।মহিলাটা উঠে গিয়ে শুভ্রকে সরি বলতে থাকে।সারিকা সাবধানে পা ফেলে শুভ্রর কাছে এসে শুভ্রকে টেনে তুলে।শুভ্র যা ভেবেছিল তা যে একদমই ঠিক তা সে এখন বুঝতে পারছে।শুভ্র বলেছিল এটা তার জীবনের সবচেয়ে বাজে দিন।কিন্তু এখন মনে হচ্ছে এটা তাঁর জীবনের সবচেয়ে ভয়ংকর দিন।
সারিকা শুভ্রর কানের কাছে ফিসফিস করে বলল,
-‘অন্যের জন্য গর্ত বানালে সেটাতে নিজেকেই পড়তে হয়।’
শুভ্র চোখ বড় বড় করে বলল,
-‘তুমি কিভাবে জানলে আমি পানি ফেলেছিলাম?’
সারিকা হেসে বলল,
-‘এতক্ষণ জানতাম কিন্তু এখন জানি।’
শুভ্র মনে মনে নিজেকে কয়েকটা গালি দিল নিজের বোকামির জন্য।সারিকা শুভ্রকে বলল,
-‘স্যার আপনি ঠিকাছেন?’
শুভ্র বিড়বিড় করে বলল,
-‘একটা আটার বস্তা একজন মানুষের উপর পড়লে একটা মানুষ কি করে ঠিক থাকবে।’
-‘স্যার তাহলে কি আপনি নিজের কেবিনে গিয়ে বসতে চাইছেন।’
-‘হ্যা কারণ এই আধ ভাঙ্গা মেরুদণ্ড নিয়ে আর দাঁড়িয়ে থাকা সম্ভব না আমার পক্ষে।’
-‘ঐ আপনি আমাকে নিয়ে না পড়ে থেকে নিজের জন্মদিন পালন করুন না গিয়ে।’
-‘তুমি আমার জন্মদিনের কথা কিভাবে জানলে?’
-‘কালকে না বললেন।আসলে আমার সব মনে থাকে।এই ধরুন আজ থেকে বিশ বছর পরও আপনার হনুমানের মতো চেহারাটা আমার মনে থাকবে।’
অভিনব নিজের চেহারাটা মোবাইলের স্ক্রিনে ভালো মতো দেখে নেয় নাহ তাঁকে তো দেখতে ভালোই লাগছে তাহলে এই মেয়ে তাঁকে এইভাবে ইন্সাল্ট কেন করলো।অন্তি অভিনবর প্রতি বিরক্ত একটা মানুষ লাগাতার পাঁচ ঘণ্টা যাবত কারো সামনে বসে থাকলে এরকম হওয়াই স্বাভাবিক।অভিনব বুঝতে পারছে অন্তি তাঁকে অপছন্দ করে।যার কারণে অভিনবর এখানে এভাবে বসে থাকাটা অন্তি সহ্য করতে পারছে না।এমনিতে তো অন্য কোনো মেয়ে হলে হয়তো বেশ খুশিই হতো অভিনবর মতো একজন মানুষ তাঁর সাথে বসে আছে এটা ভেবে। কিন্তু এটা অন্য কোনো মেয়ে নয় এটা অন্তি।
অভিনব অন্তির সাথে সহজ হওয়ার জন্য অনেক চেষ্টা করছে কিন্তু অন্তি ওকে দুই টাকার মূল্যও দিচ্ছে না।
অভিনব অন্তিকে বলল,
-‘আচ্ছা তুমি হাসো না কেন?আমি তোমার হাসি একবারও দেখি নি।’
-‘আমার জীবনে হাসার মতো কোনো ঘটনা আপনি আসার পর থেকে ঘটে নি।’
-‘ওহ তাহলে বলো কি করলে তুমি হাসবে।’
-‘এক কাজ করুন আপনি দিলবার দিলবার গানে নাচুন তখন ভেবে দেখবো হাসা যায় কি না।’
অভিনব মনে মনে বলল,
-‘এই মেয়ে সবসময় ত্যাড়া কথা বলবে।’
অন্তি অভিনবর দিকে তাকিয়ে বলল,
-‘এত টাকা পয়সা কামাই করেন কিভাবে?সারাদিন তো দেখে বসেই কাটান।’
-‘ঐ তোমার আমাকে বেকার মনে হয়।তোমাকে পাহারা দিতে এখানে বসে আছি।কারণ তুমি যেই মানুষ পালানোর উপরে ডিগ্রি নিয়ে রেখেছো।দেখা যাবে আমি এখান থেকে গেলে আমার গার্ডদের বিষ খাইয়ে মেরে ফেলে তুমি পালাবে।’
-‘উফফ যত্তসব।’
-‘আচ্ছা তোমার না আমার প্রতি ভালো লাগা আছে তাহলে তুমি আমার সঙ্গে এমন রুড বিহেভ করো কেন?’
-‘ভালো লাগা আছে না ছিল।আমাকে বিয়ে করার কারণ শোনার পর সেই ভালো লাগাকে ডাস্টবিনে ফেলে দিয়েছি।,,আমার নানা কোন দোষে যে আমাকে এই ঝামেলায় ফাঁসিয়েছেন?’
-‘তুমি আমাকে ঝামেলা বলছো? তুমি জানো এই ঝামেলার সঙ্গে কত রমনী নিজেকে ফাঁসানোর স্বপ্ন দেখে।’
-‘কত?’
অভিনব চিন্তায় পড়ে যায় আসলেই কতজন হবে।অভিনব চিন্তা ভাবনা করতে দেখে অন্তি মনে মনে হাসলো কিন্তু তা প্রকাশ করলো না।অন্তি বলল,
-‘এমনিতে আপনি কি আসলেই মডেল দিনার সঙ্গে ডেট করছেন না কি?,,অন্যকিছু ভাববেন না আসলে মনে হলো তাই জিজ্ঞেস করলাম।’
অভিনব শয়তানি হাসি দিয়ে বলল,
-‘আর ইউ জেলাস?’
অন্তি ভড়কে গিয়ে বলল,
-‘একদম না।আগেই বললাম না অন্যকিছু নয় যাইহোক না বললেও আমার কোনো যায় আসে না।এন্ড জেলাস হওয়ার কোনো কারণ নেই কারণ আপনি ঐ মেয়েটার সঙ্গে ডেট করলেও ওনাকে ভালোবাসেন না কারণ আপনি ভালোবাসায় বিশ্বাস করেন না।আর আমিই বা জেলাস হব কেন আমাকে কোনো পাগল কুকুর কামড়েছে না কি?’
-‘সেটা তুমিই ভালো জানো।’
-‘আমি আগামী তিনদিন কি এই হসপিটালেই থাকবো?’
-‘হুম।’
সাথে থেকো প্রিয় পর্ব ৫
-‘অর্নব তুমি সারিকাকে না বলে ওর বিয়ের জন্য সম্বন্ধ দেখে ঠিক করছো না।’
সুহানা খানের কথায় অর্ণব খান স্যান্ডউইচ মুখে দিয়ে কিছু তাকিয়ে থেকে বললেন,
-‘এখানে আমি ভুল কিছু দেখছি না ওর জমজ ভাই আমাদের না বলে বিয়ে করে নিয়েছে এখন সারিকাও যদি অভিনবর মতো একই কাজ করে তখন কি হবে ভাবতে পারছো।আর আমি তো এখনই ওকে ধরে বিয়ে দিয়ে দিচ্ছি।ছেলের সাথে যাতে ও বেশি বেশি সময় কাটাতে পারে সেই ব্যবস্থা করেছি।ওদের মাঝে ভালোবাসা সৃষ্টি হলে ওরাই বিয়ের কথা বলবে।’
সুহানা বিরক্ত হলেন স্বামীর প্রতি।তাঁর স্বামী ছোটবেলা থেকে সন্তানদের উপর নিজের পছন্দ চাপিয়ে দিয়েছেন সেও এক সময় এমনটাই করতেন কিন্তু বর্তমানে উনি ওনার ভুল শোধরানোর চেষ্টা করছেন।যদিও অভিনবর এভাবে হঠাৎ বিয়েটা সুহানা সাধারণভাবে নিতে পারেননি।
সন্তানরা যখন থেকে ওনাদের থেকে দূরত্ব রেখে চলতে শুরু করেছে তখন থেকে সুহানার মনে অপরাধবোধ জাগ্রত হয়েছে।